৭ টি গোপন কথা যা আপনার স্ত্রী কখনও মুখে বলবেন না

59
8007

অনুবাদ ও প্রকাশনায়ঃ কুরআনের আলো ওয়েবসাইট

বেশীরভাগ পুরুষেরই নারীদেরকে বুঝে উঠা প্রায়শই খুব কষ্টকর হয়ে যায়। এমনকি সেই নারীকেও যার সাথে সে বহু বছর বিবাহিত জীবন পার করেছে। এক মুহূর্তে তিনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, পর মুহূর্তেই হয়ত শিশুর মত কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। তিনি কোন কিছু নিয়ে অভিযোগ করছেন, আপনি হয়ত সেই সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় তার নানারকম উপায় তাকে দেখাচ্ছেন কিন্তু তাতেও তিনি সন্তুষ্ট হচ্ছেন না।

আপনার স্ত্রী কি বলছেন তা নিয়ে বেশী দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবেন না; বরং তিনি যা বলছেন না সেটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবুন।

১) সবকিছুর ঊর্ধ্বে, আপনার স্ত্রী আপনার ভালবাসা চান

● যখন কোন স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা কম দেখায়, বিনিময়ে স্বামী স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা কমে যায়।
● যখন স্বামী স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা কম দেখায়, বিনিময়ে স্ত্রী স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা কমে যায়।
এবং এটি একটি দুষ্টচক্র যা চলতেই থাকে।

► এই চক্র শুরু হওয়ার আগেই তা ভেঙ্গে ফেলুন। আপনার স্ত্রীর প্রতি আপনার ভালবাসা প্রকাশ করুন। তিনি ঠিক সেটাই চান।

তার ভুলত্রুটি, দোষ থাকা সত্ত্বেও তাকে ভালবাসুন।
ইন শা আল্লাহ, তিনিও আপনাকে আপনার ভুলত্রুটি ও দোষ থাকা সত্ত্বেও শ্রদ্ধা করবেন।

২) আপনার স্ত্রী একঘেয়েমিতে ক্লান্ত

প্রতিটি দিন একই রকম। সপ্তাহ আসে, সপ্তাহ যায়। এই একঘেয়েমিতে তিনি ভীষণ ক্লান্ত। তাকে সন্তান প্রতিপালন করতে হয়, সংসার সামলাতে হয়, তারপর আবার আপনার প্রয়োজন মেটাতে হয়, আপনার মন রক্ষা করতে হয়।
প্রতিদিন এমনটি করতে হবে ভাবতেই তো কোথাও পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করবে পুরুষদের। ভেবে দেখুন যে কোন সাধারণ মুসলিমা স্ত্রীর কেমন অনুভূতি হয়।
আর কর্মরত নারীদের কথা ভুলে গেলে হবে না। অনেক নারীকে সারাদিন চাকরি করে এসেও সংসার সামলাতে হয়।

► কাজেই ভাইয়েরা আমার, করজোড়ে আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনার স্ত্রী কে সেই অনুভূতিটি উপহার দিন যে – তিনি বিশেষ। তাকে একটু একঘেয়েমি থেকে ছুটি দিন।

তাকে মাঝে মাঝে বাইরে খেতে নিয়ে যান। অথবা তার জন্য তার প্রিয় খাবারটি বাইরে থেকে কিনে আনুন। অথবা তাকে নিয়ে এমনিই কোথাও বেড়িয়ে আসুন।
কিছু একটা অন্তত প্রায়ই করুন, তার একঘেয়েমির বন্দিদশা ভেঙ্গে দূর করে দিন।

৩)  তিনি প্রশংসিত হতে চান

প্রশংসা; কে না পেতে চায়? কেউ চায় না যে তার কষ্টের শ্রম কেউ লক্ষ্যও না করুক কিংবা এর চেয়েও খারাপ হল- সবাই তার সারাদিনের পরিশ্রমের কাজকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়ে তার সঠিক মূল্যায়ন টুকুও না করুক।

আপনার স্ত্রী আপনার ময়লা কাপড় পরিস্কার করতে বাধ্য নন। তিনি আপনার খাবার তৈরি করতেও বাধ্য নন। তবুও তিনি সবসময় তা করে চলছেন। আর তিনি এসব তার জীবনের অন্যান্য অনেক কিছুর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে করছেন।

সন্তান প্রতিপালন
কাজে অথবা স্কুলে যাওয়া
● আত্মীয় স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা
আরও ভাল মুসলিমাহ হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

►আপনার স্ত্রীকে দেখিয়ে দিন যে আপনিও তার পরিশ্রমের গুরত্ব বোঝেন, এবং আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ কারণ তিনি তার সাধ্য মতো আপনার এবং আপনার পরিবারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।

একটি ছোট্ট ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে শুরু করলেও মন্দ হবে না।

৪)  তিনি প্রচণ্ড ঈর্ষাকাতর

একারনেই তিনি বহুবিবাহ নামক বৈধ বিষয়টি সহজে মেনে নিতে সম্পূর্ণ নারাজ। নিজেকে তার অবস্থানে বসিয়ে চিন্তা করে দেখুন, আপনিও মানতে পারেন কিনা। আপনার স্ত্রীর সামনে অন্য কোন নারীকে নিয়ে কোন কথা বলার সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকুন। কক্ষনো আপনার স্ত্রীকে অন্য কোন নারীর সাথে তুলনা করবেন না।

• কক্ষনো তাকে কোন নায়িকার সাথে তুলনা করবেন না।
• কখনই তাকে আপনার মা অথবা বোনের সাথে তুলনা করবেন না।
• ভুলেও তার সাথে আপনার আগের স্ত্রী বা অন্য স্ত্রীর (যদি থাকে) তুলনা করবেন না।

► তিনি এটা জানতে এবং বিশ্বাস করতে চান যে তাকে ঘিরেই আপনার জগত। কাজেই তাকে সেরকমটিই অনুভব করান।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণের যারা সমগ্র নারী জাতির জন্য উদাহরন, এমনকি তাঁদের মধ্যেও এই ঈর্ষাটি ছিল। আয়েশা (রাঃ)ও, খাদিজা (রাঃ) কে নিয়ে ঈর্ষা বোধ করতেন যিনি তখন জীবিতও ছিলেন না।

আপনার স্ত্রীর মধ্যেও এই ধরনের ঈর্ষার অস্তিত্ব জেনে রাখুন এবং তার মর্যাদা দিন।

৫) একজন ভাল মুসলিমাহ হওয়ার জন্য তিনি আপনার সহযোগিতা চান

পুরুষের তার পরিবারে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর সেটাই আজকাল অনেক মুসলিম পুরুষের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা যে শুধু সঠিক নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাই না, বরং অনেক ক্ষেত্রেই সে স্ত্রীর (অথবা মা এর কিংবা তার জীবনের অন্য কোন নারীর) কথায় উঠছে, বসছে।

আপনার স্ত্রী চান আপনি তাকে নেতৃত্ব দিন। কারণ নেতৃত্বের সাথে জড়িয়ে আছে দায়িত্বশীলতার বিষয়টি। আপনার স্ত্রী চান আপনি তার দায়িত্বও পরিপূর্ণ ভাবে গ্রহন করেন। আর একজন ভাল মুসলিমাহ হওয়ার পথে স্ত্রীকে নেতৃত্ব দেওয়ার চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে? তবে মনে রাখবেন, এই নেতৃত্ব দেওয়াকে শাসন করার সাথে যেন গুলিয়ে না ফেলেন। এই নেতৃত্বের অর্থ সঠিক পথের নির্দেশনা দেওয়া ও সে পথ অনুসরণে যাবতীয় সহযোগিতা করা।

► কিন্তু আপনি নিজেই যদি উত্তম আদর্শের অনুসারী না হন তাহলে কি করে আরেকজনকে শেখাবেন যে কিভাবে ভাল হতে হয়? কাজেই আপনাকে আগে আপনার নিজের ঈমান মজবুত করতে হবে। আগে নিজেকে শুধরাতে হবে, তারপর আপনার স্ত্রীকেও ভদ্রতা, মর্যাদা, এবং হিকমতের সাথে বুঝাতে হবে।

উদাহরণ স্বরূপ, আপনার স্ত্রী যদি ঠিক মতো পর্দা না করেন তাহলে প্রথমে তার জন্য এমন পোশাক পরিচ্ছদ কিনে আনুন যাতে তিনি ঠিক মতো পর্দা করতে পারেন। তারপর তাকে প্রশংসা করে বলুন যে আপনি তাকে একজন সম্ভ্রান্ত নারী রূপে দেখতে ভালবাসবেন, এবং তাকে এমন পোষাকে দেখতে চান যে পোশাক আল্লাহ্‌ কে সন্তুষ্ট করবে। তিনি যদি নিয়মিত সালাত আদায় না করেন, সংসারের কাজের অজুহাত দেখান, আপনি তার কাজে সাহায্য করে তার জন্য ১৫-২০ মিনিট সময় বের করে দিয়ে আগে সালাত আদায় করে নিতে বলুন। আপনিই সবচেয়ে ভাল বুঝবেন কিভাবে বললে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি মনে আপনার কথা শুনবেন।

৬)  তিনি ক্রমাগত অভিযোগ করতে ভালবাসেন না, কিন্তু মাঝে মাঝে আপনিই তাকে বাধ্য করেন

সবাই এটা মনে করেন যে নারীরা তাদের স্বামীদের সাথে খুঁতখুঁত করতে পছন্দ করেন। কিন্তু সেটা পুরোপুরি সত্য নয়। হ্যা, কিছু মানুষ (নারী এবং পুরুষ) এমন আছেন যাদেরকে কিছুতেই সন্তুষ্ট করা যায় না। আপনি যা-ই করুন না কেন, তারা সেটাতে দোষ ধরবেনই। আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন: “আমাকে জাহান্নাম দেখান হয়। (আমি দেখি), তার অধিবাসীদের অধিকাংশই স্ত্রীলোক; (কারণ) তারা কুফরী করে। জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তারা কি আল্লাহ্‌র সাথে কুফরি করে?’ তিনি বললেন, ‘তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি দীর্ঘকাল তাদের কারও প্রতি ইহসান করতে থাক, এরপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখলেই বলে, ‘আমি কখনও তোমার কাছ থেকে ভাল ব্যবহার পাইনি।’ [সহীহ বুখারীঃ ২৮; ইফা]

কাজেই, বোনদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ যে, তাদের স্বামীরা তাদের জন্য যা করেন, তা যেন তারা তুচ্ছজ্ঞান করে অকৃতজ্ঞতা না করেন।

► কিন্তু, ভাইয়েরা প্রায়শই তাদের স্ত্রীর জন্য জিহ্বা সংযত রাখা কঠিন করে দেন। লক্ষ্য করে দেখুন, আপনিই হয়তো প্রশংসার বদলে সবসময় স্ত্রীর দোষ ধরছেন আর তিনিও পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য আপনার খুঁত খুজে বের করছেন। কিংবা হয়তো আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ট কাজ করছেন না (হতে পারে তা সাংসারিক টুকটাক সহযোগিতা) যা পুষিয়ে নিতে তাকে বাড়তি খাটুনি করতে হচ্ছে। অথবা হয়তো আপনি মানুষ হিসেবে খুব বেশী আদর্শ নন।

সবশেষে আবারো বলছি, আগে নিজের ভেতর উন্নয়ন ঘটান; আপনার স্ত্রীর খুঁতখুঁত এবং অভিযোগ করার সুযোগই কমে যাবে।

৭)  সবচেয়ে বেশী তিনি চান, আপনার সাথে একটি স্থায়ী ও সুখী সম্পর্ক

নারীরা এটা ভেবে বিয়ে করে না যে ‘বিয়ে করে খুব মজা হবে।’ তারা বিয়ে করেন কারণ তারা একটি সুখী সংসার জীবন চান; এবং তারা আশায় থাকেন যে আপনি তাকে তা দেবেন। ধর্মীও দায়িত্ব ও কর্তব্যের পর এটাই একজন মুসলিমাহ নারীর প্রধান চাওয়া- একটি সুখী, স্থায়ী, মুসলিম পরিবার গড়ে তোলা। মজার ব্যাপার হল, এটা দেওয়া আপনার জন্য খুবই সহজ কাজ।

(ক) বোধহীন মানুষের মতো আচরণ করবেন না। তার জন্য একজন ভালো স্বামী হন। তার প্রতি আপনার ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করুন।

(খ) কখনও তাকে তালাক বা আরেকটি বিয়ের ভয় দেখাবেন না। হ্যাঁ, আপনার তা করার অধিকার আছে। কিন্তু এই বিষয়গুলোকে নিয়ে ভীতি প্রদর্শন করা আপনাদের সাংসারিক জীবনের জন্য অনুপযোগী এবং ক্ষতিকারক। এরকম ভীতি দেখিয়ে কখনও কল্যাণ আশা করতে পারেন না। কারণ এধরনের ভীতি কখনই তার মনে আপনার জন্য শ্রদ্ধা বা ভালবাসা বাড়িয়ে দেবে না, বরং উল্টোটাই হবে।

(গ) আল্লাহ্‌র উপর ভরসা রাখুন। শয়তানের প্রতারণার ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকুন। স্ত্রীর বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করুন। অন্য সবকিছুর চেয়ে, স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদে সবচেয়ে বেশী আনন্দিত হয় শয়তান।

দেখলেন? সবকিছু এতটা কঠিনও না এখন, তাই না?

এই লিঙ্কে পড়ুন ৭ টি গোপন কথা যা  আপনার স্বামী কখনও মুখে বলবেন না।

শুধুমাত্র বাস্তব জীবনে ইসলাম চর্চাকারী অবিবাহিত মুসলিম ছেলেমেয়েদেরকে আল্লাহ্‌ভীরু জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনী খুঁজে পেতে সহায়তা করাই “পিওর ম্যাট্রিমনি” ওয়েবসাইটের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন  – https://quraneralo.net/purematrimony/

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

59 COMMENTS

  1. Nice presentation that may help those who are want to lead their life according to the islamic manner.

  2. ami amar wife k khub valo bashbo .. but amar jodi kichu durbolota thake , & shudhu shai karone jodi she amake nia shukhi na hoi tahole ami ki korbo. ?

  3. Dakun vai apni kisu sotik o kisu vul o bolesen . Bolesen wife Shamir food made korte baddo na. But Allah bolese Shamir anugotto kora forz Jodi gunar Kota na bole. Jaez kaz .

  4. in this day we discuss about silly thing than impotent thing allah said 4 wife is legal for man its end who is happy and who is unhappy is not a important matter

  5. in this day we discuss about silly thing than impotent thing allah said 4 wife is legal for man its end who is happy and who is unhappy is not a important matter

  6. in this day we discuss about silly thing than impotent thing allah said 4 wife is legal for man its end who is happy and who is unhappy is not a important matter

  7. in this day we discuss about silly thing than impotent thing allah said 4 wife is legal for man its end who is happy and who is unhappy is not a important matter

  8. খুব সুন্দর একটি পোষ্ট পড়ে অনেক ভাল লাগল অনেক কিছু শেখা হল এত সুন্দর বিষয় সবারই শেয়ার করা উচিতhttp://islamicshebabd.com/

  9. মাশা আল্লাহ লিখাটা অনেক ভালো লাগলো

  10. Ma-sha-Allah…. Very important topic for every body … its may change your life…  pls read,,,,

আপনার মন্তব্য লিখুন