বড় দিন বা ক্রিসমাস (Christmas) কি?

35
4862

লেখকঃ আবদুল্লাহিল হাদী মু. ইউসুফ

আসছে ২৫ ডিসেম্বর, খ্রীষ্টানদের বড় দিন, দিনটি খ্রীষ্টান বিশ্বে জাকজমকপূর্ণভােব উদজাপিত হয় তাদের ধর্মীয় উৎসব হিসেবে, কিন্তু দুঃখ্যজনক হলেও সত্য যে আজ মুসলিম বিশ্বেও দিনটি বেশ গুরুত্ব পচ্ছে। তাই আলোচনা করতে চাচ্ছি যে এই বড় দিন বা ক্রিসমাস কি ?

খ্রীষ্টানদের এক সম্প্রদায়ের নিকট এই দিনটি স্রষ্টার জন্ম দিন আবার অপর সম্প্রদায়ের নিকট রবের সন্তানের জন্ম দিন হিসেবে পরিচিত।এই দিনটিতে তারা বিভিন্ন রকম উপহার আদান প্রদান, আলোক সজ্জা,বিভিন্ন রকমের খাবার, বিশেষ চা পান,চার্সেগমন ইত্যাদির মাধ্যমে অতিবাহিত করে থাকে। ইংরেজী Christmas শব্দটির দুটি অংশ একটি Christ অপরটি mas, Christ এটি ঈসা (আঃ) এর একটি উপাধি, আর  mas অর্থ জন্ম দিন বা জন্মৎসব। তাহলে Christmas এর মাধ্যমে ঈসা (আঃ) এর জন্মৎসব বোঝানো হয়ে থাকে। (কথাটা বিশ্বাস না হলে, google.com এ গিয়ে “birthdate of jesus christ” লিখে সার্চ দিন।)

যদিও আজকে খ্রীষ্টানরা এই দিনটিকে ঈসা (আঃ) এর জন্ম দিন হেসেবে পালন করে থাকে বাস্তবে ইতিহাসে তাঁর জন্ম তারিখ সঠিক ভাবে নির্ণিত নেই। এনিয়ে স্বয়ং খ্রীষ্টানদের মাঝেও মতবিরোধ আছে। তাই দেখা যায় কেথলিক খ্রীষ্টানরা ২৫ ডিসেম্বারকে ক্রিসমাস হিসেবে পালন করে থাকে আর অপর দিকে অর্তডোকরা ৭ জানুয়ারীকে ক্রিসমাস হিসেবে পালন করে থাকে।

নিঃসন্দেহে ক্রিসমাস খ্রীষ্টানদের একটি ধর্মীয় উৎসব,কিন্তু আজকে খ্রীষ্টানদের এই আনুষ্ঠানিকতা এবং সেসময় ঈসা (আঃ) এর জন্ম লগ্নে তাদের পূর্বসুরীদের প্রতিক্রীয়ার কথা আমাদের কে কি বার্তা দিচ্ছে? আজকের ক্রিসমাস পালনকারীরা কি তাদেরই পরবর্তী জেনারেশন নয় যারা ঈসা (আঃ) এর ভূমিষ্ট কালে তাঁর মাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল? যারা তাঁকে আল্লাহ্ র পুত্র বলে আখ্যায়িত করেছিল? এবং যারা তাঁকে হত্যা  করতে চেয়েছিল? আফসোস! যারা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা  আজ তাঁর জন্মোৎসব পালন করছে। এ যেন চোরের মার বড় গলা।

মূলতঃ ঈসা (আঃ) এর জন্ম তারিখ কোনটি? ক্যাথ লিকদের ধারণামতে ২৫ ডিসেম্বার না অর্তডোকদের ধারণামতে ৭ জানুয়ারী। মূলত খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রন্থসমূহে এর সঠিক তারিখ নিধারিত করে বর্ণনা করা হয়নি। তবে কোরআন কারীমের ভাষ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে মারইয়াম (আঃ) কে লক্ষ্য করে তার গর্ভাবস্থায় আল্লাহ্ বলছেনঃ “আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে” [সূরা  মারইয়াম-২৫]

এখান থেকে বুঝা যায় যে ঈসা (আঃ) এর জন্ম ডিসেম্বার বা জানুয়ারীতে নয় বরং জুন বা জুলাই মাসে কারণ খেজুর একটি গ্রীষ্মকালীন ফল শীতকালীন ফল নয়। তাহলে যদি তাঁর জন্ম তারিখটিই সঠিক ভাবে নির্ণিত না হয় তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই আনুষ্ঠানিকতা?

সুবহানাল্লাহ্! দেখুন আমাদের নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জন্ম তারিখও সঠিকভাবে নির্ধারিত নেই এমনিভাবে ঈসা(আঃ) এর জন্ম তারিখও সঠিকভাবে নির্ধারিত নেই। আমার মনে হয় এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর নবীদ্বয়কে মানুষের অতিরঞ্জন থেকে রক্ষা করেছেন।

ক্রীসমাস সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টি ভঙ্গিঃ

অর্থগত দিক থেকে ক্রীসমাস শব্দটিই একটি শিরকী শব্দ কারণ শব্দটির অর্থ “রবের জন্মদিন বা রবের পুত্রের জন্ম দিন” নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক, মহান আল্লাহ এথেকে পুত পবিত্র। আল্লাহ্‌র বাণীঃ “তিন কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি” [সূরা এখলাস-৩]

অতএব একজন মুসলমানের জন্য এই কথাটি মুখে উচ্চারণ করাই হারাম। হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ “আবু উমামা আল বাহেলী (রায়িাল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃযে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, আর যে যেই জাতিকে ভালবাসবে তাদের সাথে তার হাশর হবে।” [আবু দাউদ হাদীস নং ৪০৩১, মোসনাদ আহমদ হাদীস নং-৫০৯৩]

আলেমগণের মতামতঃ

শেইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ক্রিসমাস উপ লক্ষে অনুষ্ঠান করে,উপহার ও মিষ্টি বিতরণ করে, বিভিন্ন ধরণের খাবারের আয়োজন করে এবং ছুটি পালন করে কাফেরদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য  হারাম। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় ইক্তেযাউ সিরাতিল মুস্তাকীম গ্রন্থে বলেনঃ তাদের (কাফেরদের) কিছু উৎসবে (মুসলমানদের জন্য)তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা তারা বাতিল পন্থী হওয়া সত্বে তাদের আত্ম তৃপ্তির কারণ হবে। আবার কখনো হয়ত তা দুর্বল হৃদয়ের অধিকারী এবং সুযোগ সন্ধানীদের জন্য বৈধতার প্রমাণ গ্রহণের সুযোগ করে দিবে।

যে ব্যক্তি তা করবে সে গোনাহগার বলে গণ্য হবে তা যে উদ্দেশ্যেই করে থাকুক না কেন চাই তা  সামাজিকতা রক্ষা, ভালবাসা, লজ্জা, বা অন্য কোন কারণে হোকনা কেন। কেননা তা আল্লাহ্ র দ্বীনে তোষামোদ এবং কাফেরদের মনবলকে দৃঢ় করবে এবং তাদের ধর্ম নিয়ে তাদেরকে গৌরব করার সুযোগ করে দিবে। [ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ৩/৪৪]

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

35 COMMENTS

  1. নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে, মসীহ ইবনে মরিয়মই আল্লাহ। আপনি জিজ্ঞেস করুন, যদি তাই হয়, তবে বল যদি আল্লাহ মসীহ ইবনে মরিয়ম, তাঁর জননী এবং ভূমন্ডলে যারা আছে,তাদের সবাইকে ধ্বংস করতে চান, তবে এমন কারও সাধ্য আছে কি যে আল্লাহর কাছ থেকে তাদেরকে বিন্দুমাত্রও বাঁচাতে পারে? নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, সবকিছুর উপর আল্লাহ তা’আলার আধিপত্য।তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।সুরা মাইয়িদাহ ১৭মরিয়ম-তনয় মসীহ রসূল ছাড়া আর কিছু নন। তাঁর পূর্বে অনেক রসূল অতিক্রান্ত হয়েছেন আর তার জননী একজন ওলী। তাঁরা উভয়েই খাদ্য ভক্ষণ করতেন। দেখুন, আমি তাদের জন্যে কিরূপ যুক্তি-প্রমাণ বর্ননা করি, আবার দেখুন,তারা উল্টা কোন দিকে যাচেছ।সূরা মাইয়িদাহ ৭১

  2. Sob sotto, but Crissmas uchcharon haram bole o ekhane bohubar likhechen, jene haram likha kobira guna, asole mul bishoi holo bola ta haram na, jodi oi bissaser sathe bole tahole haram , ekhane kon bissas r dharona niye bolche eta bujte hobe, r eta keyamoter jug , sob muslim deshei aj muslim ra ostitto sonkote so onno dhormer dhormiyo utsober somalochonai somoy nosto na kore muslim rastrer boro boro sorkari besorkari neta o provab shali byakti der sobok dite paren kina dekhen jate muslim jatir ostitto sonkot ta kichu ta kome ase~

  3. Ei dine amader ekjon nobi prithibite eshechhilen
    Jar proti AAHLE KITAB najil kora hoyechhilo
    Eta e boro kotha…amra oi vinno kono bishshashe bishshashi hoye CHRISTMAS pronounce korina…that’s it

  4. بسم الله الرحمن الرحيم ..قل هو الله هو احد ،الله الصمد لم يلد ولم يلد ولم يكن الله كفوا احد…

  5. onno dhormer utshober shomlochona kora hoini probondhotite. shudhu Muslim der warn kora hoyeche, tara jate ae gunah theke beche thakte pare.
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
    “যে কোন জাতির অনুকরণ করে, সে তাদেরই একজন।” (Narrated by Abu Dawood, 3512; classed as saheeh by al-Albaani in Irwa’ al-Ghaleel, 2691. )
    jei utshobe bishassh kora hoi, je Allah r shonta jonmo niyeche (nauzibillah) shei utshober anonndo kibhabe muslim ra upobhog korte pare?

  6. Abu Sayeed “jodi oi bissaser sathe bole tahole haram , ekhane kon bissas r dharona niye bolche eta bujte hobe”
    Happy Birthday word er mane ki aro kichu ache? kichu kichu word ache ja directly ekta jinish e mean kore. Shob word er je synonym ache ta noi..

  7. Rubaiyat Chowdhury Dear sister, amra aekhane onno kono dhormo ke choto ba disrespect korchi na, but our belief is different. Muslim hishabe amader jana uchit keno amra muslim, keno amra La Ilaha Illallahu Muhammadur Rasullullah boli, keno Allah amader jonne Quran najil korechen, quraner ortho ki.. aebishoy gula jokhon apnar jonne bujhte clear hobe, tokhon islamer onek bishoy apni bujhte parben.

  8. কোন ধর্ষক যদি আপনার চোখের সামনে কাউকে ধর্ষণ করতে যায়, আপনি কি তাকে বলবেন “শুভ ধর্ষণ”? কিংবা যদি কেউ আপনার সামনেই আপনার পাশের বাসায় চুরি করতে যায়, বা ডাকাতি করতেযায়, আপনি কি বলবেন “শুভ চৌর্যকর্ম বা শুভ ডাকাতি”? কেউ খুন করতে নিলে কি তাকে বলবেন, “হত্যাকান্ড শুভ হোক”?
    কাফির, মুশরিকদের মূল আকিদা হল আল্লাহকে অস্বীকার করা। তাদের সমস্ত ‘ধর্মীয়’ আচার অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য হল আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুকে রব্ব মানা, মা’বুদ মানা। তাই শুভ বিজয়া, শুভ পূর্ণিমা কিংবা ম্যারি ক্রিসমাস বলার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন। শিরক হল সবচাইতে বড় জুলম। আল্লাহ আর সব গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরকের গুনাহ ক্ষমা করেন না। যারা শিরক করে, তাদের শিরকি অনুষ্ঠানে ‘গ্রীটিং’ জানানোর অর্থ হল আপনি তাদের শিরককে সমর্থন দিচ্ছেন। আপনি বলছেন ‘শুভ শিরক’।
    জানুন, বুঝুন, আমল করুন।

  9. পরমকরুনাময় আসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।১.বলুন, তিনি আল্লাহ এক,২.আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,৩.তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং কেউ তাকে জন্মদেয়নি,৪.তার সমতুল্য কেউ নেই। সুরা এখলাস:১-৪।

  10. কিন্তু বিধর্মীদেরকে ইসলামের দিকে টানতে হলে ওদেরকে ওদের মতো করেই বুঝাতে হবে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন