দশ স্বর্ণমুদ্রার ক্রীতদাস

0
1870

সংকলনঃ কুরআনের আলো

মক্কার ধনী ব্যাক্তি উমাইয়া। ধনে-মানে সব দিক দিয়েই কুরাইশদের একজন প্রধান ব্যাক্তি সে। প্রাচুর্যের যেমন তার শেষ নেই, ইসলাম বিদ্বেষেও তার কোন জুড়ি নেই। শিশু ইসলামকে ধ্বংসের কোন চেষ্টারই সে কোন ত্রুটি করে না। এই ঘোরতর ইসলাম বৈরী উমাইয়ারই একজন ক্রীতদাস ইসলাম গ্রহন করেছে। তা জানতে পারল উমাইয়া। জানতে পেরে ক্রোধে ফেটে পড়ল সে। অকথ্য নির্যাতন সে শুরু করল। প্রহারে জর্জরিত প্রায় সংজ্ঞাহীন ক্রীতদাসকে সে নির্দেশ দেয়, “এখনও বলি, মুহাম্মাদের ধর্ম ত্যাগ কর। নতুবা তোর রক্ষা নেই।”

 কিন্তু তার ক্রীতদাস বিশ্বাসে অটল। শত নির্যাতন করেও তাঁর বিশ্বাসে বিন্দুমাত্র ফাটল ধরান গেল না। ক্রোধে উন্মাদ হয়ে পড়ল উমাইয়া। শাস্তির আরও কোঠরতর পথ অনুসরণ করল সে।

 একদিনের ঘটনা। আরব মরুভুমির মধ্যাহ্ন। আগুনের মত রৌদ্র নামছে আকাশ থেকে। মরুভুমির বালু যেন টগবগিয়ে ফুটছে। উমাইয়া তার ক্রীতদাসকে নির্দয়ভাবে প্রহার করল। তারপর তাঁকে সূর্যমুখী করে শুইয়ে দেওয়া হল। ভারী পাথর চাপিয়ে দেওয়া হল বুকে। ক্রীতদাসের মুখে কোন অনুনয় বিনয় নেই। মনে নেই কোন শঙ্কা। চোখে অশ্রু নেই, মুখে কোন আর্তনাদও নেই। ঊর্ধ্ব মুখী তাঁর প্রসন্ন মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে আল্লাহ্‌র প্রশংসা ধ্বনি- ‘আহাদ’, ‘আহাদ’।

 ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)। ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ শব্দ তাঁর কানে গেল। অনুসন্ধিৎসু হয়ে শব্দ লক্ষ্যে তিনি মরুভুমির বুকে শায়িত ক্রীতদাসের সমীপবর্তী হলেন। উমাইয়াকে দেখে তিনি সব ব্যাপারটাই মনে মনে বুঝে নিলেন। বললেন, “উমাইয়া, আপনাকে তো ধনী ও বিবেচক লোক বলেই জানতাম। কিন্তু আজ প্রমান পেলাম, আমার ধারণা ঠিক নয়। দাসটি যদি এতই না পসন্দ, তাকে বিক্রি করে দিলেই পারেন। এমন নির্দয় আচরণ কি মানুষের কাজ?”

 হযরত আবু বকরের (রাঃ) ঔষধে কাজ হল। উমাইয়া বললেন, “এত বাহাদুরী দেখাবেন না। দাস আমার, এর উপর সদাছার-কদাচার করার অধিকার আমারই। তা যদি এতই দয়া লেগে থাকে, তবে একে কিনে নিলেই পারেন।”

 হযরত আবু বকর (রাঃ) এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিলেন। তিনি চট করে রাজী হয়ে গেলেন। একজন শ্বেতাঙ্গ ক্রীতদাস ও দশটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে কিনে নিলেন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসকে। হযরত আবু বকর (রাঃ) ক্রীতদাসকে মরুভুমির বুক থেকে টেনে তুলে গা থেকে ধুলা ঝেড়ে দিলেন। উমাইয়া বিদ্রূপের হাসি হেসে বললেন, “কেমন বোকা তুমি বলতো? এই অকর্মণ্য ভৃত্যটাকে একটি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়েই বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলাম। এখন আমার লাভ ও তোমার ক্ষতি দেখে হাসি সংবরণ করতে পারছি না।”

 আবু বকর (রাঃ)ও হেসে বললেন, “আমি ঠকিনি বন্ধু! এ ক্রীতদাসকে কেনার জন্য আমার সমস্ত সম্পত্তি দিতে হলেও আমি কুণ্ঠিত হতাম না। কিন্তু একে আমি ধারণাতীত সস্তা মুল্যে ক্রয় করে নিয়ে চললাম।”

 এই দাসটিই ছিলেন বিশ্ব বিশ্রুত বিলাল। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বিলাল (রাঃ)।

উৎসঃ বই- আমরা সেই সে জাতি (আবুল আসাদ)

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন