হাদীসের কয়েকটি পরিভাষা

5
2206

অনুবাদ: আবদ্‌ আল-আহাদ

আস্‌সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্‌,

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য। শান্তি অবতীর্ণ হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (সা) এর উপর এবং তাঁর সহচরগণ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর। হাদীস শাস্ত্রবিদগণ হাদীসের শ্রেনীবিভাগ করতে গিয়ে বেশ কিছু বিষয় এবং পদ্ধতিকে বিবেচনায় নিয়ে থাকেন। এমন একটি বিষয় হল হাদীসটি কার দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে বা হাদীসের মূল বক্তা কে।

বিশেষজ্ঞদের ভাষায়ঃ

হাদীসের বর্ণনাকারী কে বা হাদীসে কার সম্পর্কে কথা বলা হচ্ছে- এর উপর ভিত্তি করে হাদীস কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত। এ শ্রেণীর হাদীসগুলো হল চার ধরণেরঃ

[১] হাদীসে কুদ্‌সী: এ ধরনের হাদীসের মূলকথা সরাসরি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার নিকট থেকে প্রাপ্ত এবং তাঁর সাথেই সংশ্লিষ্ট। যেমনঃ আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর রাসূল (সা) কে ইলহাম কিংবা স্বপ্নযোগে অথবা জিব্রাঈল (আ) এর মাধ্যমে তা জানিয়ে দিয়েছেন এবং নাবী কারীম (সা) নিজের ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন। হাদীসে কুদ্‌সীর বর্ণনা শুরু হয় ঠিক এইভাবেঃ “রাসূল (সা) বলেছেন, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন,……।”

[২] মরফূ’ হাদীস: যে হাদীসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) পর্যন্ত পৌঁছেছে অর্থাৎ, যে হাদীসের সনদ-সূত্রে সরাসরি নাবী কারীম (সা) এর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে সেই হাদিসকে মরফূ’ হাদীস বলে।

[৩] মাওকূফ হাদীস: যে হাদীসের বর্ণনা-সূত্র ঊর্ধ্ব দিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে অর্থাৎ, যে সনদ-সূত্রে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাওকূফ হাদীস বলে। এই ধরনের হাদীসে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয় এবং তা সরাসরি নাবী কারীম (সা) থেকে বর্ণিত নয়।

এ ধরনের হাদীসের উদাহরণ হল ‘আলী ইবনু আবি তলিব (রাদ্বিআল্লাহু ‘আনহু) এর এই কথাগুলোঃ “ভালবাসার মানুষকে ভালবাসতে গিয়ে চরমপন্থা অবলম্বন করবেন না; কারণ হতে পারে একদিন হয়ত আপনিই তাকে ঘৃণা করতে পারেন। আবার কাউকে ঘৃণা করার ক্ষেত্রেও চরমপন্থা অবলম্বন করবেন না; কারণ হতে পারে আপনিই একদিন তাকে ভালবাসতে পারেন।” [সহীহ্‌ আল-বুখারী; অধ্যায়ঃ আদাবুল মুফ্‌রাদ, হাদীস নং-৪৪৭]

আল-খাতীব আল-বাগ্‌দাদী বলেনঃ “একটি মারফূ’ হাদীসের বর্ণনা একজন সাহাবী পর্যন্তই সীমাবদ্ধ; তার বাইরে নয়।”

আল হাকিম এর মত অনুযায়ী কোন হাদীস মাওকূফ বলে বিবেচিত হতে হলে হাদিসটিকে আরেকটি শর্ত পূরণ করতে হবে আর তা হল হাদীসটির ইসনাদ (হাদীসের মূল কথাটুকু যে সূত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে; এতে হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে) সম্পূর্ণ হতে হবে এবং কোন ক্ষেত্রে তা বিঘ্নিত হওয়া যাবে না। মাওকূফ পরিভাষাটি সাহাবাগণ ছাড়া অন্যান্যদের দ্বারা বর্ণিত হাদীসের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে উল্লেখ করতে হবে যে, অমুক হাদিসটি মাওকূফ যার বর্ণনা আল-জুহ্‌রী কিংবা আল-‘আতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ যারা দু’জনেই তাবিঈ ছিলেন বা তাবিঈদের অনুসরণ করেছিলেন।

[৪] মাকতূ’ হাদীস: যে হাদীসের বর্ণনা-সূত্র ঊর্ধ্ব দিকে তাবিঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে অর্থাৎ, যে সনদ-সূত্রে কোন তাবিঈর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাকতূ’ হাদীস বলে। মাকতূ’ হাদীস “আসার” (বর্ণনা) বলেও পরিচিত।

উদাহরণস্বরূপ, মাস্‌রূক ইবনুল আজ্‌দা (রাহিমাহুল্লাহ্‌) এর কথাগুলো মাকতূ’ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেনঃ “আল্লাহ্‌কে ভয় করার মত জ্ঞানই হল যথেষ্ট জ্ঞান আর নিজের কর্ম সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করাই হল যথেষ্ট মূর্খতা বা অজ্ঞতা।”

ইবনুল সালাহ্‌ (রাহিমাহুল্লাহ্‌) বলেনঃ“ইমাম আল শাফে’ঈ, আবুল কাশেম আল-তাবারানী এবং অন্যান্যদের ভাষ্য অনুযায়ী “মাকতূ’” পরিভাষাটিকে আমার কাছে “মুনকাত” (যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের নাম ধারাবাহিকভাবে সুসজ্জিত নয় অর্থাৎ, বিঘ্নিত) পরিভাষাটির বিপরীত বলে মনে হয়েছে।” [মুকাদ্দিমাত ইবনুল সালাহ্‌ ফী ‘উলুম আল-হাদীস; পৃষ্ঠা নং-২৮]

অধিক সংখ্যক মাওকূফ্‌ এবং মাকতূ’ হাদীস সম্বলিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নাম হলঃ

১. ইবনু আবি শাইবান-এর আল-মুসান্নাফ্‌।
২. আবদ্‌ আল-রাজ্জাক আল-সান’আনি-এর আল-মুসান্নাফ্‌।
৩. ইমাম আল-তাবারী-এর জামী’ আল-বাইয়ান ফী তা’বীল আই আল-কুর’আন।

এছাড়াও ইবনুল মুনদ্বীর এর গ্রন্থসহ এবং অন্যান্য গ্রন্থসমূহ।

হাদীসের বিভিন্ন শ্রেণী বিভাজন সম্পর্কে জানতে চাইলে নিম্নোক্ত গ্রন্থগুলোর উল্লেখিত অংশগুলো পড়তে পারেনঃ

১. হাফিজ ইবনু হাজার-এর নাখতাব আল-ফিকর্‌ (পৃষ্ঠা নং-২১);
২. আল শাখাওয়ী-এর ফাতাহ্‌ আল-মুগীস (প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-১০৮-১১২);
৩. ড. আবদুল্লাহ্‌ আল জুদাঈ এর-তাহ্‌রীর ‘উলুম আল-হাদীস (প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২৫) এবং
৪. ড. মাহ্‌মুদ আল-তাহহান এর তাইসীর মুস্‌তালাহ্‌ আল-হাদীস (পৃষ্ঠা নং-৬৭)।

আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।

English Version

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

5 COMMENTS

  1. আসসালামু আলাইকুম। আপনার সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ। খোদা হাফেজ।

  2. assalamualikum,vi dhaka savar er ekta private versity te meye islamic labas pore cls korte pare na……kaw jodi borka/apron pore cls a jay tahole tader cla korte dawa hoy na…….ei onnay ki amader kisu e korar ni???????

  3. যে দেশে ৮০% এর বেশি মানুষ মুসলমান সে দেশে এই ধরনের গঠনা তো অবশ্যই দুঃখ জনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের উচিত যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করা। আর যতই বাধা আসুক না কেন কোন অবস্থায়ই হিজাব পরিত্যাগ করা যাবে না। যে versity  তে বেহায়াপনা আর নিরলজ্জতার শিক্ষা দেওয়া হয় সেখানে না যাওয়াটাই শ্রেয়। আল্লাহ আমাদের হেদায়াত দাও।

  4.  
     হাদিসের পরিভাষাটা জানা হল ।আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক।আমীন।

আপনার মন্তব্য লিখুন