কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ১২

8
4014

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

তাকবীর আল ইহরাম

তাকবীর আল ইহরাম হল নামাজের প্রথম এবং ফরজ একটি কাজ; এটি হল নামাজের শুরুতে আল্লাহু আকবার বলে আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা করা। আল্লাহু আকবার (আল্লাহ্‌ মহান) ই কেন? কেন আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর) বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন মাবুদ নেই)নয়? কারণ, আল্লহু আকবর এর অর্থ হল দুনিয়াবি যা কিছুই আছে আল্লাহ তার সমস্ত কিছুর চেয়ে বড়, মহান ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় আল্লাহু আকবর বলা হয়; আমাদের নামাজে, আজানে, হজ্জে কঙ্কর নিক্ষেপের সময়, ঈদুল আযহায়, ঈদুল ফিতর এ। রমজান সম্পর্কে কুরআনের একটি আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেছেন: “…আল্লাহ তায়ালা তোমাদের (কোরআনের মাধ্যমে জীবন যাপনের) যে পদ্ধতি শিখিয়েছেন তার জন্য তোমরা তার মহিমা বর্ণনা করতে এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা যেন আদায় করতে পার।” [সুরা বাকারাঃ ১৮৫]

যখন আমরা নামাযে বলি আল্লাহু আকবর, তখন আমরা আল্লাহর সাথে আমাদের সাক্ষাৎ শুরু করি। ‘আল্লাহু আকবর’ অর্থাৎ আল্লাহ মহান – আমাদের কাজের চেয়ে, আমাদের দুশ্চিন্তার চেয়ে, অথবা যে খাবার রান্না করার চিন্তা করছি তার চেয়ে, বা কোথাও বেড়াতে যাওয়ার চেয়ে। অর্থাৎ আমাদের মনের মধ্যে যা যা কিছু যত রকমই অন্য চিন্তা ভাবনা আছে তাদের সমস্ত কিছুর চেয়ে আল্লাহ মহান এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই কারনে, নামাজের প্রত্যেকটি ভঙ্গি পরিবর্তনের সময় আমরা বলি আল্লাহু আকবর- যাতে আমাদের মনে যদি নামাজের সময় অন্য চিন্তা ঢুকে পড়ে, এটি মনে করিয়ে দেয় যে এই চিন্তার বিষয়টির চেয়েও আল্লাহ বড়। কেবল মাত্র একটি জায়গায় আল্লাহু আকবর বলা হয়না, সেটি হল রুকু থেকে ওঠার সময়। এ বিষয়ে ইনশাল্লাহ পরে আলোচনা করা হবে।

হাত ওঠানো

আমরা যখন আল্লাহু আকবার বলি, আমরা হাত উঠাই। মহানবী (সাঃ) তিনভাবে এই কাজটি করতেন বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।

১) আগে হাত তোলা। প্রথমে হাত উঠানো, হাত নামিয়ে বুকে বাঁধা এবং এরপর আল্লহু আকবার বলা
২) বলতে বলতে হাত উঠানো।
৩) পরে হাত উঠানো। আল্লাহু আকবার বলা, হাত উঠানো এবং এরপর হাত নামিয়ে বুকে বাঁধা।

এই তিনটি ই হাত তোলার বৈধ উপায়। এবং হাত কোন পর্যন্ত উঠাতে হবে?  কান পর্যন্ত ও কাধ বরাবর- দুটিই সঠিক।

দা’ই মিশারি আল খারাজ পরামর্শ দেন এই তিনটি উপায়েই ঘুরিয়ে নামায পড়তে, যাতে আমাদের নামাজের কাজ গুলো অভ্যাসবশত যান্ত্রিক না হয়ে যায়, যাতে আমরা যা করি খেয়াল করে জেনে বুঝে মনোযোগ দিয়ে করতে পারি। এতে আরও একটা ব্যাপার নিশ্চিত হয় যে আমরা আমাদের নবীর (সাঃ) এর কোন সুন্নাত বাদ দিচ্ছি না। মহানবী (সাঃ) বলেন: “যে আমার রেখে যাওয়া সুন্নাহর কোন অংশ পুনঃপ্রচলন করবে যা হারিয়ে গিয়েছিল, তাকে তার অনুসারী সকলের সমান সওয়াব দেওয়া হবে, অথচ কারো অংশ থেকে কম হবে না।” [ইবনে মাজাহ]

আল্লাহু আকবার বলতে আসলে কি বোঝায়?

কেউ কেউ আল্লাহু আকবার বলে, এবং মনে মনে এটাই বিশ্বাস করে। আর কেউ কেউ নামায শুরুই করে মিথ্যা দিয়ে। মিথ্যা বলে কারন তারা মুখে উচ্চারণ করে আল্লাহু আকবার কিন্তু হৃদয় মনে তার দুনিয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা এই উচ্চারণকৃত শব্দটির মর্মার্থ অনুভব করে না। ‘আল্লাহ’ হচ্ছে আমাদের রবের একটি অনন্য নাম, অন্য কাউকে এই নামে ডাকা হয় না, ডাকা যায় না; এবং এর দ্বারা তাকেই বুঝানো হয় যাকে ইবাদত করা হয় ও সিজদা করা হয়। তাঁর অন্যান্য রাজকীয় নাম দিয়ে কখনও কখনও মানুষের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেমন; সুরা হুদ এ মানুষ হযরত শুহাইব (আঃ) কে বলেছিল: “নিশ্চয়ই তুমি ধৈর্যশীল (আল হালীম) ও নেককার (আল রাশীদ)।” [সুরা হুদঃ ৮৭]

কিন্তু দুটি নাম কখনও মানুষের বেলায় ব্যাবহার করা যায় না, তা হল – ‘আল্লাহ’ ও ‘আর-রাহমান’। এ শুধু মাত্র তাঁর জন্যই। “আকবার” কথাটি এসেছে তাকবীর থেকে; যার অর্থ মহিমান্বিত করা। আল্লাহ বলেন: “তুমি (শুধু) তাঁর ই মাহাত্ম্য ঘোষণা কর, পরমতম মাহাত্ম্য।” [সুরা বনি ইস্রাঈলঃ১১১]

আল্লাহর মহত্ত্ব এতই ব্যাপক ও বিশাল যে আমরা পরিপূর্ণ রূপে তাঁর বৈশিষ্ট্য ও মহত্ত্ব অনুধাবন করতে পারি না, তবে তাঁর সৃষ্টি সমূহ দেখে কিছুটা মাত্র আন্দাজ করতে পারি। পর্বতমালা, সমুদ্র, গাছপালা, জীবজন্তু, মানুষ এই সমস্ত কিছুর সৃষ্টি তো কেবল এটাই ঘোষণা করছে- আল্লাহু আকবার। তাহলে আমরা কিভাবে না করি?

হ্যাঁ, কিন্তু আমরা হাত উঠাই কেন?

আমরা হাত উঠাই আমাদের দুনিয়াকে পিছনে ফেলে আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণের জন্য। আপনি যদি কারো কাছে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে দুই হাত তুলে বলেন- আমি সারেন্ডার করলাম।  এখানে আমরা নামাজে দাড়িয়ে আত্মসমর্পণ করছি ভালোবাসা, আশা আর ভয় নিয়ে আমাদেরই সৃষ্টিকর্তার সামনে।

আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

আমরা যখন নামাজের শুরুতে আল্লাহু আকবার বলে হাত তুলি, আমাদের গুনাহ গুলি তখন ধীরে ধীরে আমাদের মাথা আর কাঁধে উঠে আসে। মহানবী (সাঃ) বলেন: “যখন কোন বান্দা নামাজে দাঁড়ায়, তার সমস্ত গুনাহ তার মাথা এবং কাঁধে রাখা হয়; প্রতিবার যখন সে রুকু অথবা সিজদা করে, সেখান থেকে কিছু গুনাহ ঝরে পড়ে।” [বায়হাকি, সহিহ আল জামিই]

আশ্চর্য ! আর কি হয় যখন আমরা নামায আরম্ভ করি? আল্লাহ আমাদের দিকে তাঁর দৃষ্টি ফেরান। নবী করিম (সাঃ) বলেন: “আল্লাহ তাঁর বান্দার দিকে ততক্ষন তাকিয়ে থাকেন জতক্ষন পর্যন্ত সে নামাজে সালাম না ফেরায়।” [আবু দাউদ]

কতকিছু ঘটে যায় যখন তাকবীর দিয়ে আমরা শুধুমাত্র নামাজের প্রথম ধাপ শুরু করি। নির্দিষ্ট এক শয়তান তখন আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হয় যার একমাত্র কাজ হল আমাদেরকে নামাজের মধ্যে বিঘ্ন ঘটানো। নামাজে আপনি কথা বলা বন্ধ করে দেন, অকারণে নড়াচড়া বন্ধ করে দেন, এমনকি আপনার দৃষ্টিও এক জায়গায় নিবদ্ধ করে ফেলেন, আশেপাশে বা আকাশের দিকে তাকান না। আপনি তখন এক পবিত্র অবস্থানে থাকেন, আল্লাহর সাথে এক অন্তরঙ্গ আলাপে থাকেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন: “পবিত্রতা হল নামাজের চাবি, এর শুরু হয় আল্লাহু আকবার বলে, শেষ হয় আসসালামু আলাইকুম বলে।” [আবু দাউদ]

আপনি আল্লাহু আকবার বলে আরেকটি জিনিস শুরু হয়। সেটি হল নিজেকে নিয়ে ভাবা। ভেবে দেখুন এই মহাবিশ্বে আপনার অবস্থান নিয়ে। ভেবে দেখুন তো এই বিশাল পৃথিবীর তুলনায় সূর্য কত বিশাল। আর এই সূর্যের তুলনায় অন্যান্য  নক্ষত্র আরও বিশাল। সেই বিশালতায় আমরা কত ক্ষুদ্র, কত নগণ্য। আর এখন বলুন আল্লাহু আকবার…আল্লাহ এই সমস্ত কিছুর চেয়েও বড়, মহান।

এখন থেকে আমরা যখন নামাজে দাঁড়াবো, আমরা যেন এই কথা গুলো লক্ষ্য করি এবং সত্যি সত্যিই তা যেন হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারি।

আমীন!!

চলবে…ইনশাআল্লাহ।

আগের পর্ব গুলো এই লিংক থেকে  পড়ুনঃ

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

8 COMMENTS

  1. Alhamdulillah, can’t wait for following one.. please provide details Hadiths with number because I would like to share with who ever ignore to pray in right ways. May Allah give us better understanding and accept what is true, Amin.

  2. ‘আল্লাহ’ হচ্ছে আমাদের রবের একটি অনন্য নাম, অন্য কাউকে এই নামে ডাকা হয় না, ডাকা যায় না;….আমার প্রশ্ন হল ‘আল্লামা’ উপাধি কাদের এবং কেন দেওয়া হয়?

আপনার মন্তব্য লিখুন