কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ২৫

19
3188

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

আমরা এখন সিজদায় এসে পৌঁছেছি আলহামদুলিল্লাহ্‌। ইবনে আল কায়্যিম বর্ণনা করেন, সিজদা হল সালাতের গুপ্তধন, সবচেয়ে বড় স্তম্ভ, এবং রুকুর পূর্ণ পরিসমাপ্তি। তিনি বলেন, সিজদার আগের সব কাজ ছিল শুধুই ভুমিকা। আমরা এখন একটু পেছনে যাবো এবং ভেবে দেখব- আমরা যখন সিজদায় যাই, তখন আমাদের কি অনুভূতি থাকে? আমাদের মাঝে অনেকেই ভাবেন, এটা নামাজের অংশ তাই সিজদা করি; আবার অনেকে চিন্তা করেন এটা হল সেই জায়গা যেখানে প্রার্থনা করা যায়। কিন্তু আমরা কয়জন অনুভব করি যে, এটা হল আমাদের অন্তরের শ্রেষ্ঠতম বিনয় যা আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার পবিত্রতা ঘোষণায় আমাদের মাথা মাটিতে লুটিয়ে প্রকাশ করি?

সত্যিকারের সুখ

আমরা কোথায় সুখ পাই? বস্তুবাদী সুখ নয়, সত্যিকারের আত্মার সুখ। মুসলিম হিসেবে আমরা বলতে পারি, জগতে সত্যিকারের সুখ পাওয়া যায় আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে পারলে। আপনি যত আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন, আপনার হৃদয় ততই শান্তি পায়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য, সিজদায় চলে যান। মহানবী (সাঃ) বলেন: ‘বান্দার সিজদারত অবস্থাই প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থা।‘ [মুসলিম ৯৭৬]

আপনি সিজদায় যত বেশী বিনীত হতে পারবেন, তত বেশী আপনি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবেন; এবং নিশ্চয়ই তিনি এতে আপনার সম্মান বৃদ্ধি করবেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: ‘তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশী বেশী সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তোমার একটি গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ [মুসলিম ৯৮৬, ইফা]

একারনেই যখনই আমাদের রাসুল (সাঃ) এমন কিছু পেতেন যাতে তিনি খুশী হতেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন। আল্লাহ বলেন: “কখনই নয়, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। আপনি সেজদা করুন ও আমার নৈকট্য অর্জন করুন।” [সূরা ‘আলাক্বঃ ১৯]

জান্নাতের দিকে আরোহণ

ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, সিজদার সময় মানুষের আত্মাকে আল্লাহ্‌র নিকটবর্তী করা হয়। আপনি যত বেশী বেশী সিজদা করবেন, আপনার মর্যাদা জান্নাতে তত বেশী বাড়ানো হবে ইনশাআল্লাহ, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছবেন; জান্নাতুল ফেরদউসে, আর এখানেই রাসুল (সাঃ) থাকবেন। আর এই স্তরের উপরেই হল পরম দয়ালু আল্লাহর সিংহাসন। আমরা কিভাবে জানি যে সিজদার সাহায্যে এটা অর্জন করা সম্ভব? সাহাবী রবী’আ ইবনে কা’ব আল আসলামী (রাঃ) বলেন: ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে রাত কাটিয়েছিলাম। আমি তাঁর ওযুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দিতাম।
তিনি আমাকে বললেনঃ কিছু চাও।
আমি বললামঃ বেহেশতে আপনার সাহচর্য প্রার্থনা করছি।
তিনি বললেনঃ এ ছাড়া আরও কিছু আছে কি?
আমি বললামঃ এটাই আমার আবেদন।
তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি অধিক পরিমাণে সিজদা করে তোমার নিজের স্বার্থেই আমাকে সাহায্য কর।‘ [মুসলিমঃ ৯৮৭; ইফা]

অন্তরের সিজদা

অন্তর কি কখনও সিজদা করে? করে, এবং শরীরের চেয়ে বেশী করে। অন্তরের সিজদা হল এর বিনয়; যেমন কেউ শারীরিকভাবে সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু অন্তর তখনও বিনয়াবনত থাকতে পারে অর্থাৎ সিজদায় নত থাকতে পারে। এটা তখনই সম্ভব যখন কেউ অন্তর থেকে জানে যে – তিনি আল্লাহ্‌ যিনি পথপ্রদর্শন করেন, যিনি মানুষকে সম্মানিত ও অপমানিত করতে পারেন, যিনি দয়া করেন আবার শাস্তিও দেন, এবং যিনি অন্তরসমূহ থেকে দুঃখ ও কষ্ট দূর করে দেন। আপনার অন্তর যদি কোনদিন এক বিশেষ রকম শূন্যতা অনুভব না করে থাকে, বিনম্রবোধ না থেকে থাকে, তাহলে আপনার অন্তরে সিজদার এক বিশেষ উপাদানের অভাব আছে।

মিশারী আল খাররাজ নামের একজন দাঈ একবার প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমি কিভাবে বুঝব আমার অন্তরে বিনম্রতা আছে কিনা?’ জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি যখন বিনম্র বোধ করবেন, তখন নিজেই বুঝতে পারবেন।’ আপনার অন্তর আল্লাহর সামনে শ্রদ্ধায় বিনয়াবত হয়ে আছে, অথচ আপনি তা বুঝতে পারবেন না, এমনটি হবার নয়। কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেনঃ “তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার চিহ্ন থাকবে” [সূরা ফাতহঃ ২৯]

 বেশীরভাগ মানুষই মনে করে এখানে মুখের সেই চিহ্নের কথা বলা হয়েছে যা সিজদার কারণে অনেক সময় মানুষের কপালে তৈরি হয়। তথাপি, এই আয়াতের ব্যখ্যায় মুজাহিদ বলেছেন, এই চিহ্ন বুঝিয়েছে খুশুর কারণে তৈরি হওয়া বিনম্রতা থেকে, আর এটা শুধু এই দুনিয়াতেই। আর আল-জালালাইন একে সেই নূর হিসেবে ব্যখ্যা করেন যার সাহায্যে আখিরাতে মু’মিনদেরকে চেনা যাবে। রাসুল (সাঃ) বলেনঃ “সেই দিন আমার উম্মতের লোকদের সিজদার কারণে চেহারা উজ্জ্বল থাকবে, আর ওযুর কারণে তাদের হাত পা গুলো উজ্জ্বল থাকবে। [আহমাদ]

সিজদা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে শয়তান আমাদেরকে এর জন্য ঘৃণা করে। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেন: যখন কোন আদম সন্তান সিজদার আয়াত পাঠ করে এবং তারপর সিজদায় লুটিয়ে পড়ে, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে একপাশে সরে দাঁড়ায় এবং বলতে থকেঃ ‘হায় আমার পোড়া কপাল! আদম সন্তানকে সিজদা করার নির্দেশ করা হলে শে সিজদা করল। ফলে তার জন্য জান্নাত। আর আমাকেও সিজদার নির্দেশ করা হয়েছিলো কিন্তু আমি অস্বীকার করলাম, তাই আমার জন্য জাহান্নাম।’ [মুসলিমঃ ১৫২; ইফা]

আল্লাহর নৈকট্য

সুবহানাল্লাহ! এই মানুষটি রাসুল (সাঃ) এর মসজিদে নববীতে সিজদারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা জানি না কি তার পরিচয়, তিনি জীবনে কি করেছিলেন; শুধু এইটুকু জানি আল্লাহ্‌কে সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় পেয়ে মৃত্যুবরণ করার সৌভাগ্য আল্লাহ্‌ তাকে দিয়েছেন। আমাদের শেষ অবস্থা অনুযায়ী আমাদের পুনরুত্থিত করা হবে। আমরা কি অবস্থায় থাকব তখন?

আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সালাতকে আরও সুন্দর করার তৌফিক দান করেন, এবং আমাদের অন্তরকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আরও সুযোগ করে দেন।

আমীন!!

অন্যান্য পর্ব গুলো এই লিংক থেকে পড়ুন:-

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

19 COMMENTS

আপনার মন্তব্য লিখুন