কুর’আন পড়ুন, কারণ কিয়ামাতের দিন এটা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে

1
3699

লেখক: আল-ফাওযান । অনুবাদ: মাসুদ শরিফ । ওয়েব সম্পাদনা: মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

আবূ উমামাহ আল বাহিলী (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “আমি আল্লাহ্‌র রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ “তোমরা কুর’আন পড়, কারণ ক্বিয়ামাতের দিন সে তার পাঠকারীর জন্য শাফা’আতকারী হিসাবে আসবে” [মুসলিম ৮০৪]

এই হাদীসটিতে কুর’আন পড়ার গুরুত্ব এবং এটা আমাদের জন্য যে পুরস্কার বয়ে নিয়ে আনবে সে ব্যাপারে বলা হয়েছে। ক্বিয়ামাতের দিন কুর’আন তার পাঠকারীকে জান্নাত প্রদান করার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে অনুরোধ করবে।

আল-নাওয়াস ইবনু সাম’আন (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ “ক্বিয়ামাতের দিন কুর’আন ও কুর’আন অনুযায়ী যারা ‘আমাল করত তাদেরকে আনা হবে। সূরাহ বাক্বরহ্‌ ও সূরাহ ‘আল ‘ইমরন্‌ অগ্রভাগে থাকবে। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরাহ দুটি সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন যা আমি কখনো ভুলিনি। তিনি বলেছিলেনঃ “এই সূরাহ দু’টি দু’খণ্ড ছায়াদানকারী মেঘের আকারে অথবা দু’টি কালো চাদরের মত ছায়াদানকারী হিসাবে আসবে যার মধ্যখানে আলোর ঝলকানি অথবা সারিবদ্ধ দু’ঝাঁক পাখীর আকারে আসবে এবং পাঠকারীদের পক্ষ নিয়ে যুক্তি দিতে থাকবে।” [মুসলিম ৮০৫]

আবদ-আল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র হতে বর্ণিত। আল্লাহ্‌র রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন সিয়াম এবং কুর’আন জনৈক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্‌র কাছে সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, ‘হে প্রভু, আমি তাকে দিনের বেলা খাবার এবং অন্যান্য পার্থিব ইচ্ছা থেকে দূরে রেখেছিলাম, সুতরাং আপনি আমাকে তার হয়ে সুপারিশ করতে দিন।‘ কুর’আন বলবেঃ ‘আমি তাকে রাতে ঘুমানোর থেকে বিরত রেখেছিলাম, সুতরাং আপনি আমাকে তার জন্য সুপারিশ করতে দিন।’ এভাবে এদের দু’জনকেই ঐ ব্যক্তির পক্ষ থেকে মধ্যস্থতা করার অনুমতি দেয়া হবে।” [আহ্‌মাদ ৬৫৮৯]

সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির উচিৎ রমজানের দিনে এবং রাত্রিতে বেশী বেশী করে কুর’আন তিলাওয়াত করা। কারণ অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই দিনগুলোতে কুর’আন পড়ার গুরুত্ব অনেক বেশী। আল্লাহ্‌ তা’আলা যে মহিমান্বিত মাসে এই কুর’আন নাযিল করেছেন, সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির উচিৎ সেই মাসটির সর্বোত্তম ব্যবহার করা এবং এর থেকে সাওয়াব হাসিল করা। রাতের বেলা যেহেতু সবধরণের ঝামেলা এবং পারিপার্শ্বিক কোলাহল মুক্ত থাকে, তাই রমজানের রাতে বেশী বেশী কুর’আন তিলাওয়াত করা ভাল। এতে করে যা পড়া হচ্ছে সে দিকে ভালভাবে মনোনিবেশ করা যায় এবং কুর’আনের অর্থ বুঝতে সুবিধা হয়।

জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) প্রত্যেক রমজানের রাতে নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে দেখা করতেন এবং একসাথে কুর’আন পড়তেন। জিক্‌র করা যদি কুর’আন পড়ার সমতুল্য কিংবা এর চেয়েও বেশী মর্যাদার হত তাহলে উনারা এই দেখা সাক্ষাতের সময়গুলোতে কিছুসময় অথবা সারাক্ষণই জিক্‌র এ ব্যস্ত থাকতেন। রমজানের সময় কুর’আন পড়া, এ উদ্দেশ্যে একত্রিত হওয়া এবং যে এই ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী তার সামনে পড়া মুস্তাহাব অর্থাৎ পছন্দনীয় কাজ। মুসলিম উম্মাহ-এর সকল ন্যায়পরায়ণ সালাফগন রমজানের সময়ে অধিক হারে কুর’আন পড়তেন। সিয়াম পালনরত অবস্থায় তাঁরা মাসজিদে বসতেন এবং বলতেন, আমরা যেন আমাদের সিয়ামকে রক্ষা করি এবং অন্যের ব্যাপারে পরনিন্দা করে সময় নষ্ট না করি। সালাত এবং অন্যান্য সবসময়ই তাঁরা কুর’আন পাঠে নিজেদের ব্যস্ত রাখতেন।

  • উসমান (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) একদিনের মধ্যে পুরো কুর’আন পড়ে ফেলতেন।
  • সালাফগণদের কেউ কেউ প্রতি তিনরাতে তারাবীহ্‌ এর সালাতে কুর’আন পড়ে শেষ করতেন।
  • কেউ কেউ সাতরাতের মধ্যে আবার কেউ কেউ দশরাতের মধ্যে পুরো কুর’আন একবার করে তিলাওয়াত করতেন।
  • আল-শাফ’ই রমজানের সময় সালাতে তিলাওয়াত বাদেই ষাটবার করে সমস্ত কুর’আন পড়তেন।
  • আল-আসওয়াদ রমজানের প্রত্যেক দুইরাত অন্তর অন্তর সম্পূর্ণ কুর’আন পড়তেন।
  • ক্বুতাদাহ্‌ রমজান ছাড়া অন্যান্য সময়গুলোতে প্রত্যেক সাতদিনে একবার করে আর রমজানের সময় প্রত্যেক তিনরাতে এবং শেষ দশরাতের প্রত্যেক দিন একবার করে কুর’আন পাঠ করতেন।

আল-হাফিয ইবনু রজাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ এমন একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, তিন দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ কুর’আন পড়া উচিৎ না। তবে, বিশেষ সময়গুলোতে, যেমন, রমজান মাসে- বিশেষ করে শেষ দশদিনে যখন লাইলাত আল-ক্বদ্‌র এর অনুসন্ধান করা হয়, অথবা বিশেষ জায়গাগুলোতে যেমন, যারা মাক্কার অধিবাসী নন, তার যখন মাক্কায় যান, তখন তাদের উচিৎ বেশী বেশী করে কুর’আন তিলাওয়াতের মাধ্যমে এই বিশেষ সময় এবং জায়গাগুলোর পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করা ও সাওয়াব লাভ করা। কারণ রমজানের সময় এবং মাক্কার মত বিশেষ জায়গাগুলোতে কুর’আন পাঠের মাধ্যমে অধিক সাওয়াব লাভ করা যায়। ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক্ব এবং অন্যান্য আরো অনেক ইমামগণ অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন। উপরে উল্লেখিত সালাফগণের কাজের মাধ্যমেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। যথাযথ শিষ্ঠাচার ও আল্লাহ্‌র প্রতি আন্তরিকতা বজায় রেখে কুর’আন তিলাওয়াত করা উচিৎ। যিনি কুর’আন পড়বেন তার উচিৎ তিনি যা পড়ছেন তা যেন বুঝে পড়েন। অনেকেই তাড়াহুড়ো করে পড়েন, এটা ঠিক না। বরং আমাদের উচিৎ ধীরে ধীরে কুর’আনের আয়াত ও শব্দের অর্থের প্রতি খেয়াল রেখে পড়া, যাতে করে আমরা যা পড়ছি তা যেন নিজেরা বুঝতে পারি। এতে করে প্রতিটি শব্দের উচ্চারণও সঠিক হবে এবং একাগ্রচিত্তে কুর’আন পড়া হবে।

আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেছেনঃ“এটি একটি অত্যন্ত বরকতপূর্ণ কিতাব, যা (হে মুহাম্মাদ!) আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে এরা তার আয়াত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞানী ও চিন্তাশীলরা তা থেকে শিক্ষা নেয়।” [সূরা সোয়াদ; ৩৮:২৯]

আমাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছেন যারা আশেপাশে লোকজন নিয়ে কুর’আন পড়তে বসেন, এবং মাঝে মাঝেই পড়া বাদ দিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করে দেন, যেটা কুর’আন পড়ার মূল উদ্দেশ্যকে ব্যহত করে এবং এতে করে কুর’আন এর আদবের বরখেলাফ হয়। যিনি কুর’আন পড়ছেন তার উচিৎ কুর’আন অনুযায়ী চলা অর্থাৎ কুর’আনে যেটার অনুমতি দেয়া হয়েছে সেটাকে হালাল মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করা এবং কুর’আনে যেটার অনুমতি নেই সেটাকে হারাম মেনে নিয়ে তা থেকে দূরে থাকা। এর ফলে ক্বিয়ামাতের দিন কুর’আন ঐ ব্যক্তির হয়ে সাক্ষ্য দিবে এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য আল্লাহ্‌র কাছে সুপারিশ করবে।

সমস্ত বিষয়েই আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ।
সূত্রঃ আহকাম আল-সিয়াম

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

1 COMMENT

  1. আল-শাফ’ই রমজানের সময় সালাতে তিলাওয়াত বাদেই ষাটবার করে সমস্ত কুর’আন পড়তেন। – Is this information in this post authentic , will be glad if you give its reference. JazakALLAHU khairan

আপনার মন্তব্য লিখুন