মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা পর্ব -১০

0
2236

লেখক: ড. মো: আমিনুল ইসলাম | সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪ |পর্ব ৫ পর্ব ৬ | পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯ | পর্ব ১০ | পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫

পানাহারের আদবসমূহ

মুসলিম ব্যক্তি খাদ্য ও পানীয়কে অন্যান্য উপকরণের মতই মনে করে এবং তাকে আসলেই সে (জীবনের) চূড়ান্ত উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য মনে করে না; সুতরাং সে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্যেই খায় ও পান করে, যার দ্বারা সে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে সক্ষম হয়; ঐ ইবাদত তাকে পরকালের সম্মান ও সৌভাগ্য অর্জনের জন্য যোগ্য করে তুলে; সুতরাং সে শুধু খাদ্য ও পানীয়ের মজা উপভোগ করার জন্য পানাহার করে না। তাই সে ক্ষুধার্ত না হলে খায় না এবং পিপাসার্ত না হলে পান করে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: “আমরা এমন এক জাতি— ক্ষুধা না লাগলে আমরা খাই না; আর যখন আমরা খাই, তখন পেট ভরে খাই না।[1]

আর সেখান থেকে মুসলিম ব্যক্তি তার খাবার ও পানীয়ের ব্যাপারে কতগুলো শরী‘য়ত সম্মত বিশেষ আদব রক্ষা করাকে নিজ দায়িত্বরূপে গ্রহণ করে; যেমন—

(ক) খাওয়ার পূর্বের আদবসমূহ:

১. হালাল ও পবিত্র জিনিস থোকে তার খাবার ও পানীয়কে পছন্দ করবে, যা হারাম ও সন্দেহযুক্ত বস্তু থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমরা যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা থেকে খাও।[2] আর পবিত্র মানে হালাল বস্তু, যা ময়লাযুক্ত, দূষিত ও অপবিত্র নয়।

২. খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার দ্বারা নিয়ত থাকবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার জন্য শক্তি অর্জন করা; যাতে সে যা খায় বা পান করে, তার জন্য সে সাওয়াব পেতে পারে; কেননা, অনেক সময় ভালো নিয়তের কারণে ‘মুবাহ’ (বৈধ) বিষয় আনুগত্যে পরিণত হয়, ফলে মুসলিম ব্যক্তিকে তার জন্য সাওয়াব দেয়া হয়।

৩. খাওয়ার আগে দুই হাত ধৌত করা, যদি তাতে ময়লা থাকে অথবা হাত দু’টির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়।

৪. যমীনের উপর কোনো পাত্রে খাবার রাখা, টেবিলের উপর নয়; কেননা, এটা বিনয়-নম্রতার একেবারেই কাছাকাছি পন্থা। কারণ, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম টেবিলের উপর খাননি এবং কোনো থালা বা প্লেটে করেও খাননি।[3]

৫. বিনয়ীভাবে দুই হাঁটু গেড়ে দুই পায়ের পাতার উপরে বসা, অথবা ডান পা দাঁড় করিয়ে দিয়ে বাম পায়ের উপরে বসা, যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসতেন; তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আমি হেলান দিয়ে খাইনা। আমি তো গোলাম; আমি খাই, যেমনিভাবে গোলামে খায়; আর আমি বসি, যেমনিভাবে গোলামে বসে।[4]

৬. প্রস্তুত করা বিদ্যমান খাদ্যে সন্তুষ্ট থাকা এবং খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা; যদি তার কাছে ভালো লাগে খাবে, আর ভালো না লাগলে বর্জন করবে; কেননা, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতেন না; তাঁর রুচিসম্মত হলে খেতেন; আর রুচিসম্মত না হলে খেতেন না। [5]

৭. একাকি না খেয়ে কোনো মেহমান, অথবা পরিবার, অথবা সন্তান, অথবা খাদেমকে সাথে নিয়ে খাওয়া; কেননা, হাদিসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা সম্মিলিতভাবে তোমাদের খাবার খাও এবং আল্লাহর নামে খাও, দেখবে তোমাদের খাদ্যে বরকত হবে।[6]

(খ) খাওয়ার মধ্যকার সময়ের আদবসমূহ:

১. ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে) বলে খাওয়া শুরু করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে নেয়; আর সে যদি শুরুতে আল্লাহ তা‘আলার নাম নিতে ভুলে যায়, তাহলে যেন বলে: « بسم اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ »  (প্রথমে ও শেষে আল্লাহর নামে)।[7]

২. আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করার মাধ্যমে অর্থাৎ ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলে খাওয়া শেষ করা। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি খাবার খেয়ে শেষ করার পর বলবে: « الحَمْدُ للهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا ، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ »  (অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ খাবার খাওয়ালেন এবং আমাকে রিযিক দিলেন আমার কোনরূপ চেষ্টা ও শক্তি ছাড়াই), তার পেছনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [8]

৩. ডান হাত দ্বারা খাবার গ্রহণ করা, ছোট ছোট লোকমা দেওয়া এবং ভালোভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া; আর পাত্রের মাঝখান থেকে না খেয়ে নিজের সামনে থেকে খাওয়া; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমর ইবন আবি সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন: “হে বেটা! আল্লাহ তা‘আলার নাম লও (অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ বল); ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।[9] তিনি আরও বলেন: “বরকত খাবারের মধ্যখানে অবতীর্ণ হয়; কাজেই তোমরা তার পাশ থেকে খাও; তার মাঝখান থেকে খেয়ো না।[10]

৪. খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া; আর খাবারের পাত্র চেটে খাওয়া এবং রুমাল বা টিসু দিয়ে স্বীয় আঙুলসমূহ মুছে ফেলার পূর্বে বা পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলার পূর্বে সেগুলো চেটে খাওয়া। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন তার আঙুলসমূহ মুছে না ফেলে, যতক্ষণ না সে তা চেটে খায় অথবা কাউকে দিয়ে চাটিয়ে নেয়।[11]

তাছাড়া জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুল ও খাওয়ার পাত্র চেটে খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি বলেন: ‘তোমাদের জানা নেই, তোমাদের কোন্ খাবারের মধ্যে বরকত রয়েছে।[12]

৫. খাবার গ্রহণ করার সময় তার থেকে কিছু পড়ে গেলে তার থেকে ময়লা দূর করে তা খেয়ে ফেলবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যখন তোমাদের কারও লোকমা পড়ে যায়, তখন সে যেন তা তুলে নেয়; আর তার থেকে ময়লা দূর করে নিয়ে যেন তা খেয়ে ফেলে এবং তা যেন শয়তানের জন্য রেখে না দেয়।[13]

৬. গরম খাবারে (ঠাণ্ডা করার জন্য) ফুঁ না দেওয়া এবং তা ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত না খাওয়া; আর পানি পান করা অবস্থায় পানির মধ্যে ফুঁ না দেওয়া এবং উচিৎ হলো পানপাত্রের বাইরে তিনবার শ্বাস নেয়া; কেননা, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করতে তিনবার শ্বাস নিতেন।[14] আর আবূ সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানীয় বস্তুর মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।[15] তাছাড়া আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির পাত্রে শ্বাস নিতে অথবা তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।[16]

৭. অতি ভোজন থেকে বিরত থাকা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “মানুষের ভরা পেটের চেয়ে খারাপ পাত্র আর নেই। আদম সন্তানের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমাই তো যথেষ্ট; সুতরাং সে যদি তাতে তুষ্ট না হতে পারে, তাহলে (পেটকে তিন ভাগে ভাগ করে নেবে) এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং অপর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ঠিক করে নেবে।[17]

৮. অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রথমে খাবার বা পানীয় পরিবেশন করা; অতঃপর ডান দিক থেকে একজন একজন করে খাবার পরিবেশন করতে থাকা; আর খাবার বা পানীয় পরিবেশনকারী হবে কাওমের মাঝে সর্বশেষ খাবার বা পানীয় গ্রহণকারী ব্যক্তি। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « كَبِّرْ كَبِّرْ »  অর্থাৎ উপবিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্য থেকে বয়োজ্যেষ্ঠকে দিয়ে শুরু কর; তাছাড়া “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা’র কাছে তার বাম পাশে বসা বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে পানীয় পরিবেশনের ব্যাপারে অনুমতি নিয়েছেন, যখন আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ছিলেন তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের) ডানপাশে এবং বয়স্ক ব্যক্তিগণ ছিলেন তাঁর বামপাশে। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তার কাছে অনুমতি চাওয়াই প্রমাণ করে যে, ডানপাশে বসা ব্যক্তিই প্রথমে পানীয় পাওয়ার ব্যাপারে বেশি হকদার।” [18] নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:  « الأيمن فالأيمن »  (অর্থাৎ ডানপাশ থেকে পরপর খাবার প্রদান কর)। [19] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “কাওমের মধ্যে যে সাকী (পানীয় সরবরাহকারী) হবে, পান করার দিক থেকে সে সবার শেষে থাকবে।[20]

৯. যে মাজলিসে বয়সের দিক থেকে বড়, অথবা মর্যাদার দিক থেকে তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি আছে, সেখানে প্রথমে খাবার বা পানীয় গ্রহণ না করা। কেননা, তা শিষ্টাচার পরিপন্থি এবং এমন ব্যক্তিকে নিন্দিত লোভী বলে চিত্রিত করা হয়। কেউ কেউ ছন্দাকারে বলেন: আর যদি খাবারের দিকে হাতগুলো প্রসারিত হয়েই যায়, তখন হব না আমি তাদের সকলের অগ্রগামী; কারণ, কাওমের মাঝে সেই সবচেয়ে লোভী, যে তড়িৎ প্রিয় বেশি। [21]

১০. তার বন্ধু বা মেযবান কর্তৃক যেন তাকে বলতে না হয়: ‘তুমি খাও’ এবং যাতে খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে না হয়, বরং তার জন্য উচিৎ হল কোনো প্রকার লাজ্জাবোধ না করে প্রয়োজন মত খাবার খেয়ে নেওয়া; কেননা, এর মধ্যে তার বন্ধু বা মেযবানের জন্য অসুবিধা আছে, যেমনিভাবে তাতে রয়েছে এক ধরনের লৌকিকতা; আর ইসলামে লৌকিকতা বা প্রদর্শনী করা হারাম।

১১. খাওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধুর প্রতি সদয় হওয়া; সুতরাং সে তার থেকে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবে না, বিশেষ করে যখন খাবারের পরিমাণ কম হয়; কেননা, এ ক্ষেত্রে সে অন্যের হক ভক্ষণকারী বলে গণ্য হবে।

১২. খাওয়ার মাঝখানে সাথীদের দিকে না তাকানো এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণ না করা; কেননা, এ রকম করলে তারা লজ্জা পাবে, বরং তার জন্য উচিৎ হলো তার চারি পাশের খাবার গ্রহণকারীদের থেকে তার দৃষ্টিকে অবনমিত করে রাখা এবং তাদেরকে অবলোকন না করা; কেননা, এটা তাদেরকে কষ্ট দিবে; যেমনিভাবে এ কারণে সে কখনও কখনও তাদের কারো কারো ঘৃণার পাত্র হবে; ফলে এ কারণে সে গুনাহগার হবে।

১৩. এমন কাজ না করা, যাকে মানুষ স্বভাবগতভাবে অপছন্দ করে; সুতরাং সে পাত্রের মধ্যে তার হাতকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিবে না এবং খাবার গ্রহণের সময় তার মাথাকে পাত্রের নিকটবর্তী করবে না, যাতে তার মুখ থেকে কোনো কিছু তাতে না পড়ে; যেমন— সে যখন রুটি থেকে তার দাঁত দ্বারা কিছু অংশ গ্রহণ করে, তখন পাত্রের মধ্যে তার বাকি অংশ ডুবিয়ে দিবে না; ঠিক অনুরূপভাবে তার কর্তব্য হল এমন শব্দ চয়নে কথা না বলা, যা ময়লা ও আবর্জজনার কথা মনে করিয়ে দেয়; কারণ, কোনো কোনো সময় এর দ্বারা সাথীদের কেউ কেউ কষ্ট অনুভব করে; আর মুসলিম ভাইকে কষ্ট দেয়া হারাম।

১৪. ফকীরের সাথে তার খাওয়া হবে পরার্থপরতা বা প্রেম-ভালবাসার ভিত্তিতে, ভাই-বন্ধুদের সাথে খাওয়া হবে আনন্দ ও নির্মল রসিকতার ভিত্তিতে এবং পদস্থ ও মর্যাদাবান ব্যক্তিবর্গের সাথে খাওয়া হবে আদব-লেহাজ ও শ্রদ্ধার সাথে।

(গ) খাওয়ার পরের আদবসমূহ:

১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে পেট ভরে খাওয়ার পূর্বেই সে খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেবে, যাতে সে মারাত্মক ধরনের বদহজমের শিকার না হয় এবং শিকার না হয় মেধা ও বুদ্ধি বিনষ্টকারী অজীর্ণের।

২. হাত চেটে খাওয়া, তারপর তা মুছে ফেলা, অথবা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা; তবে ধুয়ে ফেলাটাই সবচেয়ে ভালো ও সুন্দর।

৩. খাওয়ার মাঝখানে যেসব খাবার পড়ে যায়, তা কুড়িয়ে নেয়া; কেননা, এ ব্যাপারে হাদিসে গুরুত্ব ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে; তাছাড়া এটা নি‘য়ামতের এক প্রকার শুকরিয়াও বটে।

৪. মুখ পরিষ্কার করার জন্য দাঁত খিলাল করা এবং ভালোভাবে কুলি করা; কেননা, মুখ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা হয় এবং বন্ধু-বান্ধবগণের সাথে কথা বলতে হয়; তাছাড়া মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দাঁতের সুস্থতাকে বহাল রাখে।

৫. পানাহারের পরে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ (الحمد لله ) বলে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা; আর যখন দুধ পান করবে, তখন বলবে: হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি যে রিযিক দান করেছ, তাতে তুমি বরকত দান কর এবং আমাদেরকে তা আরও বাড়িয়ে দাও। আর যদি কোনো সম্প্রদায়ের নিকট ইফতার করে, তাহলে বলবে: তোমার কাছে সাওম পালনকারীগণ ইফতার করল, সজ্জনরা তোমার খাবার খেলো, আর ফেরেশ্তাগণ তোমার জন্য ‘ইস্তিগফার’ তথা ক্ষমা প্রার্থনা করল। [22] আর যদি বলে, হে আল্লাহ! তাদেরকে তুমি যে রিযিক দান করেছ, তাতে তুমি বরকত দান কর; তাদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং তাদের প্রতি রহম কর, তাহলে সে সঠিকভাবে সুন্নাহ পালন করল। [23]

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪ |পর্ব ৫ পর্ব ৬ | পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯ | পর্ব ১০ | পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫

* * *

[1] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৬৪; তিনি বলেন: এ হাদিসটি কে বর্ণনা করেছেন তা আমার জানা নেই; সম্ভবত তা সাহাবীগণের আছারসমূহের মধ্য থেকে একটি ‘আছার’ এবং তা হাদিসে নববী নয়; আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
[2] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭২
[3] বুখারী, হাদিস নং- ৫০৯৯
[4] বুখারী ও বায়হাকী।
[5] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭৬৫
[6] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭৬৬; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৩২৮৬ এবং আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
[7] আবূ দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
[8] আবূ দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
[9] বুখারী ও মুসলিম।
[10] আবূ দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘হাসান সহীহ’ বলেছেন।
[11] বুখারী, হাদিস নং- ৫১৪০; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪১৫
[12] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪২০
[13] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪২১ ও ৫৪২৬
[14] বুখারী, হাদিস নং- ৫৩০৮; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪০৬
[15] তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।
[16] তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।
[17] আহমাদ, ইবনু মাজাহ, তিরমিযী ও হাকেম এবং হাদিসটি ‘হাসান’।
[18] বুখারী (হাদিস নং- ২২২৪) ও মুসলিম।
[19] বুখারী (হাদিস নং- ২২২৫) ও মুসলিম।
[20] মুসলিম, হাদিস নং- ১৫৯৪; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭২৭ ; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৩৪৩৪ এবং আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
[21] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৬৮
[22] ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৭৪৭; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৮৫৬; আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
[23] তিরমিযী, হাদিস নং- ৩৫৭৬; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭৩১; আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন