অশ্লীল কথা বা বাক্য উচ্চারণ ও জিহ্বার হক

2
6263

মূল: কবীরা গুনাহ – ইমাম আযযাহবী (রহ)

জিহ্বার কার্যকারিতা 

জিহ্বা মহান আল্লাহর বিচিত্র সৃষ্টি রহস্যের অন্যতম একটি। সাধারণত জিহ্বাকে আমরা এক টুকরো গোশত মনে করি, কিন্তু জিহ্বা হাড়বিহীন এক টুকরো গোশত হলেও এর রয়েছে অদম্য শক্তি। জিহ্বার শক্তি যে শুধু বর্তমানের উপর রয়েছে তা নয়, বরং জিহ্বা বর্তমান, ভবিষ্যত ও অতীতে সমানভাবে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। বর্তমানে যা হচ্ছে, অতীতে যা হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে যা হবে, সব সমানভাবে উচ্চারণ করতে পারে জিহ্বা।

• পক্ষান্তরে, চোখ দিয়ে শুধু বর্তমান উপস্থিত বস্তু দেখা যায়।
• কান দিয়ে কেবল বর্তমানে উচ্চারিত শব্দগুলোই শোনা যায়।
• জিহ্বা বুদ্ধির প্রতিনিধিস্বরূপ আর বুদ্ধির সীমানা তো সুবৃস্তিত।

তেমনি বুদ্ধিতে যা আসে এবং চিন্তা ও কল্পনা করে বুদ্ধি যা নিশ্চিত করে, জিহ্বা তাই বর্ণনা করতে সক্ষম হয়।
জিহ্বা ছাড়া অন্য কোন ইন্দ্রিয়ের এরুপ শক্তি নেই, কেননা
আকার ও রঙ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর উপর চোখের অধিকার নেই।
আওয়াজ ব্যতীত অন্য কিছু উপর কানের অধিকার নেই।

তেমনিভাবে শরীরের এক একটা অঙ্গ এক একটা বিষয়ের উপর শক্তি প্রয়োগ করে থাকে। আর সমস্ত দেহরাজ্যের উপর মনের যেরূপ শক্তি তেমনি মনের উপর জিহ্বারও শক্তি রয়েছে। মনের সাথে জিহ্বা সমানভাবে কাজ করতে পারে। মন যেটা সংগ্রহ করে কিংবা ছবি আকারে গ্রহণ করে, জিহ্বা তা ভাষায় প্রকাশ করে মনকে সাহায্য করে।

মনের উপর জিহ্বার প্রভাব 

একদিকে মন থেকে ছবি বা ভাব সংগ্রহ করে জিহ্বা যেরূপ ভাষায় প্রকাশ করে, তেমনি মনও জিহ্বার প্রকাশ থেকে ছবি বা ভাব গ্রহণ করে নিজের মনের মধ্যে অংকন করে নিতে পারে। এজন্য জিহ্বা যা প্রকাশ করে মন তা হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে এক নতুন ভাব সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, ক্রন্দনের সময় বা কোন কিছু পড়ার সময় জিহ্বা প্রকাশ করে, আর মন তা আঁকড়ে ধরে। আবার মানুষ যখন আনন্দ অনুভব করে, তখন আনন্দে তার মনও প্রফুল্ল হয় এবং জিহ্বাও তাতে সায় দেয়।
এভাবে, মানুষ যেরূপ কথা বলে থাকে,তার মনেও অনুরূপ ভাব জন্মে থাকে। আর এজন্যই অশ্লীল কথা বা বাক্য উচ্চারণ করলে কিংবা শ্রবণ করলে মন অন্ধকারময় হয়ে যায়। ফলে অন্তরে কোন ভাল কথা স্থান পায় না। আবার জিহ্বার ভাল ও উত্তম কথা উচ্চারণের দ্বারা মন সুন্দর ও পবিত্র হয়।

জিহ্বার হেফাযত জরূরী

জিহ্বার হেফাযত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জিহ্বা বিভিন অনিষ্টের মূল। সেসব অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য জিহ্বার হেফাযত করা কর্তব্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,”যে ব্যক্তি দু’ রানের মাঝের অঙ্গ এবং দু’ চোয়ালের মাঝের অঙ্গ অর্থাৎ লজ্জাস্থান ও জিহ্বার হিজাযতের জিম্মাদার হবে, আমি তাকে জান্নাতে দাখিলের জিম্মাদার হব। “

• জিহ্বা দ্বারা মানুষ মিথ্যা কথা বলে মারাত্মক গুনাহগার হয়।
• জিহ্বার দ্বারা মানুষ পরচর্চা, পরনিন্দা গীবত চোগলখুরি করে গুনাহ কামায়।
• জিহ্বার দ্বারা কাউকে গালি দিয়ে কিংবা ঝগড়া করে পাপ করে।

এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,”যে ব্যক্তি চুপ থাকে,সে মুক্তি পায়”। তিনি আরো বলেন,”পেট,যৌনেন্দ্রীয় ও জিহ্বার ক্ষতি হতে আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন, সে সকল বিপদ হতে রক্ষা পায়।”

হযরত মুয়ায (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন,কোন কাজ সবচেয়ে উত্তম? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় মুখের থেকে জিহ্বা বের করে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলেন। অর্থাৎ ইঙ্গিত করলেন,যবানের হিফাযত করা সবচেয়ে উত্তম ও গুরুত্বপুর্ণ কাজ।

হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একবার হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু কে দেখতে পেলাম, তিনি নিজের হাত দ্বারা নিজের জিহ্বা টানছেন ও রগড়াচ্ছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূলের প্রতিনিধি ! আপনি একি করছেন? তিনি বললেন, “এ হাড়বিহীন ক্ষুদ্র অঙ্গটি আমার উপর অনেক দায় চাপিয়ে দিচ্ছে।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জিহ্বা মানুষের অধিকাংশ পাপের মূল”।
মহানবী রাসুলুল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সমবেত লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন, “সহজতম ইবাদত তোমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছি। তা হচ্ছে চুপ থাকা ও সৎ স্বভাব”। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেছেন,”যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ও কিয়ামতের উপর ঈমান আনে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে অতিরিক্ত কথা বলে,তার অধিক ভুল হয়। আর যে বড় পাপী হয়ে যায় তার জন্য দোযখের আগুন উপযুক্ত।”জিহ্বা দ্বারা মিথ্যা বা অশ্লীল কথা বলা এবং বিভিন্নভাবে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্ট করা ছাড়াও অনেকে আবার জিহ্বা দ্বারা নানা স্বাদের হারাম খাবার চেখে আমল আখলাক বরবাদ করে। এছাড়াও জিহ্বা দ্বারা অন্যকে কুপরামর্শ বা অসৎ প্ররোচনা দিয়ে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ করে। ইত্যকার বিভিন্ন উপায়ে জিহ্বার দ্বারা পাপ সংঘটিত হয়। এসব থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে জিহ্বার হেফাযত করা অত্যন্ত জরুরী। সেই সাথে জিহ্বাকে মহান আল্লাহর যিকির, কুরআন তিলাওয়াত, দ্বীনী আলোচনা ও দ্বীনের দাওয়াত প্রভৃতি সৎ কাজে নিয়োজিত করে অনেক নেকি অর্জন করা যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

2 COMMENTS

  1. লেখাটা খুব ভালো , কিন্তু হাদিস গুলর উৎস দেয়া উছিত ছিল…

আপনার মন্তব্য লিখুন