একজন ঈমানদার দা‘ঈর বর্জিত গুণাবলি – পর্ব ২ – হিংসা

1
3652

DawahMission_Gloucester_FB-01

লেখক:মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০

২. হিংসা

হিংসা করা কবিরা গুনাহ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনে ঘোষণা করেন: হিংসুক যখন হিংসা করে, তখন তার ক্ষতি হতে আশ্রয় প্রার্থনা কর।” [26]

এ প্রসেঙ্গ হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে:রাসূল (সা:) বলেছেন : তোমরা হিংসা হতে বিরত থাক। কেননা হিংসা মানুষের সৎকর্মগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনিভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।” [27]

হিংসার পরিচয়:

হিংসার আরবী প্রতিশব্দ হলো হাসাদ (حسد)। যার আভিধানিক অর্থ হিংসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি। পরিভাষায় বলা হয় যে, কারো উন্নতি বা ভাল অবস্থা দেখে তা অসহ্য হওয়া এবং মনে মনে এই কামনা করা যে, তাঁর এ ভাল অবস্থা না থাকুক।মানুষের ভাল অবস্থা দর্শনে অন্তরে দুই প্রকার হালত পয়দা হয়ে থাকে। এক প্রকারের নাম হলো হাসাদ তথা হিংসা অন্য প্রকার হলো গীবতা।

হাসাদ হলো অপরের ভাল দেখে মনে মনে তার অমঙ্গল কামনা ও অকল্যাণ কামনা করা এবং হিংসা করা। গীবতা (غبط) শব্দটি আরবী। যার আভিধানিক অর্থ হলো অন্যের ন্যায় সুখ কামনা করা, ঈর্ষা, সুখ, খুশি, আনন্দ ইত্যাদি। আর যদি ভাল অবস্থা দেখে মনে মনে এই কামনা করে যে, আমারও এরূপ ভাল অবস্থা হাসিল হউক, তাহলে তাকে গীবতা বলে।

হিংসার হুকুম:

হাসাদ তথা হিংসা করা হারাম। প্রকাশ থাকে যে, গোমরাহ পীর ও গোমরাহ্ আলিমগণ যে নিয়ামত দ্বারা গোমরাহীর কাজ বিস্তার করে উক্ত নিয়ামত ধ্বংসর কামনা করা জায়েয এবং ফাসিক লোকরা যে নিয়ামত দ্বারা বেশরা কাজ বিস্তার করে উহাতে হিংসা জায়িয। যে নিয়ামত দর্শনে গীবতার উদয় হয় উক্ত নিয়ামত যদি দ্বীনি নিয়ামত হয় এবং হাসিল করা ওয়াজিব হয়, যেমন : ঈমান, নামায, যাকাত ইত্যাদি তবে গীবতা করা ওয়াজিব। আর যদি উক্ত নিয়ামত নফল হয়, তবে সে গীবতা করা মুস্তাহাব। আর যদি উক্ত নিয়ামত দুনিয়াবী হয়ে থাকে তাহলে তা মুবাহ। [28]

হিংসা করার কারণসমূহ:

বিভিন্ন গ্রন্থাদি ও মুসলিম মনীষীদের গবেষণার ফলে হিংসার নিম্নোক্ত কারণগুরো খুঁজে বের করা হয়েছে। যেমন :

  • আদাওয়াত। তথা শত্রুতার কারণে অন্তরে হিংসা পয়দা হয়ে থাকে।
  • সমশ্রেণী লোকদের উন্নতি দর্শনে অন্তরে হিংসা পয়দা হয়ে থাকে।
  • হিকারাত। অর্থাৎ যাকে হিকারাতের তথা অবজ্ঞার চোখে দেখা হয় হতো তার উন্নতি দর্শনে অন্তরে হিংসার পয়দা হয়।
  • তায়াজ্জুব। অর্থাৎ যার উন্নতি কল্পনা ছিল না, তাঁর উন্নতি দর্শনে হিংসা পয়দা হয়ে থাকে।
  • ইচ্ছা পুরণ না হওয়ার ভয় হলে।
  • মহব্বতে রিয়াসাতের জন্য অন্তরে হিংসার পয়দা হয়ে থাকে।
  • খুবস ও বুখলে নফসের কারণে অন্তরে হিংসার উৎপত্তি হয়ে থাকে। [29]

হিংসার পরিণাম:

হিংসার পরিণাম খুব ভয়াবহ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনে ঘোষণা করেন: হিংসুক যখন হিংসা করে, তখন তার ক্ষতি হতে আশ্রয় প্রার্থনা কর।” [30]

এ প্রসেঙ্গ হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে: “রাসূল (সা:) বলেছেন: তোমরা হিংসা হতে বিরত থাক। কেননা হিংসা মানুষের সৎকর্মগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনিভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।[31]

আব্দুর রহমান ইবন মু‘আবিয়া রা. হতে বর্ণিত; নবী করীম সা. বলেছেন: তিনটি দূষণীয় কাজ থেকে কেউ মুক্তি পায় না : এক. খারাপ ধারণা, দুই. হিংসা, তিন. অশুভ ফলাফলের ধারণা।জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেসা করলেন : হে আল্লাহর রাসূল সা.! এগুলো থেকে বিরত থাকার উপায় কী? রাসূল সা. বললেন : মনে মনে কাউকে হিংসা করলে কাজে কর্মে তা প্রকাশ না করা, কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা করলে তা সত্য বলে বিশ্বাস না করা এবং অশুভ ফলাফলের ধারণার কারণে কাজ থেকে ফিরে না আসা। [32]

রাসূল (সা:) বলেন:সাবধান! শুনে নাও, আল্লাহর নিয়ামতেরও কিছু শত্রু রয়েছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন : হে আল্লাহর রাসূল সা.! আল্লাহর নিয়ামতের শত্রু কারা? রাসূল সা. বললেন : আল্লাহ্ স্বীয় অনুগ্রহে মানুষকে যে নিয়ামত দান করেছেন, তার কারণে মানুষকে যে হিংসা করে, সে আল্লাহর নিয়ামতের শত্রু। [33]

হিংসার পরিণতি সম্পর্কে উপরে বর্ণিত বর্ণনা ছাড়াও আরো অধিক অপকার রয়েছে, যেগুলো মানুষের জীবনের ও পারলৌকিক জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

হিংসা থেকে বাঁচার উপায়:

প্রকাশ থাকে যে, হিংসার চিকিৎসা দুই প্রকারে হয়ে থাকে।

এক. ইলমী ইলাজ (علاج العلمي) : যার উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং তা দর্শনে মনে হিংসার উদয় হয়েছে তার সম্বন্ধে এ ধারণা করা যে, এ ব্যক্তির তাকদীরে উন্নতি লেখা আছে বলেই উন্নতি হয়েছে। এক্ষণে এ ব্যক্তি সাথে হিংসা করলে আল্লাহর তাকদীর অস্বীকার করার মত গোনাহ হবে।

দুই. আমলী ইলাজ (علاج العملي) : অর্থাৎ যার সাথে হিংসার ভাব উদয় হয়েছে তাঁর সাথে ভাল ব্যবহার করা এবং তাঁর প্রশংসা করা। তাহলে দেখা যাবে যে, অন্তর থেকে হিংসার বীজ চিরতরে নি:শেষ হয়ে যাবে।

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০


[২৬] সূরা আল-ফালাক, আয়াত : ৬।
[২৭] আবূ দাউদ, আস-সুনান, খণ্ড ৪, পৃ. ৪২৭, হাদীস নং-৪৯০৫।
[২৮] দাওয়াউল হাসাদ ওয়া আছরুহু আল ত্বালাবাতিল ইলমি, খণ্ড ১, পৃ. ৪৫।
[২৯] ইবনুল কায়্যিম আল-জাওজীর, কিতাবুর রূহ, পৃ. ৩৭৩-৩৭৪; ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহর, মাজমাউল ফাতাওয়া, খণ্ড ১০, পৃ. ১২৪-১২৫; ইবনে হাজার আসকালানীর, ফাতহুল বারী, খণ্ড ১০, পৃ. ৪৮১।
[৩০] সূরা আল-ফালাক, আয়াত : ৬।
[৩১] সুনান আবূ দাউদ, খণ্ড ৪, পৃ. ৪২৭, হাদীস নং-৪৯০৫।
[৩২] মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ – আল-হাইছামী, খণ্ড ৮, পৃ. ৮৭।
[৩৩] দাওয়াউল হাসাদ ওয়া আছরুহু আল ত্বালাবাতিল ইলমি – শায়খ ইবনে জামআহ, খণ্ড ১, পৃ. ২৮০।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

1 COMMENT

আপনার মন্তব্য লিখুন