রোগ-ব্যাধিতে ঈমানদারের করণীয়

3
2344

                                        লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

রোগ-ব্যাধিতে ঈমানদারের করণীয়

১) আল্লাহই একমাত্র আরোগ্যদানকারী এই বিশ্বাস রাখাঃ এ বিশ্বাস রাখা যে, রোগ-ব্যাধিতে একমাত্র আরোগ্যদানকারী মহান আল্লাহ। তিনি ছাড়া অন্য কেউ রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “(ইবরাহীম আ. বললেন) যখন আমি অসুস্থ হই তখন তিনিই আমাকে সুস্থতা দান করেন।” [সূরা শুয়ারা: ৮০] ওষুধ-পথ্য কেবল মাধ্যম। মহান আল্লাহই এ সব ওষুধে রোগমুক্তির কার্যকারিতা দান করেছেন। ওষুধকেই মূল আরগ্যদানকারী মনে করা শিরক। অনুরূপভাবে, অসুখ-বিসুখে তথাকথিত ওলী-আওলিয়ার মাজারে ধর্ণা দেয়া, মাযারে বা কবরে মানত করা, গণক ও ঠাকুরের স্মরণাপন্ন হওয়া ইত্যাদি নাজায়েজ কাজ।


২)সবর করা: কারণ, রোগ-ব্যাধি আল্লাহর তকদীরের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং সবর করা ঈমানের দাবী। সবরের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” [সূরা আনফাল: ৪৬]। তিনি আরও বলেন: ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোন হিসাব ছাড়াই।” [সূরা যুমার: ১০]

সবরের পরিচয় হল:
(ক) মনোক্ষুন্ন না হওয়া এবং হা হুতাশ ও বিরক্তি প্রকাশ করা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।
(খ) মানুষের কাছে রোগ-ব্যাধির ব্যাপারে বেশী অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকা।
(গ) এমন সব কথা ও আচরণ থেকে দূরে থাকা যা ধৈর্য্যহীনতার পরিচয় বহন করে।


৩) শরীয়ত সম্মত পন্থায় চিকিৎসাঃ ধৈর্যের সাথে শরীয়ত সম্মত পন্থায় চিকিৎসা করা; যেমন, কুরআন-হাদীসের মাধ্যমে প্রমানিত এমন দুয়ার মাধ্যমে রুকিয়া বা ঝাড়-ফুঁক, এলোপ্যাথিক, হোমিও, ইউনানি ইত্যাদি পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা ইত্যাদি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে প্রেসকিপশন প্রদান করেছেন। তবে সর্ব প্রকার তাবিজ, কবজ, রিং, সুতা, বালা, আংটি, শরীরে গাছ-গাছালি ঝুলিয়ে রাখা ইত্যাদি সবই বর্জনীয়। কারণ, এগুলো শরীয়ত সম্মত নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে শিরকের পর্যায়ে পড়ে।


৪) রোগ-ব্যাধি গুনাহ মোচনের মাধ্যমঃ এ বিশ্বাস রাখা যে, অসুখ হলে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারের গুনাহ মোচন করেন এবং তাঁর নিকট তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। একজন প্রকৃত মুমিন সর্বাবস্থায় দৃঢ়ভাবে এ কথা বিশ্বাস করে যে, সে যে অবস্থায় আছে, তাতে কোনো কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যেমন সহীহ মুসলিম প্রখ্যাত সাহাবী সুহাইব ইবন সিনান রা. থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, “মুমিনের বিষয়টা বড়ই অদ্ভূত! তার সব অবস্থাতেই কল্যাণ থাকে। এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য যে, যখন সে আনন্দে থাকে, তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং যখন সে কষ্টে থাকে, তখন সবর করে। আর এ উভয় অবস্থাই তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।
 [সহীহ মুসলিমঃ ২৯৯৯]


৫)তওবা ও দু’আঃ রোগ-ব্যাধিতে বেশি বেশি আল্লাহর নিকট তওবা করা এবং সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি দুয়া করা মুমিনের কর্তব্য। সুস্থ অবস্থায় মানুষ আল্লাহর এই নিয়ামত সম্পর্কে গাফেল থাকে। তাই অসুস্থ হলে তার সামনে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি নিজের গুনাহের জন্য মহান আল্লাহর নিকট তওবা করার এবং তার নিকট দুয়া ও আরাধনা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাই এ অবস্থায় বেশি বেশী তওবা-ইস্তিগফার, দুয়া এবং আল্লাহর কাছে ফিরে আসার মাধ্যমে তাঁর প্রিয়ভাজন বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার এ সুযোগকে হাত ছাড়া করা উচিৎ নয়।

পরিশেষে, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন, পৃথিবীর সকল রোগাক্রান্ত মানুষকে সুস্থতা দান করেন এবং কষ্ট ও দুর্দশায় নিপতিত প্রতিটি মানুষের কষ্ট ও দূর্দশা লাঘব করে দেন।

আমীন!!

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

3 COMMENTS

আপনার মন্তব্য লিখুন