সুখের সন্ধানে…

20
2753

লেখকঃ শাইখ ওমর বাকরি মুহাম্মদ

সুখ হচ্ছে এমন একটি জিনিস যার সন্ধানে আজকে আমরা সবাই বেরিয়েছি। কে আছে এমন যে সুখী হতে চায় না কিংবা একটি সুন্দর জীবন কামনা করে না? কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সুন্দর জীবন বলতে আসলে কি বোঝায়?

কিছু মানুষ আছে এমন, যারা তাদের জীবনকে ঘৃণা করে ! তারা সর্বদাই মনমরা ও হতাশায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। অপরদিকে, কিছু মানুষ এমনও আছে যারা তাদের জীবনকে উপভোগ করে, তারা সব সময় হাসি খুশি আর সুখে থাকে। কিন্তু এমন হয় কেন? আর সুখের কারণ কি?

আমরা অনেকেই একথা জানি, পরকালের জীবনে সুন্দর জীবন পাওয়া যাবে জান্নাতে। কিন্তু এই দুনিয়ার জীবনের কি হবে? আসুন জেনে নিই, যিনি আমাদেরকে এই দুনিয়ার জীবন দান করেছেন তিনি,
সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুন্দর জীবন লাভের ব্যাপারে কি বলছেন: “যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন (হায়াতে তাইয়েবা) দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত”। [ সূরা নাহল ৯৭]

এই জীবনে আমরা যা কিছুই করি না কেন সবকিছুই হয়তো আপনার পক্ষে একটি দলীল প্রমাণ হবে নয়তো আপনার বিপক্ষে একটি দলীল প্রমাণ হবে। প্রতিটি আলাদা মুহুর্ত, সেকেণ্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ আর মাস যা আমরা অতিক্রান্ত করে চলেছি, যা আমাদের জীবন থেকে চলে যাচ্ছে তা হয়তো আমাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আরও নিকটবর্তী করে দিবে অথবা বিপরীতভাবে তাঁর অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে আপনাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।

যখন একজন মানুষ সকালে জেগে উঠে, সে কি ভেবে দেখে না? একটু আগে তার দেহ ছিল নিথর, ঘুমন্ত ! তাকে কেউ ডাকলেও সে শুনতে পায়নি, হতে পারে তার সামনে কেউ বসে ছিল, সে দেখতে পায়নি, সারা রাত ঘুমন্ত মনে সে কি চিন্তা করেছে তা সে নিজেও জানে না।

কে সেই সত্তা যে আবার তাকে জাগ্রত করল ! ফিরিয়ে দিল দৃষ্টিশক্তি, কে ফিরিয়ে দিল শ্রবণ শক্তি, কিংবা রুহ? কে সেই সত্তা যিনি আপনাকে সুস্থ সুন্দর স্বাস্থ্য দান করেছেন যখন অনেকেই নানা শারিরীক সমস্যায় কষ্ট ভোগ করছে! আল্লাহ আমাদের এত বেশি নিয়ামত দান করে থাকেন যে আমরা তাকে ভালো না বেসে পারি না, আল্লাহ আমাদেরকে খাদ্য দান করেন, তাজা ফল, টাটকা সুস্বাদু মাংস, পানীয়, খাবার জল, সূর্যের আলো আরও কত কি !
আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। “যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু”। [সূরা নাহল ১৮]

দেখুন কি চমৎকার ভাষায় আল্লাহ বলছেনঃ

“তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন।

এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন।

যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ”। [ইবরাহীম ৩২-৩৪]

আল্লাহ আমাদের কাছে কি চান ? আল্লাহ চান আমরা যেন সেই কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পাদন করি যা আমাদের জন্য করা অপরিহার্য আর সেই কিছু সামান্য কাজ থেকে দূরে থাকি যা তিনি নিষেধ করেছেন। যদি কেউ এমন ধারণা করে থাকে যে, আল্লাহর আনুগত্য করে কিংবা তাঁর নৈকট্য লাভের প্রচেষ্টা করলে তার জীবন কঠিন হয়ে যাবে, দুঃখ দুর্দশা চলে আসবে, সুখ শান্তি চলে যাবে- এগুলো ভুল। বরং এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর সম্পর্কে মন্দ ধারণা করছে। আল্লাহ বলেন,

“আপনাকে ক্লেশ দেবার জন্য আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করিনি।” [ত্বহা ২]

সুখের সন্ধানে হন্যে হয়ে ছুটে চলেছেন আপনি। অথচ জানেন কি,
আপনি শুধুমাত্র তখনই ‘লাইফ এনজয়’ করতে পারবেন যখন আপনি আপনার অবশ্য পালনীয় কাজগুলো সম্পূর্ণ করবেন। আল্লাহর আনুগত্য ব্যতীত এমন কোন মহৌষধ নেই যা আপনার অন্তরকে পরিষ্কার করে দিবে, কিংবা তাকে তাইয়েব (সুন্দর) করে দিবে। একজন মানুষ, হতে পারে সে দুনিয়ার যত ভোগ করার সামগ্রী, উপাদান, উপায় আছে সে ভোগ করল, কিন্তু আল্লাহর আনুগত্যের চেয়ে অধিক ‘এনজয়েবল’ আর কিছুই নেই, ফলে আপনি নিষিদ্ধ কাজ থেকেও বেঁচে থাকতে পারবেন।

আপনি তখনই লাইফ এনজয় করতে পারবেন যখন আপনি পালন করবেন যা আল্লাহ আপনাকে করতে আদেশ করেছেনঃ দাওয়াহ, জিহাদ, আমর বিল মারুফ ওয়া নাহিয়ানিল মুনকার (সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ), কুর’আন তিলাওয়াত, সালাত আদায় ইত্যাদি। আপনি উপভোগ করবেন সেই সকল সাথীদের সাহচর্য যারা সঠিক মানহাজ (কর্মপদ্ধতি) এর উপর আছে, দীন নিয়ে পড়ালেখা করছে, মানুষকেও শিখাচ্ছে এমনকি আল্লাহর জন্যে তারা অর্থ ব্যয় করছে।
আপনি আপনার মুখ দিয়ে কিছু বলবেন কিংবা আপনার দেহ দ্বারা কোন কাজ করবেন, একটু থামুন, নিজেকে প্রশ্ন করুন, যিনি আপনাকে এই দেহ, জীবন দান করেছেন তিনি কি আপনার ইচ্ছার কাজটি করার অনুমতি দিয়েছেন? আমার কি তাঁর অনুমতি রয়েছে?

আপনি যাই করেন না কেন, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হওয়া উচিত যেন কাজটি আপনাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে তোলে, মেয়র, জেলা প্রশাসক, এম পি, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর নৈকট্য লাভ করা উদ্দেশ্য নয়। বরং সকল কাজের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হল মালিকুল মুলক (বাদশাহদের যিনি বাদশাহ) এর সন্তুষ্টি। আপনি যদি আপনার জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে মেনে না চলেন, আপনি কিছুতেই একটি সুন্দর জীবন লাভ করতে পারেন না। কোনদিন আপনি সুখী হতে পারবেন না। আপনি সব সময় সংশয়, সন্দেহের উপর থাকবেন, সব সময় দোটানায় ভুগবেন দ্বিধাদ্বন্দে ভুগবেন, চিন্তিত আর পেরেশানীর উপর থাকবেন। দেখা যাবে, সারা জীবন আপনি সুখ নামক সোনার হরিণের পিছনে ছুটতেই ব্যয় করবেন কিন্তু সুখ পাবেন না, জীবন হবে শোচনীয়। আপনার অবস্থা হবে অনেকটা এরকম, ‘আমার যা ছিল তা হারিয়ে গেল, যা নেই তার ক্ষোভে’।

একারণেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে আত্মসমর্পণ (ইসলাম গ্রহণ) করলো, যাকে প্রয়োজন পরিমাণ রিযিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন এর উপর পরিতৃপ্ত হওয়ারও শক্তি দিয়েছেন, সেই (জীবনে) সফলতা লাভ করেছে”  [মুসলিম ২২৯৫]

আপনি আল্লাহর যত নিকটবর্তী হবেন, আপনি তত বেশি লাইফ এনজয় করতে পারবেন।
আপনি যদি এক রাকা’আত সালাত আদায় করেন, এর সবগুলো রুকন ও শর্ত পূরণ করে, তাহলে যে শান্তি-তৃপ্তি আপনি পাবেন তা অন্য কোন কিছুর বিনিময়ে পাওয়া যাবে না। সারা দুনিয়ার সমস্ত অর্থ সম্পদ দিয়েও সুখ কেনা যায় না।

কাজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি সেই কাজগুলো করছেন যা করার জন্য আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেছেন? আপনি কি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন? হালাল খাবার, পোশাক পরিচ্ছদের বিধি নিষেধ মেনে চলা, দাওয়াহর কাজে সময় দেয়া, খিলাফা প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করা, জিহাদ সমর্থন করা (যদি এর থেকে ভালো আর কিছু করতে আপনি সক্ষম না হন), দখলদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা, পিতামাতার আনুগত্য করা, হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা এগুলো করেন কি?
না কি এর মধ্য থেকে যেগুলো আপনার ভালো লাগে সেগুলো করেন আর যা করতে কষ্ট হয় সেগুলো বর্জন করেন?

আসুন একটু জেনে নিই, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথে বাধাগুলো কি কি ?

(১) -শয়তানঃ

মানুষ কিংবা জিনদের মধ্যে যারা শয়তান তাদের থেকে দূরে থাকুন, তাদের এড়িয়ে চলুন।
তারা কেবল আপনাকে বিপদগ্রস্ত আর হতাশ করতে পারে, আর পারে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। মানুষদের মধ্যে যারা শয়তান তাদের মধ্যে আছে অবিশ্বাসী কুফফার, আর তাদের দাওয়াহ’র মাধ্যম হচ্ছে যা আপনি প্রতিদিন দেখছেন টেলিভিশনে, স্যাটেলাইট চ্যানেলে, কিংবা যা‘শুনছেন সবসময়’ রেডিওতে, তারা আসলে তাই করছে যা করার জন্য আপনার প্রয়োজন ছিল কিছু অসৎ বন্ধুর সাহচর্যের। আপনি আপনার বাসায় ব্যক্তিগত সময় কাটাচ্ছেন রেডিও, টিভি গান সিনেমা ইত্যাদির মাধ্যমে; মূলত শয়তানেরা আপনার একাকি ব্যক্তিগত সময়টাতেও ঠিক সেভাবেই কাজ করছে যেভাবে একটা অসৎ বন্ধু আহবান জানায় খারাপ কাজের দিকে। খারাপ বন্ধুরা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায় হাল ফ্যাশনের কথা, তথাকথিত তারকা সেলিব্রেটীদের কথা, তাদের অশ্লীলতা আর বেহায়াপনার কথা, গান বাজনা-কনসার্টের কথা যেখানে মাদকাসক্ত‘তারকা’রা মাদকবিরোধী উৎসব করে, হয়তো কখনো তারা আপনাকে অনলাইনে লিংকও পাঠাতে পারে, আর এভাবেই তারা আপনাকে খারাপ কাজের জন্যে উত্তেজিত করে থাকে।

একটু ভেবে দেখবেন কি, কতগুলো খারাপ কাজ আপনি আপনার নিজের প্রবৃত্তির তাড়না থেকে করেছেন আর কতগুলো খারাপ কাজ করেছেন অসৎ সঙ্গের কারণে? এই খারাপ সংগীরা আপনাকে কখনো মনে করিয়ে দেবে না, আপনার সালাত আদায় হয়েছে কিনা! দাওয়াহর কাজ করা কিংবা নিজেদের মধ্যে যারা দীনের পথে আসতে চাচ্ছে তাদের একটা সার্কেল গঠন করা দূরে থাক ! একারণেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-: “কার সাথে বন্ধুত্ব করছো তা যাচাই করে নিবে, কেননা মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত”

কিছু মানুষ এমন আছে, যারা মানুষ কিন্তু শয়তানের মত। এরা তারাই, যারা আপনাকে মানব রচিত কুফরী মতবাদের দিকে (উদারতাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ,সমাজতন্ত্র,গণতন্ত্র,স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি) আহবান করে, ভোট দানের জন্য উৎসাহিত করে, ভোট দানের নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে তারা আইন পরিষদ-সংসদ গঠন করে, যেখানে মূল কাজ হল আল্লাহর আইন বাতিল করে নিজেদের মনগড়া মানব রচিত আইন তৈরি করা ও এভাবে তারা আল্লাহর জন্য সংরক্ষিত আসনে মানুষকে বসায়। তাদের রচিত জীবন বিধান আর মতবাদ কখনো স্থায়ী কিছু দিতে পারে না, বরং সদা পরিবর্তনশীল, সৃষ্টি করে নিত্য নতুন সমস্যা। তাদের মনগড়া সিস্টেমে তারা নিজেরাই একের পর এক সংশোধনী আনে আর যুগোপযুগী করে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করে। তারা নিজেরা যেমন বিভ্রান্ত, আপনিও তাদের সিস্টেম দ্বারা বিভ্রান্ত,
অথচ আপনি স্বপ্ন দেখছেন একটি সুখী সমৃদ্ধ জীবনের ! আপনি বেরিয়েছিলেন সুখের সন্ধানে !

তারা হচ্ছে মানুষের মধ্যে শয়তান। তারা আপনাকে আরও ভুল পথে চালিত করতে পারে, আপনাকে উৎসাহিত করতে পারে তাগুতের গোলামী করার জন্য, বলতে পারে আপনি পুলিশ-প্রশাসনে যোগ দিচ্ছেন না কেন, কিংবা তাদের গোয়েন্দাবাহিনী, সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করতে পারে, যারা কুফফার তাগুতের আনুগত্যে আপনি তাদের অধিক অগ্রগামী পাবেন।
অপরদিকে জিনদের মধ্যে যারা শয়তান তাদের কাজ হচ্ছে আপনার কানে কানে ওয়াসওয়াসা কুমন্ত্রণা দেয়া, ভুল কাজে আপনাকে উৎসাহিত করা। এই শয়তানেরা বলে থাকে, “…আরে, জীবনটাকে সহজভাবে নাও ! . . . এইগুলা করার জন্যে সামনে বহু দিন পড়ে আছে। দীন শিক্ষা করা, দাওয়াতের কাজ …করার জন্য জীবনটাকে নষ্ট করো না,
সময়ের মূল্য আছে !…এইগুলা করলে কি তোমার পেটে ভাত আসবে? লাইফ এনজয় করো…জীবনে অনেক কিছু করার আছে, অনেক কিছু দেখার আছে…দুনিয়া কা মজা লে লো…তোমার সামনে তো সারা জীবন পড়ে আছে…”

আফসোস ! আপনি বেরিয়েছেন সুখের সন্ধানে ।

(২) শাহাওয়াতঃ 

আমাদের প্রবৃত্তি, কামনা বাসনা আমাদেরকে ভুলিয়ে রাখে দায়িত্ব কর্তব্যগুলো থেকে,এমনকি এক সময় তা আর কখনো করা হয়ে উঠে না।

“তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদের কে ধোকায় ফেলে রেখেছিল।অতএব, আমি আজকে তাদেরকে ভুলে যাব; যেমন তারা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল এবং যেমন তারা আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করত”। [সূরা আরাফ ৭]

আল্লাহ আপনাকে বসবাসের জন্য একটি সুন্দর বাসগৃহ দান করেছেন, আরামদায়ক শয্যা, বিছানা-বালিশ-তোষক কি আরামদায়ক ব্যবস্থা ! কিন্তু যখন আপনার মৃত্যু হয়ে যাবে তখন সেখানে থাকবে না কোন তোষক, বালিশ বরং উলটো সম্মুখীন হতে হবে প্রশ্নের-জিজ্ঞাসাবাদের, পেতে হবে শাস্তি যদি আপনি আল্লাহর সাথে অবাধ্যতা করে থাকেন। যারা কাফির, অবিশ্বাস করেছে তারা ইচ্ছা করবে, আফসোস করবে যদি তারা আবার কোনভাবে দুনিয়াতে ফেরত আসতে পারতো !

আল্লাহ বলছেন: “যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে ) প্রেরণ করুন। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার (মুখের) একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে বারযাখ(বাধা,পর্দা) আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত”। [সূরা মুমিনুন ৯৯-১০০]

(৩) আল্লাহ সম্পর্কে অশোভন ধারণা করাঃ

আপনি বেরিয়েছেন সুখের সন্ধানে। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না, কারণ আল্লাহ সম্পর্কে আপনার মনে বহু মন্দ ধারণা করা এবং তাঁর সম্পর্কে নানাবিধ সন্দেহ । যখন আপনি লোকদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করেন, দাওয়াহ, সালাহ, অন্যান্য ভালো কা্জের দিকে আহবান করেন, কিছু লোক তখন জবাবে বলে থাকে, “…আরে, আমাকে আমার মত থাকতে দাও…আমি চাই না এগুলো মানতে গিয়ে আমার জীবনকে কঠিন করতে। আমি ‘লাইফটাকে ইনজয়’ করতে চাই…”

যারা আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহে পতিত আছে আর আল্লাহর দয়া, অনুগ্রহ নিয়ামতের প্রশংসা শুকরিয়া আদায় করে না
তারা কিভাবে একটি শান্তিপূর্ণ, সুখী সুন্দর জীবন লাভ করতে পারে?

আল্লাহ এদের সম্পর্কে বলেন: “ তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনি”। [জুমার ৬৭]

যেসব অবিশ্বাসীরা মনে করছে যে, যদি তারা ইসলাম মেনে চলা শুরু করে তাহলে তাদের জীবন কঠিন হয়ে যাবে তারা আসলে আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করছে, তারা একটি ভুল দৃষ্টিভংগীর উপর রয়েছে। কাজেই এই বাধাগুলো দূর করার জন্য আপনাকে এর বিপরীত কাজগুলো করতে হবে।শয়তান থেকে দূরে থাকুন, আল্লাহ আর রাহমানের দিকে আসুন, নিজের প্রবৃত্তি কামনা বাসনার আনুগত্য-গোলামী পরিহার করে কুর’আন ও সুন্নাহর অনুসরণ করুন, আর পরিশেষে আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করুন।

ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে জীবন সংকীর্ণ হবে না, বরং প্রসারিত হবে।ইসলাম মানুষের জীবনকে সংকীর্ণ করে দেয়ার জন্যে অবতীর্ণ হয়নি। এসেছে মানুষকে মুক্তি দিতে অসংখ্য উপাস্যের গোলামী থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর আনুগত্যের দিকে নিয়ে যেতে, এসেছে আপনার বুকে জমানো কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে, নিয়ে এসেছে সেই হারিয়ে যাওয়া সুখের সন্ধান।

সাহাবী সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন পারস্য সম্রাটের সেনাপতি রুস্তমের নিকট দূত প্রেরণ করেছিলেন, তিনি অসাধারণ ভাষায় দুনিয়াপূজারী পারস্য সম্রাটদের সমস্ত লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করলেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে যে অসাধারণ ভাষায় ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরেছিলেন তা ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ তাঁর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে জমা করেছন, এভাবেঃ“শোন, হে সিপাহশালার! তাঁর সকল বান্দাদের মধ্য থেকে আল্লাহ আমাদের উত্থান ঘটিয়েছেন এ কারণে যেন তিনি যাদের ইচ্ছে করেনতাদেরকে যেন আমরা মানুষের দাসত্ব থেকে বের করে আল্লাহর দাসত্বে নিয়ে আসতে পারি; যেন তাদেরকে দুনিয়ার জীবনেরসঙ্কীর্ণতা থেকে বের করে এর প্রশস্ততার দিকে নিয়ে আসতে পারি; যেন তাদেরকে মুক্ত করতে পারি অসংখ্য দীনের [ধর্ম,মতবাদ, পথ, আদর্শ] জুলুম থেকে এবং নিয়ে আসতে পারি এক ইসলামের ন্যায় ও সুবিচারের দিকে।” (দ্র আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ)

কাজেই সুখের সন্ধানে যদি আমরা বেরিয়ে থাকি তাহলে আমাদের জন্য করণীয় হচ্ছে, সকল মিথ্যা মতবাদ আর বাতিল মূর্তি, মাবূদদের বর্জন করে আকাশ ও পৃথিবীর সমান প্রশস্ত ইসলামের দিকে যাত্রা শুরু করা। আল্লাহ বলছেন: “তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য”। [আলে ইমরান ১৩৩]

মানুষদের মধ্যে যারা শয়তান, তাদের সাথে সাথে থাকার বদলে মুসলিমদের সাথে থাকুন, মুসলিম জামায়াত এর সাথে থাকুন। সেই সমস্ত মুসলিমদের সাথে থাকুন যারা উলামা আর মুজাহিদিনদের সাহায্য সমর্থন করে। এমন কারণে লোকদের সাথে থাকবেন না যে তাদের খ্যাতি, যশ কিংবা অর্থ আপনাকে আকর্ষণ করে।যখনই কোন অপরাধ কিংবা গুনাহের কাজ করে ফেলবেন কিংবা ভুল করে বসবেন – ভাবুন, চিন্তা করুন। অধিকাংশ ভুল কিংবা গুনাহের পিছনে মূল কারণ কি ছিল? দেখা যায়, অসৎ সংগ, মানুষ কিংবা জিনদের মধ্যে যারা শয়তান তাদের কারণেই আপনি অনেক ভুল করেছেন।

-কাজেই, সুখের সন্ধানে যেহেতু আপনি আছেন, আপনার জন্য উচিত হবে এমন লোকদের সাহচর্য ত্যাগ করে সালেহীন(সৎ কর্মশীল) লোকদের সাথে সম্পর্ক বন্ধুত্ব গড়ে তোলা।আপনার এমন প্রচেষ্টা কি বৃথা যাবে? এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: “আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব”। [সূরা আনকাবুত ৭]

এবং তিনি আরও বলছেন: “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করব”। [সূরা আনকাবুত ৯]

যদি আপনার মনে কারও সম্পর্কে অশোভন, বাজে ধারণা থাকে তাহলে সে ধারণা থাকা উচিত কুফফার, মুশরিক, ফাসিকদের জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিংবা আমলকারী মুসলিমদের সম্পর্কে কিংবা ইসলাম সম্পর্কে
আমাদের মন্দ ধারণা করা উচিত নয়।

আল্লাহ বলছেন: “বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা জুমার ৫৩]

মূলঃ In pursuit of happiness
অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ সরল পথ

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

20 COMMENTS

  1. আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে দীনের পথে চলার তৌফিক দান করুক ,আমিন।

আপনার মন্তব্য লিখুন