কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ১১

2
3139

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা

ওযু করে আমরা বাহ্যিক পবিত্রতা লাভ করি যাতে আমরা নামাজ পড়তে পারি। এখন বাহ্যিক পবিত্রতা লাভের পর আমাদের অভ্যন্তরীণ পবিত্রতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আর এই ওযুর মাধ্যমে সেটিও সম্ভব। ইবনে আল কাইয়িম বলেন: ‘কিয়ামাতের দিন বান্দা যদি সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র না হয়ে (গুনাহ থেকে) আল্লাহর সামনে হাজির হয়, তবে যেমন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে না, ঠিক তেমনি নামাজেও বান্দা পবিত্র না হয়ে তার রবের সামনে দাড়াতে পারবে না।‘

আমরা ওযুর পরে পড়ার একটি দোয়া বিবেচনা করে দেখি: “হে আল্লাহ, আমাকে সর্বদা তওবাকারীদের এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও।” [তিরমিযি]

কাজেই, আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য নিজেকে সাজানোর আগে নিজেকে গুনাহ থেকে পবিত্র করতে হবে। এভাবে চিন্তা করে দেখুন, কোন জামা গায়ে দেওয়ার আগে সেটাকে কি ধুয়ে তারপর সুগন্ধি লাগাবেন, নাকি আগে সুগন্ধি লাগিয়ে পরে ধোবেন? নিশ্চয়ই আগে ধুয়ে পরে সুগন্ধি লাগাবেন। উসমান (রাঃ) বর্ণনা করেন নবী করিম (সাঃ) বলেনঃ “যে বেক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে তার শরীরের গুনাহগুলি ধুয়ে যাবে, এমনকি তার আঙ্গুলের নখের নীচ থেকেও।” [মুসলিম] এবং আবু হুরায়রার বর্ণনায় বলা হয়, পানির শেষ ফোঁটার সাথে গুনাহ ধুয়ে যায়।

সুবহানআল্লাহ, ওযু কেমন ভাবে গুনাহ পরিষ্কার করে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত করে দেয়। উসমান বিন আফফান (রাঃ) এর বর্ণনায়: “যখন কোন বান্দা ওযুর সময় তার মুখ ধোয়, সে মুখ দিয়ে যত গুনাহ করেছিল তা ধুয়ে যায়; যখন সে তার হাত ধোয়, একই জিনিস ঘটে; যখন সে তার মাথা ধোয়, একই জিনিস ঘটে এবং যখন সে তার পা ধোয়, তখনও একই জিনিস ঘটে।” [আহমাদ]

কাজেই কল্পনা করুন, আমরা চোখ দিয়ে যে গুনাহ করি তা ধুয়ে যাবে, কান দিয়ে যে গুনাহ করি তা ধুয়ে যাবে এবং অন্যান্য অঙ্গের বেলায় ও তাই হতে থাকবে। অতএব, এখন থেকে আমরা যখন ওযু করব আমরা কল্পনা করব আমরা এই গুনাহ গুলি কে ঝরে যেতে দেখতে পাচ্ছি। এবং সবসময় বিশ্বাস রাখব আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আবু হুরায়রা আরও বর্ণনা করেন যে মহানবী (সাঃ) বলেন: “আমি কি তোমাদের ওই বিষয়ে বলবনা যা দিয়ে আল্লাহ বান্দার গুনাহ সমূহ মাফ করেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? সকলে বলল – নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসুল। তিনি বললেন – কষ্টকর অবস্থায় থেকেও পুরনাঙ্গরুপে ওযু করা, নামাজের জন্য মসজিদে বার বার যাওয়া, এবং এক নামাজের পর আরেক নামজের প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজ গুলই হল সীমান্ত প্রহরা।” [মুসলিমঃ৪৯৪]

যা খুশি তাই করা?

এখন কেউ বলতে পারে, “বেশ, আমি তাহলে যা খুশি তাই করব, যত খুশি গুনাহ করব তারপর ওযু করে সব ধুয়ে ফেলব।” কিন্তু এরকম মোটেও নয়। আল্লাহর করুণা নিয়ে জাহেলিয়াতের যুগের অবাধ্যদের মত ব্যাঙ্গ তামাশা কোন ক্রমেই করা যাবে না। আল্লাহ বলেনঃ “এবং তারা (অবিশ্বাসীরা) শঠতা করল, তাই আল্লাহ ও কৌশল পন্থা গ্রহন করলেন। বস্তুত আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন সর্বোত্তম কৌশলী।” [সূরা আল ইমরানঃ ৫৪]

আল্লাহ তাহলে কি করবেন?  তিনি বিদ্রুপের জবাবে ওযুর ফযিলত দিতেই অস্বীকার করতে পারেন।

ওযুর চিহ্ন

আমরা অনেকেই হয়ত আবু হুরায়রা হতে বর্নিত এই হাদিসটি শুনেছি: একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কবরস্থানে গিয়ে বললেনঃ “তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, এটা তো ঈমানদারদের কবরস্থান। ইনশাল্লাহ আমরাও অচিরেই তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমার মনে আমার ভাইদের দেখার আকাঙ্খা জাগে। যদি আমরা তাদেরকে দেখতে পেতাম।” সাহাবাগন বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসুল, আমরা কি আপনার ভাই নই? জবাবে তিনি বললেনঃ তোমরা হচ্ছ আমার সঙ্গী সাথী। আর যেসব ঈমানদার এখনও (এ দুনিয়াতে) আগমন করেনি তারা হচ্ছে আমার ভাই। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আপনার উম্মাতের যারা এখনও (দুনিয়াতে) আসেনি, আপনি তাদের কিভাবে ছিন্তে পারবেন? তিনি বললেনঃ অনেকগুলো কাল ঘোড়ার মধ্যে যদি কারো একটি কপাল চিত্রা ঘোড়া থাকে, তবে কি সে ঐ ঘোড়াটিকে চিনতে পারবেনা? তারা বললঃ হে আল্লাহ্‌র রাসুল! তা অবশ্যই পারবে। তখন তিনি বললেনঃ তারা (আমার উম্মতরা) ওযুর প্রভাবে জ্যোতির্ময় চেহারা ও হাত-পা নিয়ে উপস্থিত হবে। আর আমি আগেই হাওযে কাওসারের কিনারে উপস্থিত থাকব।…” [মুসলিমঃ ২/৪৯১]

কাজেই ওযু হল এমন একটি কাজ যার জন্য কিয়ামাতের দিন আমাদের মহানবী (সাঃ) আমাদেরকে আলাদা করে চিনতে পারবেন। আল্লাহু আকবর।

ওযু মর্যাদা বৃদ্ধি করে

একদিন সকালে মহানবী (সাঃ) ঘুম থেকে উঠলেন, এবং বিলাল (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললেন, “এটা কি রকম যে আমি জান্নাতে তোমার পদধ্বনি শুনতে পেলাম? উত্তরে বিলাল (রাঃ) বলল- হে আল্লাহর রাসুল, আমি এমন কোন গুনাহ করিনি যার জন্য আমি দুই রাকাত করে (তওবা জন্য) নামায পরিনি ; আর যতবার আমার ওযু ভেঙ্গেছে আমি আবার ওযু করে নিয়েছি। তখন মুহাম্মাদ (সাঃ) বললেন- “হ্যাঁ, এটাই ছিল তার কারন।” [ইবনে খুজাইমা]

মিসওয়াক

মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ “যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক না হতো, তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” [মুসলিম ২/৪৯৬]

তিনি আরও বলেছেনঃ “মিসওয়াক মুখ পরিষ্কার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করায়।” [আন নাসাঈ]

আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) কত বিচক্ষণ ও যত্নবান ছিলেন দেখুন- তিনি পরিষ্কার ও পবিত্র মুখ নিয়ে তবেই আল্লাহর সামনে দাঁড়াতেন। তিনি মিসওয়াক করা এতো পছন্দ করতেন যে, যখন তাঁর শেষদিন গুলোতে তিনি অসুস্থ ছিলেন, একদিন আয়েশা (রাঃ) এর ভাই আব্দুর রাহমান (রাঃ) তাঁর ঘরে ঢুকলেন, তাঁর হাতে একটি মিসওয়াক ছিল। আয়েশা (রাঃ) দেখলেন মুহাম্মাদ (সাঃ) মিসওয়াকটির দিকে তাকিয়ে আছেন। তখন আয়েশা (রাঃ) তার ভাই এর কাছ থেকে সেটি চেয়ে নিলেন এবং চিবিয়ে নরম করে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) কে দিলেন।

আমরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমাদের মহানবী (সাঃ) এর অনুসরণ করে নিখুঁতভাবে আমাদের ওযু করতে পারি।

আমীন!!

আগের পর্ব গুলো এই লিংক থেকে  পড়ুনঃ

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

2 COMMENTS

আপনার মন্তব্য লিখুন