রমযান মাসের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও এর কিছু শিক্ষা পর্ব ২

0
2147

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন আল আযহারী । সম্পাদকঃ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

পর্ব ১ । পর্ব ২

১৬ রমযান:

৮৪৫ হিজরীর ১৬ রমযান, ২৭ জানুয়ারী ১৪৪২ সালে ইতিহাসবিদ আহমদ ইবন আলী আল-মাকরীযী রহ. মারা যান।

১৭ রমযান:

ক) ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ ও মুসলমানের প্রথম মহাবিজয়: হিজরী ২য় সালে ১৭ ই রমযান ইসলামের ইতিহাসে একটি অবিস্মরনীয় ঘটনা ও মহাবিজয়। সত্যের পদচারনায় সেদিন মিথ্যার কবর রচনা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে ৩১৩ জন মর্দে মুজাহিদ সাহাবী সেদিন সুসজ্জিত সহস্রাধিক শত্রুর মোকাবেলা করে বিজয়ের মুকুট পরিধান করেছিলেন। ইসলামের চিরশত্রু আবূ জাহেল সেদিন মু‘আয ইবন আমর ও মুয়াওয়ায ইবন ‘আফরার হাতে নিহত হয়। সেদিন তাদের ভ্রান্ত দেবতা লাত, উজ্জা আর মানাতরা তাদেরকে রক্ষা করতে পারে নি। এ যুদ্ধ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফিরিশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, আর তারা হঠাৎ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চি‎‎হ্নিত ফিরিশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তা কেবল সুসংবাদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন এবং যাতে তোমাদের অন্তরসমূহ এর দ্বারা প্রশান্ত হয়। আর সাহায্য কেবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে। যাতে তিনি কাফিরদের একটি অংশকে নিশ্চি‎হ্ন করেন অথবা তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন। ফলে তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যাবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৩-১২৭]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন আবু সুফিয়ানের (মদীনায়) আগ্রাভিযানের সংবাদ পৌঁছল। তখন তিনি সাহাবীদের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ ব্যাপারে কথা বললেন, কিন্তু তাঁর কথার উত্তর দিলেন না। এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কথা বললেন, তিনি তার কথারও কোন উত্তর দিলেন না পরিশেষে সা‘দ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু দণ্ডায়মান হলেন। এরপর বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি কি আমাদের জবাব প্রত্যাশা করেন? সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আপনি আমাদেরকে আমাদের ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বলেন, তবে নিশ্চয় আমরা সেখানে ঝাপ দিব। আর যদি আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন, সাওয়ারী হাঁকিয়ে বারকুল গামাদ পর্যন্ত পৌঁছার জন্য তবে আমরা তাই করবো। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে আহ্বান করলেন। তখন সকলে রওয়ানা হলেন এবং বদর নামক স্থানে সম্মেলিত হলেন। আর সাহাবীদের সামনে সেখান কুরাইশের সাথীগণও উপনীত হলো। তাদের মধ্যে বনী হাজ্জাজের একজন কৃষ্ণকায় দাস ছিল। সাহাবীগণ তাকে পাকড়াও করলেন। তারপর তাকে আবু সুফিয়ান এবং তার সাথীদের সম্পর্কে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তখন সে বলতে লাগলো, আবু সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তবে আবু জাহল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবন খালফ সবাই উপাস্থিত আছে। যখন সে এরূপ বললো তখন তারা তাকে প্রহার করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় সে বলল, হ্যাঁ, আমি আবু সুফিয়ান সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তখন তাঁরা তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর যখন তারা পূনরায় আবু সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলল, আবু সুফিয়ান জনগণের মাঝে উপস্তিত আছেন। যখন সে পুনরায় এ একই কথা বলল, তখন তারা আবার তাকে প্রহার করতে লাগলেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দন্ডায়মান ছিলেন। অতপর যখন তিনি এ অবস্হা দেখলেন, তখন সালাত সমাপ্ত করার পর বললেন, সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যখন সে তোমাদের কাছে সত্য কথা বলে তখন তোমরা তাকে প্রহর কর, আর যখন মিথ্যা বলে তখন ছেড়ে দাও। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমির ‌উপর স্বীয় হাত রেখে বললেন, এ স্থান অমুক বিধর্মীর ধরাশায়ী হওয়ার স্থান বা মৃত্যুস্থল। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে যে বিধর্মীর নাম নিয়ে হাত রেখেছিলেন, সেখানেই তার মৃত্যু  হয়েছে, এর বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হয় নি।[1]

বদরের যুদ্ধের শিক্ষা: বদরের যুদ্ধ শুরু কাফিরদের ওপর মুসলমানের বিজয়ই ছিলো না; এটা ছিলো মিথ্যার ওপর সত্যের বিজয়, মানুষের দাসত্বের ওপর আল্লাহর দাসত্বের বিজয়, অন্যায়ের ওপর ন্যায়ের বিজয়। এ যুদ্ধের কতিপয় শিক্ষা নিচে আলোচনা করা হলো:

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ গায়েব জানে না। সাহাবীরা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে মাত্র ৩১৩/৩১৪ জন সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডাকে সাড়া দিয়ে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আল্লাহর ওপর তাদের অগাধ বিশ্বাসের ফলে চূড়ান্ত বিজয় তারাই লাভ করেছিলেন।

(২) এ যুদ্ধে আল্লাহ মুসলমানদেরকে ফিরিশতা দ্বারা সাহায্য করেছেন। প্রকৃত মুমিনকে আল্লাহ এভাবে যুগে যুগে সাহায্য করেছেন।

(৩) এ যুদ্ধের আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের খবরাখবর জানান জন্য গুপ্তচর প্রেরণ করেছিলেন।

(৪) এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দক্ষতা, আল্লাহর ওপর আস্থা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর সমর কৌশল, যুদ্ধের প্রস্তুতি ও আল্লাহর কাছে দো‘আ বিজয়ের মালা সেদিন মুসলিমরাই পড়েছিলো।

(৫) এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন। ছোট বড় সব কাজে পরামর্শ করা এ যুদ্ধের বিশেষ শিক্ষা।

(৬) আল্লাহর দীনের জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করলে বিজয় একদিন আসবেই ইনশাআল্লাহ। কেননা বিজয় একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারিত হয়।

(৭) কুফুরী শক্তি সংখ্যায় যতোই বেশি হোক, সমরাস্ত্রে যতোই সজ্জিত হোক তাদের পরাজয় একদিন হবেই। কেননা তারা আল্লাহর সাহায্য ও ভালোবাসা থেকে বিচ্ছিন্ন। পক্ষান্তরে মুমিন সর্বদা আল্লাহর সাহায্যে ও ভালোবাসায় সিক্ত। বিজয় তাদেরই।

(৮) যুদ্ধ বন্দিদের সাথে সদ্ব্যবহার করা, তাদেরকে ক্ষমা করা ও ইসলাম গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া এ যুদ্ধের অন্যতম ফলাফল। এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধবন্দিদেরকে ক্ষমা করে ইসলামের দিকে আহ্বান করেছিলেন। ফলে তারাও দলে দলে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন।

(৯) এ যুদ্ধের ফলে কাফিরদের মনে ভীতির সঞ্চয় হয়েছিল। তারা দুর্বল মুসলিমদেরকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবতে শুরু করে।

(১০) পরিশেষে বলব, এ যুদ্ধ ছিলো সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী যুদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সত্যের কাণ্ডারী তা এ যুদ্ধের ফলে প্রমাণিত হলো।

খ) আবূ জাহল নিহত হয়: বিজয়ের এ মাসে ইসলামের চিরশত্রু, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রু আবূ জাহল ১৭ই রমযান বদরের যুদ্ধে দু’জন বালকের হাতে নিহত হয়। তার মৃত্যুর ঘটনা হাদীসে এভাবে এসেছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (বদরের দিন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আবূ জাহল কি করে, কে তার খোঁজ নিয়ে আসতে পার? (একথা শুনে) ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু চলে গেলেন এবং তিনি দেখতে পেলেন, আফরার দুই পুত্র তাকে এমনভাবে প্রহার করেছে যে, সে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে। তখন তিনি তার দাঁড়ি ধরে বললেন, তুমিই কি আবূ জাহল? উত্তরে সে বলল, এক ব্যক্তিকে তার গোত্রের লোকেরা হত্যা করল অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) যাকে তোমরা হত্যা করলে! এর চাইতে বেশি আর কী?[2]

শিক্ষা: আবূ জাহলের চরম লাঞ্ছিতভাবে নিহত হওয়া দ্বারা প্রমাণ করে বাতিল যতই বড় বা শক্তিশালী হোক এক সময় নিপাত যাবেই, সত্যের বিজয় আসবেই, শুধু ধৈর্য আর সময়ের ব্যাপার।

গ) আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাত: ৪০ হিজরীর ১৭ই রমযান শুক্রবার আসাদুল্লাহহিল গালিব খ্যাত প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামাতা ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু শাহাদাত বরণ করেন। ইবন মুলজিম, অরদান ও শাবীব নামে তিন ঘাতক সেদিন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তরবারীর আঘাতে শহীদ করেন। হুরাইস ইবন মাখশী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ২১ রমযান সকালে মারা যান। তিনি বলেন: “আমি হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর গুণাবলী বর্ণনা করতে বলেন, তিনি এমন রাতে শহীদ হন যে রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে, ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে আসমানে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং মূসা ‘আলাইহিস সালাম মারা যান।[3]

ঘ) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার মৃত্যু: ৫৮ হিজরী ১৭ই রমযান মঙ্গলবার পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তমা সঙ্গিনী, যার কোলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা মারা যান। [4]

ঙ) সর্বপ্রথম হাদীস সংকলনকারী মুহাম্মাদ ইবন শিহাব যুহরীর মৃত্যু: ১২৪ হিজরীর ১৭ ই রমযান অতিবাহিত হলে বিশিষ্ট মুহাদ্দিস, সর্বপ্রথম হাদীস সংকলনকারী ইবন শিহাব জুহুরী রহ. মারা যান। [5]

চ) কুরআনের প্রথম পাঁচ আয়াত নাযিল হয়ে নবুওয়তের সূচনা হয়: আল্লাহ তা‘আলা এ দিনে তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কুরআনের সূরা আল-‘আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নাযিল করে নবুওয়ত দিয়ে সম্মানিত করেন। এজন্য এ দিনকে কুরআনে ইয়াওমাল ফুরকান বলা হয়েছে।

১৮ রমযান:

ক) খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মৃত্যু: ২১ হিজরীর ১৮ রমযান, ২০ আগস্ট ৬৪২ খৃস্টাব্দে সাইফুল্লাহ খ্যাত খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মারা যান।

খ) হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিলাফত লাভ: ৪০ হিজরীর ১৮ রমযান, ২৪ জানুয়ারি ৬৬১ খৃস্টাব্দে হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খিলাফতে অধিষ্ঠিত হন।

১৯ রমযান:

১৩৭৫ হিজরীর ১৯ রমযান, ৩০ এপ্রিল ১৯৫৬ সালে তিউনিশিয়ায় বিশ্ববিখ্যাত যাইতুনাহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

২০ রমযান:

ক) মক্কা বিজয়: ৮ম হিজরীর রমযান মাসে (৬২৯ খৃস্টাব্দ) দশ হাজার বীর সেনানী নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনা যুদ্ধে মক্কা বিজয় করেন। যে মক্কায় একসময় মুসলিমরা ছিল লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত সে মক্কায়ই আজ তারা বিজয় বেশে প্রবেশ করছে। ২০ই রমযান মক্কা বিজয় সম্পন্ন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীরা সেদিন কা‘বার ভিতরে নির্মিত ৩৬০টি মূর্তি ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, আর তুমি লোকদেরকে দলে দলে আল্লাহর দীনে দাখিল হতে দেখবে, তখন তুমি তোমার রবের সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও নিশ্চয় তিনি তাওবা কবূলকারী।” [সূরা আন-নাসর, আয়াত: ১-৪]

অবশ্যই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন। তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুন্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ জেনেছেন যা তোমরা জানতে না। সুতরাং এ ছাড়াও তিনি দিলেন এক  নিকটবর্তী বিজয়।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৭]

মক্কা বিজয় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে মদীনা থেকে (মক্কা অভিযানে) রওয়ানা হন। তাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার সাহাবী। তখন (মক্কা থেকে) হিজরত করে মদীনা চলে আসার সাড়ে আট বছর অতিক্রম হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলিমগণ সাওম অবস্থায়ই মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন। অবশেষে তিনি যখন ‘উসফান’ ও ‘কুদাইদ’ স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদীদ নামক জায়গার ঝরনার নিকট পৌঁছলেন তখন তিনি ও সঙ্গী মুসলিগণ ইফতার করলেন। যুহরী (রহ.) বলেছেন, (উম্মাতের জীবনযাত্রায়) ফাতওয়া হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজকর্মের শেষোক্ত আমলটিকেই চূড়ান্ত দলীল হিসাবে গণ্য করা হয়। (কেননা শেষোক্ত আমল এর পূর্ববর্তী আমলকে রহিত করে দেয়)।[6]

মক্কা বিজয়ের শিক্ষা:

(১) আল্লাহ তা‘আলা কোনো কিছু ঘটানর আগে মানুষের সামনে উক্ত ঘটনার কারণসমূহ স্পষ্ট করে দেন। হুদায়বিয়ার সন্ধি ছিলো মক্কা বিজয়ের সূচনা আর মুসলিমের সাথে কুরাইশদের গাদ্দারী ছিলো এ বিজয় অর্জনের উসিলা। মূলতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের গাদ্দারীর কারণেই দশ হাজারের বেশি সাহাবী নিয়ে এ অভিযানে বের হন। পরিশেষে বিনা রক্তপাতেই তিনি ঐতিহাসিক এ বিজয় লাভ করেন।

(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তাঁর কৃত ওয়াদা পূরণ করেছেন। সন্ধিবদ্ধ অন্যান্য গোত্রকে যেভাবে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি ছিলো তিনি তা পালন করেছেন।

(৩) এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার কাফিরদের থেকে প্রতিশোধ না নিয়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এতে তারা আরো বিস্মিত হয়ে দলে দলে ইসলামে দাখিল হন।

(৪) মক্কা বিজয় সম্পন্ন হলে তিনি কাবার অভ্যন্তরের সব মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। এভাবে মক্কাকে পৌত্তিলকতা মূক্ত করা হলো এবং একচ্ছত্র আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করা হলো।

(৫) বাতিল শক্তি কিছুদিন তর্জন গর্জন করলেও চূড়ান্ত বিজয় মুসলিমদেরই। মক্কায় যারা এত দিন নির্যাতিত নিপীড়িত ছিলো আজ তারাই স্বদলবলে মক্কায় প্রবেশ করেন।

খ) কায়রোয়ান মসজিদ নির্মাণ: ৫১ হিজরীর ২০ রমযান, ২৯ সেপ্টেম্বর ৬৭১ খৃস্টাব্দে ‘উকবা ইবন নাফি‘ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাতে কায়রোয়ান মসজিদ নির্মিত হয়।

২১ রমযান:

ক) মূসা ‘আলাইহিস সালামের মৃত্যু ও ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে আসমানে উত্তোলন: কল্যাণ ও বরকতের এ মাসে মানবজাতির হিদায়াতের জন্য প্রেরিত অসংখ্য নবী রাসূল এ মাসে প্রেরিত হয়েছেন ও মারা যান। এ মাসেই বনী ইসরাইলদের নিকট প্রেরিত নবী মূসা ‘আলাইহিস সালাম মারা যান ও খৃস্টানদের নিকট প্রেরিত নবী ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা আসমানে তুলে নেন। হাদীসে এসেছে, হুরাইস ইবন মাখশী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ২১ রমযান সকালে মারা যান। তিনি বলেন, “আমি হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর গুণাবলী বর্ণনা করতে বলেন, তিনি এমন রাতে শহীদ হন যে রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে, ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে আসমানে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং মূসা ‘আলাইহিস সালাম মারা যান।” [7]

শিক্ষা: আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অপার কুদরতে কাউকে মা-বাবা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন যেমন, আদম ‘আলাইহিস সালাম, আবার কাউকে বাবার স্পর্শ ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন, যেমন ঈসা ‘আলাইহিস সালাম, আবার কাউকে মা- বাবার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন, যেমন সমগ্র মানবজাতি ও অন্যান্য সৃষ্টিকুল। ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে বাবা ছাড়া সৃষ্টি করে মানবজাতিকে তাঁর ক্ষমতা ও কুদরত দেখিয়ে স্মরণ করে দেন যে, আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তিনি ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে মৃত্যু না দিয়ে আসমানে তুলে নেন এবং কিয়ামতের আগে তাকে আবার পৃথিবীতে প্রেরণ করবেন। তিনি আসমান থেকে জমিনে অবতরণ করবেন। এসব কিছুই তাঁর কুদরতের বহি:প্রকাশ। এতে রয়েছে আমাদের শিক্ষা। আল্লাহ যে সর্বময় ক্ষমতা ও অধিপত্যের অধিকারী সেসব বিষয়ে ঈমান আনা।

কালীমুল্লাহ খ্যাত নবী মূসা ‘আলাইহিস সালামকে রমযানে মৃত্যু দিয়ে মানবজাতিকে স্মরণ করে দিয়েছেন যে, সবাইকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। সবাইকেই আল্লাহর সম্মুখে জবাবদিহি করতে হবে।

খ) আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাত বরণ: আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ২১ রমযান সকালে শাহাদাত বরণ করেন। হুরাইস ইবন মাখশী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ২১ রমযান সকালে মারা যান। তিনি বলেন, “আমি হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর গুণাবলী বর্ণনা করতে বলেন, তিনি এমন রাতে শহীদ হন যে রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে, ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে আসমানে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং মূসা ‘আলাইহিস সালাম মারা যান।[8]

২২ রমযান:

ক) তায়েফ বিজয়: ৮ম হিজরীর ২২ রমযান মোতাবেক ১২ জানুয়ারী ৬৩০ খৃস্টাব্দে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফে যান এবং তা জয়লাভ করেন।

খ) ইমাম ইবন মাজাহ রহ. এর মৃত্যু: ২৭৩ হিজরীর ২২ রমযান মোতাবেক ২০ ফেব্রুয়ারি ৮৮৬ খৃস্টাব্দে ইমাম ইবন মাজাহ রহ. মারা যান।

২৩ রমযান:

  • ৯ হিজরীর ২৩ রমযান (৬৩১ খৃস্টাব্দ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে আরবের বিখ্যাত ‘লাত’ মূর্তি ধ্বংস করা হয়।
  • ২২০ হিজরীর ২৩ রমযান মোতাবেক ২০ সেপ্টেম্বর ৮৩৫ খৃস্টাব্দে মিসরের তুলুন রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ ইবন তুলুন জন্মগ্রহণ করেন।

২৪ রমযান:

আমর ইবন ‘আস মসজিদ নির্মাণ: ২০ হিজরীর ২৪ রমযান মোতাবেক ৫ সেপ্টেম্বর  ৬৪১ খৃস্টাব্দে সাহাবী আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নেতৃত্বে মুসলমানরা মিসরের কায়রোতে বিখ্যাত আমর ইবন ‘আস মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। [9]

২৫ রমযান:

ক) মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল: রমযান মাসকে আল্লাহ তা‘আলা আসমানী কিতাবসমূহকে নাযিলের মাস হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এ মাসেই কদরের রাতে নাযিল হয় মানবতার মুক্তির দিশারী সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব ‘আল কুরআন’। তাছাড়া তাওরাত, যবুর, ইঞ্জীল ও ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের সহীফাসহ অনেক কিতাব এ মাসে নাযিল হয়। আল-কুরআনে এসেছে: “রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর করো।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]

ওয়াসেলাহ ইবন আসকা‘ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “রমযানের প্রথম রাতে ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের ওপর সহিফাসমূহ নাযিল হয়, রমযানের ছয়দিন অতবাহিত হলে মূসা ‘আলাইহিস সালামের ওপর তাওরাত নাযিল হয়, তেরই রমযান অতিবাহিত হলে ঈসা ‘আলাইহিস সালামের ওপর ইঞ্জীল নাযিল হয় আর ২৫ রমযান মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কুরআন নাযিল হয়।” [10]

খ) আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিজয়: “কুরআন আল্লাহর সৃষ্ট নয়”: কুরআন কি আল্লাহর সৃষ্টি? নাকি তার জাত? বা সিফাত? আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতে, কুরআন মাখলুক নয়, আবার তা আল্লাহর জাতও নয়; বরং কুরআন আল্লাহর কালাম, তার সিফাত। খলিফা মুতাসিম বিল্লাহ ইমাম আহমদ রহ.-কে নানাভাবে যুলুম নির্যাতন করে জোর করে কুরআন আল্লাহর মাখলুক বলানোর নানা ষড়যন্ত্র করেন। তাঁকে বন্দি করে নির্যাতন করেন; কিন্তু তিনি এত যুলুম নির্যাতনের পরেও সত্যের পথে অটুট ছিলেন। ২২১ হিজরীর ২৫শে রমযান তাঁকে বন্দি করে নির্মম নির্যাতন করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তাঁর হুশ ফিরে আসলে সাওম ভঙ্গ করানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি সাওম ভঙ্গ করেন নি; বরং তিনি ধৈর্য ধারণ করেন। পরিশেষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদাই বিজয় লাভ করে।[11]

গ) আইন জালুত বিজয়: ৬৫৮ হিজরীর ২৫শে রমযান শুক্রবার মিসরের আমির সাইফুদ্দিন কুতযের নেতৃত্বে হালাকু খানের শাম দেশীয় তাতার সেনাপতি কাতবাগানুইনকে পরাজিত করে ‘আইনে জালুত বিজয় লাভ করেন।[12]

ঘ) তাছাড়া ৫৪৪ হিজরীর ২৫ রমযান মোতাবেক ২৬ জানুয়ারী ১১৫০ খৃস্টাব্দে বিশিষ্ট মুফাসসির ও ফকীহ ‘ফখরুদ্দিন রাযী’ রহ. জন্মগ্রহণ করেন।

২৬ রমযান:

ক) তাবুক যুদ্ধ শেষে প্রত্যাবর্তন: ৯ হিজরীর ২৬ রমযান মোতাবেক ৫ জানুয়ারী ৬৩১ খৃস্টাব্দে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধ শেষে বিজয়ী বেশে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।

খ) ৮০৮ হিজরীর ২৬ রমযান মোতাবেক ১৬ মার্চ ১৪০১ খৃস্টাব্দে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী আব্দুর রহমান ইবন খালদূন মারা যান।

২৭ রমযান:

ক) হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের মৃত্যু:

৯৫ হিজরীর ২৭শে রমযান কদরের রাত্রিতে আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর ওপর এক বিশেষ রহমত নাযিল করেন। সেদিন অত্যাচারী হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ আস-সাকাফী মারা যায়। এ অত্যাচারীর মৃত্যুতে সমকালীন আলিমগণ অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে মুসলিমর ওপর থেকে এক বালা-মুসীবতের অবসান ঘটেছিল। [13]

খ) মুসলিমদের জার্মান বিজয়: এছাড়াও ১১০৭ হিজরীর ২৭ রমযান মোতাবেক ২০ এপ্রিল ১৬৯৬ খৃস্টাব্দে উসমানী শাসনামলে মুসলিম বাহিনী জার্মান বাহিনীর ওপর বিজয় লাভ করে।

২৮ রমযান:

ক) সাকি গোত্রের ইসলাম গ্রহণ: ৯ম হিজরীর ২৮ রমযান মোতাবেক ১ জানুয়ারী ৬৩১ খৃস্টাব্দে তায়েফের সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধিদল মদীনায় এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদের আগমনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানান এবং তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সুফিয়ান ইবন হরব ও মুগীরা ইবন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে পাঠিয়ে তাদের ভ্রান্ত মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলেন। [14]

খ) সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব: ২য় হিজরীর ২৮ শে রমযান আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেন।

গ) স্পেনে ইসলামের বিজয় পতাকা: ৯১ হিজরীর ২৮ রমযান বীরপুরুষ তারেক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে মুসলিমরা ইউরোপের তৎকালীন প্রাণকেন্দ্র স্পেন বিজয় লাভ করেন। তারেক ইবন জিয়াদের মাত্র বারোহাজার সৈন্য সেদিন স্পেনের সম্রাট লুজলাইকের লক্ষাধিক সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন।

২৯ রমযান:

ক) কায়রোয়ান শহর নির্মাণ: ৪৮ হিজরীর ২৯ রমযান মোতাবেক ৯ নভেম্বর ৬৬৮ খৃস্টাব্দে বিশিষ্ট সাহাবী ‘উকবা ইবন নাফে‘ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নির্দেশে বিখ্যাত কায়রোয়ান শহর নির্মাণ করা হয়।

খ) আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মৃত্যু: ৪৩ হিজরীর ৩০ রমযান মোতাবেক ৬৬৪ খৃস্টাব্দে আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ১০০ বছর বয়সে মারা যান।

৩০ রমযান:

ইমাম বুখারীর মৃত্যু: ২৫৬ হিজরীর ৩০ রমযান মোতাবেক ৩১ আগস্ট ৮৬৯ খৃস্টাব্দে মুহাম্মাদ ইবন ইসমাইল আল বুখারী রহ. মারা যান। [15] এছাড়াও রমযান মাসে আরো অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এখানে রমযানে সংঘটিত আরো কিছু ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

খন্দকের যুদ্ধের প্রস্তুতি: ইসলামের আরেক মহাবিজয়ের নাম খন্দকের যুদ্ধ। নির্ভরযোগ্য মতানুসারে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৫ম হিজরীর শাওয়াল মাসে। আর এ যুদ্ধের প্রস্তুতি বিশেষ করে মদীনার তিনদিকে খন্দর খননের কাজ হয়েছিল রমযান মাসে।[16]

খন্দকের যুদ্ধের শিক্ষা:

  • পরামর্শের গুরুত্ব: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সরাসরি আসমান থেকে অহী নাযিল হওয়া সত্বেও তিনি এ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন। নানা জনের নানা মতের পরে তিনি সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং মদীনার চারপাশে খন্দক খননের সিদ্ধান্ত নেন।
  • এ যুদ্ধের প্রস্তুতিকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সাথে সাওমা রেখে পরিখা খনন কাজে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি সমগ্র পৃথিবীর সর্দার ও সেনাপতি হওয়া সত্বেও তিনি সাধারণ মানুষের মতোই কাজ করেছিলেন।
  • উৎসাহ উদ্দীপনামূলক সাহিত্য চর্চা: এ যুদ্ধে সাহাবীদের কষ্ট লাঘব করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিখা খননের সময় কবিতা আবৃতি করেছিলেন। সুস্থ সুন্দর সাহিত্য ও শিল্পচর্চা এ যুদ্ধ থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করি।
  • এ যুদ্ধের পরিখা খননকালে সাহাবীরা খুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হওয়া সত্বেও ধৈর্য ধারণ করেন। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজে না খেয়ে পেটে পাথর বেঁধে খনন কাজ করেছিলেন।
  • আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস, তাওয়াক্কুল ও বুদ্ধিমত্ত্বার সাথে কাজ করে মুসলমনরা এ যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন। এ যুদ্ধ মুসলিমদের সমরকৌশল ও ইসলামী  আর্কিটেক্ট এর প্রমাণ বহন করে।

ইফকের ঘটনা: মুনাফিকরা সর্বকালেই ইসলামের গোপন শত্রু। তারা পুতঃপবিত্র উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে ইসলামের বিজয়কে কলুষিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা জানে না যে, মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থানে যাবে। ৫ম বা ৬ষ্ঠ হিজরীতে শাবান মাসে বনী মুস্তালিক যুদ্ধ (মুরাইসিয়ার যুদ্ধ) শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ী বেশে মদীনা ফেরার পথে বিশ্রামের জন্য মুসলিম বাহিনী অবতরণ করেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা প্রকৃতির আহ্বানে সাড়া দিতে গিতে গলার হার হারিয়ে ফেলেন। তিনি উক্ত হার খুঁজতে বিলম্ব করলে করেন। এদিকে মুসলিম বাহিনী মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার সাওয়ারী বহনকারীরা ধারণা করেছিলো যে, তিনি হাওদার মধ্যে অবস্থান করছেন। তাই তারা হাওদা সাওয়ারীর ওপর নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন। কিছুদূর যাওয়ার পরে প্রকৃত অবস্থা জানাজানি হয়ে গেলে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবন উবাই আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা শুরু করেন। এ ঘটনা শাবান মাসে ঘটে এবং রমযান পর্যন্ত ব্যাপ্তি ছিল। ধৈর্য ও সাহায্যের মাস রমযানে আল্লাহ তা‘আলা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে অহীর মাধ্যমে পাক-পবিত্রা ঘোষণা করেন। এ ঘটনা কুরআনে এভাবে এসেছে: “নিশ্চয় যারা এ অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। এটাকে তোমরা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর মনে করো না, বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যতটুকু পাপ সে অর্জন করেছে। আর তাদের থেকে যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্য রয়েছে মহাআযাব। যখন তোমরা এটা শুনলে, তখন কেন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা তাদের নিজদের সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করল না এবং বলল না যে, ‘এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ’? তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী নিয়ে আসল না? সুতরাং যখন তারা সাক্ষী নিয়ে আসেনি, তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী। আর যদি দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের ওপর আল্লাহর দয়া ও তাঁর অনুগ্রহ না থাকত, তবে তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে, তার জন্য তোমাদেরকে অবশ্যই কঠিন আযাব স্পর্শ করত। যখন এটা তোমরা তোমাদের মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং তোমরা তোমাদের মুখ দিয়ে এমন কথা বলছিলে, যাতে তোমাদের কোন জ্ঞান ছিল না; আর তোমরা এটাকে খুবই তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর নিকট খুবই গুরুতর। আর তোমরা যখন এটা শুনলে, তখন তোমরা কেন বললে না যে, ‘এ নিয়ে কথা বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি অতি পবিত্র মহান, এটা এক গুরুতর অপবাদ’। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন যে, যদি তোমরা মুমিন হও, তাহলে আর কখনো এর পুনরাবৃত্তি করবে না। আর আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছেন এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না। আর যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না থাকত, (তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে) আর নিশ্চয় আল্লাহ বড় মেহেরবান, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ১১-২০]

শিক্ষা:

  • মুনাফিকরা সবসময়ই ইসলামের শত্রু। সুতরাং তাদের থেকে সাবধান।
  • রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা পাক-পবিত্রা ছিলেন। আল্লাহ তার পবিত্রতার সাক্ষ্য দিয়েছেন।
  • বিপদে পড়লে ধৈর্য্হারা না হয়ে আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে বিপদের মোকাবিলা করা উচিৎ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে যখন সবাই দোষারোপ করছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যখন তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন, তখন তিনি একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে দিন-রাত আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে তাঁর সাহায্য চান। অবশেষে তিনি আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে পবিত্রতার মালা পরিধান করেন।

হিমইয়ার সম্রাটের দূত প্রেরণ ও তাদের ইসলাম গ্রহণ: ৯ হিজরীর রমযান মাসে হিমইয়ারের রাজা তাঁর ইসলাম গ্রহণের সংবাদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দূত প্রেরণ করেন।

বীর সেনাপতি আব্দুর রহমান গাফেকীর শাহাদাত: ১১৪ হিজরীর রমযান মাসে স্পেনের বীর সেনাপতি, খৃস্টানদের আতঙ্ক আব্দুর রহমান গাফেকী তুরের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। এ যুদ্ধে যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলমানেরা খৃস্টান ডিউককে পরাজিত করেছিল; কিন্তু যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুসলিমরা পরাজয় বরণ করেন।[17]

ইসলামের শীতল ছায়া তলে ফ্রান্স: মুসলমানরা স্পেন জয় করে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। খলিফা উমার ইবন আব্দুল আযীযের শাসনামলে ‘সামহ ইবন মালেক আল-খাওলানী’-এর নেতৃত্বে মুসলিমগণ ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চল বিজয় লাভ করেন। মুসলিম সেনাবাহিনী ‘আনবাসাহ ইবন সুহাইম’-এর নেতৃত্বে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ত্রিশ কিলোমিটার দূরে ‘মাসূন শালুন ও সান্স’ ইত্যাদি শহর দখল করেন। ফ্রান্সে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হলে ধীরে ধীরে তা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

মসজিদে আকসা খৃস্টানদের জোরদখল: ৪৯২ হিজরীর রমযান মাস মুসলিমদের ইতিহাসে একটি দুঃখ-বেদনা ও শোকের মাস। সেদিন খৃস্টানরা মুসলিমদের প্রথম কিবলা মসজিদে আকসা জবর দখল করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেনাপতি সালাহ উদ্দিন আইয়ুবীর নেতৃত্বে ৫৩৮ হিজরীর ২৭ শে রজব শুক্রবার ভোরে মুসলিমরা পুনঃদখল করেন।

পর্ব ১ । পর্ব ২


সূত্রঃ

[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৯।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯৬২।

[3] মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৪৬৮৮, ইমাম হাকিম রহ. হাদীসটিকে সহীহুল ইসনাদ বলেছেন, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেন নি। ইমাম যাহাবী রহ. তালখীসে হুকুম দেয়া থেকে বিরত থাকেন।

[4] আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: ৮/৯৫।

[5] সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, ৫/৩৫০।

[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২৭৬।

[7] মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৪৬৮৮, ইমাম হাকিম রহ. হাদীসটিকে সহীহুল ইসনাদ বলেছেন, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেন নি। ইমাম যাহাবী রহ. তালখীসে হুকুম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকেন।

[8] মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৪৬৮৮, ইমাম হাকিম রহ. হাদীসটিকে সহীহুল ইসনাদ বলেছেন, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেন নি। ইমাম যাহাবী রহ. তালখীসে হুকুম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকেন।

[9] হুসনুল মুহাদারাহ, আল্লামা সুয়ূতী, ১/৪৭।

[10] মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ১৬৯৮৪, শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। জামেউস সগীর, হাদীস নং ১৪৯৭, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন এবং সনদের রাবীদেরকে সিকাহ বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, ইবন ‘আসাকেরে (২/১৬৭) আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীস হাদীসের শাহেদ।

[11] নিয়াউর রাইয়ান, ১/৩৬৯।

[12] তারিখে ইবন ওয়ারদী, ২/২০১।

[13] আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: ৯/১৪৩-১৪৬।

[14] আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: (৫/৪০)।

[15] সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, ১০/১৯।

[16] আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: (৪/১০৬-১১৫)।

[17] দেখুন: মা‘আরিকুল মুসলিমীনা ফি রমাদান, পৃ. ৫৪-৫৫।

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন