পর্ব ১।পর্ব ২।পর্ব ৩।পর্ব ৪।পর্ব ৫।পর্ব ৬।পর্ব ৭।পর্ব ৮।পর্ব ৯।পর্ব ১০।পর্ব ১১।পর্ব ১২।পর্ব ১৩।পর্ব ১৪।পর্ব ১৫।পর্ব ১৬।পর্ব ১৭।পর্ব ১৮।পর্ব ১৯।পর্ব ২০।পর্ব ২১।পর্ব ২২।পর্ব ২৩।পর্ব ২৪।পর্ব ২৫।পর্ব ২৬।পর্ব ২৭।পর্ব ২৮
অসীম ক্ষমতাধর
আজ আমরা সেই সুরা ফাতিহা যা আমরা প্রতিদিন পড়ি তার অর্থ আরও একটু গভীরে আলোচনা করব। আমরা আগেও উল্লেখ করেছি, আমাদের উদ্দেশ্য হল আমাদের নামাজের মধ্যে আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে আরও বেশি করে নিবেদিত করা আর আমাদের অন্তরকে আল্লাহর কালাম দিয়ে জীবিত করা। এটা শুধু আমরা যা পড়ি তার সারমর্ম শিখেই করা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সেই অর্থ গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও চিন্তাভাবনা করা।
আমরা গত পর্বে আলোচনা করেছি কিভাবে আল্লাহ ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’ বা ‘প্রতিফল দিবসের মালিক’ বলার ঠিক আগেই ‘পরম করুনাময় ও অতিশয় দয়ালু’ বা ‘আর রহমানির রহীম’ আয়াতটি বলেছেন; যাতে আমরা জানতে পারি যে- যিনি প্রতিফল দিবসের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তিনি হলেন পরম করুনাময়।
আরবী ভাষায় ‘মালিক’ শব্দটির উচ্চারণের কারনে এর অর্থে সামান্য ভিন্নতা আছে। বহুল ব্যবহৃত উচ্চারণ হল – ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’ অর্থাৎ মীম এর উপর লম্বা টান বিশিষ্ট খাড়া যবর এর উচ্চারণ। আরেকটি উচ্চারণ হল- ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’। এই দুটি উচ্চারণই সঠিক। তবে ‘মা-লিক’ এবং ‘মালিক’ এর অর্থের মধ্যে সূক্ষ্ম তফাত রয়েছে। ‘মা-লিক’ বলতে বোঝায় কোন কিছুর অধিকারী হওয়া বা যার দখলে কোন কিছু আছে এমন। ‘মালিক’ হল কোন কিছুর উপর এমন আধিপত্য থাকা যে সেটির উপর যেমন খুশি তেমন কর্তৃত্ব করা যায়। কোন ব্যক্তি হয়তো কোনকিছুর শুধু ‘মা-লিক’ হতে পারে, ‘মালিক’ নয়; অথবা উল্টোটাও হতে পারে। যেমন, একজন প্রেসিডেন্টের একটি দেশের উপর কর্তৃত্ব বা আধিপত্য থাকে, সে দেশের সম্পদ যেমন খুশি তেমনভাবে কাজে লাগাতে পারে, কিন্তু ৫ বা ১০ বছর পর তার সেই পদ থাকে না। এক্ষেত্রে সে মালিক ছিল, কিন্তু মা-লিক নয়। কারণ যার উপর তার ক্ষমতা ছিল, সেই দেশের পদের সে চিরস্থায়ী অধিকারী নয়। আবার, এমনও আছে যে, কোন রাজা বা রানী বংশ পরম্পরায় কোন দেশের রাজত্বের চিরস্থায়ী অধিকারী হয়ে থাকে, যেমনটি আছে যুক্তরাজ্যের বেলায়। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা নেই যা আছে সেই দেশের প্রধান মন্ত্রীর। এক্ষেত্রে সেই রাজা বা রানীকে সেই দেশের মা-লিক বলা যায়, কিন্তু সত্যিকার অর্থে মালিক নয়।
আল্লাহ সুবহানা ওয়াতা’য়ালা মা-লিক এবং মালিক দুটোই। তিনি কিয়ামত দিবসের এবং সেদিন যা ঘটবে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী এবং সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
প্রতিফল দিবস
যখন আমরা যখন বলি ‘প্রতিফল দিবসের মালিক’, আমরা এই শব্দগুলোর ক্ষমতা, ব্যপকতা ও গুরুত্ব খুব কম ই অনুধাবন করতে পারি। প্রতিফল দিবস হল চূড়ান্ত হিশাব-নিকাশের দিন, যেদিন আমরা সবাই আল্লাহর কাছে ফিরে যাবো, আমাদের জীবদ্দশায় যা কিছু করেছি তার বিচার হওয়ার জন্য। আল্লাহ কেন তাঁর এই দিনের আধিপত্যের উপর বিশেষভাবে জোর দিয়ে উল্লেখ করছেন, যখন তিনি একবার বলেই দিয়েছেন যে তিনিই সমস্ত জগত সমূহের রব, যাতে বিচার দিবসও অন্তর্ভুক্ত। আমাদের শেষ পরিণতি স্মরন করিয়ে দেওয়ার জন্য, যে আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাবো আমাদের আমলনামা নিয়ে, এবং এটা দেখানোর জন্য যে এই দুনিয়াতে মানুষের যত প্রভাব, প্রতিপত্তি, আধিপত্ত্য ও ক্ষমতা আছে তা সব বিলীন হয়ে যাবে; রয়ে যাবে শুধুই তাঁর সর্বময় অসীম ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। সেই দিন আমাদের একটি শব্দও উচ্চারণ করার শক্তি থাকবে না যদি না মহান আল্লাহ আমাদেরকে অনুমতি দেন, যেমন আল্লাহ বলেন: “যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতিত কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্যকথা বলবে।” [সুরা নাবাঃ ৩৮] তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কারও জন্য সুপারিশও করতে পারবে না। “কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?” [সুরা বাকারাঃ ২৫৫]
আমাদের সবসময় এটা মনে রাখা দরকার যে, আমরা যতটা ভাবি, বিচার দিবস আসলে তার চেয়ে অনেক নিকটবর্তী। আল কুরতুবি বলেছেন – প্রতিটি ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে তার নিজস্ব ‘বিচার দিবস’ শুরু হয়ে যায়। কেউ এটাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না। কেউ যদি একে পাশ কাটিয়ে যেতে পারত তবে নিশ্চয়ই মহানবী (সাঃ) এর জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হতেন, কারণ তিনি হলেন আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা। কিন্তু যখন রাসুল (সাঃ) এর মৃত্যুক্ষণ এসে পড়েছিল, তিনি তাঁর সামনে রাখা পানির পাত্র থেকে পানি নিয়ে নিজের মুখমণ্ডল মাসেহ করতেন আর বলতেন: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, নিশ্চয়ই মৃত্যুর অনেক যন্ত্রণা রয়েছে।” [সহীহ বুখারি ১০/৬০৬৬ ইঃফাঃ]
সেই দিবসের দৃশ্যাবলী
কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা সবাই শুনেছি। আল্লাহ বলেন: “সূর্যকে যখন দীপ্তিহীন করা হবে, যখন নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে, পর্বত সমূহকে যখন চলমান করা হবে, যখন পূর্ণগর্ভা উটনী উপেক্ষিত হবে, যখন বন্য পশুগুলিকে একত্রিত করা হবে, এবং সমুদ্রগুলিকে যখন উদ্বেলিত করা হবে।” [সুরা তাকভীরঃ১-৬]
আরও ভালভাবে বুঝার জন্য আমরা ঝড়, ভুমিকম্প বা পর্বতের অগ্নুৎপাতের ধ্বংসলীলার অসংখ্য ভিডিও দেখতে পারি। কেয়ামত দিবসের তুলনায় এই সব ধ্বংসলীলা কিছুই না।আমরা সবাই আমাদের কবর থেকে বের হয়ে আশব, আর যারা যারা অবিশ্বাসী তারা বলবে-তারা বলবেঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? দয়াময় আল্লাহ তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রসূলগণ সত্যই বলেছিলেন।” [সুরা ইয়াসীনঃ৫২]
সেইদিন সূর্যকে আমাদের নিকটবর্তী করা হবে, আর সবাই এমনভাবে ঘামতে থাকব যে কারও কারও ঘাম তাদের চিবুক পর্যন্ত উঁচু হবে। শুধুমাত্র সাত শ্রেণীর মানুষ ছায়ার নিচে থাকবে যাদেরকে আল্লাহ নিরাপদে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর বাদ বাকি সবাই ভয়াবহ আতঙ্কে থাকবে, তখন হঠাৎ: “এবং যখন তোমার প্রতিপালক আগমন করবেন, আর ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধ ভাবে থাকবে।” [সুরা ফাজরঃ৮৯]
এবং আল্লাহর নূর আসমান সমূহকে ঢেকে ফেলবে: “সেই দিন তারা আহ্বানকারীর অনুসরণ করবে, এই ব্যপারে এদিক-অদিক করতে পারবে না; দয়াময়ের সামনে সব শব্দ স্তব্ধ হয়ে যাবে; সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ছাড়া তুমি কিছুই শুনবে না।” [সুরা ত্বা-হাঃ১০৮]
কে থাকবে সেদিন নিরাপদে?
এর জবাব পাওয়া যাবে সুরা ফাতিহার এই আয়াতে: “আমরা শুধু তোমার ই এবাদত করি এবং শুধু তোমার ই সাহায্য প্রার্থনা করি।” [সুরা ফাতিহা ১:৫]
এর প্রমান কি? আল্লাহ বলেন: “আমি নূহ (আঃ)কে তাঁর জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলাম, সুতরাং সে তাদেরকে সম্বোধন করে বলেছিলঃ হে আমার জাতি! তোমরা শুধু আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য মা’বুদ নেই, আমি তোমাদের প্রতি এক মহা দিবসের শাস্তি আশঙ্কা করছি।” [সুরা ‘আরাফঃ৫৯]
কাজেই, সেই প্রতিফল দিবসের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহর ইবাদত ই আমাদের সেই মহাদিবসের শাস্তি থেকে বাঁচাবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা যখন এই আয়াত গুলি তেলাওয়াত করব, তখন আমরা মনে রাখব যে আল্লাহই আমাদের ‘মা-লিক’ এবং ‘মালিক’, এবং আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাবো আর সেইদিন তিনি ছাড়া কেউ আমাদের বাঁচাতে পারবে না।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে খুশুর সাথে নামাজ আদায় করার তৌফিক দিন।
আমীন!!
অন্যান্য পর্ব গুলো এই লিংক থেকে পড়ুনঃ
পর্ব ১।পর্ব ২।পর্ব ৩।পর্ব ৪।পর্ব ৫।পর্ব ৬।পর্ব ৭।পর্ব ৮।পর্ব ৯।পর্ব ১০।পর্ব ১১।পর্ব ১২।পর্ব ১৩।পর্ব ১৪।পর্ব ১৫।পর্ব ১৬।পর্ব ১৭।পর্ব ১৮।পর্ব ১৯।পর্ব ২০।পর্ব ২১।পর্ব ২২।পর্ব ২৩।পর্ব ২৪।পর্ব ২৫।পর্ব ২৬।পর্ব ২৭।পর্ব ২৮
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
[…] ১৩।পর্ব ১৪।পর্ব ১৫।পর্ব ১৬।পর্ব ১৭।পর্ব ১৮।পর্ব ১৯।পর্ব ২০।পর্ব ২১।পর্ব […]
[…] ১৩।পর্ব ১৪।পর্ব ১৫।পর্ব ১৬।পর্ব ১৭।পর্ব ১৮।পর্ব ১৯।পর্ব ২০।পর্ব ২১।পর্ব […]
[…] ১৩।পর্ব ১৪।পর্ব ১৫।পর্ব ১৬।পর্ব ১৭।পর্ব ১৮।পর্ব ১৯।পর্ব ২০।পর্ব ২১।পর্ব […]