কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ২৬

4
3099

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

‘সিজদার সময় রসুল (সাঃ) সাত অঙ্গ দিয়ে সিজদা করতেন।’ (নাক সহ কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পা এর আঙ্গুল সমূহ) [বুখারী ৭৭৫; ইফা] ‘উভয় হাত এরূপ ফাঁকা রাখতেন যে তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ত।’ [বুখারী ৭৭০; ইফা] ‘তিনি উভয় পায়ের আঙ্গুল এ সময় কিবলামুখী রাখতেন।’ [বুখারী অনুচ্ছেদ ৫২২; ইফা] ‘তিনি (সাঃ) সিজদায় অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে বলেছেন, এবং কুকুরের মতো দুই হাত বিছিয়ে দিতে নিষেধ করেছেন।’ [বুখারী ৭৮৪; ইফা]

 রাসুল (সাঃ) সিজদায় বেশী বেশী পড়তেন:

(১) ‘সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগফিরলী’ অর্থাৎ, “হে আল্লাহ্‌! আপনার প্রশংসা সহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ [বুখারী ৭৮০; ইফা]

এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় সিজদায় বিভিন্ন দোয়া পড়তেন, তার কিছু এখানে উল্লেখ করা হল:

(২) “সুবহানা রব্বিয়াল ‘আলা” অর্থঃ আমার মহান সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। (তিনবার) [সহীহ আত তিরমিযী ১/৮৩]

(৩) “সুব্বুহুন ক্কুদ্দুসুন রব্বুল মালা-ইকাতি ওয়াররুহ” অর্থঃ ফেরেশতাবৃন্দ এবং রুহুল কুদ্দুস (জিব্রাঈল আঃ) এর রব প্রতিপালক স্বীয় সত্তায় এবং গুনাবলীতে পবিত্র। [মুসলিম ১/৫৩৩]

(৪) “আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা ‘আ-মানতু ওয়ালাকা ‘আসলামতু সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খলাক্কাহু ওয়াসাও ওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহু ওয়া বাসারাহু তাবারকাল্লাহু আহসানুল খ-লিক্কীন” অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য সিজদা করেছি, তোমারই প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছি, আমার মুখমণ্ডল (আমার সমগ্র দেহ) সিজদায় অবনমিত সেই মহান সত্তার জন্য যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন এবং উহার কর্ণ ও চক্ষু উদ্ভিন্ন করেছেন, মহিমান্বিত আল্লাহ সর্বোত্তম স্রষ্টা।’ [মুসলিম ১/৫৩৪]

(৫) “সুবহানা যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল ‘আযামাতি ” অর্থঃ ‘পাক পবিত্র সেই মহান আল্লাহ বিপুল শক্তির অধিকারী, বিশাল সাম্রাজ্য, বিরাট গরিমা এবং অতুল্য মহত্বের অধিকারী।’ [আবু দাউদ ১/২৩০]

(৬) “আল্লাহুম্মাগফিরলী যানবীকুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আউওয়ালাহু ওয়াআ-খিরাহু ওয়া ‘আলানিয়াতা ওয়া সিররাহু” অর্থঃ ‘হে আল্লাহ, আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও, ছোট গুনাহ, বড় গুনাহ, আগের গুনাহ, পরের গুনাহ, প্রকাশ্য এবং গোপন গুনাহ।’ [মুসলিম ১/৩৫০]

(৭) “আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযু বিরিদাকা মিন সাখাতিকা, ওয়া বিমু’আ-ফাতিকা মিন ‘উক্কুবাতিকা ওয়া ‘আউযু বিকামিনকা, লা-উহসী সানা-আন ‘আলাইকা আনতা কামা আসনাইতা ‘আলা নাফসিকা” অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই তোমার অসন্তুষ্টি হতে তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে, তোমার শাস্তি হতে তোমার ক্ষমার মাধ্যমে, আর আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই তোমার গজব হতে। তোমার প্রশংসা গুণে শেষ করা যায় না; তুমি সেই প্রশংসার যোগ্য নিজের প্রশংসা যেরূপ তুমি নিজে করেছ।’ [মুসলিম ১/৩৫২]

এই সহজ দোয়াগুলো আমরা শিখে নিই এবং ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দোয়াগুলো যেকোনো একটি করে বিভিন্ন সময়ে পড়ি, যাতে নামাজের অতি অভ্যস্ততার কারণে অমনোযোগিতা আমরা দূর করে খুশু বৃদ্ধি করতে পারি। সেই সাথে কিছু সুন্নাহ জাগ্রত করতে পারি।

প্রথম সিজদার পর রাসুল (সাঃ) মাথা উঠানোর পর সুস্থির হয়ে বসতেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন: ‘ধীর স্থির ভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থির ভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে।‘ [বুখারী ৭৫৭; ইফা]

দুই সিজদার মাঝে তিনি (সাঃ) প্রায় সিজাদার সমপরিমাণ সময় বসে থাকতেন। এসময় তিনি বলতেন: ‘আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়া‘আফিনী, ওয়ারযুকনী, ওয়ারফা’নী” অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও, তুমি আমার উপর রহম করো, তুমি আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করো, তুমি আমার জীবনের সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পুরন করে দাও, তুমি আমাকে নিরাপত্তা দান করো এবং তুমি আমাকে রিজিক দান করো, ও আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দাও।‘ [সহীহ আত-তিরমিযী ১/৯০]

(বিভিন্ন বর্ণনায় শব্দগুলোর বিভিন্ন ক্রম পাওয়া যায়।)

আবার কখনও কখনও বলতেন: ‘রব্বিগফিরলী রব্বিগফিরলী” অর্থঃ হে রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, হে রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ [আবু দাউদ ১/২৩১]

 ক্ষমা

আমরা যখন উপরের দোয়াটি পড়ি, আমদের মধ্যে বেশীরভাগই এর সাধারণ অর্থটি জানি, যে ‘মাগফিরাত’ অর্থ ক্ষমা। কিন্তু যেহেতু এখানে আমরা নামাজের কথা ও কাজের মধ্যকার  অন্তর্নিহিত অর্থ শেখার চেষ্টা করছি, আমাদের এই ধরনের অন্ততঃ কিছু শব্দের তাৎপর্য আরও গভীরভাবে জানা উচিৎ। ইবনে আল কায়্যিম বলেছেন, মাগফিরাত হল গুনাহ মুছে ফেলা, এর চিহ্ন দূর করে ফেলা, এবং এর অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা। এটি ‘মিগফার’ শব্দ থেকে এসেছে। যোদ্ধারা নিজেদের মাথাকে আঘাত থেকে বাঁচাতে যে ধাতব হেলমেট বা শিরস্ত্রাণ ব্যবহার করে তাকে আরবীতে মিগফার বলা হয়। মিগফার যেমন মাথাকে আঘাতের ক্ষতিকর পরিণতি থেকে রক্ষা করে, মাগফিরাতও মানুষকে গুনাহের ক্ষতিকর পরিণতি থেকে রক্ষা করে। আবার মিগফার যেমন মাথাকে ঢেকে রাখে, মাগফিরাতও মানুষের ত্রুটিকে আড়াল করে রাখে। এভাবে আল্লহ যখন আপনার উপর মাগফিরাত বর্ষণ করেন, তিনি আপনাকে আপনার কৃত পাপের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন, আপনার পাপকে অন্যদের কাছ থেকে আড়াল করে রাখেন। আমরা এরকমটাই প্রার্থনা করি যখন আমরা বলি- ‘রব্বিগফিরলী’।

 দুই সিজদা

 প্রতি রাকা’আতে আমরা একবার রুকু দেই, এবং দুইবার সিজদা দেই। আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি, কেন? ইবনে আল কায়্যিম বলছেন- এটা একারণে যে, সিজদা হল নামাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, আর এই গুরুত্ব বোঝা যায় এর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে। আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হতে পারার মাধুর্য আবার আস্বাদন করার আকাঙ্ক্ষায় আরেকবার সিজদায় লুটিয়ে পরি।

রাকা’আতের শুরু করি তিলাওয়াতের মাধ্যমে, আর শেষ করি সিজদার মাধ্যমে; ঠিক যেমন রাসুল (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ প্রথম সূরা, সূরা ‘আলাক্ব শুরু হয়েছে এভাবে: “পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা ‘আলাক্বঃ ১]

এবং সেই সূরা শেষ হয়েছে এভাবে: “কখনই নয়, আপনি তার (অবিশ্বাসীদের) আনুগত্য করবেন না। আপনি সেজদা করুন ও আমার নৈকট্য অর্জন করুন।” [সূরা ‘আলাক্বঃ ১৯]

সুবহান আল্লাহ্‌!!!! আল্লাহ্‌ যেন আমাদেরকে নামাজের প্রতিটি ধাপের তাৎপর্য বুঝার তৌফিক দান করেন।

আমীন!!

 অন্যান্য পর্ব গুলো এই লিংক থেকে পড়ুন-

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

4 COMMENTS

  1. যান্তে চাই, ঈদ মোবারক বলা কি বেদআত ?কট্টর পন্থী আহলেহাদিস মোঃ মুজাফফর বিন মুহসিন যে বল্লেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন