কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ২৮ (শেষ পর্ব)

3
2610

অনুবাদঃ কুরআনের আলো

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

রাসুল (সাঃ) যদি প্রথম তাশাহুদ পড়ে থাকেন, তাহলে তিনি তৃতীয় রাকা’আতের জন্য তাকবীর দিয়ে (আল্লাহু আকবর বলে) উঠে দাঁড়াতেন। আর যখন তিনি শেষ তাশাহুদ পড়তেন, তিনি তারপর বলতেন, আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিওওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরহীমা ওয়া আ-লি ইবরহীম, ইন্নাকা ‘হামীদুম মাজীদ; আল্লাহুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিওওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারকতা ‘আলা ইবরহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরহীম, ইন্নাকা ‘হামীদুম মাজীদ।

হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন রহমত বর্ষণ করেছ ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানী। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর বংশধরের উপর বরকত নাযিল কর, যেমন বরকত নাযিল করেছ ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানী।” [বুখারী ও মুসলিম]

 এখন চলুন, এর অর্থগুলোর দিকে লক্ষ্য করিঃ

  • মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি রহমতের প্রার্থনা- (ইবনে হাযার এর বর্ণনায়) আপনি আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছেন রাসুল (সাঃ) এর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়ার জন্য।
  • মুহাম্মাদ (সাঃ) উপর বরকত নাযিলের প্রার্থনা- আপনি আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছেন যেন তিনি রাসুল (সাঃ) এর উপর যে রহমত করেছেন তা আরও বৃদ্ধি করে দেন; অর্থাৎ, আল্লাহ যেন মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সেই সব নেয়ামত দান করেন যা কিছু ইবরাহীম (আঃ) কে দান করেছিলেন এবং তা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেন।

রাসুল (সাঃ) তাঁর উপর দুরুদ পাঠের ফজীলত বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করে (তার বিনিময়ে) সেই ব্যক্তির উপর আল্লাহ দশটি রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি পাপ মোচন করেন এবং তাকে দশটি মর্যাদায় উন্নীত করেন।” [সহীহ নাসাঈঃ ১২৩০]

রাসুল (সাঃ) এর উপর দুরুদ পাঠের পর

যখন মহানবী (সাঃ) একবার একজন লোককে নামাজে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করতে এবং তার পর নবী (সাঃ) এর উপর দুরুদ পাঠ করতে শুনলেন, তিনি বললেন: “দু’আ কর, তোমার দু’আর জবাব দেওয়া হবে; প্রার্থনা কর, তোমার প্রার্থনা পূরণ করা হবে। [নাসাঈ]

 লক্ষ্য করুন, তাশাহুদে কিভাবে দু’আ করার আদব ধারাবাহিকভাবে পালন করা হয় যাতে আমাদের দু’আ কবুল হয়ঃ আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর রাসুল (সাঃ) এর উপর সালাম ও দুরুদ পাঠ, এবং এরপর আমাদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে যেন আমরা আমাদের প্রার্থনা করতে পারি, ঠিক যেভাবে করলে আমাদের দু’আর জবাব দেওয়া হবে বলে রাসুল (সাঃ) বলেছেন।

 এর পর তিনি (সাঃ) আমাদের শিখিয়েছেন,“তোমরা কেউ যখন তাশাহুদ পড় তখন চারটি জিনিষ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রার্থনা করো। এই বলে দু’আ করবেঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন আযা-বি জাহান্নামা, ওয়া মিন আযা-বিল ক্ববরী, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-তি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল। (অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মসীহ দাজ্জালের ফিতনার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)’ [মুসলিমঃ ১২১১; ইফা]

কারও সাথে দেখা হওয়ার পর বিদায়ের আগে আমরা জিজ্ঞেস করি ‘আমার কাছে কি  আরও কিছু প্রয়োজন আছে?’ আল্লাহ্‌র করুণা অসীম। আল্লাহ্‌র সাথে এই সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের শেষে এই দু’আ চাওয়ার সুযোগ দিয়ে আল্লাহ যেন আমাদের বলেন, ‘আরও কিছু কি আছে চাওয়ার?’

তাসলীম

এরপর, রসূল (সাঃ) ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেনঃ “আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হ” অর্থাৎ “(হে মুক্তাদী ও ফেরেশতাগণ) তোমাদের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক” এবং বাম দিকে ফিরেও একই ভাবে একথা বলতেন।” [তিরমিযী]  ডানে ও বামে মুখ ফিরানোর সময় পিছন থেকে রসূল (সাঃ) এর গালের সাদা অংশ দেখা যেত।

সালামের পর

সালাম ফিরানোর পর রসুলুল্লাহ (সাঃ) তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আমরাও এরূপ করে আমাদের নামাজের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাইব। এর পর আরও অনেক দু’আ আছে যা রসূল (সাঃ) আমাদের শিখিয়েছেন।

কিন্তু, একটা বিষয়ে আমাদের সবার সাবধান থাকা উচিৎ, যে বিষয়ে রসূল (সাঃ)ও আমাদের জন্য আশঙ্কা করতেন। তিনি (সাঃ) বলেছেন: “তোমরা যদি কোন গুনাহ না ও করতে, আরও একটি বিষয়ে আমি তোমাদের জন্য ভয় করি যা এর চেয়েও বড়; আর তা হল আত্ম-সন্তুষ্টি (‘উজব)” [বায়হাকি]

 অর্থাৎ, এখন যখন আমাদের নামাজের উন্নতি হয়েছে ইন শা আল্লাহ আর আমাদের খুশু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা যেন কোনভাবেই নিজেদেরকে অন্যের চেয়ে উত্তম বলে ধরে না নেই। ইবনে আল কায়্যিম বলেছেন- আত্মসন্তুষ্টি আমাদের আমলকে বিনষ্টও করে দেয়! আমাদের স্মরন করা উচিৎ আমাদের আগের সেই সব নামাজের কথা যা আমরা কোনরকম যেনতেনভাবে পড়েছি। এবং সবসময় মনে রাখা উচিৎ যে আমরা যা কিছু ভাল করতে সক্ষম, তা সম্পূর্ণ আল্লাহ্‌র রহমতের কারণে। মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা যেসব নিয়ামত ভোগ কর তা তো আল্লাহ্‌রই নিকট হতে…। [সুরা নাহলঃ ৫৩]

নামাজের সত্যিকারের গপ্তধন ও আনন্দ ভাণ্ডারের তুলনায় এই পর্যন্ত যা কিছু আমরা আলোচনা করলাম, তা আসলে মহাসাগরের তুলনায় একটি পানির ফোঁটার চেয়েও কম। আমরা যেন যা কিছু শিখেছি তা আমাদের আমলে পরিণত করতে পারি, আর আমাদের প্রতিটি নামাজকে মহান আল্লাহ্‌র সাথে পবিত্র ও অপূর্ব সাক্ষাৎ বলে অনুভব করতে পারি।

আমীন!!

অন্যান্য পর্ব গুলো এই লিংক থেকে পড়ুন:-

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

3 COMMENTS

  1. thanks admin.very nice post. amar mote ai porbogolo bar bar pora uchit. tai 28 te porbo

    ak shonghe boi akare deya dile othoba agulor kono akti link shtaye bhabe ai site er kothao rekhe dile valo hoto.

আপনার মন্তব্য লিখুন