Home Blog Page 56

নবী (সাঃ) কবর স্হানান্তর মূলক খবর যঘন্য বিভ্রান্তিকর মিথ্যাচার

masjid-nabawiবিদ্যুতের বেগে মিডিয়া থেকে মিডিয়ায় প্রচার হয়ে চলেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর শরীফকে স্থানান্তরের পরিকল্পনার সংবাদ।

অনলাইন, ব্লগ, ম্যাগাজিন, দৈনিক পত্রিকা, ফেসবুক, টুইটার কোথাও বাদ নেই। আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে চলছে বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু এর বাস্তবতা কি, শরীয়ত সম্মত কি না, আসলেই এরকম কোন পরিকল্পনা হয়েছিল কি না? তা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথ্যা নেই। মিথ্যা সংবাদ, মিথ্যা কথা, মুখরোচক বিষয় মানুষের কাছে এত প্রিয় যে, দ্রুততম সময়ে তা প্রচার করতে না পারলে যেন তার পেটের ভাত হজমই হয় না।

সংবাদ মাধ্যমে খবরটির এত হিড়িক দেখে আমি আজ ফোন করেছিলাম, মসজিদে নববীর বাউণ্ডারী সংলগ্ন প্রতিষ্ঠিত কোর্টের অন্যতম সম্মানিত বিচারক শাইখ হাসান সা’দ আল গামেদীর কাছে।

তিনি বললেন, একটি অপপ্রচার। একটি মিথ্যা সংবাদ। সৌদী সরকার এরকম কোন পরিকল্পনা কখনই নেয়া হয়নি। তাছাড়া এটা শরীয়তের সম্পূর্ণ খেলাফ। তাই এদেশের মুফতীদের পক্ষ থেকে এধরণের ফতোয়া প্রদানের প্রশ্নই উঠে না। তিনি বললেন, মসজিদে নববী দক্ষিণ তথা কিবলার দিকে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ এর ওফাতের পর সাহাবীগণ তাঁর দাফন কোথায় হবে তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করছিলেন। তখন আবু বকর (রাঃ) যে কথা বলেছেন তা আমি ভুলি নি। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা নবীদেরকে এমন স্থানেই মৃত্যু দান করেন, যেখানে দাফন হওয়া ঐ নবী পছন্দ করতেন। অতএব তাঁর বিছানার স্থানেই তাঁকে দাফন কর। (তিরমিযী, হা/1018)

মিথ্যা সংবাদ বিশ্বাস ও প্রচার করা থেকে সকলেই সতর্ক থাকা দরকার। অন্যথা আপনি এই হাদীছ অনুযায়ী মিথ্যাবাদী গণ্য হবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে (তা যাচাই-বাছাই না করে) তাই বলে বেড়াবে।” [সহীহ মুসলিম]

শেইখ আব্দুল্লাহ আল-কাফি

বৃটিশ সাংবাদিক ইন্দ্র জোনসনেএর লেখা খবর এক বড় ধরনের মিথ্যারোপ ও ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষঢ়যন্ত্র .সউদী আরবের আরবী পত্রিকায় এর জোরাল নিন্দা প্রতিবাদ করা হয়েছে এতে বলা হয়েছে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য বিভ্রান্তি ও ফিতনা সৃষ্টির জন্যই তা প্রচার করা হয়েছে —– এ যমিন যত দিন থাকবে ততদিন তাঁর কবর অবশিষ্ট থাকবে।

Also read this post – https://www.facebook.com/yasir.qadhi/posts/10152454578288300

গুরুতর অপরাধ মানুষ হত্যা

লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনাঃ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

অশান্তির আগুনে ঘেরা পৃথিবী। দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ভরা অবনী। এ পৃথিবীতে এখন মানবজীবনের চেয়ে সস্তা কিছু নেই। বিশেষত বাংলাদেশের মতো তৃতীয়বিশ্বের দেশগুলোয় মাত্র ১০ টাকার জন্যও মানুষ খুন হচ্ছে। মিডিয়ায় কান পাতলে কিংবা সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলেই নিহতের স্বজনের আহাজারী আর মাতমের দৃশ্য থাকবেই। সন্তানের হাতে জন্মদাতা কিংবা জন্মদাতার হাতে সন্তান, স্বামীর হাতে স্ত্রী কিংবা স্ত্রীর হাতে স্বামী, শিক্ষকের হাতে ছাত্র কিংবা ছাত্রের হাতে শিক্ষক, কর্মচারীর হাতে মালিক কিংবা মালিকের হাতে কর্মচারী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সাধারণ নাগরিক কিংবা নাগরিকের হাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য খুন- কোনোটাই যেন এখন আর অস্বাভাবিক নয়!

এদিকে কথিত উন্নত ও সভ্য দেশগুলো মোড়লিপনা দেখাতে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালিয়ে খুন করছে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে। যারা মুসলিম দেশগুলোকে মানবাধিকারের সবক দেয়, তারাই আবার মজলুম মুসলিম দেশগুলোয় প্রতিদিন নিষ্পাপ শিশু ও অসহায় নারী ও বৃদ্ধদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করছে। পৃথিবীর মানচিত্রজুড়েই এখন মুসলিমের তপ্ত খুনের ছোপছোপ দাগ।

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে যোগ হয়েছে গুম নামের এক আতঙ্ক। সুস্থ-সবল মানুষকে চোখের সামনে পরিবার থেকে উঠিয়ে নিচ্ছে আর সে লোকটি ঘরে ফিরছে লাশ হয়ে। কখনো এ লাশটিও আর ফেরত পাচ্ছে না হতভাগা পরিবার। কে নিচ্ছে, কোথায় নিচ্ছে, কারা নিচ্ছে- কোনোটারই যেন হদিস নেই।

পৃথিবীর তাবৎ মানুষের মতো বাংলাদেশের নাগরিকরাও এ হত্যা-নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণ খুঁজে ফিরছে। মুক্তির অন্বেষায় তারাও যত্রতত্র ধর্ণা দিচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। লাশের মিছিল কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছে। এমতাবস্থায় আর সব সমস্যার মতো এর সমাধানেও ইসলামই হতে পারে হতাশায় আলোকদিশা। উপায়হীনের অব্যর্থ উপায়। সেটি হলো, আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।তুলে ধরতে হবে ইসলামের অমলধবল আলোকশিখা।

পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহের অমূল্য বাণীগুলো মানব হত্যাকে হারাম ঘোষণা করেছে।অন্যায়ভাবে অপরের প্রাণ হরণকেতালিকাভুক্ত করা হয়েছে বড় গুনাহসমূহের। শুধু তাই নয় পৃথিবীতে যত রকমের গুনাহের কাজ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মহান আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বা শরীক সাব্যস্ত করা। এরপর সবচেয়ে বড় গুনাহ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। হন্তারকের জন্য মহান আল্লাহ দুনিয়ায় বড় শাস্তি এবং আখেরাতে তীব্র আযাবের ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “বল, “এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি যে, তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিয্ক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার।[সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫১]

তাফসীরকার বাগবী (রা:) বলেন: “এ আয়াতে আল্লাহ যে কোনো মুমিন ও মুসলিম রাষ্ট্রে ট্যাক্স প্রদানকারী অমুসলিম নাগরিককে অন্যায়ভাবে হত্যা হারাম ঘোষণা করেছেন। হত্যার ন্যায়সঙ্গত কারণের মধ্যে রয়েছে ইরতিদাদ তথা কোনো মুসলিমের ইসলাম ধর্মত্যাগ, কিসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা এবং রজম তথা বিবাহিত ব্যক্তির জেনা-ব্যভিচারের দণ্ড।” [মা‘আলিমুত তানযীল : ৩/২০৩]

আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফ্সকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত : ৬৮-৬৯]

কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে ইসলাম তার প্রতিকারের কার্যকর ব্যবস্থা নির্দেশ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমরা সেই নাফসকে হত্যা করো না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া। যে অন্যায়ভাবে নিহত হয় আমি অবশ্যই তার অভিভাবককে ক্ষমতা দিয়েছি। সুতরাং হত্যার ব্যাপারে সে সীমালঙ্ঘন করবে না; নিশ্চয় সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত।” [সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৩৩]

এ আয়াতে কিসাস তথা হত্যার বদলা হিসেবে হত্যার বিধানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অন্য সূরায় যেটি পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যেমন বলেন: “আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফ্ফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই যালিম।” [সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৪৫]

বর্তমান অন্যায় অবিচারে ভরা জগতের অনেক মানুষ ইসলামের এ বিধানটিকে অমানবিক আবার কোনো কোনো অবিশ্বাসী একে বর্বর পর্যন্তও বলে বসেন। অথচ বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবচিত্রও সাক্ষ্য দেয় আপাতদৃষ্টিতে কঠোর মনে হলেও এর মাধ্যমেই মানবজাতির মুক্তি ও শান্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বুঝি না বলেই যত অমূলক সমালোচনা। কিসাসের আয়াতের শেষাংশে যেমন ‘বিবেকসম্পন্নগণ’ বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর ‘কিসাস’ ফরয করা হয়েছে। স্বাধীনের বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস, নারীর বদলে নারী। তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে তাকে আদায় করে দেবে। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে হালকাকরণ ও রহমত। সুতরাং এরপর যে সীমালঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর হে বিবেকসম্পন্নগণ, কিসাসে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৮-১৭৯]

পৃথিবীতে হত্যার পরিসংখ্যান দেখলে জানা যাবে, সৌদি আরব যেখানে একমাত্র এই কিসাস ব্যবস্থা এখনো বলবৎ রয়েছে, সবচেয়ে কম খুনোখুনির ঘটনা ঘটে। ইসলামকে যারা বর্বর বলে তারা শুধু জ্ঞানপাপীই নয়, মূর্খও বটে। কারণ, ইসলামই পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যেখানে যে কোনো নিরপরাধ মানুষের প্রাণসংহারকে মানবতাবিরোধী ও মানবজাতির হত্যার তুল্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “এ কারণেই, আমি বনী ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের কাছে আমার রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর জমিনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।” [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩২]

তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও হত্যাকাণ্ডকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচে বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।“[বুখারী : ৬৮৭১; মুসলিম : ৮৮]

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথম বিচার করা হবে রক্তপাত সম্পর্কে। [1] [বুখারী : ৬৩৫৭; মুসলিম : ৩১৭৮]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক।সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, ১. আল্লাহর সাথে শরীক করা২. জাদু করা৩. অন্যায়ভাবে নিরপরাধ লোককে হত্যা করা৪. সুদ খাওয়া৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা৬. রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা৭. সুরক্ষিত পবিত্রা নারীকে অপবাদ দেওয়া।” [বুখারী : ৬৮৫৬; মুসলিম : ১২৯]

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “মুমিন তার দীনের ব্যাপারে সর্বদা অবকাশের মধ্যেই থাকে যাবৎ না সে নিষিদ্ধ রক্তপাত ঘটায়।” [বুখারী : ৬৮৬২]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি হন্তারককে নিয়ে আসবে। হন্তারকের চুলের অগ্রভাগ ও মাথা নিহতের হাতের মুষ্ঠিতে থাকবে আর তার কণ্ঠনালী থেকে তখন রক্ত ঝরতে থাকবে। সে বলবে, হে রব, এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে তাকে আরশের কাছে নিয়ে যাবে।” [তিরমিযী : ২৯৫৫; মুসনাদ আহমদ : ২৫৫১, সহীহ, সিলসিলা সহীহা : ২৬৯৭]

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “জাহান্নাম থেকে একটি গলা বের হয়ে কথা বলতে শুরু করবে। সে বলবে, আজ আমি তিন ব্যক্তির প্রতি ন্যস্ত হয়েছি : প্রত্যেক অত্যাচারী, যে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক স্থির করে এবং ওই ব্যক্তি যে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে। অতপর সে তাদের থাবা দিয়ে কব্জা করবে এবং জাহান্নামের গহীনে তাদের নিক্ষেপ করবে।” [মুসনাদ আহমদ : ১১৩৭২, সহীহ, সিলসিলা সহীহা : ২৬৯৯]

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “যেসব পরিত্রাণঅযোগ্য ধ্বংসে মানুষ পতিত হয় তার অন্যতম হলো বৈধ কারণ ছাড়া নিষিদ্ধ রক্ত ঝরানো।” [বুখারী : ৬৮৬৩]

বলাবাহুল্য, এসব গেল হত্যা ও খুনোখুনির আইনী প্রতিকারের দিক। সত্যিকারার্থে পরিত্রাণ চাইলে আমাদেরকে এর নৈতিক দিকগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবোধের অবক্ষয় ও মানবিক গুণাবলির অধোঃপাতের কথাও চিন্তা করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৪১]

সত্যিই তো আজ যেসব সামাজিক ব্যধি ও সমস্যায় আমরা নাকাল, এর দায় তো আমাদেরই। আমাদের ব্যক্তিগত আমল ও আচরণের দিকে তাকালেই সেটা পরিষ্কার দেখা যায়। কিয়ামত যত ঘনিয়ে আসছে অবস্থার যেন ততই অবনতি ঘটছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কিয়ামত ততক্ষণ সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না হারাজ বেশি হবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হারাজ’ কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন হত্যা, হত্যা।” [মুসলিম: ৫১৪৩]

হত্যাকাণ্ডের এ রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পেতে আমাদের যেমন আল্লাহর আইনের সুফল অনুধাবন জরুরী, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার জরুরী, তেমনি প্রয়োজন নিজেদের সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও যাবতীয় পাপাচার থেকে একনিষ্ঠভাবে তাওবা করা। নিজেদের সন্তান তথা ভবিষ্যত প্রজন্মকে আল্লাহভীতি ও নৈতিকতার বলে বলীয়ান হিসেবে গড়ে তোলা। সব ধরনের অশ্লীলতা ও বেহায়পনা থেকে তাদেরকে যে কোনো মূল্যে দূরে রাখা। বলিউড হলিউডের সিনেমা আর স্যাটেলাইট কালচার আমাদের সন্তানদের মানবিক বিকাশকে শুধু বাধাগ্রস্তই করছে না, তাদেরকে হিংস্র ও নরপশু বানিয়ে ছাড়ছে। পার্থিব ভোগ লালসা মানুষকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে ছাড়ছে। আল্লাহ আমাদের অনুধাবন ও সংশোধনের তাওফীক দান করুন।

আমীন!!


[1]. ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এ হাদীসে রক্তপাতের অপরাধের গুরুতরতা তুলে ধরা হয়েছে। আর তা হলো কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে যত বিষয়ে বিচারাচার হবে রক্তপাত তার মধ্যে প্রথম। এ হাদীসটি সুনানগুলোয় বর্ণিত, أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ الصَّلاَةُ‘প্রথম যে বিষয়ে বিচার করা হবে তা হলো সালাত’ হাদীসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। [তিরমিযী : ৩৯৯১] কারণ, সালাতের হাদীসের বিষয়টি বান্দা ও আল্লাহর হকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পক্ষান্তরে আলোচ্য হাদীসটি বান্দার হক সংক্রান্ত। [শরহু সহীহ মুসলিম : ১১/১৬৭]

কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করুন

KSU_Logo_COLORED_PNGP-24কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষাতত্ত্ব ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন প্রোগ্রামে এপ্লিকেশন গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীগণ নীচে দেয়া লিংকগুলোতে গিয়ে আবেদনপত্র সাবমিট করতে পারেন। এপ্লিকেশন করার সর্বশেষ তারিখ ২৪/১০/২০১৪। সূত্রঃ http://news.ksu.edu.sa/ar/node/103393?readmore

 

যারা অনার্সে পড়ার ইচ্ছা নিয়ে ল্যাংগুয়েজ কোর্স করতে চান তারা এই লিংকে আবেদনপত্র সাবমিট করুন

https://eservices2.ksu.edu.sa/ALI/Public/ApplicationForm.aspx

আবেদন করার শর্তাবলী নিম্নরূপঃ

 

  • A minimum of high school certificate with an average of v. good
  • The applicant must not be over 25 years old
  • The applicant must be physically fit
  • The applicant must be a full time student

 

The following must be attached to the application:

 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  1. A copy of the certificate
  2. A copy of the transcript
  3. An original letter (or letters) of recommendation by a known academic or official institution
  4. A recent medical report (less the one month from the applicant date)
  5. A copy of a valid passport
  6. 3 new photographers (size 4×6)
  7. An official letter of approval from the applicants government to study in Institute
  8. The full address of the applicant written in both Arabic and English

Notes:

  • All papers must be Certified
  • Admission is subject to the result of the full medical check-up done to the applicant at his arrival to the University
  • Applicants obtaining a C GPA or exceeding the required age can be put on the waiting list

 

যারা আরবী ভাষায় ডিপ্লোমা কোর্স করতে চান তারা এই লিংকে আবেদনপত্র সাবমিট করুন

https://eservices2.ksu.edu.sa/ALI/Public/ApplicationForm.aspx

 

আবেদন করার শর্তাবলী নিম্নরূপঃ

 

  • A minimum of B.A degree with a minimum grade of v. good in one of the following :
    • Arabic Language
    • Education majoring in Arabic Islamic studies from an Arabic University
  • The applicant must not be over 35 years old
  • The applicant must be physically fit
  • The applicant must be a full time student

 

The following must be attached to the application:

 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

  1. A copy of the certificate
  2. A copy of the transcript
  3. An original letter (or letters) of recommendation by a known academic or official institution
  4. A recent medical report (less the one month from the applicant date)
  5. A copy of a valid passport
  6. 3 new photographers (size 4×6)
  7. An official letter of approval from the applicants government to study in Institute
  8. The full address of the applicant written in both Arabic and English

Notes:

  • All papers must be Certified
  • Admission is subject to the result of the full medical check-up done to the applicant at his arrival to the University
  • Applicants obtaining a C GPA or exceeding the required age can be put on the waiting list

যারা আরবী ভাষায় মাস্টার্স কোর্স করতে চান তারা এই লিংকে আবেদনপত্র সাবমিট করুন

https://eservices2.ksu.edu.sa/ALI/Public/ApplicationForm.aspx

আবেদন করার শর্তাবলী নিম্নরূপঃ

 

    • A minimum of B.A degree with a minimum grade of v. good in one of the following :
    • Arabic Language
    • Education majoring in Arabic Islamic studies from an Arabic University
  • The applicant must not be over 35 years old
  • The applicant must be physically fit
  • The applicant must be a full time student

 

The following must be attached to the application:

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

  1. A copy of the certificate
  2. A copy of the transcript
  3. An original letter (or letters) of recommendation by a known academic or official institution
  4. A recent medical report (less the one month from the applicant date)
  5. A copy of a valid passport
  6. 3 new photographers (size 4×6)
  7. An official letter of approval from the applicants government to study in Institute
  8. The full address of the applicant written in both Arabic and English

Notes:

  • All papers must be Certified
  • Admission is subject to the result of the full medical check-up done to the applicant at his arrival to the University
  • Applicants obtaining a C GPA or exceeding the required age can be put on the waiting list

 

যারা এরাবিক টিচার্স ট্রেনিং কোর্স করতে চান তারা এই লিংকে আবেদনপত্র সাবমিট করুন

https://eservices2.ksu.edu.sa/ALI/Public/ApplicationForm.aspx

আবেদনের শর্তাবলী নিম্নরূপঃ

  1. A minimum of B.A degree or equivalent in Arabic, Education or Islamic studies with a minimum grade of v. good. (For the one semester course a minimum of secondary school certificate with a minimum average of v. good is required.
  2. The applicant must be a teacher of Arabic as a foreign Language at the time of application.
  3. The applicant must not be over (40) years old.
  4. The applicant must be physically fit.
  5. The applicant must pass the placement test administrated by the dept.
  6. The applicant must be a full-time student.

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

  1. A copy of the certificate
  2. A copy of the transcript
  3. An original letter (or letters) of recommendation by a known academic or official institution
  4. A recent medical report (less the one month from the applicant date)
  5. A copy of a valid passport
  6. 3 new photographers (size 4×6)
  7. An official letter of approval from the applicants government to study in Institute
  8. The full address of the applicant written in both Arabic and English

Notes:

  • All papers must be Certified
  • Admission is subject to the result of the full medical check-up done to the applicant at his arrival to the University
  • Applicants obtaining a C GPA or exceeding the required age can be put on the waiting list

যেকোনো প্রশ্নের জন্য,  এই ফেসবুক পেইজে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

 

রমজানের কাযা আদায় ও শাওয়ালের ছয় দিনের রোযা এক নিয়্যতে এক সাথে আদায় করা শুদ্ধ নয়

প্রশ্ন:  

শাওয়ালের ছয় দিনের রোযা ও হায়েযজনিত কারণে রমজানের ভঙ্গ হওয়া দিনগুলোর কাযা রোযা এক নিয়্যতে পালন করা কি জায়েয হবে?

উত্তর:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

না,তা শুদ্ধ নয়। কারণ রমজানের না-রাখা রোযার কাযা পালন সম্পূর্ণ শেষ না করা পর্যন্ত শাওয়ালের ছয় রোযা রাখা যাবে না। শাইখ ইবনে উছাইমীন ‘ফাতাওয়াস্‌ সিয়াম’ (৪৩৮) এ বলেছেন: “যে ব্যক্তি আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিনে রোযা পালন করে এবং তাঁর উপর রমজানের কাযা রোযা অনাদায় থাকে তবে তাঁর রোযা রাখাটা সহীহ। তবে তিনি যদি এই রোযার মাধ্যমে রমজানের কাযা রোযা পালনেরও নিয়্যত করেন তবে তাঁর দুটি সাওয়াব হবে। আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিন রোযা পালনের সাওয়াব ও কাযা রোযা আদায়ের সওয়াব। এটি সাধারণ নফল রোযার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রমজানের রোযার সাথে যে নফল রোযার কোন সম্পর্ক নেই। তবে শাওয়ালের ছয় রোযা রমজানের সাথে সম্পৃক্ত। সে রোযা রমজানের কাযা রোযা আদায়ের পরেই রাখতে হবে। তাই যদি কেউ কাযা আদায়ের আগে তা পালন করে তবে তিনি এর সওয়াব পাবেন না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোযা পালন করল,এর সাথে শাওয়াল মাসেও ছয়দিন রোযা পালন করল, সে যেন গোটা বছর রোযা রাখল।”

আর এটি জানা বিষয় যে, যার উপর কাযা রোযা রয়ে গেছে সে রমজান মাসে রোযা পালন করেছে বলে ধরা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার কাযা রোযা আদায় সম্পূর্ণ করে।”

সমাপ্ত।

Source: IslamQA Bangla

ইস্তিকামাহ্‌ (দৃঢ়চিত্ততা/মানসিক অবিচলতা) অর্জনের উপায়

লিখেছেনঃ ইবনুল কাইয়্যিম (রা:) | অনুবাদঃ জহিরুল কাইয়ুম

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্‌, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের উপর। ইবনুল কাইয়্যিমের মতে, কোন কাজ ইস্তিকামাহ্‌ তথা দৃঢ়চিত্ততা বা মানসিক অবিচলতার সাথে সম্পন্ন করতে চাইলে নিম্নোক্ত পাঁচটি শর্ত পূরণ করা জরুরীঃ

[১] কাজটি হতে হবে কেবলমাত্র এবং শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আর এই বিষয়টি নিয়্যতের পরিশুদ্ধতার সাথে সম্পৃক্ত। এটিই হল “ইখ্‌লাস” বা নিয়্যতের পরিশুদ্ধতা।
[২] অর্জিত জ্ঞান (‘ইল্‌ম) হবে কাজটির ভিত্তি। অর্থাৎ, জেনে ও বুঝে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। কারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে সম্পাদিত কর্ম মানুষের মানসিক নিশ্চয়তা বিধান করে।
[৩] নির্ধারিত পদ্ধতি মেনেই ইবাদত করতে হবে। শব্দগত অর্থেই “ইবাদত” মানে হল “মেনে চলা”, “আনুগত্য করা” ইত্যাদি। আর তাই ইবাদত বা আনুগত্য করতে হবে ইবাদতের নির্ধারিত পদ্ধতির আনুগত্য করার মাধ্যমেই।
[৪] কাজটি করতে হবে যথাসম্ভব সর্বোত্তমভাবে এবং আন্তরিকতার সহিত। ইবাদতে অনাগ্রহ বা অনীহা দুর্বল ঈমানের অন্যতম প্রধান লক্ষন।
[৫] কোন কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে কাজটির আইনী বৈধতা আছে কিনা তাও বিবেচ্য বিষয়। আইনী বৈধতা নেই এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সুলুক (আচরন বা শিষ্টাচার) বিষয়ক অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ ইস্তিকামাহ্‌ (দৃঢ়চিত্ততা বা মানসিক অবিচলতা) অর্জনের ক্ষেত্রে আরো কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করার উপদেশ দিয়েছেনঃ

[১] চূড়ান্ত পরিণতি তথা আখিরাতে বিচার দিবসের কথা ভেবে সদায় সতর্ক থাকা: পরকাল ভিত্তিক এই মানসিক সচেতনতার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে যাতে করে তা মানুষকে বেশী বেশী সৎকর্মের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলে। প্রতি মুহূর্তেই নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে একজন মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় তার আখিরাতের জীবন। একজন সালাফ [রাসূল (সা:) এর পরবর্তী যুগে ইসলামের প্রথম দিকের তিনটি প্রজন্ম-সাহাবীগণ,তাবীঈগণ এবং তাবে-তাবেঈগণই হলেন সালাফ] বলেনঃ “আপনি যদি জানেন যে আপনি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন তাহলে বিকালের অপেক্ষা করবেন না আর যদি জানেন যে বিকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন তাহলে পরবর্তী সকালের অপেক্ষা করবেন না।”

[২] অঙ্গীকার বা মুশারাতাহ: একজন মানুষকে অঙ্গীকার করতে হবে যে তিনি দৃঢ় বা অবিচল হবেন এবং ইসলামের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে যথাসম্ভব সঠিক ও উত্তমভাবে কাজ করবেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজকের দিনে অনেক মুসলমান এ ধরনের অঙ্গীকার করার ব্যাপারে বড়ই উদাসীন।

[৩] উক্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া বা মুজাহাদাহ: কিছু সংখ্যক মুসলমান আছে যারা অঙ্গীকার করে কিন্তু সেই অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে সচেষ্ট হয় না।

[৪] নিয়মিতভাবে নিজের কাজকর্মে পর্যালোচনা তথা মুরাকাবাহ: অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়ে কখনই কোন মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়ে আত্মপ্রসাদে ভোগা চলবে না। এক্ষেত্রে নিজের প্রতি সৎ হতে হবে।

[৫] নিজের কাছেই জবাবদিহি করা বা মুহাসাবাহ: এ ধাপটি দু’বার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমত, কোন কিছু শুরু করার আগে নিশ্চিত করতে হবে এ কাজে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন খুশি হবেন কিনা অর্থাৎ কাজটা আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে করা হচ্ছে কিনা। এক্ষেত্রে এটা উপলব্ধি করা খুবই জরুরী যে কাজটি আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তথা ইসলামের নির্ধারিত নিয়ম মেনেই করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কাজটি শেষ হওয়ার পর ভুল-ত্রুটি যাচাই করে দেখা,যে উদ্দেশ্য করা হয়েছে সেটা অর্জিত হয়েছে কিনা তা বিচার করা। যেটুকু সাফল্য পাওয়া গেছে তাতে সন্তুষ্ট না থেকে আরো ভাল করা যেত কিনা সেটা খতিয়ে দেখা।

[৬] কাজটি সম্পন্ন হলে নিখুঁতভাবে করতে না পারার জন্য নিজেকে দোষারোপ করা: ভবিষ্যতে আরো ভালো করার প্রত্যয়ে আত্ম-নিন্দাকে একটি ইতিবাচক গুণ হিসেবে নেয়া যায়। এমনটি করতে পারলে তা আমাদের কর্ম সম্পাদনের দক্ষতা উন্নতির জন্য পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে আরও অঙ্গীকার করার সুযোগ করে দেবে।

[৭] উন্নতির জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বা তাহসিন: আমরা প্রত্যহ যে কাজগুলো করি যেমনঃ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড,মহৎ কাজ,ইবাদত ইত্যাদি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আমাদেরকে উন্নতি সাধনের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

[৮] আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি বিনয়ী হওয়া: আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের ক্ষমা, নির্দেশনা ও সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে; বুঝতে হবে তিনি ব্যতীত উৎকৃষ্ট, নিখুঁত এবং মহান আর কেউ নেই।

উপরোক্ত শর্ত/ধাপগুলো দুনিয়াবী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ইবাদত এবং অন্যান্য ধর্মীয় ভাল কাজে প্রয়োগযোগ্য মনে করতে হবে।

সূত্রঃ ইমাম নাওয়াবি (রাহিমাহুল্লাহ্‌) এর ৪০ টি হাদিসের এর একটি ব্যাখ্যা

বাচ্চাদের সাথে কথা বলা

লেখিকা: রেহনুমা বিনত আনিস

বাচ্চারা খুব বুদ্ধিমান হয়। তাই তাদের সাথে বুদ্ধিদীপ্ত এবং যুক্তিগ্রাহ্য কথা না বললে ওরা সহজেই বুঝতে পারে ওদের নির্বোধ ভাবা হচ্ছে। তখন হয় ওরা বিরক্ত হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে নতুবা যে ওদের নির্বোধ ভেবে কথা বল্ল তার প্রতি শ্রদ্ধা। উভয় ক্ষেত্রেই আমরা ওদের যে শিক্ষা দিতে আগ্রহী সে উদ্দেশ্য ব্যর্থ্ হয়। তাই আমাদের উচিত তাদের সাথে এমনভাবে কথা বলা যেন ওরা বুঝতে পারে আমরা তাদের নিজেদের সমকক্ষ ভাবছি এবং তাদের মতামতের মূল্যায়ন করছি। ওদের মোটামোটি মূল ব্যাপারটা সততা এবং আন্তরিকতার সাথে বুঝিয়ে দিলে ওরা আর খুব বেশী জানতে চায়না। বাকীটা ওরা নিজেরাই বুঝে নেয়। কিন্তু আমাদের সমাজে আমরা বাচ্চাদের সাথে সরাসরি কথা না বলে ধামাচাপা দিয়ে বা দায়সারা গোছের কথা বলে বা অনেক ক্ষেত্রে অন্য কথা বলে কথা ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে পরিস্থিতি জটিল করে তুলি কারণ তখন ওদের আগ্রহ আরো বেড়ে যায় এবং ওরা ভুল জায়গায় তথ্য অনুসন্ধান করতে যায়।

আমরা মূলত বাচ্চাদের সাথে যেসব বিষয়ে কথা বলি তাকে কয়েকটা ক্যাটাগরীতে বিভক্ত করা যায়, যেমন- পারিবারিক সম্পর্ক, পরিচিতজনদের সাথে ব্যবহার, অপরিতচিতজনদের সাথে সাবধানতা, জ্ঞানবিজ্ঞানের কথা, জীবনদর্শন, দায়িত্বসচেতনতা, চাহিদা, নিয়মনীতি এবং শাসন।

প্রথমত বাচ্চাদের কাছে পারিবারিক সম্পর্কগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন এবং এই কাঠামোতে তাদের অবস্থান তাদের কাছে পরিস্কার করে দেয়া দরকার। যেমন আমার যখন ছোটভাই হোল। একদিন সকালবেলা উঠে শুনি আমার সাড়ে ছয় বছরের রাজত্ব খতম। দাদু বলল, “তুমি তো কালো, দেখতেও সুন্দর না, এখন তোমার ফুটফুটে ফর্সা একটা ভাই হয়েছে, তোমাকে এখন আর আব্বু আম্মু ভালোবাসবে না, আমরা সবাই নতুন বাচ্চাটাকে আদর করব”। বাবামা’র বয়স এবং অভিজ্ঞতার অভাব ছিল। ওরাও ব্যাপারটাকে পাত্তা দিলনা। তদুপরি আমাকে নানীর সাথে আলাদা রুমে পাঠিয়ে দেয়া হোল। অথচ আমিই নামাজ পড়ে দোয়া করেছিলাম যেন আমার একটা ছোটভাই হয়। সেই আমার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা! সম্পূর্ণ ব্যাপারটা আমার শিশুমনে প্রচন্ড আঘাত করল। ব্যাস, আর পায় কে? আহমদ বেচারা নেহাৎ ভদ্র ভালোমানুষটি বলে আমার সমস্ত অত্যাচার বছরের পর বছর মুখ বুজে সহ্য করে গিয়েছে। আজ এত বছর পর ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব মোহাম্মদের চেয়েও বেশী যদিও মোহাম্মদ আমার বারো বছরের ছোট হওয়ায় ওর প্রতি অনেকক্ষেত্রে মায়ের দায়িত্ব পালন করা হয়েছে আমার। কিন্তু আহমদের প্রতি আমার এই অত্যাচার একটু সচেতন হলেই এড়ানো যেত।

আমি যখন বুঝতে পারলাম যে রাদিয়ার ঠিক একই ব্যবধানে ভাই বা বোন হতে যাচ্ছে সাথে সাথে আমি ওকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিলাম। ওকে বললাম, “সাকিবের একটা বোন আছে বলে ও হিসানের সাথে খেলতে পারে, ওরা দু’জন একসাথে গল্প করতে পারে। কিন্তু ওরা যখন চলে যায় তখন তো তোমার আর খেলার বা গল্প করার কেউ থাকেনা। এখন যদি আমাদের বাসায় একটা বেবী আসে তাহলে তুমি ওর সাথে খেলতে পারবে, গল্প করতে পারবে- এটা কেমন হয়?” ও বলল, “লাগবেনা, সাকিব হিসান আসলে ওদের সাথে খেলব আর নাহলে তোমার সাথেই খেলব”।

ক’দিন পর ওকে বললাম, “ধর, আল্লাহ যদি একটা বেবী পাঠিয়ে দেন তাহলে কি করব?” ও জিজ্ঞেস করল, “আল্লাহ যদি দেন তাহলে তো না বলা যাবেনা, না?” আমি বললাম, “না”। ও তখন বলল, “আচ্ছা, ঠিক আছে, ওকে বারান্দার পাশে যে সুপারী গাছটা আছে ওখানে রেখে দিও। তাহলে বারান্দা দিয়ে আমি ওকে খাবার দিতে পারব”। ওকে সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ দিয়ে আমি ওকে নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী এবং দায়িত্বশীল হয়ে ওঠার ব্যবস্থা করে দিলাম। কিছুদিন পর ওকে বললাম, “বৃষ্টি পড়লে তো বেবীটা ভিজে যাবে তখন কি করবে?” রাদিয়া চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল যে বেবীটাকে সুপারী গাছ থেকে ট্রান্সফার করে বারান্দায় রাখলে খুব বেশী সমস্যা নেই। এ’সময় আমার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিল। ও জিজ্ঞেস করলে বুঝিয়ে বললাম, “বেবীটাকে আল্লাহ বলেছেন বড় হওয়া পর্যন্ত কিছুদিন আম্মুর ভিতরে থাকতে। কিন্তু বেবীটা ভীষণ দুষ্ট। শুধু লাফালাফি করে আর আম্মু নিশ্বাস নিতে পারিনা”। সে সাথে সাথে বড়বোনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গেল, “অ্যাই বেবী, এত দুষ্টুমী করবেনা। শোন, আমি তোমাকে গান শোনাই, তুমি ঘুমাও। খবরদার আম্মুকে জ্বালাবেনা!”

এভাবে আস্তে আস্তে সে একজন অদেখা অচেনা আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে লাগল, তার আগমনের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করল যে ওকে সম্মান করবে, ওর কথা শুনবে, ওর সাথে খেলবে, গল্প করবে। রিহাম আসার কিছুদিন আগে সে ঘোষনা দিল, “বেবীকে ঘরের ভেতরে রাখা যাবে যদি বেবী আব্বুর সাথে ঘুমায়। আমি তোমার পাশেই ঘুমাব”। এই শর্তে রিহামকে ঘরে আনা হোল।

ঘরে আনার পর আম্মা একটু দাদীসুলভ হা-হুতাশ শুরু করতে চেয়েছিলেন, “আহা! রাদিয়ার তো আর আদর নাই!” সেই প্রথম আমি আম্মাকে কড়া করে বলতে বাধ্য হয়েছিলাম, “আম্মা, এই বাচ্চা নিয়ে আমি কি কষ্ট করেছি আপনি দেখেছেন। দুইমাস বয়সের বাচ্চা নিয়ে আমি চাকরী করতে গিয়েছি। বুয়া ছিলনা, দিনরাত বাচ্চা নিয়ে চাকরী করে ঘরে এসেও বাচ্চা নিয়েই থাকতাম। আর আপনি যদি আজকে ওকে বুঝাতে আসেন যে ওকে ওর মা ভালোবাসেনা, আপনার সাথে আমার বিশাল সমস্যা হয়ে যাবে। আমি যেন কাউকে রাদিয়ার সাথে এ’ধরণের কথা বলতে না শুনি”।রাদিয়াকে বুঝিয়ে বললাম, “এটা তোমার বেবী, সুতরাং ওকে দেখাশোনা, শাসন করার দায়িত্ব তোমার”। সেও তখন খুশী হয়ে ভাইকে আপন করে নিল। এটা ছিল আমার এ’যাবৎকালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যেহেতু আমি চাইনি আমার মেয়ে সেরকম অসহায় বোধ করুক যা আমাকে আমার ভাইকে বন্ধু ভাবার পরিবর্তে শত্রু ভাবতে শিখিয়েছিল।

আমি যেহেতু চাকরী করতাম, আমি জানতাম আমার পক্ষে আমার কোন সন্তানকেই সার্বক্ষণিক চোখে চোখে রাখা সম্ভব হবেনা। তাই ওদের ছোটবেলা থেকেই আমি বাগানে নিয়ে যেতাম। দেখাতাম মানুষের নানামুখী আচরণ। কেউ কেউ সুন্দর ফুল দেখলে প্রশংসাসূচক কিছু বলে চলে যান, কেউ একটু গন্ধ শুঁকে দেখেন, কেউ একটু ছুঁয়ে দেখেন, কেউ ফুলটাকে গাছ থেকে ছিঁড়ে ফেলেন, আর কেউ কেউ নির্দয়ভাবে ফুলটাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে আনন্দ উপভোগ করেন। আমি তাদের শেখালাম কেউ তাদের আন্তরিকভাবে ভালোবাসবে, কেউ আদর করবে কিন্তু তাতে স্বার্থের গন্ধ থাকবে, কেউ তাদের ভালোবাসবেনা আর কেউ তাদের ক্ষতি করতে চাইবে। সুতরাং তাদের মেনে নিতে হবে যে পৃথিবীতে সবাই ভালো হয়না, সবাই খারাপও হয়না। কিন্তু যতদিন জানা না যায় কে কেমন ততদিন নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ইনোসেন্স খুব ভালো জিনিস, কিন্তু এই ইনোসেন্স যদি কাউকে সহজ শিকারে পরিণত করে তাহলে তার কোন মূল্য নেই।

একটা কার্টুনে ভারী মূল্যবান কথা শুনেছিলাম, পরে Platoon ছবিটিতে একই কথার পুণরাবৃত্তি শুনেছিলাম, “The first victim of war is innocence”. আপনি ততদিনই নিষ্পাপ হওয়া পোষাতে পারেন যতদিন এটা আপনার নিরাপত্তার পরিপন্থি না হয়। আজকের যুগে শিশুদের ভুলিয়ে রেখে নিরাপদ রাখা আর সম্ভব নয়। সুতরাং তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের নিজেদেরই সচেতন করে তুলতে হবে। এক বান্ধবী বলেছিলেন ওনার মা ওনাকে ছোটবেলা থেকেই এই ধারণা দিয়ে বড় করেছেন যে শ্বাশুড়ীরা মায়ের মতই বৌদের আপন করে নেয়, বৌ আসার সাথে সাথে নিজের আঁচল থেকে চাবি খুলে বৌকে তুলে দেয়। তাই তিনি যখন শ্বশুরবাড়ী গিয়ে দেখলেন যে শ্বাশুড়ী মারমুখী তিনি কিছুতেই ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলেন না যে কি হোল এবং আদৌ সংসার করবেন কি’না ভেবেই তিনি অনেকখানি সময় ব্যায় করেছেন যা হয়ত আরো ফলপ্রসুভাবে কাজে লাগানো যেত। ছেলেমেয়েদের বোঝানো উচিত যে ভালো আত্মীয়স্বজন পাওয়া গেলে ভালো নতুবা যে যেমন তাকে সেভাবেই মেনে নিতে হবে। তাঁরা আমাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করুন বা না করুন বা যেমন আচরণই করুন, আমরা নিজেদের আচরণ এবং কাজগুলোই মূল্যায়ন করে নির্ণয় করার চেষ্টা করব যে আমরা কতটুকু ভালো বা খারাপ। তাহলে আর কারো অন্যায় আমাদের মানবসত্ত্বা থেকে আমাদের বিচ্যূত করতে পারবেনা।

সময় পেলেই আমাদের সন্তানদের সাথে বিবিধ জ্ঞানবিজ্ঞানবিষয়ক কথাবার্তা বলা উচিত যেন তারা চিন্তার খোরাক পায় এবং আজেবাজে বিষয় বা সময় নষ্ট করার মত ব্যাপারগুলো থেকে তাদের বিরত রাখা যায়। এই আলোচনার ফাঁকেফাঁকে তাদের বয়ঃসন্ধিক্ষণে যেসব পরিবর্তন আসবে তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা উচিত যেন তারা ঘাবড়ে না যায়, যেন তারা বুঝতে পারে কেন যেই ছেলে বা মেয়েটির সাথে কাল পর্যন্ত খেলা দোষণীয় ছিলোনা তার পাশে বসা যাবেনা বা তার সাথে কথাবার্তায় সংযত হতে হবে, তারা যখন পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা শুরু করবে তখন সে যেন বাবামায়ের সাথে এ’ব্যাপারে সরাসরি কথা বলতে পারে এবং তাদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নেয়ার সুযোগ পায় এই পথ খোলা রাখা খুব জরুরী। কারণ আমি প্রায়ই ছেলেমেয়েদের দেখেছি এসব ব্যাপারে বন্ধুবান্ধবের সাথে আলাপ পরামর্শ করতে, বলাইবাহুল্য এই বন্ধুর জানার বা ভাবার পরিধি বাবামায়ের সমকক্ষ নয় সুতরাং আমার সন্তান ভুলপথে পরিচালিত হতে পারে যদি না আমি তার সাথে এ’ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলি, তাকে বোঝাই এই আকর্ষণ অস্বাভাবিক নয় তবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সঠিক সময় এবং সঠিক মানুষটিকে না পাওয়া পর্যন্ত।

আমার বিয়ের পর আমি দেখে অবাক হয়ে গেলাম যে আম্মা প্রতিদিন ফজরের সময় এতবড় ছেলেকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতে আসেন, যে ছেলেকে উনি নিজেই আলিম বানিয়েছেন! তার কিছুদিন পর শুরু হোল জেরা, আমি প্রতি ওয়াক্তে নামাজ পড়ি কি’না, ওনার ছেলে কোন কোন সময় ফাঁকি দেন। উনি এমনকি পুত্র এবং পুত্রবধুর সহকর্মীদের ফোন করে জিজ্ঞেস করতেন আমরা কর্মস্থলে ঠিকভাবে নামাজ পড়ি কি’না। আমার মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করত, “আম্মা, আমরা কি নামাজ আপনার জন্য পড়ি না আল্লাহর জন্য? আপনাকে ফাঁকি দেয়া কোন ব্যাপার না যেহেতু আমরা ছ’টায় বের হই রাতে অনেক সময় বারোটা সাড়ে বারোটায় ফিরি। কিন্তু নামাজ যার জন্য তাঁকে তো ফাঁকি দেয়ার কোন জায়গা নেই। তাহলে আপনি এত প্যারানয়েড হচ্ছেন কেন?” কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি।

পক্ষান্তরে আমি আমার সন্তানদের বুঝিয়ে দিয়েছি ওদের কাজের দায়িত্ব ওদের, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতাও ওদের। ফলাফল হল, মাঝেমাঝে ওয়াক্তের কথা মনে করিয়ে দিতে হয় বটে (যেহেতু ক্যানাডায় আজান দেয়না) তবে রাদিয়া মোটামুটি নিজ দায়িত্বে নামাজ পড়ে। পর্দা করার সিদ্ধান্তও সে নিজেই নিয়েছিল যদিও আমি ওকে বলেছিলাম সে চাইলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারে কিন্তু শুরু করলে আর ছাড়তে পারবেনা যেহেতু এটা আল্লাহর নির্দেশ মানার ব্যাপার। সে আটবছর বয়সেই নিজ দায়িত্বে পর্দা শুরু করে। ওদের ছোটবেলা থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছি কোন ব্যাপারগুলো permissible এবং কোনগুলো নিষিদ্ধ, কোন কাজের কি ফলাফল। প্রতিবেশীদের কাছে শুনেছি রাদিয়া তাঁদের বাচ্চাদের বোঝায় কি করা উচিত এবং কোনটা না করা উচিত আর রিহাম তো আমার সামনেই সবার ওপর পন্ডিতি করে! ওরা অন্যায় করলে আমি ওদের ডেকে বুঝিয়ে দেই কেন তাদের বকা বা শাস্তি দেয়া হোল। কারণ আমি তাদের মারলে কোন কাজ হবেনা যদি ওরা না বোঝে ওরা ভুলটা কোথায় করল। বোঝানোর পর আমি ওদেরই জিজ্ঞেস করি ওরা শাস্তিটা সঠিক মনে করে কি’না। এতে করে তারা নিজেরদের কাজের দায়দায়িত্ব নেয়ার ব্যাপারে সচেতন হয়।

আমি বাচ্চাদের বাসার সব কাজে জড়িত করার চেষ্টা করি যেন ওরা অনুভব করে এটা ওদের বাসা এবং এখানে সবার প্রতি এবং সবকিছুর প্রতি ওদের দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্ব ছাড়া leadership qualities গড়ে তোলা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমার বাবা বলত প্রত্যেক ব্যক্তির, সে হোক ছেলে বা মেয়ে, সবধরণের কাজ করার অভ্যাস এবং অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। আমার এস এস সি পরীক্ষার পর তিনমাসের ছুটিতে বাবা আমাকে রান্না আর কম্পিউটার রপ্ত করার জন্য বসিয়ে দিল। বাংলাদেশে এসে ঘরের renovation চলাকালীন সময় বাবা এবং মিস্ত্রীদের সাথে থেকে প্ল্যানিং, কন্সট্রাকশনের কাজ, ফার্নিচার বানানোর কাজ, ঘরবাড়ী এবং কাঠের জিনিস রঙ করা, একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা- এসব ব্যাপারে অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা করতে গিয়ে শেখা হয়েছে অনেক কিছু যা পরে কাজে লেগেছে। তাই আমিও আমার মেয়েকে সব কাজ করতে দেই যেন আমাকে ফ্যাশনমাফিক বলতে না হয়, “আমার বাচ্চারা তো কিছু পারেনা!” পারবেনা কেন? প্রথমে ভুল করবে, কিছু জিনিস নষ্ট করবে, খুব বেশী সুন্দর হয়ত হবেনা- তারপর একসময় ঠিকই পারবে। কিন্তু পারেনা পারেনা করে করতে না দিলে তো সে কখনোই শিখবেনা! তাছাড়া সবাই মিলে কাজ করতে করতেই তো সে শিখবে বাবামায়ের প্রতি সহানুভূতি, ভাইবোনদের প্রতি দায়িত্ব, পারিবারিক মায়ামমতা এবং সবাই মিলে কিছু শেয়ার করার আনন্দ!

আজকাল এটা একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে যে বাবামা মনে করেন বাচ্চাদের বাসায় কোন দায়িত্ব দেয়া মানে তাদের প্রতি অবিচার করা। তাঁরা সবাইকে এত বেশী স্বাধীনতা দেন যে ভাইবোন পর্যন্ত একজন আরেকজনের সাথে কিছু ভাগাভাগি করতে রাজী হয়না, পরস্পরের প্রতি কোন দায়িত্ব বা সহানুভূতি অনুভব করার প্রয়োজন মনে করেনা। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে কথা বলার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কেনাকাটার ক্ষেত্রে সংযম। আজকাল দেখা যায় আমরা বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সব জিনিসই দেই যেন “চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে”। কিন্তু একটা বাচ্চা কিছু চাইলে তার সাথে আলাপ করা দরকার সে এটা কেন চায়, এটা দিয়ে সে কি করবে, এর উপকারীতা ও অপকারিতাগুলো কি কি, জিনিসটি আদৌ তার প্রয়োজন আছে কি’না এবং এই টাকায় সে আর কি করতে পারে। এতে করে ওরা স্বার্থপর হবার পরিবর্তে needs এবং wants এর মধ্যে তফাত করতে শিখবে, অন্যের প্রয়োজনকে নিজের প্রয়োজনের ওপর অগ্রাধিকার দিতে শিখবে। সর্বোপরি আমি তাদের মৃত্যু সম্পর্কে বলি যেন তারা বুঝতে পারে যে এই জীবনের মূল্য কেবল পরবর্তী জীবনের পাথেয় সঞ্চয়ের জন্যই, সুতরাং এখানে সব পেয়ে যেতে হবে বা না পেলে হতাশ হতে হবে এই ধারণা তাদের স্পর্শ করেনা।

তবে কথা বলার সবচেয়ে বড় দিক হোল শোনা। আমাদের সন্তানেরা কি বলতে চায়, কি জানতে চায়, তাদের মনে কি প্রশ্ন তা আমাদের শুনতে হবে, জানতে হবে এবং যে শিশুটির স্বভাব যেমন সেভাবেই তার সাথে কথা বলতে হবে। যেমন বাবা আমাকে ডাকত “রেহনুমা বিনত ত্যাড়া”। আমাকে সুন্দর করে বললে আমি তার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু কেউ আমার দিকে একটু বাঁকা করে তাকালো তো সব শেষ। আমার এই স্বভাব না বোঝার কারণে মা’র সাথে আমার অপূরণীয় দুরত্বের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। আমি আমার দুই সন্তানের মধ্যেই দেখি রাদিয়া ওর বাবা আর বড়মামার মত নিয়ম মেনে চলা, অনুগত, ভালো মানুষ। কিন্তু রিহাম আমার মতই উচ্ছৃংখল, ত্যাড়া। সুতরাং রাদিয়াকে বোঝানো অনেক সহজ ওর কাছে আমাদের আশা-আকাংখা কি। কিন্তু রিহামকে পাম্প দিয়ে বলতে হয়, “যদি তুমি অমুক কাজটা কর তাহলে তোমাকে আম্মু স্পেশাল আদর করব আর যদি তমুক কাজটা কর তাহলে আম্মু আর তোমার সাথে কথা বলবনা”।

সুতরাং বাচ্চাদের সাথে কথা বলার জন্য সময় ব্যায় করতে হবে, আগে থেকে স্ক্রিপ্ট তৈরী করে বসতে হবে যেন একটা শব্দও এদিক ওদিক না হয়, যেন ওদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব প্রস্তুত থাকে আর প্রস্তুত না থাকলে যেন আমরা সৎসাহস নিয়ে বলতে পারি, “আমি পরে জেনে তোমাকে জানাব”, ওরা যেন অবহেলিত বোধ না করে এবং সবচেয়ে বড় কথা এই কথাবার্তার মাধ্যমে যেন ওরা অনুভব করে যে ওরা ব্যাপারগুলো স্পষ্ট বুঝতে পারছে এবং ওদের বাবামা ওদের ভালোবাসে বলেই এই কথাগুলো ওদের বলা হচ্ছে।

(সংগৃহীত)

নারীর ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থাকরণ

schoolgirls

লিখেছেন: আব্দুল্লাহ আল-মামুন | সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

আমাদের দেশের নারী সমাজ ইসলামী শিক্ষা থেকে অনেকটা বঞ্চিত। একটি আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজন একদল আদর্শ যুবক তৈরি করা, একদল আদর্শ যুবক তৈরি করতে হলে দরকার একদল আদর্শ শিশু তৈরি করা। আর একদল আদর্শ শিশু তৈরি করতে হলে আগে তৈরি করতে হবে একদল ইসলামী শিক্ষা সম্পন্ন আদর্শবতী মা। একজন শিক্ষিতা ও আদর্শবতী “মা” ই পারেন একটি শিক্ষিত ও আদর্শ সমাজ উপহার দিতে।

কিন্তু আমাদের দেশের মায়েরা ইসলামী শিক্ষা গ্রহণে কতটুকু সুযোগ-সুবিধা পায়? হাদীসে এসেছে: “প্রত্যেক শিশু ইসলামের (মুসলিম হয়ে) উপর জন্ম গ্রহণ করে, অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইহুদি, নাসারা বা মুর্তিপূজক বানায়।” [বুখারী ও মুসলিম]

এ হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, শিশুদের প্রতিপালনের ক্ষেত্রে মা-বাবার কতটুকু ভূমিকা রয়েছে। পারিবারিকভাবে শিশুকে ইসলামের আদর্শ ছোটবেলায় শিক্ষা দিলে সে বড় হয়ে এ আদর্শই প্রতিপালন করবে। তাছাড়া ইসলামের বিধিবিধান যথাযথভাবে বুঝা, তার নিজের ও অপরের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া, বিশ্ববাসীর প্রতি ইতিবাচক চিন্তা চেতনা, সৃজনশীল কিছু আবিষ্কার করা, পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা সর্বোপরি নিজের সংসার উন্নতিকল্পে সর্বক্ষেত্রে নারীর ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই।

নারীর কতটুকু ইসলামী জ্ঞান থাকা প্রয়োজন?

নারীর কর্মপরিধি অনুযায়ী তার ইসলামী জ্ঞানের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। হাদীসে এসেছে: ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল (রক্ষণাবেক্ষণকারী), আর তোমাদের দায়িত্ব অনুযায়ী জবাবদিহি করতে হবে। ইমাম (রাষ্ট্রের নেতা, কর্মকর্তা ও মসজিদের ইমাম) একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি; তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। খাদেম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকে তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে”।

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন: আমার মনে হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: “পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা সবাই রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং সবাইকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।” [বুখারী ও মুসলিম]

এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, যে নারী যত বড় দায়িত্বশীল তার ইসলামী জ্ঞানের পরিধিও ততবেশী প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবে যে সব নারীরা নিজ গৃহের দায়িত্বশীলা তাকে গৃহ পরিচালনা, সন্তান সন্ততি, স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য, অন্যের প্রতি দায়িত্ব ও অধিকার, প্রাত্যহিক জীবনে চলার জন্য যে সব অর্পিত ইবাদত (যেমন: পবিত্রতা, নামায, রোযা প্রভৃতি) আছে ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা ফরয। আর কোনো নারী যদি চাকুরী বা ব্যবসা করে তবে তাকে উপরোক্ত জ্ঞানের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা ফরয। আবার কেউ যদি সমাজের দায়িত্বশীল হন, তবে তাকে জনগণের অধিকার ও ইসলামে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জ্ঞান থাকাও ফরয।

আমরা নারীর ইসলামী শিক্ষা প্রসারে নিচের কয়েকটি ধাপে এগিয়ে যেতে পারি:

এক. নারীদেরকে জুম‘আর নামাজের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মহিলারা মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও তারা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন, বিশেষ করে জুম‘আর নামায। কিন্তু পরবর্তী যুগে ফেতনা ফাসাদ বেড়ে যাওয়ায় যুগের চাহিদানুসারে উলামায়ে কিরাম মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন; কেউ কেউ এটাকে হারাম বলেছেন, কেউ এটাকে জায়েয বলেছেন, আবার কেউ মসজিদে না যাওয়াটাকে উত্তম বলেছেন। তাই আমি নিচে উলামা কিরামের মতামত প্রথমে উল্লেখ করব এবং তারা কি কি কারণে নিষেধ করেছেন? বর্তমানে মহিলাদেরকে মসজিদমুখী করা কতটুকু প্রয়োজন এবং এর হুকুম কি? কি কি শর্তসাপেক্ষে মহিলারা মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতে পারবেন? বিশেষ করে জুম‘আর নামায।

যারা হারাম বলেছেন তাদের দলীল: বুখারী ও আবু দাউদে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বর্তমান) নারীদের অবস্থা দেখতেন, তবে তিনি তাদেরকে মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করতেন, যেমনিভাবে বনী ইসরাইলদের নারীদেরকে মসজিদে যেতে বারণ করা হয়েছিল।” [বুখারী ও আবু দাউদ]

আবু দাউদে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মহিলাদের ঘরে নামায আদায় করা বৈঠকখানায় নামায আদায় করার চাইতে উত্তম এবং মহিলাদের সাধারণ থাকার ঘরে নামায আদায় করার চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে নামায আদায় করা অধিক উত্তম।”

যারা জায়েয বলেছেন তাদের দলীল: ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী (আতিকাহ বিনতে যায়িদ) ফজর ও ইশার নামাযের জামা’আতে মসজিদে যেতেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কেন (সালাতের জন্য মসজিদে) বের হন? অথচ আপনি জানেন যে, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এটা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদাহানিকর মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, তাহলে এমন কি বাধা রয়েছে যে, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে স্বয়ং নিষেধ করছেন না? তিনি বললেন, তাঁকে বাধা দেয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর বাণী: “আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না।” [বুখারী ও মুসলিম]

আবু দাউদে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না, তারা যেন সুগন্ধি ছাড়া বের হয়।”

কি কি কারণে না জায়েয বলেছেন? ও তার প্রতিকার:

প্রথমত: নারীদের মসজিদে যাওয়া ফেতনা ফাসাদের কারণ হতে পারে। তবে পূর্ণ পর্দা সহকারে আলাদা স্থানে নামায পড়লে এটার সম্ভাবনা থাকেনা।

দ্বিতীয়ত: নারীরা সাজসজ্জায় অভ্যস্ত। যা পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করতে পারে। এ সমস্যার সমাধানকল্পে স্বয়ং উপরোক্ত হাদিসেই এসেছে যে, “তারা যদি মসজিদে যায় তবে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে”। এখানে সুগন্ধি দ্বারা সব ধরনের সাজ-সজ্জাকে মসজিদে যাওয়ার সময় নিষেধ করা হয়েছে।

মোদ্দাকথা, এখানে আমি মহিলাদেরকে মসজিদে জামাতে নামায আদায় করাকে উত্তম বা অনুত্তম বলছি না। কেননা এটা জায়েয বিষয়, হারাম বলাটা ঠিক হবেনা। তবে আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের যদি জুম‘আর নামায ও অন্যান্য বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা থাকত, তবে ইসলামী শিক্ষা থেকে তারা এতটা দূরে থাকত না। তাদের ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা লক্ষ্য রেখে তাদেরকে মসজিদ-মুখী করা দরকার।

কি কি শর্তসাপেক্ষে মহিলারা মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতে পারবেন?

(১) মসজিদে মহিলাদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা নামাযের জায়গা থাকতে হবে ও আলাদা দরজা থাকতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যদি এই দরজাটি কেবলমাত্র মহিলাদের প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট করা হত (তবে উত্তমই হত)। নাফে’ রহ. বলেনঃ অতঃপর ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উক্ত দরজা দিয়ে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোনোদিন প্রবেশ করেন নি। অন্য রেওয়ায়েতে, ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পরিবর্তে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কথা বলা হয়েছে।” [আবু দাউদ]
(২) মহিলারা পূর্ণ পর্দা সহকারে মসজিদে আসতে হবে ও উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না। সুগন্ধি থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না, তারা যেন সুগন্ধি ছাড়া বের হয়।”
(৩) মহিলারা অভিভাবক বা স্বামীর অনুমতিক্রমে আসবে, তারা কোন যৌক্তিক কারণে নিষেধ করলে আসা যাবেনা ও একা একা না আসাই উত্তম।
(৪) রাতের বেলায় মসজিদে না আসাই শ্রেয়, তবে ফেতনার ভয় না থাকলে কোনো অসুবিধা নেই।

দুই. মসজিদে বা বাড়িতে নারীদের জন্যে আলাদা হালকার ব্যবস্থা করা: যে সব মসজিদে বা বাড়িতে নারীদের বসার আলাদা জায়গা রয়েছে সে সব মসজিদে বা বাড়িতে তাদের জন্য মাঝে মধ্যে আলাদা আলোচনার ব্যবস্থা করা উচিত। এসব বিশেষ সভায় নারীদের একান্ত প্রয়োজনীয় মাস’আলা মাসায়েল আলোচনা করা প্রয়োজন। ইমাম সাহেবের স্ত্রী বা নিকটাত্মীয় মহিলা যদি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হন তবে তাদের দ্বারা এসব আলোচনা সভার আয়োজন করা উত্তম। আর যদি এ ব্যবস্থা না থাকে তবে ইমাম সাহেব মসজিদ কমিটির সাথে আলোচনা করে কিছু বয়স্ক মুরুব্বী মুসল্লিদের সহযোগীতায় এ ধরনের সভার আয়োজন করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে এটা যেন কোনো ফেতনা ফাসাদের রূপ ধারণ না করে।

তিন. মসজিদে মক্তব ব্যবস্থা আবার চালু করা: প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে সকালে মসজিদে মসজিদে ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়নে মক্তব ব্যবস্থা চালু ছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমান যুগে তা আর চোখে পড়ে না। শিশুদেরকে ছোট বেলায় কালেমা, নামায, রোযা, উত্তম চরিত্র ইত্যাদি ইসলামী শিক্ষা মক্তব থেকেই শিক্ষা দেয়া হয়। তাই তো ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সারা দেশে মসজিদ ভিত্তিক মক্তব ব্যবস্থা চালু করছে। আমাদের সাধ্যানুযায়ী এ বিশেষ ফলপ্রসূ ব্যবস্থাটিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

চার. আধুনিক ও মানসম্মত মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা: আমাদের দেশে বর্তমানে কিছু কিছু মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু এ গুলো মানের বিচারে এখনও পিছিয়ে আছে। ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা ছাড়া বর্তমানে মানসম্মত প্রতিষ্ঠান কল্পনা করা যায়না। উদাহরণস্বরূপ আমরা বিশ্ববিখ্যাত আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা শাখার কথা বলতে পারি। সেখানে মেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশে ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে (ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারী ও অন্যান্য শিক্ষা সহ) নার্সারি থেকে পি,এইচ,ডি পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে মিশরের ও মুসলিম বিশ্বের নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজের সর্বস্তরে সেবা দান করছে।

পাঁচ. প্রচলিত সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষাকে জোরদার করা: আমাদের দেশে প্রচলিত সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিপূর্বে ইসলামী শিক্ষাকে গুরুত্বের সাথে পড়ানো হত। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমানে এ বিষয়টিকে অনেকটা অবহেলার ছলে পড়ানো হয়, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ হয়ে দাড়াবে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষাকে গুরুত্বের সাথে পড়ানো হলে আজ নারীরা ইসলামী জ্ঞান থেকে এতটা দূরে থাকত না। বর্তমান সংস্কারকৃত শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষাকে যেভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে ভবিষ্যতে মানুষ আল্লাহ-রাসুলকে চিনবে কিনা তা বলা দুস্কর। মনে রাখতে হবে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া আদর্শ মানুষ গঠন করা সম্ভব নয়।

ছয়. হক্কানি ওলামায়ে কিরামদের ওয়াজ মাহফিল শোনা ও যাওয়া: কুরআনে এসেছে: “আপনি তাদেরকে উপদেশ স্মরণ করে দিন (বোঝাতে থাকেন), কেননা উপদেশ স্মরণ করে দেওয়া মু’মিনদের উপকারে আসবে।” [সূরা আয-যারিয়াত:৫৫]

তাই উলামা কিরামদের ওয়াজ মাহফিল শোনা খুবই দরকার। এতে মানুষের মন নরম হয় ও ভালো কাজের প্রতি আগ্রহী হয়। বর্তমানে ঘরে বসে রেডিও, টেলিভিশন, ভি সি ডি, ও ইন্টারনেট থেকে এ সব আলোচনা শোনা একদম সহজ। গান-বাজনা ও সিনেমা দেখে নিজের আমলনামা ভারী না করে এ সব ইসলামী আলোচনা শুনে নিজেকে পরকালের জন্য তৈরি করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সাত. বাংলায় বেশী বেশী ইসলামী বই পড়া: শিখতে হলে পড়তে হবে। বইই হলো মানুষের পরম বন্ধু। তাই বাংলায় ইসলামী বই পড়ে নিজেদের জ্ঞান গরিমা বৃদ্ধি করা প্রত্যেকটি নারী পুরুষের কর্তব্য। তবে বই নির্ধারনের ক্ষেত্রে একজন ভালো হক্কানি আলেমের পরামর্শ নেওয়া ভালো। কেননা অল্প শিক্ষিত মানুষের জন্য সব ধরনের বই পড়া সমুচিন নয়। বিশুদ্ধ আক্বিদা ও সহীহ হাদীস নির্ভর বই পুস্তক পড়া উচিত। যে সব কিতাব ফেতনা ফাসাদ ছড়ায় তা বিশেষজ্ঞ আলেম ছাড়া অন্যরা না পড়াই শ্রেয়। তাছাড়া যে সব কিতাব অধিকাংশ জাল ও দুর্বল হাদীস নির্ভর তা থেকে সাধারণ মানুষের বিরত থাকাই উত্তম। কেননা সে হয়ত কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল তা নির্ণয় করতে পারবে না।

আট. সর্বোপরি দ্বীনদার আলেম পাত্র-পাত্রীর সাথে ছেলে মেয়ের বিবাহ দেওয়া: জামে তিরমিযীতে আবু হাতেম আল মুযানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যখন তোমাদের নিকট এমন পাত্র আসবে যার দ্বীনদারীতা ও চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা সন্তষ্ট হবে, তবে তাঁর সাথে তোমাদের কন্যাকে বিবাহ দাও। আর যদি তোমরা তা না কর, তবে জমিনে ফেতনা ফাসাদ ছড়িয়ে পড়বে।” একজন আলেমের নিকট মেয়ের বিবাহ হলে সেও তার ইসলামী জ্ঞান থেকে একটু একটু করে শিখতে পারবে। আলেমের সাহচর্যে থেকে তার পরিবারটি ইসলামী আলোয় জ্বলে উঠবে আর আগত শিশুটি একটি ইসলামী পরিবেশে বেড়ে উঠে আদর্শবান হবে।

পরিশেষে বলব যে, ইসলামই হচ্ছে মানবতার একমাত্র শান্তির মডেল। পূর্ণ ইসলামী বিধি-বিধান চর্চাই হচ্ছে মু’মিনের একমাত্র লক্ষ্য। পার্থিব জীবনের সামান্য ভোগবিলাসের জন্য অনন্ত জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করা থেকে ভুলে থাকা জ্ঞানীর কাজ নয়। নিজে সত্যিকারের মুসলিম হই ও পরিবারকে এ পথে আনার আপ্রান চেষ্টা করি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে কবুল করুন।

ওয়েব সম্পাদনাঃ মুহাম্মাদ মাহমুদ ইবন গাফফার

রমজানের শেষ দশক এবং ফিতরা ও ঈদ

1367Fazlil_Ashril_Awakhir_Min Ramazan

লিখেছেনঃ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল
সম্পাদনা: উমার ফারুক আব্দুল্লাহ
সৌদি আরব, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আল-আহসা ইসলামিক সেন্টার, বাংলা বিভাগ।

বইটি ডাউনলোড করুন

[page-37, size-188KB]
 

বই – আমল কবুলের দুইটি শর্ত – ফ্রী ডাউনলোড

লেখকঃ মুহাম্মাদ মুকাম্মাল হক

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জ্বীন ও মানব জাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটা কোন নিদৃষ্ট দেশ , জাতি, গোত্র, বর্ণ নিরবিশেষে সকলের জন্যই সমান ভাবে প্রযোজ্য এক মাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা । এই ইবাদাত কবুল হওয়ার জন্য দুইটি শর্ত রয়েছেঃ । তাওহীদ ভিত্তিক আমল, । সুন্নাত ভিত্তিক আমল। এই দুইটি আমল ছাড়া আল্লাহর নিকট কোন ইবাদতই কবুল হবে না । যতই সে আমল করুক না কেন । আর যদি আমল কবুল না হয় তাবে তো সে পরিত্রান পাবে না । এই জন্য চাই আমাদের তাওহীদ ভিত্তিক আমল ও সুন্নাহ ভিত্তিক আমল । লেখক মুহাম্মাদ মুকাম্মাল হক এই গ্রন্থে এই দুইটি বিষয়  সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৭৯

আমল কবুলের দুইটি শর্ত – QA Server
আমল কবুলের দুইটি শর্ত – QA Server

আমল কবুলের দুইটি শর্ত – Mediafire
আমল কবুলের দুইটি শর্ত – Mediafire

কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যা – (জ্ঞান পিয়াসুদের জন্য) বই + mp3

“বিসমিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ ওয়া আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাইন আম্মাবাদ”

 

আপনি কি জান্নাত পেতে চান? জাহান্নাম থাকে নিজেকে রক্ষা করতে চান? আমরা সবাই তা চাই। কিন্তু আমরা কি জানি কিভাবে চির সুখের স্থান জান্নাত পেতে হবে এবং কিভাবে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে?

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেনঃ

الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ أُولَٰئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ

যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।“  [ সুরা আন’আম ৮২]

এবং মহানবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন

আল্লাহ তা’আলা এমন বাক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে বাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি  লাভের উদ্দেশে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।“ [সহিহ বুখারি-৬৪২৩, সহিহ মুসলিম – ৩৩,২৬৩]

তাওহীদ হল ইসলামের মূল ভিত্তি। জান্নাত লাভের চাবিকাঠি। এবং তাওহীদের বিপরীত হল শিরক। শিরক যাবতীয় আমল বরবাদকারি জাহান্নামে যাবার কারণ।মহান আল্লাহ বলেন:

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল।“ [সুরা নিসা -৪৮ ]

إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ

“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার জন্য জাহান্নামকে অবধারিত করে দেন ।“[সুরা মায়েদা – ৭২]

আর তাই আল্লাহর বিশুদ্ধ তাওহীদের দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে শাইখ মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান আত-তামিমি(রাহিমাহুল্লাহ) আল্লাহর তাওহীদের উপর এই অমূল্য গ্রন্থটি রচনা করেন। এতে লেখক (রাহিমাহুল্লাহ) তাওহীদের অর্থ ও ফাযিলত, তাওহীদের বিপরীত শিরক এর প্রকারভেদে এর ভয়াবহতা সহ আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছেন যেমনঃ

  • তাওহীদের মর্যাদা এবং তাওহীদের ফলে যে পাপ মোচন হয়।
  • যে ব্যক্তি তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করবে সে বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে।
  • শিরক সম্পর্কীয় ভীতি।
  • লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর প্রতি সাক্ষ্যদানের আহবান।
  • তাওহীদ এবং  লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাক্ষ্য বাণীর ব্যাখ্যা।
  • আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারোর উদ্দেশ্যে মানত করা শিরক এবং কেন।
  • আল্লাহ ব্যতিত গাইরুল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া শিরক এবং কেন।
  • অক্ষমকে আহবান করা শিরক এবং কেন।
  • যাদু।
  • যাদু ও এর শ্রেণীভুক্ত বিষয়।
  • ভবিষ্যৎ বক্তা।
  • অশুভ আলামত সম্পর্কীয় বিবরণ সহ

মোট ৬৬টি বিষয়ের উপর আলোচনা করেছেন। বইটি ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকেঃ

কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যা – QuranerAlo Server
কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যা – QuranerAlo Server
Kitabut Tawheed – Mediafire
Kitabut Tawheed – Mediafire

 

 

 

কিছুদিন আগে শেইখ মতিউর রহমান মাদানি, এই কিতাবুত তাওহীদ বইটির উপর একটি কোর্স করিয়েছিলেন। আপনাদের তাওহীদ বুঝার সুবিধার্থে আমরা আপনাদের জন্য এই কোর্সের ৫৭ টি লেকচার প্রত্যেকটা বিষয়ের উপর আলাদা আলাদা ভাবে নিচে দিয়ে দিলাম। আপনার বইটি ডাউনলোড করে ওপেন করুন, এবং প্রত্যেকটি বিষয়ের পাসে একটা নাম্বার দিয়া আছে। ঐ নাম্বার অনুজায়ে আপনারা নিচে থেকে লেকচার ডাউনলোড করে শুনুন। আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে তাওহীদ বুঝার তাউফিক দান করুক। আমিন।

সব ফাইল একসাথে ডাউনলোড করুন।

Chapter 1-13.zip [204 MB] | Chapter 14-26.zip [228 MB]

Chapter 27-40.zip [229 Mb] | Chapter 41-66.zip [209 Mb]

বিষয় ভিত্তিক আলাদা আলাদা ভাবে নিচে থেকে ডাউনলোড করুনঃ

 

Download from QuranerAlo Server
Tawhid – Introduction.mp3
Chapter 1.mp3
Chapter 2 – Part 1.mp3
Chapter 2 – Part 2.mp3
Chapter 3 and 4.mp3
Chapter 5.mp3
Chapter 6.mp3
Chapter 7.mp3
Chapter 8.mp3
Chapter 9 & 10.mp3
Chapter 11.mp3
Chapter 12.mp3
Chapter 13.mp3
Chapter 14.mp3
Chapter 15.mp3
Chapter 16.mp3
Chapter 17.mp3
Chapter 18.mp3
Chapter 19.mp3
Chapter 20.mp3
Chapter 21.mp3
Chapter 22.mp3
Chapter 23 & 24.mp3
Chapter 25 & 26.mp3
Chapter 27.mp3
Chapter 28.mp3
Chapter 29.mp3
Chapter 30.mp3
Chapter 31.mp3
Chapter 32.mp3
Chapter 33.mp3
Chapter 34.mp3
Chapter 35.mp3
Chapter 36.mp3
Chapter 37.mp3
Chapter 38.mp3
Chapter 39.mp3
Chapter 40.mp3
Chapter 41.mp3
Chapter 42 & 43.mp3
Chapter 44 & 45.mp3
Chapter 46.mp3
Chapter 47.mp3
Chapter 48.mp3
Chapter 49 & 50.mp3
Chapter 51, 52, 53, 54 & 55.mp3
Chapter 56 & 57.mp3
Chapter 58.mp3
Chapter 59.mp3
Chapter 60.mp3
Chapter 61.mp3
Chapter 62.mp3
Chapter 63, 64 & 65.mp3
Chapter 66.mp3

 

ইসলামে ‘তাকওয়া’র স্বরূপ ও সমাজ জীবনে এর প্রভাব~ পর্ব~ ১

লিখেছেনঃ ড. মোঃ ছানাউল্লাহ । ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবনে গাফফার

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

পর্ব~ ১ | পর্ব~ ২ | পর্ব~ ৩

একজন মুসলিমের সামাজিক জীবনমানের অপরিহার্য ও অনিবার্য গুণ হল তাকওয়া। এর অর্থ বেঁচে থাকা, সাবধানতা অবলম্বন করা ও ভয় করা। সাধারণত যে বোধ মানবীয় সহজাত প্রবৃত্তি (নফস) মানুষকে অন্যায়, অশ্লীল, খারাপ ও অনিষ্টিকর কথা, কাজ ও চিন্তা থেকে বিরত রাখে মুলত সেটাই হচ্ছে তাকওয়া। আর এ তাকওয়াই সমাজে মানবতাবোধ, নীতিবোধ ও মূল্যবোধ নামে পরিচিত। উঁচু-নিচু, ধনী-গরীব, সাদা-কালো নির্বিশেষে যে কোন মুসলিম নারী পুরুষ তাকওয়া অবলম্বন করে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক তথা সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করেন, তিনি ইসলামের দৃষ্টিতে মু্ত্তাকী নামে পরিচিত। মানুষের জীবনে সাফল্য অর্জনে তাকওয়ার প্রভাব অনবদ্য ও অপরিমেয়। বিশেষ করে সকল মুসলিমের সমাজ জীবনে তাকওয়ার সুদূর প্রসারী প্রভাব অনস্বীকার্য। সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে তাকওয়া তথা সুস্থ মানসিকতা, মননশীলতা ও আল্লাহ ভীতির কোন বিকল্প হয় না। বর্তমান প্রবন্ধে উপর্যু্ক্ত দিকগুলোর পযালোচনা কুরআন, সুন্নাহ ও যুক্তির আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

তাকওয়া পরিচিতি

‘তাকওয়া’ শব্দটি ইসলামের একটি মৌলিক পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ হল- ভালভাবে বেঁচে থাকা , পরহেয করা, রক্ষা করা, দূরে থাকা, সচেতনতা, জবাবদিহীতা, সচ্ছতা, বিরত থাকা ও সাবধান থাকা। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন, তাকে বলা হয় ‘মুত্তাকী’ আল্লামা যামাখশারী [৫৬৭-৫৩৮ হি.] বলেন, শাব্দিকভাবে ‘মুত্তাকী’ কর্তাবাচক বিশেষ্য, যা আরবদের কথা ‘ওয়াক্বাহু ফাত্তাক্বা’- ‘সে তাকে বাঁচিয়েছে, ফলে সে বেঁচে গেছে’ থেকে এসেছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন: “তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর।[2]

অন্যত্র বলা হয়েছে: “আল্লাহুর শাস্তি থেকে তাদের রক্ষাকারী কেউ নেই।[3]

যে ঘোড়া কাঁদা ও ধুলোবালি থেকে নিজ ক্ষুর বাঁচিয়ে রাখে তাকে ‘ফারাস ওয়াক্বি’ বলা হয়। কারণ কষ্টদায়ক সামান্য কিছুর স্পর্শ থেকেও সে তার ক্ষুরকে রক্ষা করে।” [4]

আভিধানিকভাবে তাকওয়া শব্দের আর এক অর্থ হল- ভয়, সতর্কতা ও জবাবদিহিতা। ‘তাকওয়াল্লাহ’ মানে ‘আল্লাহ্‌র বিষয়ে সতর্ক হওয়া’ [5] তাঁর (আল্লাহর) যাবতীয় নির্দেশসমূহ প্রতিপালন ও সকল নিষেধাধ্জ্ঞা থেকে দূরে থাকা, বেঁচে থাকার মাধ্যমে আল্লাহকে ভয় করা [6] এই দ্বিতীয় অর্থে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে তাকওয়া শব্দের ব্যবহার রয়েছে।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর।[7]

নূহ (আ:) , হূদ (আ:), সালেহ (আ:), লুত (আ:) এবং শুআইব (আ:) নিজ নিজ জাতিকে বলেছিলেন: “তোমরা কি আল্লাহ্‌কে ভয় করবে না?[8] তাঁরা এও বলেছিলেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর।[9]

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তাকওয়া শব্দটি আভিধানিকভাবে দু’টি অর্থ ধারণ করে। এক, আত্মরক্ষা, বেঁচে থাকা, বিরত থাকা, মুক্ত থাকা, রক্ষা করা ও পরহেয করা। দুই, ভয়-ভীতি তথা কোন প্রকার অনিষ্ট ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা মিশ্রিত ভয় । [10] ইসলামী শরী’আতের পরিভাষায় তাকওয়া অর্থ হল, আল্লাহ্‌ তা’আলার ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ হতে দূরে থেকে ইসলাম নির্ধারিত পথে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা। অথবা, যে কাজ করার কারণে মানুষকে আল্লাহ্‌র শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা হচ্ছে তাকওয়া। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে প্রাপ্ত করুণা, ভালবাসা, দয়া ও অনুগ্রহ হারানোর ভয় অন্তরে সদা জাগ্রত থাকার নাম তাকওয়া । [11]

মুত্তাকীর পারিভাষিক সংজ্ঞায় কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (রা:) [মৃ. ৬৮৫ হি] বলেন: “শরীয়তের পরিভাষায় মুত্তাকী বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যিনি নিজেকে এমন সব কিছু থেকে রক্ষা করেন, বাঁচিয়ে রাখেন, যা তাকে পরকালে ক্ষতির সম্মুখিন করবে।[12]

আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইব্‌ন মাসউদ আল বগবী (রা:) [মৃ. ৫১০ হি] বলেন: “মুত্তাকী ঐ ব্যক্তি, যিনি শির্‌ক, কবীরা গুনাহ ও সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখেন। মুত্তাকী শব্দটি আল ইত্তিকাউ থেকে নির্গত। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে দু‘বস্তুর মাঝখানের অন্তরাল-দেয়াল। যেমন এক হাদীসে আছে, সাহাবায়ে কিরামের উক্তি, “যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আড়াল করে থাকতাম। অর্থাৎ যখন যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যেত তখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আমাদের ও শুক্রদের মাঝখানে অন্তরায় করে রাখতাম। সুতরাং মুত্তাকী আল্লাহর আদেশ পালন এবং তাঁর নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকাকে তার এবং আল্লাহর শাস্তির মাঝখানে অন্তরায় তৈরী করে বলেই তাকে মুত্তাকী বলা হয়।[13]

আল্লামা জারুল্লাহ যামাখশারী (রা:) [মৃত. ৫৩৮ হি] বলেন: “ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় মুত্তাকী হল ঐ ব্যক্তি, যে নিজ সত্তাকে রক্ষা করে এমন বিষয় থেকে, যার জন্য সে শাস্তির উপযোগী হয়ে যায়; সেটি করণীয় হোক বা বর্জনীয়। [14]

পবিত্র কুরআনে তাকওয়া

পবিত্র কুরআনের পনের জায়গায় তাকওয়া শব্দটির উল্লেখ রয়েছে।” [15] ‘আল-মুত্তাকুন’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে মোট ছয় জায়গায় এবং ‘আল-মুত্তাক্বীন’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে মোট ৪৩ জায়গায়। [16] এছাড়া ‘আলবিকায়াতু’ ও ‘আল-ইত্তিকাউ’ শব্দমূল থেকে গঠিত বিশেষ্য-বিশেষণ বা ক্রিয়ারূপে ব্যবহার রয়েছে প্রায় দু’শ জায়গায়। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত করণীয় বা বর্জনীয় প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনার সাথে ‘তাকওয়া’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। ‘তাকওয়া’র আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের সাথে মিল রেখে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ এর কিছু নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

তাকওয়া অর্থ ঈমান। যেমন, আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “কুরআন মাজীদ মুত্তাকীদের তথা মু’মিনদের জন্য পথপ্রদর্শক।[17]

অন্যত্র বলা হয়েছে: “আর তিনি তাদের জন্য তাকওয়ার বাণী তথা তাওহীদের বাণী অর্থাৎ ঈমান অবধারিত করে দিলেন।[18]

আরো বলা হয়েছে: “তারাতো ঐ ব্যক্তি যাদের অন্তরসমুহকে আল্লাহ তা‘আলা তাকওয়ার তথা ঈমানের জন্য নির্বাচন করেছেন।[19] “ফিরআউন সম্প্রদায়, তারা কি তাকওয়া অবলম্বন তথা ঈমান গ্রহণ করবে না?” [20]

তাকওয়া অর্থ তাওবা-অনুশোচনা। যেমন, “আর যদি গ্রামের অধিবাসীরা ঈমান গ্রহণ করে ও তাকওয়া অবলম্বন করে অর্থাৎ তওবা করে তবে তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।[21] তাকওয়া অর্থ আনুগত্য। যেমন, “তোমরা ভীত হও যে, আমি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই আনুগত্য কর।[22] অতএব, “তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া আর কারও আনুগত্য করছ?[23]আর তোমরা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর অর্থাৎ তাঁর অবাধ্য হয়ো না।[24]

তাকওয়া অর্থ নিষ্ঠা-আন্তরিকতা বা একাগ্রতা। যেমন: “আর নিশ্চয়ই এটি মনের তাকওয়া অর্থাৎ মনের একাগ্রতা।” [25]

তাকওয়া হচ্ছে মূল্যবোধ, মানসিক শুদ্ধতা ও দৃঢ়তা। এটি যে কোন ধরনের পদঙ্খলন থেকে মানুষকে রক্ষা করে; সকল মন্দ ও অশ্লীল কথা, কাজ ও পরিবেশ থেকে ফিরিয়ে রাখে; ‘খাহেশাতে নাফসানী’ তথা প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশি বা অভিলাষ ও দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়ে নিজের ক্ষতি করা থেকে এবং পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করে। জনমানব শূন্য নির্জন স্থানে বা দুর্নীতি করার অসংখ্য সহজ পথ উন্মুক্ত থাকার পরও যে শক্তি মানুষকে তাতে লিপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখে তা-ই তাকওয়া। যাদের মনে তাকওয়া রয়েছে, তাদের ওপর শয়তান তথা দুষ্টচক্রের আক্রমণ ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা শক্তি জগ্রত হয়ে উঠে। [26]

তাকওয়া মানুষের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার শক্তি জাগ্রত করে। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন: “হে বিশ্বাসীগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাকওয়া অর্জন কর, তবে তিনি তোমাদের ভাল-মন্দ পার্থক্য করার শক্তি দান করবেন।… [27]

অর্থাৎ তাকওয়ার ফলে মানুষের বিবেক বুদ্ধি প্রখর হয় এবং সুষ্ঠ বিচার-বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়। তাই সে সত্য-মিথ্যা ন্যায়-অন্যায় ও ভাল-মন্দ চিনতে এবং তা অনুধাবন করতে ভূল করে না। তার হাতে তাকওয়ার আলোকবর্তিকা থাকার ফলে জীবন পথের মন্দ দিকসমূহ সে স্পষ্টত দেখতে পায়। বিবেচনার শক্তির প্রখরতা ও বুদ্ধিদীপ্ততা তার মধ্যে এমনভাবে কাজ করে যে, তার কাছে তখন ইহ-পারলৌকিক যে কোন বিষয়ের কোনটি সঠিক আর কোনটি ভূল তা স্পষ্টতই ধরা পরে। ফলে সে কোন সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ইতস্তত, দুর্বলতা ও হীনমন্যতা ছাড়াই দিবালোকের মত সুস্পষ্ট ও সঠিক পথে চলতে সক্ষম হয়। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “হে মু’মিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর-তাকওয়া অর্জন কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি নিজ অনুগ্রহের দ্বিগুন প্রতিদান তোমাদেরকে দিবেন এবং তোমাদেরকে দিবেন জ্যোতি-আলো, যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে। [28]

অর্থাৎ তাকওয়া জীবনকে এমন এক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করে, যা সকল প্রকার ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা, প্ররোচনা-প্রতারণা, প্রলভন-পদস্খলন থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে। অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর সমুদ্রে কম্পাস বা দিক-দর্শন যন্ত্র যেমন সমুদ্রভিযাত্রীকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে, সমস্যা-সংকুল জীবন পথে তাকওয়াও তেমনি মানুষকে নির্ভূল পথের সন্ধান দেয়। তাকওয়া একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন নীতির পরিচায়ক একটি শক্তি। ভালকে গ্রহণ করার তীব্র আগ্রহ এবং মন্দকে পরিহার করে চলার দৃঢ় মনোবলই হচ্ছে তাকওয়া। মানুষের সকল সৎগুণের সঞ্জীবনী শক্তি হচ্ছে তাকওয়া। এ ক্ষেত্রে তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের ইতবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ডের বর্ণনা সম্বলিত নিম্নোক্ত আয়াতগুলো প্রণিধানযোগ্য। যেমন, “এ গ্রন্থ (আল কুরআন) পথ প্রদর্শণকারী পরহেযগারদের জন্য। পরহেযগার হচ্ছে তারা, যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে; এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু আপনার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, এবং যা কিছু আপনার পূর্ববর্তীদের ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তারা আখিরাতের প্রতিও দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে।[29]

এখানে তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে সৎকাজ সম্পাদন করা। কারণ, অন্য আয়াতে বলা হয়েছে: “পবিত্র কুরআন সৎকর্মশীলগণের জন্য পথপ্রদর্শক ও অনুগ্রহ স্বরূপ।[30]  আর সৎকর্মশীলগণের পরিচয়ে তা-ই বলা হয়েছে, যা মুত্তাকীগণের পরিচয়ে বিধৃত হলো।

অন্যত্র বলা হয়েছে: “শুধমাত্র পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ হচ্ছে, যে ঈমান আনবে আল্লাহ্‌র ওপর, কিয়ামত দিবস, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ ও নবী-রাসূলগণের ওপর; আর তাঁরই ভালবাসার মানসে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির-পথিক, ভিক্ষুক ও সর্ব প্রকার দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্তির জন্য সম্পদ ব্যয় করবে; আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে; আর যারা তাদের অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে যখন তারা অঙ্গীকার করে এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী। আর তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই তাকওয়া অবলম্বনকারী-মৃত্তাকী।[31]

তারাই হল সত্যাশ্রয়ী’ অংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে: “আয়াতে বর্ণিত বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন কর্মকান্ডসমূহ যখন তারা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করবে তখনই তারা মুত্তাকীরূপে পরিগণিত হবে। [32]

“তারাই তো সেসব লোক যারা সত্য প্রমাণিত করেছে, আর তারাই হল মুত্তাকী” আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় আবূ হাইয়্যান (রা:) বলেছেন: “সত্যবাদীতা দিয়ে এখানে কথাবার্তায় সত্যবাদীতা বোঝানো হয়ে থাকতে পারে; যদি তা-ই হয় তবে তা হবে মিথ্যার বিপরীত। তখন এর অর্থ হবে তাদের কথাবার্তা তাদের তৃদয়ে যে ঈমান ও কল্যাণ রয়েছে তার অনুরূপ। সুতরাং তারা যদি কোন বিষয়ে সংবাদ দেয় তখন তা হয় এমন সত্য সংবাদ যার মধ্যে কোন মিথ্যা মিশ্রিত হয় না।[33]

বস্তুত, “যারা সত্য নিয়ে এসেছে এবং যারা সত্যকে সত্য বলে গ্রহণ করেছে তারাইতো মুত্তাকী।[34]

সুতরাং জেনে-বুঝে কোন অন্যায়তো সে করেই না; বরং সঙ্গদোষ বা পরিবেশ-পরিস্থিতির শিকার হয়ে কোন অন্যায়, অনৈতিক বা পাপের কাজে প্রবৃত্ত হলে অথবা যে কোন ধরনের ভূল করলে মনে পড়ার সাথে সাথে সে নিজেকে সুধরে ফেলে। [35] কোন কুসংস্কার বা গর্হিত কাজ যারা করে না তারই মুত্তাকী।

ঘরের পিছন দিক থেকে প্রবেশের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ হচ্ছে পিছন দিক থেকে প্রবেশের মত কুসংস্কার বর্জন করে ঘরের দরজা দিয়ে-সামনের দিক থেকে প্রবেশ করা।[36] কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (রা:) বলেন: “কল্যানের অধিকারী সে ব্যক্তি, যে সকল হারাম ও শাহ্ওয়াত-লালসা থেকে বেঁচে থাকে।” [37]

যুদ্ধ চলাকালীন কঠিন অবস্থায় ধৈর্যধারণের সাথে তাকওয়ার সংযোগ ঘটলে বিজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। “আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না।[38] এ আয়াতসমূহে মানুষের জন্য কল্যাণকর বিষয়গুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং এগুলো তখনই মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, যখন তারা এগুলো জীবনের বাঁকে বাঁকে মেনে চলে ও বাস্তবায়ন করে।

আল্লাহ্‌ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন: “হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক।[39] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবূ হাইয়্যান, ইব্‌নু মাসঊদ, রবী, কাতাদাহ (রা:) ও হাসান বসরী (রা:) বলেন, ‘হাক্কা তুক্বাতিহি-যথাযথ ভয়’ হল প্রত্যেক কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোন কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ রাখা-কখনও কিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অকৃতজ্ঞ না হওয়া। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, ‘হাক্কা তুক্বাতিহি’ এর অর্থ হল, আল্লাহর সকল অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি বিধানের কাজে কোন ব্যক্তির ভর্ৎসনা বা নিন্দা তাকে কুন্ঠিত করে না। সে ন্যায়-নীতি অবলম্বন করে সকল কাজ সামাধা করে; হোক সে কাজ তার নিজের অথবা তার সন্তানের অথবা তার পিতার বিরুদ্ধে।” [40] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় কাযী নাসির উদ্দীন বায়যাবী (র) বলেন, “এখানে স্পষ্টত বা প্রচ্ছন্নভাবে প্রমাণ রয়েছে যে, এটি পূর্ণাঙ্গ মানবীয় গুনাবলী সম্বলিত একটি আয়াত। এখানে বর্ণিত সমুদয় বিষয় এর শাখা-প্রশাখাসহ মুলত তিন ভাগে বিভক্ত। এক. মানুষের আকিদা-বিশ্বাসের বিশুদ্ধতার বিবরণ, দুই. সুন্দর আচার-আচরণ এবং তিন. ব্যক্তি-মানসের কুদৃষ্টি-কালচার। প্রথমটির দিকে ইঙ্গিত রয়েছে আল্লাহর বাণী মান আমানা থেকে ওয়ান্‌নাবিয়্যীন’ পর্যন্ত অংশে, এবং তৃতীয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ‘ওয়া আকামাস সালাতা’ থেকে শেষ পর্যন্ত অংশ দিয়ে। এ কারনেই আয়াতে বর্ণিত সমুদয় গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে তার সুদৃঢ় ঈমান ও ই’তিকাদের ভিত্তিতে সত্যবাদী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তাকে মুত্তাকী বল হয়েছে তার সুন্দর ব্যবহার ও যথাযথ লেন-দেনের ভিত্তিতে। আর এ জন্যই মহানবী (সা:) বলেছেন: “যে ব্যক্তি এ আয়াতের উপর আমল করল সে অবশ্যই তার ঈমান পরিপূর্ণ করল।[41]

তাকওয়ার দাবী হচ্ছে বেশি বেশি ভাল কাজ করা ও আল্লাহর ইবাদত করা। কল্যাণমূলক কাজে দ্রুত এগিয়ে আসা; চাই তা জাগতিক হোক বা পারলৌকিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর তোমাদের প্রভূর ক্ষমার প্রতি এবং জান্নাতের প্রতি দ্রুত এগিয়ে যাও, যার পরিধি হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। (মুত্তাকী হচ্ছে তারা) যারা সচ্ছলতা ও অভাবের সময় (মানুষের প্রয়োজনে সম্পদ) ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগ-ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আর আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন। (মুত্তাকী তারাও) যারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের ওপর যুলম করে ফেললে (সাথে সাথে) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ্ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? আর তারা জেনে-শুনে নিজেদের (ভূল) কৃতকর্মসমূহ বারংবার করতে থাকে না। [42]

তারা (আহলে কিতাবগণ) সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবগনের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে যারা অবিচলভাবে আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং রাতের গভীরে তারা সেজদায় রত থাকে। তারা আল্লাহ্‌র প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়: অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল। তারা যেসব সৎকাজ করবে, কোন অবস্থাতেই সেগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শণ করা হবে না. আর আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদের বিষয়ে অবগত। [43]

এ আয়াতসমূহে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রত্যেকটি বিষয়ই আমাদের বাস্তব জীবনে অবশ্য করণীয় ও পালনীয়। সুতরাং একজন মানুষ যত বেশী ভাল কাজ করবে তার মধ্যে ততবেশী তাকওয়া বদ্ধমূল হবে।

  • মুত্তাকীগণ অনুসন্ধিৎসু, উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী হয়। দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক পরিবর্তন-বিবর্তন তাকে স্পর্শ করে, তাকে নাড়া দেয়, ঘটনার মূল কারণ সন্ধানে ব্যাপৃত করে। ফলে সে বিভিন্ন সূত্র আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখতে সক্ষম হয়। [44]
  • চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র তথা সৌর জগত এবং পৃথিবীর জীব-জন্তু, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষলতা, খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর, রাত-দিনের পরিবর্তন ইত্যাদি মুত্তাকীদের কাছে গবেষণার উপাদান হয় এবং গবেষণার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও এর থেকে উপকৃত হওয়ার বিষয়ও তাদের সাথে সম্পর্কিত, যারা তাকওযার অধিকারী।[45]
  • বৃষ্টির পানি দিয়ে জমিতে উৎপন্ন ফল-ফসল ও উদ্ভিদের কথা চিন্তা করে এর উৎকর্ষ সাধন ও উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও মুত্তাকীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।[46]
  • বদান্যতা প্রদর্শন হচ্ছে তাকওয়া। বিয়ে করার সময় মোহর ধার্য করে বা পূর্ণমোহর প্রদান করে যদি বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং যুক্তিসঙ্গত কোন কারণে সে বিয়ে বহাল রাখা সম্ভব না হয় তাহলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী (স্ত্রী) তার জন্য নির্ধারিত মোহরের অর্ধাংশের অধিকারী হবে। বাকী অর্ধেক পুরুষকে (স্বামীকে)ফিরিয়ে দিবে। তবে নারী সম্পূর্ণ মোহর ফিরিয়ে দিলে বা পুরুষ সম্পূর্ণ মোহর আদায় করে দিলে তা হবে বদান্যতার ব্যাপার। আর এ বদান্যতা-উদারতা পুরুষের পক্ষ থেকে হোক এটিই তাকওয়া।[47]
  • এমনিভাবে নিয়ম মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে খোর –পোষ দেয়া তাকওয়ার অধিকারী ব্যাক্তির ওপর কর্তব্য  বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। [48] সুতরাং বড় মনের অধিকারী হওয়া, উদারতা প্রদর্শন করা ও কর্তব্য কাজ যথাযথ সম্পাদন করা হল তাকওয়ার দাবী।
  • পৃথিবীতে বসবাসরত অসংখ্য মানুষের মধ্যে সবাই একত্ববাদের বিশ্বাসী নয়। আল্লাহ্‌র একত্ববাদে বিশ্বাসী মুসলিম জাতি অন্যান্য কুফরী মতবাদে বিশ্বাসী জাতি-গোষ্ঠীর সাথে ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্পর্ক রক্ষা করা ও লেনদেন করাতে ইসলামে কোন বাধা নেই। কারণ, ইসলামে সংকীর্ণতা বা প্রতিবন্ধকতা নেই। [49]
  • মুসলিম-অমুসলিম যে কোন ব্যক্তি, জাতি-গোষ্ঠি বা রাষ্ট্রের সাথে কৃত চুক্তি বা অঙ্গীকার পূর্ণ করা এবং তাতে আন্তরিক হওয়া তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য। এরুপ ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ্‌র ভালবাসার পাত্র বলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।[50]

তবে সম্পর্ক রক্ষা ও লেন-দেনের আড়ালে যেন মুসলিমদের কৃষ্টি-কালচার, ধর্মীয় বিশ্বাস হারিয়ে না যায় এবং অমুসলিমদের কোন চক্রান্তে না পড়ে সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে চলার জন্য পবিত্র কুরআনে তাকওয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে: “যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে ।[51]

স্বাবলম্বন বা আত্মনির্ভরতা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ তাকওয়া। আয়-উপার্জন, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপনের সকল উপায়-উপকরণ অবলম্বন করে স্বাবলম্বী হয়ে চলার নাম তাকওয়া। সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়া, স্থানীয় জনগণের ওপর বোঝা হওয়া, জীবন-জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে কারো গলগ্রহ হওয়া, হাত পাতা, ভিক্ষে করা ও পরনির্ভরশীল হওয়া তাকওয়া হতে পারে না। কেবল হাদীয়া-তোহ্‌ফার ওপর নির্ভর করে যারা জীবন-যাপন করে, তারা মুত্তাকী হতে পারে না। আত্মনির্ভরশীল জীবন গঠন এবং ব্যাক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের ওপর বোঝা হয়ে জীবন-যাপন থেকে বিরত থাকার মনোবৃত্তিকে তাকওয়া বলা হয়েছে।

  • আল্লাহ্ তা’আলা হজ্জের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন: “আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিশ্চয় সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। আর হে বুদ্ধিমানগণ! তোমরা আমাকেই ভয় করতে থাকো। [52]
  • এখানে তাকওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে: “এমন সহায়-সম্বল অবলম্বন যা থাকার ফলে অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না।[53]
  • এ আয়াতের শানে নুযুল ও ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে: “এ আয়াতটি ইয়ামানের অধিবাসীদের প্রতি নাযিল হয়েছে। তারা হজ্জ করত এমন অবস্থায় যে, প্রয়োজনীয় খাদ্য-সামগ্রী কিছুই তারা সঙ্গে নিয়ে যেত না এবং বলত, আমরা আল্লাহর নির্ভরশীল। ফলে তারা স্থানীয় জনগণের ওপর বোঝা হয়ে থাকত।[54]

কাজেই সর্বপ্রকার পরাধীনতা তথা জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থ-সামর্থ, শক্তি-সাহস, কৃষ্টি-কালচার,সংস্কতি-সভ্যতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে মুক্তি অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা মুত্তাকী হওয়ার জন্য একান্ত প্রয়োজন।

মুত্তাকী ব্যক্তিকে কতগুলো বিষয় বর্জন করে চলতে হয়। মানুষের মধ্যে দুটি পরস্পর বিরোধী প্রবনতা বা শক্তি পাশাপাশি সাংঘর্ষিক অবস্থানে বিদ্যমান। তা হল, ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, আলো-অন্ধকার ইত্যাদি। এ পরস্পর বিরোধী দুই প্রবণতার মধ্য থেকে ভাল ও কল্যাণময় প্রবণতা বেছে নিয়ে সেটাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ফলে যত কঠিন পরীক্ষা ও অবস্থারই মুকাবিলার সম্মুখীন হোক না কেন, তা ধৈর্য ও সাহসের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া এটাই প্রকৃত তাকওয়া। অর্থাৎ মানবীয় সহাজাত সুকুমার বৃত্তি বা আকাঙ্খা যা মানুষকে কুপ্রবৃত্তি তথা মন্দ কথা, খারাপ কাজ ও দুষ্ট চিন্তা থেকে বিরত রাখে, তাকেও তাকওয়া বলা হয়। যারা তাকওয়া অবলম্বনে জীবন যাপন করেন এবং মুত্তাকীদের নেতা বা আদর্শ যারা হতে চান, তারা যেসব বিষয় বর্জন করে জীবন যাপন করেন, এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন: “আর যখন তারা (সম্পদ) ব্যয় করে তখন অনর্থক ব্যয় করে না, আবার কার্পণ্যও করে না; বরং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে (ব্যয় করে)।[55]


[2]. আল কুরআন ২:২৪।
[3]. আল কুরআন, ১৩:৩৪।
[4]. আবুল কাশিম জারুল্লাহ মাহমূদ ইব্‌ন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশ্‌শাফ ‘আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া ‘উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, মিশর, মাকতাবা মিশর, তা.বি, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭।
[5]. fear is of many kinds : (1) the abject fear of the coward; (2) the fear of a child or an inexperienced person in the face of an unknoun danger; (3) the fear of a resonable man who wishes to protect. (4) the reverence which is akin to love. For it fears to doanything which is no pleasing to the object of love. The first is third is a many precaution against ebil as long as it is unconquered; and the fourth is the seed-bed of ighteousness. Those mature in faith cultivate the fourth : at earlier stages, the third or the second may be necessary; rhey are fear. But not the fear of Allah. The first is a feeling of which anyone should be ashamed. (the holy Quran-English tronslation of the meanings and commentary. Saudi Arabia : King Fahd Holy Quran printing complex- 1411 H.), p. 170-171, Footnote No. 247.
[6]. ড. ইবরাহীম মাদকূর, আল-মুজাম আল ওয়াসীত, দেওবন্দ, কুতুবখানা হুসাইনিয়াহ, তা.বি.,পৃ. ১০৫২।
[7]. আল-কুরআন. ২২:০১।
[8]. আল-কুরআন. ২৬: ১০৬,১২৪, ১৪২, ১৬১, ১৭৭।
[9]. আল-কুরআন. ২৬: ১০৬,১২৪, ১৪২, ১৬১, ১৭৭।
[10]. Taqwa, and the verbs and nouns connected with the root, signify : (1) the fear of Allah, which, according of wisdom: (2) rwstraingt, or guarding on’s tongue, hand and heart from evil: (3) hence righteousness, piety, good conduct. All these ideas are imtlied : in the translation, only one or other of these ideas can be indicated, according to the context. (the holy Quran-English tronslation of the meanings and commentary. Saudi Arabia : King Fahd Holy Quran printing complex- 1411 H.), p. 170-171, Footnote No. 26.
[11]. সম্পাদনা পরিষদ, ইসলমী বিশ্বকোষ, ঢাকা, ইফাবা, ১৯৯২, ১২শ খণ্ড, পৃ. ১০৭।
[12]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬।
[13]. আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগভী (মৃ. ৫১০ হি.), মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, বৈরুত, দার আল ফিক্‌র, ১৯৮৫, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।
[14]. আবুল কাশিম জারুল্লাহ মাহমূদ ইবন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশশাফ ‘আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া ‘উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭।
[15]. যেমন, আল-কুরআন, ২:১৯৭, ২৩৭, ৫: ২.৮, ৭: ২৬. ৯: ১০৮, ২০: ১৩২, ২২: ৩২, ৩৭, ৪৮:২৬, ৪৯: ৩, ৫৮: ৯, ৭৪: ৫৬, ৯৬: ১২; মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, আল-মুজাম আল-মুফাহরাস লি আলফায্‌ আল কুরআন আল কারীম, বৈরুত, দার আল মারিফাহ্ ১ম মুদ্রণ ১৪২৩ হি./২০০২, পৃ. ৩৭৯।
[16]. মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, আল-মুজাম আল-মুফাহরাস লি আলফায্‌ আল কুরআন আল কারীম, প্রাগুক্ত,পৃ.৮৪৫-৮৪৬।
[17]. আল কুরআন, ২:২; আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)সহ অন্যান্য অনেক সাহাবা (রা) বেলন, তারা হলেন ঈমানদার ব্যক্তিগণ। আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, বৈরুত দার আল ফিক্‌র, তা.বি. খণ্ড ১. পৃ.১৪৭।
[18]. আল-কুরআন. ৪৮: ২৬।
[19]. আল-কুরআন. ৪৯:০৩।
[20]. আল-কুরআন. ২৬:১১।
[21]. আল-কুরআন. ৭:৯৬।
[22]. আল-কুরআন. ১৬:০২।
[23]. আল-কুরআন. ১৬:২৬।
[24]. আল-কুরআন. ২৩:৫২।
[25]. আল-কুরআন. ২২:৩২।
[26]. আল-কুরআন. ৭ : ২০১-২০২।
[27]. আল-কুরআন. ৮ : ২৯।
[28]. আল-কুরআন. ৫৭ : ২৮।
[29]. আল-কুরআন. ২ : ২-৪।
[30]. আল-কুরআন. ৩১ : ১-৫।
[31]. আল-কুরআন. ২ : ১৭৭।
[32]. শায়খ আবদুর রহমান ইবন হাসান, ফাতহুল মাজীদ, রিয়াদ, আল রিয়াসাহ আল ‘আম্মাহ, ১৯৮৩, পৃ. ৩৩৩।
[33]. মুহাম্মদ ইব্‌ন ইউসুফ ওরফে আবু হাইয়্যান আল-আন্দালুসী (৬৫৪-৭৫৪ হি,). তাফসীর আল রাহরুল মুহীত, কায়রো, দারুল কিতাব আল-ইসলামী, ৩য় মুদ্রণ, ১৪১৩ হি, /১৯৯২, খণ্ড ২ , পৃ. ৮।
[34]. আল-কুরআন. ৩৯: ৩৩।
[35]. আল-কুরআন. ৭ : ২২১।
[36]. আল-কুরআন. ২ : ১৮৯।
[37]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৩।
[38]. আল-কুরআন. ৩ : ১২০।
[39]. আল-কুরআন. ৩: ১০২।
[40]. মুহাম্মদ ইব্নু ইউসুফ ওরফে আবু হাইয়্যান আল-আন্দালুসী (৬৫৪-৭৫৪ হি,). তাফসীর আল রাহরুল মুহীত, ৩য় খণ্ড, পৃ.১৭।
[41]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৫।
[42]. আল কুরআন, ৩ : ১৩৩-১৩৫।
[43]. আল কুরআন, ৩ : ১১৩-১১৫।
[44]. আল কুরআন, ১০ : ৬।
[45]. আল কুরআন, ১০ :৬।
[46]. আল কুরআন, ১০ : ৩১।
[47]. আল কুরআন, ২ : ২৩৭।
[48]. আল কুরআন, ২ : ২৪১।
[49]. আল কুরআন, ২২ : ৭৮।
[50]. আল কুরআন, ৩ : ৭৬।
[51]. আল কুরআন, ৩ : ২৮।
[52]. আল কুরআন, ২ : ১৯৭।
[53]. জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী, তাফসীর জালালাইন, সিঙ্গাপুর : এদারা নশর ওয়া ইশা’আতে ইসলামিয়্যাহ্, তা.বি., পৃ . ২৯।
[54]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৭।
[55]. আল কুরআন, ২৫ : ৬৭-৬৮, ৭২-৭৪।

ঈমানের শাখা সমূহ

20130228_289

লেখক: হাফেজ হাকামী (রহ.) | অনুবাদক: আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী

প্রশ্নঃ

আলেমগণ ঈমানের যে সমস্ত শাখা বর্ণনা করেছেন তার সারাংশ বর্ণনা করুন।

উত্তরঃ

ইবনে হিব্বান (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত ঈমানের শাখাগুলো হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী সহীহ বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ ফতহুল বারীতে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন। এই শাখাগুলো তিন প্রকার। যথা:

(১) এমন কিছু শাখা আছে যা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত।
(২) কতিপয় শাখা জবানের সাথে সম্পৃক্ত এবং
(৩) এমন কতিপয় শাখা রয়েছে, শরীরের সাথে সম্পৃক্ত।

প্রথমতঃ অন্তরের কাজসমূহ

নিয়ত ও বিশ্বাস হচ্ছে অন্তরের কাজ। ঈমানের যেসমস্ত শাখা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত তার সংখ্যা ২৪টি। নিম্নে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হল।

(১) আল্লাহর প্রতি ঈমান। আল্লাহর যাত (স্বত্তা), সিফাত (গুণাবলী) এবং একত্ববাদের প্রতি ঈমান আনয়নও আল্লাহর প্রতি ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। তবে স্মরণ রাখা জরুরী যে, আল্লাহ্ স্বীয় সত্বা ও গুণাবলী কোন সৃষ্টির মত নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি শুনেন এবং দেখেন।” [সূরা শুরাঃ ১১]
(২) এই বিশ্বাস করা যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য সকল বস্তুই ধ্বংসশীল।
(৩) এমনিভাবে আল্লাহর ফেরেশতা
(৪) আসমানী কিতাব
(৫) নবী-রাসূল
(৬) তাকদীরের ভালমন্দ এবং
(৭) আখেরাতের প্রতি ঈমান। কবরের প্রশ্নোত্তর, পুনরুত্থান, হিসাব, আমলনামা প্রদান, মীযান (দাঁড়িপাল্লা), পুলসিরাত, জান্নাত এবং জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনয়ন করাও অন্তরের কাজ সমূহের অন্তর্ভূক্ত।
(৮) আল্লাহকে ভালবাসা,আল্লাহর জন্যেই কাউকে ভালবাসা,আল্লাহর জন্যেই কাউকে ঘৃণা করা।
(৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসা ও তাঁকে সম্মান করাও অন্তরের কাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উপর দরূদ পাঠ ও তাঁকে ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন তার অন্তর্ভূক্ত।
(১০) তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা।
(১১) একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর এবাদত করা আবশ্যক-এর প্রতি ঈমান আনয়নও অন্তরের কাজের অন্তর্ভূক্ত। রিয়া তথা লোক দেখানো আমল ও মুনাফেকী পরিহার করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
(১২) তাওবা করা।
(১৩) আল্লাহকে ভয় করা।
(১৪) আল্লাহর রহমতের আশা রাখা।
(১৫) আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।
(১৬) ওয়াদা অঙ্গিকার পূর্ণ করা।
(১৭) ধৈর্য ধারণ করা।
(১৮) তাকদীরের লিখনের উপর সন্তুষ্ট থাকা।
(১৯) আল্লাহর উপর ভরসা করা।
(২০) বিনয়-নম্রতা প্রদর্শ করা,বড়কে সম্মান করা ও ছোটকে স্নেহ করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
(২১) অহঙ্কার ও তাকাব্বরী বর্জন করা।
(২২) হিংসা বর্জন করা।
(২৩) কাউকে ঘৃণা না করা এবং
(২৪) ক্রোধ বর্জন করা।

দ্বিতীয়তঃ জবানের কাজসমূহ তথা জবান দ্বারা উচ্চারিত শব্দ ও বাক্যসমূহ

ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক জবানের সাথে তার সংখ্যা হল সাতটি। যথা:

(১) তাওহীদের বাক্য অর্থাৎ মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ উচ্চারণ করা।
(২) কুরআন তেলাওয়াত করা।
(৩) ইলম শিক্ষা করা।
(৪) অপরকে ইলম শিক্ষা দেয়া।
(৫) দু’আ করা।
(৬) যিকির করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
(৭) অযথা কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকা।

তৃতীয়তঃ শরীরের কাজসমূহ

ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক শরীরের সাথে,তার সংখ্যা হল ৩৮টি। এ শাখাগুলো আবার তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:

  • (ক) কতিপয় শাখা ব্যক্তি বিশেষের সাথে সম্পৃক্ত।এগুলোর সংখ্যা পনেরটি। যথা:

(১) বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা অর্জন করা।
(২) মিসকীন ও অসহায়কে খাদ্য দান করা।
(৩) মেহমানের সম্মান করা।
(৪) ফরজ রোজা পালন করা।
(৫) নফল রোযা পালন করা।
(৬) ইতেকাফ করা।
(৭) লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করা।
(৮) হজ্জ পালন করা।
(৯) উমরা পালন করা।
(১০) কাবা ঘরের তাওয়াফ করা।
(১১) দ্বীন ও ঈমান নিয়ে টিকে থাকার জন্যে দেশ ত্যাগ।
(১২) দ্বীন ও ঈমান বাঁচানোর জন্যে কাফের রাষ্ট্র ত্যাগ করে ইসলামী রাজ্যে চলে যাওয়া।
(১৩) মানত পূর্ণ করা।
(১৪) ঈমান বৃদ্ধির চেষ্টা করা ও
(১৫) কাফ্ফারা আদায় করা।

  • (খ) কতিপয় শাখা আছে,যা ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা মোট ৬টি। যথা:

(১) বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র পবিত্র রাখা।
(২) পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা।
(৩) পিতা-মাতার সেবা করা,তাদের অবাধ্য না হওয়া।
(৪) সন্তান প্রতিপালন করা।
(৫) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।
(৬) মনিবের প্রতি অনুগত থাকা ও অধীনস্তদের সাথে নরম ব্যবহার করা।

  • (গ) এমন কতিপয় শাখা রয়েছে,যা সকল মুসলমানের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা হচ্ছে ১৭টি। যথা:

(১) ইনসাফের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করা
(২) মুসলিম জামাআতের অনুসরণ করা,
(৩) শাসকদের আনুগত্য করা
(৪) মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দেয়া। বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৫) সৎকাজে পরস্পর সহযোগিতা করা,সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজের নিষেধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৬) দণ্ডবিধি কায়েম করা
(৭) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা ও ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়াও জেহাদের অন্তর্ভূক্ত
(৮) আমানত আদায় করা এবং গণীমতের মালের পাঁচভাগের একভাগ আদায় করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৯) ঋণ পরিশোধ করা
(১০) প্রতিবেশীর সম্মান করা
(১১) মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করা
(১২) হালালভাবে সম্পদ উপার্জন করা এবং বৈধ পন্থায় তা খরচ করা এবং অপচয় না করা
(১৩) সালামের উত্তর দেয়া
(১৪) হাঁচি দানকারীর উত্তর প্রদান করা
(১৫) মানুষের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা
(১৬) খেলা-তামাশা থেকে বিরত থাকা ও
(১৭) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিষ সরিয়ে দেয়া।

এই হল ঈমানের ৬৯টি শাখা। কতিপয় শাখাকে অন্য শাখার সাথে একত্রিত গণনা না করে আলাদাভাবে হিসাব করলে ৭৭টি হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।

উৎস: কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে দু শতাধিক প্রশ্নোত্তরে নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদা শীর্ষক কিতাব থেকে (প্রশ্ন নং-১৫৮)

নূরানি কুরআন – Nurani Quran – ফ্রী ডাউনলোড – (কলকাতার ফন্ট)

quran_nurani

আপনারা অনেকেই কলকাতার ফন্টের আরবি কুরআন খুজছিলেন আমাদের ওয়েবসাইটে। কিছু ভাইয়ের উদ্যোগের কারনে এই কুরআনের স্ক্যানের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুক। আমিন

ইন্টারনেটে সাধারণত যেইসব কুরআন পাওয়া যায়, তা সৌদি ফন্ট (উসমানী ফন্ট) প্রিন্ট করা থাকে। বাংলাদেশের অনেকেই আছেন যারা ঐ ফন্টে কুরআন পড়তে পারেন না। আসা করি এখন আর সমস্যা হবে না।

 

তবে একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। আল-কুর’আন সম্পুর্ণ মানব্জাতির জন্য পথপ্রদর্শক স্বরূপ যার মাঝে আপনিও অন্তর্ভুক্ত, প্রিয় বন্ধু। যেহেতু আমরা কেউই পথভ্রষ্ট হতে চাইনা, তাই এটা আমাদের জন্য অপরিহার্য যে আমরা কুর’আন সুধু তিলাওয়াতই করবনা বরং তা বুঝব এবং সেইসাথে নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করব।

রাসূল -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ হবার একটি সহজ পদ্ধতি শিখিয়ে গেছেনঃ “তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ হল যে নিজে কুর’আন শিখে এবং অন্যকে শেখায়।” (আল-বুখারী)

অতএব, আসুন, কুর’আন নিজে শিখুন এবং অন্যকে শিখান, নিজেকে শ্রেষ্ঠ মুসলিমদের একজন হিসেবে গড়ে তুলুন ইনশাআল্লাহ। অর্থ সহ কুরআন ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকে – https://quraneralo.net/translation-of-quran-in-bangla-language/

 

Sample Page

sample-page

 

নূরানি কুরআন – QuranerAlo Server
নূরানি কুরআন – QuranerAlo Server

নূরানি কুরআন – Mediafire
নূরানি কুরআন – Mediafire

(13.4 MB)

কম্পিউটার অথবা মোবাইলে কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন। 

স্ক্যান কৃত এই কুরআনটি পড়ার জন্য আপনার কম্পিউটারে Adobe Reader সফটওয়্যারটি থাকা আবশ্যক। আগে থেকে তা না থাকলে এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন।

 

ফ্রিতে ডাউনলোড করে নিন iQuran Pro (এন্ড্রয়েড মোবাইলের জন্য)

Read the Holy Quran in Arabic alongside its translation. Provides verse by verse audio playback, color coded Tajweed, repeat functions, unlimited bookmarks, search, excellent navigational controls, several translations and reciters and much more.

 iQuran-Pro-Full-Aplication-For-Android

With iQuran you enjoy:

* Color coded Tajweed (Pronunciation) Rules, the first and only Qur’an software to offer live rendered Tajweed rules.
* Zoom-in feature to enlarge Arabic script
* Full landscape support
* Unlimited bookmarks and tags with notes
* Several translations
* Quranic Supplications
* A powerful full-text search engine
* Several downloadable recitations for verse by verse recital (supports gapless/continuous recitation for all reciters except Husary)
* Powerful audio controls with an option to group playback of verses to aid in memorization

Download iQuran Pro v2.5.2 APK Gratis (27.86 MB) via Zippyshare
Download iQuran Pro v2.5.3 APK Gratis (27.88 MB) via Google Drive
Download iQuran Pro v2.5.4 APK Gratis (30.74 MB) via Google Drive

(Latest Version 2.5.2)

কিনতে চাইলে: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.guidedways.iQuranPro

How to install apps outside of Google Play

 

 

এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে ৩১ দিন স্বাওম হলে

ফাতওয়া নং – 45545

প্রশ্নঃ 

আমি যদি কোন দেশে স্বাওম পালন  করি এবং রামাদ্বান মাসেই অন্য দেশে ভ্রমণ করি যেখানে রামাদ্বান এক দিন পর শুরু হয়েছে এবং তারা ৩০ দিন স্বাওম পালন  করেছে, তবে কি আমাকে তাদের সাথে স্বিয়াম পালন করতে হবে? যদিও বা আমার ৩১ দিন স্বিয়াম পালন করতে হয়?

উত্তরঃ

সকল প্রশংসা আল্লাহর। যদি কোন ব্যাক্তি এক দেশে রামাদ্বান শুরু করার পর অন্য দেশে যায় যেখানে ‘ঈদুল ফিত্বর এক দিন দেরিতে আসে তাহলে  সে স্বিয়াম পালন চালিয়ে যাবে যতদিন না দ্বিতীয় দেশের লোকেরা স্বিয়াম পালন শেষ করে।

শাইখ ইবনু বায-রাহিমাহুল্লাহ- এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- আমি পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে এসেছি যেখানে হিজরি মাস সউদি আরব এর চেয়ে একদিন দেরিতে শুরু হয়। রামাদ্বান মাসে আমি আমার দেশে যাব। আমি যদি সউদি আরবে স্বিয়াম পালন শুরু করি এবং আমার দেশে গিয়ে শেষ করি তাহলে আমার ৩১ দিন স্বাওম পালন করা হবে। আমাদের স্বিয়ামের ব্যাপারে হুকমটা কি? আমি কতদিন স্বাওম পালন করব?

তিনি উত্তরে বলেন: আপনি যদি সউদি আরব বা অন্য কোন দেশে স্বিয়াম পালন শুরু করেন কিন্তু নিজের দেশে গিয়ে বাকিটা পালন করেন তাহলে আপনি নিজের দেশের লোকদের সাথেই স্বিয়াম ভঙ্গ করবেন যদিও বা তা ৩০ দিনের বেশি হয়। কারণ নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ “স্বাওম হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে ) স্বাওম পালন কর, আর ‘ঈদুল ফিত্বর হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে ) ইফত্বার কর।”

কিন্তু আপনি যদি তা করতে গিয়ে ২৯ দিনের কম স্বাওম পালন করেন,তাহলে আপনাকে পরে একটি স্বাওম এর ক্বাদ্বা’(কাযা) আদায় করে নিতে হবে কারণ রামাদ্বান মাস ২৯ দিনের কম হতে পারেনা।” [মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবনি বায, (১৫/১৫৫)]

শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-‘উসাইমীন-রাহিমাহুল্লাহ-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- এক মুসলিম দেশ থেকে যদি আরেক দেশে যাওয়া হয় যেখানে লোকজন প্রথম দেশের চেয়ে এক দিন দেরিতে রামাদ্বান আরম্ভ করেছে, তবে স্বিয়াম পালনের বিধান কি হবে যখন দ্বিতীয় দেশের লোকজনকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি স্বিয়াম পালন করতে হয় ? এবং এর বিপরীত ক্ষেত্রে কী হবে?

তিনি উত্তরে বলেনঃ “যদি কেউ এক মুসলিম দেশ থেকে  আরেক মুসলিম দেশে ভ্রমণ করে এবং সেই দেশে রামাদ্বান দেরিতে শুরু হয়, তবে তিনি ওই দেশের লোকরা স্বাওম ভঙ্গ না করা পর্যন্ত স্বিয়াম পালন করে যাবেন কারণ স্বাওম হল সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে ) স্বাওম পালন করে, আর ‘ঈদুল ফিত্বর হল সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে ) ইফত্বার করে আর ‘ঈদুল ’আদ্বহা (আযহা) হল সেদিন যেদিন লোকেরা তোমাদের আযহা (পশু যবেহ) পালন করে।

সে এই কাজ করবে যদিও বা এজন্য তাকে এক বা এর বেশি দিন স্বিয়াম পালন করতে হয়। এটা সেই পরিস্থিতির অনুরূপ যখন সে এমন দেশে যায় যেখানে সূর্যাস্ত দেরীতে হয়, তবে সে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত স্বাওম পালন করবে যদিও বা এর ফলে দুই বা তিন বা ততোধিক ঘণ্টা স্বাভাবিক দিন (চব্বিশ ঘন্টা) থেকে বেড়ে যায়। একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে যদি সে এমন কোন দেশে যায় যেখানে নতুন চাঁদ এখনও দেখা যায়নি, কারণ নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-আমাদেরকে স্বাওম শুরু করতে বা ইফত্বার করতে নিষেধ করেছেন যতক্ষন না আমরা তা দেখি। তিনি বলেছেনঃ “তা (নতুন চাঁদ) দেখে স্বাওম শুরু কর এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে ইফত্বার (স্বাওম শেষ) কর।”

আর বিপরীত অবস্থার ক্ষেত্রে, যখন একজন ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় যেখানে রামাদ্বান মাস প্রথম দেশের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে, তবে তিনি তাদের সাথেই স্বাওম ভঙ্গ করবেন এবং যেসব স্বাওম বাদ পড়েছে সেগুলো পরে ক্বাদ্বা’ (কাযা) আদায় করে নিবেন।যদি একদিন বাদ পরে, তবে একদিনের ক্বাদ্বা’ (কাযা)করবেন, যদি দুই দিন বাদ পড়ে, তবে দুই দিনের;যদি তিনি ২৮ দিন পর স্বাওম ভঙ্গ করেন,তাহলে দুই দিনের ক্বাদ্বা’(কাযা) করবেন যদি উভয় দেশেই মাস ৩০  দিনে শেষ হয়, আর এক দিনের ক্বাদ্বা’ (কাযা) করবেন যদি উভয় দেশে বা যে কোন একটি দেশে ২৯ দিনে মাস শেষ হয়।” [মাজমূ‘  ফাতাওয়া আশ-শাইখ  ইবনি ‘উসাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৪)]

ওনার কাছে আরো জানতে চাওয়া হয়েছিল: কেউ হয়ত বলবে যে, কেন আপনি বলছেন যে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি স্বাওম পালন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে স্বাওমের ক্বাদ্বা’(কাযা)  পালন করতে হবে?

তিনি উত্তরে বলেন: “দ্বিতীয় ক্ষেত্রে স্বাওমের ক্বাদ্বা’ (কাযা) স্বাওম পালন করতে হবে কারণ মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না আর সে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি স্বাওম পালন করবে কারণ তখনও নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমরা তাকে বলব স্বাওম ভঙ্গ কর যদিও তোমার ২৯ দিন পূর্ণ হয়নি কারণ নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে আর নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর স্বাওম ভঙ্গ করা বাধ্যতামূলক, শাউওয়াল মাসের প্রথম দিন স্বাওম পালন করা নিষিদ্ধ। আর কেউ যদি ২৯ দিনের কম স্বাওম পালন করে থাকে তাহলে তাকে ২৯ দিন পূরণ করতে হবে। এটা প্রথম অবস্থার চেয়ে ভিন্ন কারণ যে দেশে আসা হয়েছে সেখানে তখন রামাদ্বান চলছে, নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। যেখানে এখনও রামাদ্বান চলছে সেখানে কিভাবে স্বাওম ভঙ্গ করা যেতে পারে?তাই স্বাওম পালন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তাতে মাস বেড়ে যায়, তাহলে তা দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার মত।” [মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবনি ‘উসাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৫)]

দেখুন, (38101) নং প্রশ্নের উত্তর।

এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

Translation of Quran in Bangla Language – Free Download

অনুবাদ করেছেনঃ  প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ মুজিবুর রহমান

প্রকাশনাঃ  দারুসসালাম পাবলিকেশন্স , সৌদি আরব

[dropcap]সূ[/dropcap]রা ‘আল ক্বামার’ মক্কায় অবতীর্ণ ক্বুরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা। আল্লাহ তা’আলা এই সূরায় একটি বিশেষ আয়াত চার বার উল্লেখ করেছেন। সে বিশেষ আয়াতটির অর্থ হচ্ছে, ‘অবশ্যই আমি শিক্ষা গ্রহণ করার জন্যে ক্বুরানকে সহজ করে দিয়েছি, অতএব আছে কি তোমাদের মাঝে কেউ এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার?’

আল কুর’আন সম্পুর্ণ মানব্জাতির জন্য পথপ্রদর্শক স্বরূপ যার মাঝে আপনিও অন্তর্ভুক্ত, প্রিয় বন্ধু। যেহেতু আমরা কেউই পথভ্রষ্ট হতে চাইনা, তাই এটা আমাদের জন্য অপরিহার্য যে আমরা কুর’আন সুধু তিলাওয়াতই করবনা বরং তা বুঝব এবং সেইসাথে নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করব।

রাসূল -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ হবার একটি সহজ পদ্ধতি শিখিয়ে গেছেনঃ

তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ হল যে নিজে কুর’আন শিখে এবং অন্যকে শেখায়। (আল-বুখারী)

অতএব, আসুন, কুর’আন নিজে শিখুন এবং অন্যকে শিখান, নিজেকে শ্রেষ্ঠ মুসলিমদের একজন হিসেবে গড়ে তুলুন ইনশাআল্লাহ।

 

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দারুসসালাম এর প্রকাশ করেছে এই কুরআনুল কারীম। এ তরজমা দারুসসালামের দীর্ঘদিনের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন।এ মহৎ কাজে এগিয়ে এসে বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ মুজিবুর রহমান অনুবাদ করেছেন ।  এই তরজমার বিশেষত্ব হচ্ছেঃ

  • বইটি তরজমায় ত্রুটি বিচ্যুতির ব্যপারে গবেষক মন্ডলীর পরামর্শ নেয়া হয়েছে।
  • তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে তরজমার অংশটি নেয়া হয়েছে।
  • এই কুরআনে ডান দিকে বড় অক্ষরে আরবি (persian script) লেখা হয়েছে, বাম দিকে বাংলা সহজ সরল অনুবাদ, এবং নিচে আয়াতের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
  • কুরাআনের অর্থ অনুধাবনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সহীহ হাদিসের অনুবাদের মাধ্যমের টীকা সংযোজন করা হয়েছে।অধিকাংশ হাদীস সহীহ বুখারী থেকে নেয়া হয়েছে। মূল আরবি গ্রন্থ থেকে এই হাদীস সমূহ অনুবাদ করা হয়েছে।
  • বাংলা ভাষাভাষী সকল পর্যায়ে মুসলমান ভাইদের কুরআন বুঝে পড়ার আগ্রহের দিকে লক্ষ রেখে তরজমা সহজ, প্রাঞ্জল ও বোধগম্য করআর চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে তিলাওয়াতের সাথে সাথে কুরআন মাজিদের অর্থও বুঝতে পারেন।

স্ক্যান কৃত এই কুরআনটি পড়ার জন্য আপনার কম্পিউটারে Adobe Reader সফটওয়্যারটি থাকা আবশ্যক। আগে থেকে তা না থাকলে এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন।

Quran – Bengali – Darussalam
Quran – Bengali – Darussalam
Quran – Bengali – Mediafire
Quran – Bengali – Mediafire

 


তাফসীর তাইসীরুল কুরআন

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন


 NEW – নূরানি কুরআন (কলকাতার ফন্ট) – Only Arabic

ফাইলটি অ্যাড করা হয়েছে  4/7/2014 তারিখে 

Quran Only Arabic
Quran Only Arabic

Quran Only Arabic – Mediafire
Quran Only Arabic – Mediafire

কম্পিউটার অথবা মোবাইলে কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন। 


কুরআনের তেলাওাত সহ বাংলা অনুবাদ (অডিও – mp3)

কুরআনের সহজ সরল বাংলা আনুবাদসহ, তেলাওাতের সিডি (mp3)

অনলাইনে কুরআন পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন 

মোবাইল আপস

ভিডিও লেকচার – সিয়াম (রোজা)

বক্তাঃ শেইখ সাইফুদ্দিন বেল্লাল মাদানী

সিয়াম  (রোজা) 

 

সিয়াম হতে পারে ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়!

article-2098363-0076FB4600000578-311_233x393

ভাষান্তর ও সম্পাদনা: আব্‌দ আল-আহাদ | প্রকাশনায় : কুরআনের আলো ওয়েবসাইট

সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা টিউমার সৃষ্টি ও এর ক্রমবিস্তারের গতিরোধ করে এবং কিছু ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির পাশাপাশি রোজা থাকলে ওইসব ক্যান্সার ভালো হয়ে যায়। “আশা করা যায়, গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত আমাদেরকে আরও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতির পথ দেখাবে এবং এ বিষয়ক আরও গবেষণা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।” — গবেষক দলটি জানান।

ইঁদুরের উপর একটি গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেন যে, খাদ্য-পানীয় গ্রহণ না করলে টিউমার কোষগুলো শরীরের স্বাভাবিক কোষগুলোর থেকে ভিন্ন রকম আচরণ করে। রোজা অবস্থায় টিউমার কোষগুলো স্বাভাবিক কোষের শীতনিদ্রার মতো সুপ্ত বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় প্রবেশ করে না; বরং বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে এবং অবশেষে নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করে ফেলে।” — গবেষকরা বলেন।

গবেষক দলটির প্রধান, ভল্টার লংগো, ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন — “আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো, না খেয়ে থাকলে রক্তে যেসব জিনিসের ঘাটতি দেখা দেয়, ক্যান্সার কোষগুলো সেসবের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করে। তবে চেষ্টা করলেও কোষগুলো তা করতে পারে না।”

সায়েন্স ট্রান্সলেইশনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় লংগো এবং তার গবেষক দলটি ইঁদুরের স্তন, মূত্রনালি এবং জরায়ুর ক্যান্সারের উপর রোজার প্রভাব কী তা নিয়ে গবেষণা চালান। এতে দেখা যায়, কোনো প্রকার কেমোথেরাপি ছাড়াই কেবল রোজা থাকলে স্তন ক্যন্সার, মেলানোমা নামক ত্বকের ক্যান্সার, গ্লায়োমা নামক ব্রেইন ক্যান্সার এবং নিউরোব্লাস্টোমা নামক স্নায়ুকলার ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়াকে রোধ করা যায়।

উপবাস থাকা যতগুলো ইঁদুরকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি ইঁদুরেরই ক্যান্সার চিকিৎসা অধিক কার্যকর হয়েছে। আর উপবাস না রেখে শুধু কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে এমন একটি ইঁদুরও বেঁচে থাকেনি।

গবেষকদের মতে, তারা ইতোমধ্যেই ক্যান্সার আক্রান্ত মানব শরীরের উপর রোজার প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। তবে আরও কয়েক বছরের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই কেবল নিশ্চিত করে বলা সম্ভব ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্যান্সার রোগীরা উপকৃত হবেন কিনা।

Source : http://timesofindia.indiatimes.com/home/science/Fasting-may-be-the-best-way-to-combat-cancer/articleshow/11832019.cms?referral=PM

http://www.dailymail.co.uk/health/article-2098363/Fasting-help-combat-cancer-boost-effectiveness-treatments.html

বই – সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি – পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর নিয়ম – ফ্রী ডাউনলোড

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর নিয়ম10462579_346841795473849_1704460947536628374_n

সহিহ ভাবে সালাত / নামাজ / নামায সম্পাদনের পদ্ধতি (পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এর নিয়ম) শেখার জন্য অনেক ভাল একটি বই। আপনি কুরআন এবং সহিহ হাদিস থেকে সব রেফারেন্স পাবেন বইটিতে।

বইয়ের নাম: নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছলাত (সালাত/নামাজ/নামায) সম্পাদনের পদ্ধতি
“তাকবীর থেকে সালাম পর্যন্ত এমনভাবে যেন আপনি দেখছেন।”

মূল: আল্লামা মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহিমাহুল্লাহ)

অনুবাদ ও সম্পাদনা: আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম এবং আবূ রাশাদ আজমাল বিন আবদুন নূর।

প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স।

বই – সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি QA Server
বই – সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি QA Server
সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি – Mediafire
সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি – Mediafire

(8.4MB)

 

তায়াম্মুমের পদ্ধতি – ভিডিও সহ

বক্তাঃ শেইখ সাইফুদ্দিন বেল্লাল মাদানী

তায়াম্মুমের পদ্ধতি

 

 

সাবস্ক্রাইব করুন

2,018,267FansLike
1,685FollowersFollow
1,150FollowersFollow
6,143FollowersFollow
4,600SubscribersSubscribe