জ্ঞানার্জন সম্পর্কে বিদ্বানদের উক্তি

5
4265

১: লোকমান (আঃ) তার সন্তানকে বলেন, হে বৎস! তুমি এ জন্য জ্ঞানার্জন করো না যে তুমি জ্ঞানীদের সাথে অহংকার করবে কিংবা মূর্খদের উপর নিজেকে জাহির করবে অথবা বিভিন্ন মজলিসে নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করবে। তুমি জ্ঞানকে উদাসীনতায় পরিত্যাগ করো না বা মূর্খতার মাঝে নিক্ষেপ করো না। হে বৎস! তুমি আপন চোখ দিয়ে দ্বীনী মজলিস বাছাই করে নাও। যখন কোন দলকে আল্লাহর স্মরণ করতে দেখবে তখন তাদের সাথে যোগ দিবে। তুমি যদি আলোচ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখ তাহলেও তা তোমার জ্ঞানবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আর যদি তা তোমার অজানা থাকে তবে তোমার নতুন কিছু জানা হবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের উপর রহমত নাযিল করবেন যার একটি অংশ তুমিও প্রাপ্ত হবে। আর যে দল আল্লাহকে স্মরণ করে না তাদের সাথে বসবে না। কেননা যদি আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে তোমার জ্ঞান থাকে তাহলে তা তোমাকে কোন ফায়দা দেবে না। পক্ষান্তরে যদি তা তোমার অজানা থাকে তাহলে তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট ও অক্ষম করে ফেলবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন যা তোমাকেও স্পর্শ করবে (আহমাদ হা/১৬৫১, দারেমী হা/৩৭৭, সনদ হাসান)।

: আলী (রাঃ) বলেন, জ্ঞান অর্থ-সম্পদের চেয়ে উত্তম। কেননা জ্ঞান তোমাকেই পাহারা দেয় কিন্তু অর্থকে পাহারা দিতে হয়। অথচ জ্ঞান হলো শাসক, আর অর্থ হলো শাসিত। অর্থ ব্যয় করলে নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে আরো বৃদ্ধি পায় (গায্যালী, ইহয়াউল উলূম, ১/১৭-১৮)।

[dropcap]৩:[/dropcap] মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, তোমরা জ্ঞানার্জন কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জনের অর্থ তাঁকে ভয় করা। জ্ঞানের আকাংখা করা ইবাদত। জ্ঞান চর্চা করা হলো তাসবীহ। জ্ঞানের অনুসন্ধান করা জিহাদ। অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান দেওয়া ছাদাকা। উপযুক্ত ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের কারণ। আর তা হালাল-হারাম জানার মানদন্ড, একাকিত্বের বন্ধু, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, সুখ-দুঃখের ধ্রুবক, চরিত্রের সৌন্দর্য, অপরিচিতের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে এমন মর্যাদাবান করেন যা স্থায়ীভাবে তাকে অনুসরণীয় করে রাখে (আল-আজুরী, আখলাকুল ওলামা, পৃঃ ৩৪-৩৫)।

[dropcap]৪:[/dropcap] আবু দারদা (রাঃ) বলেন, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উপার্জিত হয় যেমন ধৈর্য ধৈর্যধারণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। যে ব্যক্তি কল্যাণের খোঁজে ব্যতিব্যস্ত হয় সে কল্যাণ লাভ করে। যে অকল্যাণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করে সে অকল্যাণ থেকে রক্ষা পায় (কিতাবুল ইলম, ইবনে খায়ছামাহ, পৃঃ ২৮)।

তিনি বলেন, কোন মানুষ জ্ঞানী হয়ে জন্ম নেয় না। তাকে জ্ঞান অর্জন করতে হয় (কিতাবুল ইলম, ইবনে খায়ছামাহ, পৃঃ ২৮)।

[dropcap]৫:[/dropcap] হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, অজ্ঞ আমলকারী পথহারা পথিকের ন্যায়। সে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশী করে। অতএব তুমি জ্ঞানার্জন কর এমনভাবে যাতে তা ইবাদতকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে, আবার ইবাদত কর এমনভাবে যেন তা জ্ঞানার্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। একদল লোক এমনভাবে ইবাদতে ডুবে থাকে যে তারা জ্ঞানার্জনের সুযোগ পায় না, অথচ তারা উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর তরবারী চালিয়ে দেয়। যদি জ্ঞান থাকত তাহলে তারা এরূপ কর্মে লিপ্ত হতে পারত না।
মুজাহিদ বিন জুবায়ের বলেন, লজ্জা ও ভয় হলো জ্ঞানার্জনের প্রতিবন্ধকতা (ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী , ১/২২৮ পৃঃ)।

[dropcap]৬:[/dropcap] সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, যে বিষয় আমি জেনেছি তা যদি আমল করি তবেই আমি মানুষের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী, আর যদি প্রাপ্ত জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করি তবে দুনিয়ার বুকে আমার চেয়ে অজ্ঞ আর কেউ নেই।

[dropcap]৭:[/dropcap] ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মুনাফিক জ্ঞানের পরিচয় দেয় মুখে আর মু’মিনের জ্ঞানবত্তা প্রকাশ হয় তার আমলের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, যদি জ্ঞানের অধিকারীগণ জ্ঞানকে সংরক্ষণ করতেন এবং যথার্থ স্থানে তাকে রাখতেন তবে তাঁরা দুনিয়াবাসীর উপর জয়লাভ করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তাঁরা জ্ঞানকে দুনিয়াদারদের কাছে সমর্পণ করেছেন দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের অভিপ্রায়ে। ফলে তাঁরা অপদস্ত হয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

5 COMMENTS

  1. হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালি রহঃ বলেছেন, আপসোস সেই মূর্খের জন্য যে
    জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করলো না; আর আপসোস সেই আলেমের জন্য যে জ্ঞান অর্জন
    করলো কিন্তু আমল করলো না।

  2. এই বিষয়ে যদি রাসুলুল্লাহ সল্লা্ললাহু আলাইহে ওয়াসসাল্লাম এর দিক নির্দেশনা কি তা উল্লেখ করেন তবে উপকৃত হই

  3. Elm E Ladunee  জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে অনেক হাদিস আছে, এই লিংক থেকে পরতে পারবেন – http://hadithbd.com/show.php?BookID=12&SectionID=200

  4. Elm E Ladunee  জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে অনেক হাদিস আছে, এই লিংক থেকে পরতে পারবেন – http://hadithbd.com/show.php?BookID=12&SectionID=200

  5. ভাই বাদ্যযন্ত্র, সংগীত এবং চিত্র অংকন সম্পর্কিত ইসলামী আইন জানতে চাই এবং ইসলাম কতদূর পর্যন্ত এই কর্মকাণ্ডগুলো সমর্থন করে। রেফারেন্স সহ সুস্পষ্ট ধারণা দিলে বড়ই উপকৃত হব। আর এইখানে প্রশ্ন করার জন্য ক্ষমা চাইছি কারণ আমি প্রশ্ন করার কোন মাধ্যম আপনাদের ওয়েব সাইটে পাইনি। আমার ই-মেইল : [email protected]
    ধন্যবাদ………

আপনার মন্তব্য লিখুন