হৃদয়ের দারিদ্রতা

0
1542

বক্তাঃ ইয়াসমিন মোজাহেদ

আজ আমি বলতে যাচ্ছি দারিদ্রতা নিয়ে।সেই সঙ্গে যে দারিদ্রতা নিয়ে আমি বলতে যাচ্ছি সেটা দৃশ্যমান দারিদ্রতা নয়।
আপনারা দেখুন, যখনই আপনি একটি ধারণা নিয়ে কথা বলতে শুরু করতে যাবেন তার আগে আমাদের একটা মানদন্ড দরকার। দরকার যথার্থ বর্ণনা।দারিদ্রতা নিয়ে বলতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে যে, একটা বাহ্যিক দারিদ্রতা আর একটা আভ্যন্তরীন দারিদ্রতা।এবং একটা থেকে অন্যটা অনেক বেশি মারাত্মক ধরনের।কারণ এক প্রকারের দারিদ্রতা নির্ধারণ করে আমরা কিভাবে অস্থায়ীভাবে বাঁচব অন্য প্রকারের দারিদ্রতা নির্ধারন করে আমরা কিভাবে চিরস্থায়ীভাবে বাঁচব।

আজ আমি বলব শেষের প্রকারের দারিদ্রতা নিয়ে।আভ্যন্তরীন দারিদ্রতা হচ্ছে আত্মার দারিদ্রতা। এটা নির্বিকার আত্মাকে বর্ণনা করে। যে আত্মাকে সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু এখনো জানলো না কেন। এটাই সে আত্মা যেটা উদ্দেশ্যহীন জীবন যাপন করে। হৃদয় যেটা স্পন্দন করে কিন্তু আসলে সেটা মৃত। কারণ যখন এই শরীর কাঁদে এবং রক্তক্ষরণ করে এবং পার্থিব জীবনের ব্যাথা অনুভব করে, তখন আত্মা এসব থেকে অক্ষত থাকে। সেখানে শুধু একটা জিনিস আছে যা আত্মাকে কাটতে অথবা ছুরিকাঘাত করতে অথবা নিঃস্ব করতে পারে। সেখানে শুধু একটা জিনিস আছে যা আত্মাকে মেরে ফেলতে পারে। সেটা হল তাঁর একমাত্র সত্য প্রয়োজন থেকে তাঁকে বঞ্চিত করে। তাঁর সৃষ্টিকর্তার নিকটবর্তী হওয়া, আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়া। আধ্যাত্মিক বঞ্চনা হচ্ছে আসল দারিদ্রতা। আত্মিক দরিদ্ররা শেষ বিচারের দিন করুণ অবস্থায় দাঁড়াবে। এই বাস্তবতা স্বত্ত্বেও, আমরা জীবন যাপন করছি শরীরকে তুষ্ট রেখে কিন্তু আত্মাকে ক্ষুধার্ত রেখে। কিন্তু করুণ উপহাস হচ্ছে, আমরা এই ক্ষণস্থায়ী শরীর এর প্রতি যত্নবান হয়ে চিরস্থায়ী আত্মাকে অবজ্ঞা করছি। যখন শরীর মারা যায় আমরা কাঁদি। কিন্তু শরীর এর মৃত্যুই আসল মৃত্যু নয়। এটা শুধুমাত্র একটা খোলস সরানো এবং এক জগত থেকে অন্য সত্য জগতে যাওয়া।

আমরা বিদায়ী শরীরের জন্য কাঁদি কিন্তু আমাদের হৃদয় এখনো ঐসব শরীরের সাথে যুক্ত যারা এখনো জীবিত কিন্তু যাদের হৃদয় ও আত্মা ইতিমধ্যেই মৃত। কারণ তাঁর থেকে আদালা করে রাখার জন্য যে জীবন দেন — আল্লাহ

কোন জিনিস নিঃস্ব করে এবং মেরে ফেলে হৃদয়কে? এটা হৃদয়কে অনুমতি দিচ্ছে অন্যকিছুকে ভালবাসতে যেখানে এই ভালবাসাটা হওয়া উচিত ছিল শুধু মাত্র আল্লাহকে। দেখেন, হৃদয়কে একটা নির্দিষ্ট প্রকৃতিতে তৈরী করা হয়েছে এবং একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে। আপনি যখন ব্যর্থ হবেন কোন একটা সৃষ্টি জিনিসকে সেভাবে ব্যবহার করতে, যে উদ্দেশ্যে এটা তৈরী হয়েছে, তখন সেটা ভেঙ্গে যায়, ডুবে যায়, ক্ষুধায় মারা যায়।
হৃদয় তৈরী হয়েছে আল্লাহর দ্বারা এবং আল্লাহর জন্য।
হৃদয় তৈরী হয়েছে আল্লাহকে জানার জন্য এবং ভালবাসার জন্য।
হৃদয় তৈরী হয়েছে আল্লাহকে দেয়ার জন্য এবং আল্লাহ দ্বারা পূর্ণ হওয়ার জন্য।
হৃদয়( যেটাকে দেয়া হয়েছে সেটা) যদি অন্য কিছু দিয়ে পূর্ণ হয়, দায়ক দারিদ্রতায় ভোগে এবং মারা যায়।

মানুষের হৃদয় হচ্ছে দুনিয়ার সাগরে নৌকার মত। যে নৌকা সাগরের পানিকে ভিতরে ঢুকতে দেয় সেটা ভেঙ্গে যায় এবং ডুবে যায়। যেই মানুষের হৃদয় এই দুনিয়াকে অনুমতি দেয় ভেতরে প্রবেশ করার,তারপর ভাঙ্গার এবং ডুবার এবং এরপর মালিক হবার,এই জীবনের মালিক হওয়ার জন্য। মালিক হয় আমাদের গ্যাজেট, আমাদের ফেইসবুক, আমাদের চাকুরী, চিত্তবিনোদন , ফ্যাশন প্রবণতা, মার্কেটিং টুলস, টাকা, ক্ষমতা, পদমর্যাদা। যে হৃদয়ের মালিক হয় এই দুনিয়া, সেটা সবচেয়ে খারাপ ধরনের কয়েদী। এই হৃদয়ের মালিক যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য অন্য মালিক এর দাস হয়, তাহলে সেটা হল সবচেয়ে দুর্বলতম দাস। সেটাই হচ্ছে আসল জুলুম, আসল মৃত্যু, আসল দারিদ্রতা।

ইউটিউব লিংক

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন