সময় ব্যবস্থাপনা – আপনার ফলপ্রসূ ও চৌকস জীবনের চাবিকাঠি

5
7663

মূল: আবু প্রোডাক্টিভ । ভাষান্তর: মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ । সম্পাদনা: আব্‌দ আল-আহাদ

আমার পুরনো এক বন্ধু আমাকে একবার বলেছিল, “একটা পুরান কথা (myth) ইদানীং খুব চলছে। কথাটা এমন : “সময়কে ঠিকমতো গুছিয়ে নিতে পারলে, তোমার দ্বারা সবই সম্ভব!” আজ থেকে চার বছর আগে শুনেছি এই কথাটা। কিন্তু আজ আর বিশ্বাস করি না যে, কথাটা কোনো পুরান কথা। সময়-ব্যবস্থাপনা (time management) এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সবাই অনেক কথা শুনে থাকি। যথাযথ সময় ব্যবস্থাপনার জন্য মাঝে মাঝে মানুষের কাছে অনেক বকুনিও শুনতে হয় আমাদের। কিন্তু সময়-ব্যবস্থাপনার কার্যকর কোনো পদ্ধতি নিয়ে খুব একটা শোনা যায় না!

কীভাবে সময়-ব্যবস্থাপনা করা যায় তা বুঝতে হলে, প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে সময়-ব্যবস্থাপনা বিষয়টা আসলে কী। সময়-ব্যবস্থাপনা আসলে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনো বিষয় নয়। কেননা ব্যবহারিক অর্থে, যার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই, আপনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না! (আপনি কি সময়ে ধরে রাখতে কিংবা দ্রুত পার করতে পারেন?!)- সময়-ব্যবস্থাপনা হচ্ছে নিজেকে এমন ভাবে পরিচালনা করা যাতে, আমরা যে সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ সেই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এমনটি আসলে কীভাবে করা যায়?

বিখ্যাত বই “The Effective Executive” (পড়ে দেখার জোরালো আবেদন রইলো) এর লেখক পিটার ড্রাকার, সময়-ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণের সুপারিশ করেন। বইটির যে অধ্যায়ে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন, তিনি সেই অধ্যায়টার নাম দিয়েছেন: “নিজের সময়কে জানুন”:

১. আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন।
২. নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন।
৩. হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন।

এবার চলুন, একজন চৌকস মুসলিমের প্রত্যাহিক জীবনরীতির আলোকে উপরোক্ত ধাপ তিনটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন:

কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় নিয়ে নিজের সময়কে লিপিবদ্ধ করুন। আমি এখানে সত্য কথাটাই বলল, এক সপ্তাহে আপনি কত সময় অপচয় করেন তা উপলব্ধি করার জন্য বুকে সাহস থাকা চাই। তবে নিজের সাথে সত্যবাদীর মতো আচরণ করাটাই হলো প্রতিকারের প্রথম পদক্ষেপ। সময় লিপিবদ্ধ করার দুই ধরণের পদ্ধতি আছে :

১. সাথে একটি ডাইরি রাখুন এবং প্রতি ঘন্টায় কী কী করলেন, তা লিখে রাখুন।
২. যখন আপনার সময় বিশ্লেষণ করবেন, তখন আপনার বন্ধু/প্রতিবেশী/স্বামী বা স্ত্রীকে সাক্ষী রাখুন। (কারণ আমরা যখন সময় লিপিবদ্ধ করি, তখন সততার সাথেই তা করি। কিন্তু শেষে গিয়ে নিজেই নিজেকে ধোঁকা দিয়ে বসি।)

নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন:

আশা করছি, সময় বিশ্লেষণের পর একটা দুঃখবোধ আপনাকে পেয়ে বসবে! ভাববেন, আমরা এমন অনেক কিছুই করি যা একেবারেই ঝেড়ে ফেলা যায়। আপনার এখন মনে হবে : সকালবেলা কফি খাওয়ার অজুহাতে ক্যাফেতে বসে একঘণ্টা সময় বৃথা নষ্ট না করে বাড়িতেই কফি বানিয়ে খাওয়া যেতো না? কফি খেতে খেতে ই-মেইলগুলোও কি পড়া যেতো না? টিভির চ্যানেল হাতড়ে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে প্রতিদিন দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করা কি আমাদের জন্য সত্যিই জরুরি? আমরা কি এসব থেকে সময় বাঁচাতে পারি না? (সাধবান! আল্লাহর জন্য বরাদ্দ সময় বাঁচাতে যাবেন না! “সময় বাঁচানো”-র নামে কিছু লোক মসজিদে সালাত আদায় করতে যায় না। এই রকম সময় বাঁচনো নিষ্ফল কর্ম। মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। অতএব, সময় বাঁচানোর নামে দ্বীনের কাজের সময় কমাতে যাবেন না। দ্বীনের জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় না করার দায়ে আমরা ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত। তাই পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে আমরা যেন সময় বাঁচানোর অজুহাতকে ক্ষেত্রে ব্যবহার না করি।)

হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন:

যখন আপনি কঠিন কিছু নিয়ে কাজ করছেন এবং পুরোপুরি কাজের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে আছেন, ঠিক তখনই একটা ফোন কল বা ই-মেইল কিংবা মেসেজ এলার্ট কি বিরক্তিকর নয়?! এই তৃতীয় ধাপ বা কৌশলটিতে মূলত যা বলা হচ্ছে তা হলো, আপনাকে সময় ভাগ করে নিতে হবে এবং তা করতে হবে আপনার জন্য সম্ভব্য সর্বোচ্চ সময় খণ্ডে। (অনেকের মতে, এক নাগাড়ে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব। তবে এই ৯০ মিনিট হতে হবে বিরতিহীন)। সামান্য পরিমাণ কাজ করে সর্বোচ্চ পরিমাণ ফলাফল লাভ করতে এই পদ্ধতি সহায়তা করবে। কারণটা খুব সহজ। আর তা হলো, আপনি এভাবে কাজ করলে একটি কাজের প্রতি আপনার সবটুকু মনোযোগ কাজে লাগে নিবিড়ভাবে এবং নির্বিঘ্নে। এক ঘন্টার একটি কাজ করতে আপনার ৪ ঘণ্টা লেগে যাবে যদি প্রতি ১০-১৫ মিনিটে আপনি বিরতি নেন বা বাধা প্রাপ্ত হন।

আজ এ পর্যন্তই। আশা করছি, সময়-ব্যবস্থাপনার পুরান কথাটিকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়, তা বুঝতে এ লেখা আপনাকে সহায়তা কবে।

English Version

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

5 COMMENTS

  1. * এই হাদীসটি কিছুটা হলেও আপনাকে পরিবর্তন করে দিবে ইন শা আল্লাহ। # রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মসজিদে বসে আছেন। সাহাবীরা তাঁকে ঘিরে আছেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এখন যিনি মসজিদে প্রবেশ করবেন,তিনি বেহেশতের অধিবাসী।” একথা শুনে উপস্থিত সব সাহাবী অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইলেন মসজিদের প্রবেশ মুখে। সবার মধ্যে জল্পনা কল্পনা চলছে, হয়তো হজরত আবু বকর (রাঃ) বা হজরত উমর (রাঃ) অথবা এমন কেউ আসছেন যাঁদের বেহেশতের সুসংবাদ আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন একজন সাধারণ আনসার সাহাবী। এমনকি তাঁর নাম পরিচয় পর্যন্ত জানা ছিল না অধিকাংশের।এরপরে র দিনেও সাহাবীরা মসজিদে বসে আছেন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘিরে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, “এখন যিনি মসজিদে প্রবেশ করবেন,তিনি বেহেশতের অধিবাসী।” সেদিনও মসজিদে প্রবেশ করলেন সেই সাহাবী। তৃতীয় দিন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ্য করে আবার ঘোষণা দিলেন, “এখন যিনি মসজিদে প্রবেশ করবেন, তিনি বেহেশতের অধিবাসী।”এবং সাহাবীরা দেখলেন সেই অতি সাধারণ সাহাবী মসজিদে প্রবেশ করলেন। পরপর তিনদিন এই ঘটনা ঘটার পর,সাহাবীদের মধ্যে কৌতূহল হলো সেই সাধারণ সাহাবী সম্পর্কে জানার জন্য। তিনি কেন অন্যদের চেয়ে আলাদা তা জানতে হবে। বিখ্যাত সাহাবী হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর আল আ’স (রাঃ) ভাবলেন, এই সাহাবীর বিশেষত্ব কী তা জানতে হলে তাকে নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তিনি সেই সাহাবীর কাছে গিয়ে বললেন,“আমার বাবার সাথে আমার মনোমালিন্য হয়েছে, তোমার বাড়িতে কি আমাকে তিন দিনের জন্য থাকতে দেবে?’’ সেই সাহাবী রাজী হলেন। হজরতআবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন,খুঁজতে থাকলেন কী এমন আমল তিনি করেন। সারা দিন তেমন কোন কিছু চোখে পড়ল না। তিনি ভাবলেন হয়তো তিনি রাত জেগে ইবাদত করেন। না, রাতের নামায পড়ে তো তিনি ঘুমাতে চলে গেলেন। উঠলেন সেই ফজর পড়তে। পরের দুটি দিনও এভাবে কেটে গেল। হজরত আবদুল্লাহ (রাঃ) কোন বিশেষ আমল বা আচরণ আবিষ্কার করতে পারলেন না যা অন্যদের চেয়ে আলাদা। তাই তিনি সরাসরি সেই সাহাবীকে বললেন, “দেখ আমার বাবার সাথে আমার কোন মনোমালিন্য হয় নি, আমি তোমাকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য তোমার বাড়িতে ছিলাম। কারণ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে তুমি জান্নাতি। আমাকে বল তুমি আলাদা কী এমন আমল করো?’’ সেই সাহাবী বললেন, “তুমি আমাকে যেমন দেখেছ আমি তেমনই,আলাদা কিছুতো আমার মনে পড়ছে না।” এ কথা শুনে হজরত আবদুল্লাহ (রাঃ)তাঁকে বিদায় জানিয়ে চলে যেতে থাকলেন। এমন সময় সেই সাহাবী হজরত আবদুল্লাহ (রাঃ) কে ডেকে বললেন, ‘আমার একটা অভ্যাসের কথা তোমায় বলা হয়নি – “রোজ রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দেই, যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে বা আমার প্রতি অন্যায় করেছে। তাদেরুপ্রতি কোন ক্ষোভ আমার অন্তরে আমি পুষে রাখি না” হজরত আবদুল্লাহ (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, “এ জন্যই তুমি আলাদা, এ জন্যই তুমি জান্নাতী”। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না। [বুখারী ও মুসলিম]

  2. এই সাইটে কোন লিখা পাঠাতে চাইলে তার নিয়ম কি ?

আপনার মন্তব্য লিখুন