ওজনে কম দেওয়া হতে সতর্কীকরণ

1
1820

লেখক: মুহাম্মাদ মর্তুজা ইবন আয়েশ মুহাম্মাদ

সকল প্রশংসা সব জগতের সত্য প্রভু আল্লাহর জন্য, এবং যিনি সকল নাবী ও রাসূলগণের সর্দার, তাঁর প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ ও তাঁর অনুসরণকারীগণের প্রতিও কিয়ামত পর্যন্ত সালাত ও সালাম অবতীর্ণ হোক।

অতঃপর প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মহান আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে সকল জাতির মানব সমাজকে কল্যাণময় জীবনযাপন করার সঠিক পদ্ধতি প্রদান করার জন্য। তাই কোনো একজন ব্যক্তি আরেকজন ব্যক্তির প্রতি জুলুম করা এবং তার অধিকার নষ্ট করা কিংবা তাকে ওজনে কম দেওয়া হতে সব সময় বিরত থাকবে। কেননা লোকের অধিকার নষ্ট করা এবং তাদেরকে ওজনে কম দেওয়া কোনো সৎলোকের কাজ নয়। এই জন্য পবিত্র কুরআনে এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসে এই কাজ থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এবং এই কাজকে হারাম ও অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ “মাপে বা ওজনে কমদাতাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। তাদের আচরণ হলো এই যে, তারা যখন অন্য লোকের কাছ থেকে মেপে নিবে, তখন তারা তাদের প্রাপ্য পুরোপুরি নিবে। এবং যখন তারা অন্যান্য লোকদেরকে মেপে দিবে কিংবা ওজন করে দিবে, তখন   তারা তাদেরকে তাদের প্রাপ্য কম করে দিবে”। [সূরা আল মুতাফফিফীন, আয়াত নং 1-3]

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেনঃ “আর ন্যায়পরায়ণতার সহিত তোমরা ওজনের মান প্রতিষ্ঠিত করবে এবং কোনো সময় ওজনে কম দিবে না” । [সূরা আররাহমান, আয়াত নং 9]

পবিত্র কুরআনের মধ্যে এই ধরণের আরো অনেক আয়াত রয়েছে। উক্ত আয়াতগিুলির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোনো ব্যক্তিকে ওজনে কম দেওয়া বৈধ নয়। সুতরাং লোকের প্রাপ্য তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে প্রদান করা অপরিহার্য। বরং লোকের প্রাপ্য তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে প্রদান করার সাথে সাথে তাদেরকে আরো কিছূ অংশ বেশি প্রদান করাই উত্তম। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ “তোমরা যখন কোনো জিনিস কোনো ব্যক্তিকে ওজন করে দিবে, তখন তাকে ওজনে কিছু বেশি প্রদান করবে”। [সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 2222, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

এই হাদীসটির মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় অনেকগুলি রয়েছে, তার মধ্যে থেকে এখানে কয়েকটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করা হলো:

1. মহান আল্লাহর সাথে প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির সুসম্পর্ক স্থাপিত রয়েছে। তাই তার মধ্যে সর্বদা বিরাজ করে ন্যায়বিচার ও সঠিক পন্থার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। তবে ন্যায়বিচারের বিষয়টির যোগাযোগ রয়েছে মানসিক অবস্থার সাথে এবং সঠিক পন্থার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার   যোগাযোগ রয়েছে সঠিক বুদ্ধির সাথে। তাই প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তি কোনো লোকের অধিকার নষ্ট করে না বা কোনো ব্যক্তিকে ওজনে কম দেয় না বা তাতফীফ করে না ।

আর তাতফীফ বলা হয়ঃ ওজন করার সময় লোকের কাছ থেকে নিজের অধিকার সম্পূর্ণরূপে নেওয়া। এবং অন্য লোকের অধিকার নষ্ট করে তাদেরকে তাদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে না দেওয়া বা তাদেরকে ওজনে কম দেওয়া। এই আচরণ বর্জন করা ওয়াজেব বা অপরিহার্য ।

2. প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন নিজের অন্তরকে উদারতায় পূর্ণ করে রাখে। আর নিজের ভালো আচরণ ও উদারতার দ্বারা মানুষের উপকার করে। এবং তাদেরকে তাদের অধিকার বা প্রাপ্য সম্পূর্ণরূপে দেওয়ার সাথে সাথে আরো কিছূ অংশ বেশি প্রদান করে।

3. যে ব্যক্তি ওজনে কম দেয় তার সাথে যারা আদান-প্রদান করে বা দেওয়া-নেওয়া করে, তাদেরকে সে তাদের প্রাপ্য সব সময় কম দিয়ে থাকে। এবং সে যখন তাদের কাছ থেকে কিছু ক্রয় করে, তখন সে নিজের প্রাপ্য  তাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে। কিন্তু সে যখন তাদের কাছে কিছু বিক্রয় করে, তখন সে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সব সময় কিছু কম দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সত্য মুসলিম ব্যক্তি ক্রয়বিক্রয় এবং আদান-প্রদান বা দেওয়া-নেওয়ার সময় সততা বজায় রাখে। সুতরাং সে কোনো মানুষকে কোনো সময় প্রতারিত করে না বা ধোঁকা দেয় না।

আল্লাহ আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণকারীগরে প্রতি সালাত ও সালাম অবতীর্ণ করুন।

সমাপ্ত

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

1 COMMENT

আপনার মন্তব্য লিখুন