গোলামীতে অভ্যস্ত মনের প্রশ্নঃ “আরবী শিখে কী হবে?”

7
1954

132লিখেছেনঃ আবূ সামীহা      

গতকাল [বাংলাদেশ সময়ঃ ২৯ মার্চ ২০১২; সন্ধ্যা ০৬:০৫] ব্লগার “আরবী শেখার আসর” এর এক পোস্টে অন্য এক ব্লগার নীচের মন্তব্যটা করেছেনঃ “এসব শিখে কি হবে? পেটে কি কারো ভাত পড়ে? এসব পড়ে তো সবাই অন্যে দান দক্ষিণাতে বাঁচে।” তার এই মন্তব্যটা দেখে কিছু কথা মনে পড়ে গেল।

আমি আমাদের স্কুলের সব ক্লাসে [৬-১০] প্রথম ছিলাম। এরপর ভাল কলেজে [চট্টগ্রাম কলেজ] পড়েছি। তারপর বাংলাদেশের তিন-তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েছিলাম, যদিও ডিগ্রী নেয়া হয়েছে শুধু একটা থেকে। অবশ্য ওখানে বহিরাগত [external/private] পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়েছি। এরপর বিদেশে পড়তে গেলাম। চার বছর পরে দেশে আসলে স্কুলের এক পুরনো শিক্ষকের সাথে দেখা হল। তিনি আমাদের সাথে বন্ধুর মতই থাকতেন। অবশ্য আমি বিজ্ঞানের ছাত্র থাকায় স্কুলে তিনি আমার কোন ক্লাসেরই শিক্ষক ছিলেন না। তিনি নামাজী মানুষ ছিলেন; আর আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে লজিং থাকতেন। সেই হিসেবে আমাদের সাথে বন্ধুত্ব। তিনি আবার কলেজ জীবনে আমাদের থানার/উপজেলার আওয়ামী ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলেন। ভদ্র-শান্ত ও নামাজী একজন মানুষ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এটা একটু অস্বাভাবিক। আমাদের মত “মৌলবাদী” পোলাপানের সাথে তাঁর খাতিরটাও ছিল অন্যরকম দেখতে; হয়তো নামাজ পড়ার মত মৌলবাদী কাজে তিনি অভ্যস্থ ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।

দেশে ফিরে দেখলাম ঐ শিক্ষক আর আমার বন্ধুর ঐ বাড়িতে নেই, তিনি অন্য বাড়িতে লজিং থাকেন। যাইহোক, পুরনো বন্ধুত্বের খাতিরে তাঁর সাথে দেখা করতে গেলাম তাঁর নতুন লজিং বাড়িতে, যা ছিল আমাদের স্কুলের কাছেই। তাঁর সাথে কথা প্রসঙ্গে আমি কোন বিষয়ে পড়েছি এবং আমার বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার ধরণ নিয়ে কথা হল। আমাকে আরবী ভাষাও শিখতে হয়েছে এবং আরবীতেই ইসলামিক স্টাডিজের কিছু কোর্স নিতে হয়েছে শুনে তিনি খুব আশ্চর্য হলেন এবং এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর কথা হচ্ছে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আরবী পড়তে হবে। তোমার মত মেধাবী ছাত্র আরবী শিখে সময় নষ্ট করছো। তুমি তোমার সাব্জেক্ট ইংরেজীতে পড়বে – এটাই যথেষ্ট। তাঁকে যতই বুঝানোর চেষ্টা করিনা কেন কোন ফল হলনা। বুঝলাম অনেকদিনের ইংরেজদের গোলামী সুদূরপ্রসারী প্রভাব আর তাঁর রাজনৈতিকভাবে বাঙালী-জাতীয়তাবাদী ধর্মনিরপেক্ষ মন কোনভাবেই একটা উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণভাবে সব ছাত্র-ছাত্রীদের আরবী ও ইসলামিয়্যাত পড়াটাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলনা।

দেশে থাকতে সবসময় ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলতাম আমরা। আর বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সে পদ্ধতি ছিল অনুপস্থিত। আমরা ইসলামী শিক্ষা বলতে বুঝতাম একটা আদর্শ ব্যবস্থা সেখানে থাকবে দীনী ও দুনিয়াবী শিক্ষার সমন্বয়। যেমন একজন শিক্ষার্থী যখন দুনিয়াবী কোন বিষয় [যেমন ডাক্তারী, প্রকৌশল, অর্থনীতি, ইত্যাদি] পড়বে তখন সাথে সাথে ইসলামী মৌলিক বিষয়গুলোতেও জ্ঞান অর্জন করবে; আবার একজন শিক্ষার্থী যখন ইসলামী কোন বিষয়ে [তাফসীর, হাদীস, ফিক্বহ, আক্বীদাহ্‌, ইত্যাদি] বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করতে চাইবে তখন সাথে সাথে বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলোর জ্ঞানও লাভ করবে। আল্লাহর শোকর যে তিনি বিদেশে এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম ছিল ইন্টারডিসিপ্লিনারি [Interdisciplinary]– শব্দটার যথাযথ বাংলা আমার জানা নেই তবে “সমন্বিত ব্যবস্থা” বলা যেতে পারে। এর ধরণটা হচ্ছে আপনি যে বিষয়েই অনার্স পড়ুননা কেন আপনাকে আরো অন্যান্য অনেক বিষয়ে কোর্স নিতে হবে। যেমন আমার অনার্সের বিষয় ছিল কমিউনিকেশন [Journalism, Public Relations, etc.]। স্নাতক [সম্মান] ডিগ্রীর জন্য আমাদের ফ্যাকাল্টির ছাত্রদের পড়তে হত কমপক্কে ১৩৪ ক্রেডিট। আমাকে আমার অনার্সের সাবজেক্ট [communication] থেকে পড়তে হয়েছে ৫৪ ক্রেডিট মানে ১৮টা সাবজেক্ট। আমরা যারা হিউম্যান সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ছিলাম তাদেরকে আরো ২৭ ক্রেডিট –টা কোর্স বাধ্যতামূলকভাবে ইসলামিক স্টাডিজের [উলুমুল কুরআন, উলুমুল হাদীস, আক্বিদাহ, ফিক্বহ, সীরাহ্‌, ইত্যাদি] নিতে হত। এর মধ্যে কমপক্ষে দুইটা কোর্স করতে হত আরবীতে – ক্লাসের লেকচার এবং পরীক্ষা সবই আরবীতে। এছাড়া আরো ৫৪ ক্রেডিট নিতে হয়েছে অন্যান্য সাবজেক্ট – সোসিওলজী, পলিটিক্যাল সায়েন্স, সাইকোজলী, দর্শন, ম্যানেজমেন্ট, পরিসংখ্যান, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ভাষা – থেকে। ভাষার কোর্স গুলোর মধ্যে ছিল আরবী, ইংরেজী ও মালয়ী।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে শুরুতেই দিতে হয়েছিল দুটো ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট – Special English Language Exemption Test [SELET] এবং Arabic Placement Test [APT]। দেশে থাকতে TOEFL না দেয়াতে SELET দিতে হল। ইংরেজীতে সবসময় একটু ভাল ছিলাম বলে কোন সমস্যা ছাড়াই পাস করে ফেললাম। APT তে আমার দেশীয় সহপাঠিরা পেলেও আমি পেয়েছিলাম দুই তিনটা শব্দ জানা ছিল বলে। এর পর– Pre-sessional Arabic এর Elementary ও Intermediate লেভেল শেষ করে Advanced লেভেলের ক্রেডিটও করতে হয়েছে। না হলে ইসলামিক স্টাডিজের ক্রেডিট আরবীতে করা যেতনা এবং কপালে ডিগ্রী জুটতনা।

ইকনোমিক্স এণ্ড ম্যানেজম্যান্ট ফ্যাকাল্টির ছাত্রদের অবশ্য ইসলামিক স্টাডিজের কোর্স করতে হলেও আরবীতে করতে হত না। এজন্য বাংলাদেশীদের অনেককেই দেখতাম আরবী ভাষার কোর্সগুলোকে সিরিয়াসলী না নিতে। কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত আরবীতে ফেল করে ডিগ্রী না নিয়ে যাবার উপক্রম। দু’একজন বোধহয় ডিগ্রী ছাড়াই বেরিয়ে গেছেন ৪-৫ বছর পড়ার পরেও। আবার কেউ কেউ আরবী ভাষার কোর্স ফেল করে শেষে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কুরআনের কিছু অংশ মুখস্ত করার পর ছাড়পত্র পেয়েছেন। অন্যদিকে অমুসলিম চীনা ও ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদেরকে দেখতাম আরবী ভাষা ও ইসলামিক স্টাডিজের কোর্সগুলোতে A পেয়ে পাস করতে। উলুমুল হাদীসের ক্লাসে ড: হাবীব রহমান ইব্রামসার দেয়া বিশাল বিশাল কয়েকখানা হাদীস মুখস্ত করতে আমার রীতিমত ঘাম ঝরাতে হয়েছে। অথচ আমার এক অমুসলিম চীনা সহপাঠিনীকে দেখলাম কোন অনুযোগ ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে। আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজের কোর্সগুলোকে অবজ্ঞা করতে দেখতাম বাঙালী ছাত্রদেরকেই বেশী।

আমাদের দু-ব্যাচ পরে দেশ থেকে একটা গ্রুপ আসল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদের একজন মাদ্রাসা পাস। তার বাবা তাকে আরবী ভাষা ও সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রীর নেবার জন্য এখানে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আত্মপরিচয় সম্পর্কে প্রচণ্ড হীনমন্যতায় ভোগা এই ছেলেটি আরবীর পরিবর্তে ইংরেজী পড়তে শুরু করল; আর অধিকাংশ বাংলাদেশীর সাথেই তার কোন সম্পর্ক ছিলনা। শেষ পর্যন্ত কোনমতে অনার্স শেষ করে দেশে ফেরত যায় সে। আমি আরো অনেক বাংলাদেশীকে দেখি যাদের ইংরেজীর প্রতি রয়েছে প্রচণ্ড দূর্বলতা; আর আরবীর প্রতি প্রচণ্ড উন্নাসিকতা ও হীনমন্যতাবোধ।

ইংরেজদের অনেকদিনের গোলামী করার কারণে ইংরেজীর প্রতি একধরণের সহজাত দূর্বলতা তৈরী হয়ে গেছে দেশীয় জনগোষ্ঠির। কাউকে ইংরেজীতে কথা বলতে দেখলে তার প্রতি বিশেষ দূর্বলতা পোষণ করা অথবা নিজে ভাল ইংরেজী বলতে পারলে অথবা ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র হলে একটু কী হয়ে গেনুরে ভাব দেখায় অনেকেই, যা খুবই বিরক্তিকর।

ইংরেজী একটা ভাষা। কোন ভাষা শিক্ষা করাতে দোষের কিছু নেই বরং কোন ভাষায় বুৎপত্তি লাভ করতে পারা একটা বিরাট প্রসংশনীয় কাজ। আর এই কাজটা ইংরেজীর জন্য যেমন সত্য ঠিক তেমনি সত্য অন্য যে কোন ভাষার জন্য। সেজন্য আরবী ভাষায় বুৎপত্তি লাভ করতে পারাও বিরাট প্রসংশনীয় কাজ। কিন্তু আমাদের হীনমন্যতাবোধ ইংরেজীতে দক্ষতা লাভকে এবং ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নকে মনে করে গৌরবের কারণ ওটা ইংরেজ প্রভূদের ভাষা। আর আরবী ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নকে মনে করে অনগ্রসরতা; অথচ দুটোই বিদেশী ভাষা। ভাষা হিসেবে বরং ইংরেজীর চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ ও প্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী হচ্ছে আরবী। সুতরাং আরবীতে দক্ষতা অর্জন ইংরেজীর চেয়েও বেশী মর্যাদাশীল হবার কথা।

আমার এক ভাগ্নে বাংলাদেশের একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। ওখানে তাকেও আরবী ভাষা শিখতে হয়। দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে মনে হল তিনি এই আরবী শেখানোটাকে অহেতুক বাড়াবাড়ি ও সময়ের অপচয় মনে করছেন। আমার মালয়েশিয়ার জীবনে আমি দেখেছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন আরবী কোর্স করতে আসতেন অনেক বয়স্ক ও বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ নারী ও পুরুষরা। তাঁরা পয়সা দিয়ে আরবী শিখতে আসতেন। এদের একদল আসতেন নিজের দীনের মূল উৎস কুরআনকে বুঝার জন্য আরবী শেখার প্রয়োজনীয়তা থেকে; আরেকদল আসতেন আরবী শিখে নিজেদেরকে অন্যদের তুলনায় অধিকতর ভাল অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য যাতে করে চাকরীর বাজারে নিজের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে মজবুত করা যায়।

আমেরিকায় আসার পর দেখলাম গ্রীষ্মকালে স্কুলের দুইমাসের ছুটিতে মসজিদ্গুলোতে বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ইসলাম শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ইমাম সাহেবের অনুরোধে আমি আমার স্থানীয় মসজিদে এক গ্রীষ্মে (২০০২) পড়াতে রাজী হলাম। আমরা কুরআন এবং ইসলামী মৌলিক বিষয়গুলোর শিক্ষাদানের সাথে সাথে আরবী ভাষাও পড়াব সিদ্ধান্ত নিলাম। এক বাঙালী ভদ্রলোক তাঁর ছেলেকে মসজিদ স্কুলে [মাদ্রাসায়] ভর্তি করাতে আসলেন। তিনি আরবী শেখানোর কথা শুনে খুবই উদ্দীপ্ত হলেন। তিনি মনে করেছিলেন মসজিদে বাচ্চারা শুধু কুরআন তিলাওয়াত শিখতে যায়, যেমনটা বাংলাদেশে হয়ে থাকে। কিন্তু তিনি তাঁর হাইস্কুলে পড়ুয়া ছেলের ব্যাপারে খুবই আশান্বিত হলেন যে সে নতুন একটা ভাষা শিখতে পারবে এবং এতে চাকরীর বাজারে তার অবস্থান ভাল হবে। সেই প্রথম আমি আরবী শেখার ব্যাপারে একজন বাঙালী অভিভাবককে প্রচণ্ড রকমের আগ্রহী দেখেছিলাম। ভদ্রলোক অন্তত ভাষা শেখার দুনিয়াবী কল্যাণটা বুঝতে পেরেছিলেন।

আমাদের বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে গত ৬/৭ দশক ধরে কৌশলে যে হীনমন্যতা বোধ ঢুকানো হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল নিজেদের মুসলিম পরিচয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি এক ধরণের অবজ্ঞা ও ঘৃণাবোধ তৈরী করা। ভাষা শিক্ষা করা সাধারণভাবে একটা ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়; হোক সে আরবী ভাষা বা ইংরেজী ভাষা অথবা অন্য যে কোন ভাষা। কিন্তু ইংরেজী শিক্ষা করাকে গৌরবের মনে করা হলেও আরবী শিক্ষা করাকে হীনমন্যতার সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে কারণ আরবী অন্য যে কোন ভাষার মতই একটা ভাষা হলেও এ ভাষাতেই রয়েছে মুসলমানদের হিদায়াতের উৎস আল-কুরআন। তাই আরবী ভাষা শিক্ষা করাকে পশ্চাদপদতার সাথে সংশ্লিষ্ট করে দেয়া হয়েছে আমাদের দেশে, যাতে আরবীতে অজ্ঞ একটা জনগোষ্ঠিকে তাদের আত্মপরিচয়ের উৎস সম্পর্কে অন্ধকারে রাখা যায়।

যে কোন ভাষা শিক্ষা করাতেই রয়েছে কল্যাণ। আরবীতে একটা কথা আছে من تعلم لغة قوم أمن مكرهم ; যার মানে হলঃ

“যে কোন জাতির ভাষা শিখল সে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে নিরাপদ করল।” এ কথার সমর্থনে আমরা রসূলুল্লাহ্‌র (সঃ) একটা হাদীসও দেখতে পাই। তিনি জ়ায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) কে নির্দেশ দিয়েছিলেন হিব্রু ভাষা শেখার জন্য এই বলে যে তিনি ইয়াহুদীদের ব্যাপারে ভয় করেন যে তারা তাদের লিখালিখির মাধ্যমে বিকৃতি সাধন করবে। [আহমদ, আবূদাঊদ ও তিরমিজ়ী]।

রসূলুল্লাহর (সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া-সাল্লাম) থেকে এ রকম শিক্ষা থাকার পরেও আমাদের উলামাদের একদল অতীতে ইংরেজী শিক্ষা করাকে হারাম ঘোষণা করেছিলেন আবেগের বশবর্তী হয়ে। ফল হয়েছিল হিন্দুরা প্রাত্যহিক জীবনের সবক্ষেত্রে অগ্রসর হয়ে গিয়েছিল। আর মুসলমান তরুণদের মধ্যে যারা ইংরেজদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হচ্ছিল তারা পশ্চিমা দুনিয়ার ধ্যানধারণার ক্ষতিকর দিকগুলোর ব্যাপারে উলামাদের দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত রয়ে যাচ্ছিল এই কারণে যে ইউরোপীয় ভাষা না জানা উলামাগণ এ সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখতেন না। উলামাদের সাথে সৃষ্টি হওয়া দূরত্বে বেড়ে উঠা এইসব তরুণরা পরবর্তীতে মুসলিম সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ করণে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে। আর এখন আমাদেরকে আরবী শেখা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়। ফলে আমরা অনেকেই দীন ও দুনিয়ার অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে পিছিয়ে যাচ্ছি। যেখানে অমুসলিম এশীয়, ইউরোপীয় ও আমেরিকান আরবী শিখছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিজেদের অগ্রসর অবস্থান নিশ্চিত করতে সেখানে আমরা দেখি আরবী শেখাকে অনগ্রসরতা হিসেবে। এমনকি ইসলামকে নিজের জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার দাবীদারদের অনেকের মধ্যেও আরবী শেখার প্রতি রয়েছে মারাত্মক রকমের উন্নাসিকতা। অথচ ভাষা শিক্ষা করার দুনিয়াবী কল্যাণের সাথে সাথে আরবী শিক্ষা করাতে রয়েছে দীনী ও উখরাওয়ী কল্যাণ।

আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী ভাষা হচ্ছে আরবী। দুনিয়ার ভাষাগুলো প্রতিনিয়ত বিবর্তিত হচ্ছে উদ্ভব হচ্ছে নতুন ভাষার; হারিয়ে যাচ্ছে অনেক ভাষা চিরতরে। ২১০০ সালের মধ্যেই হয়তো কয়েক হাজার ভাষা হারিয়ে যাবে। ইংরেজীও আস্তে আস্তে তার গুরুত্ব হারাবে এবং একসময় আর লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হবেনা অনেক স্থানেই। কিন্তু কুরআনের কল্যাণে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার ক্লাসিক্যাল রূপেই বর্তমান থাকবে আরবী। আর এ ভাষা শিখার মাধ্যমে দুনিয়াবী কল্যাণ পাওয়া যেমন সম্ভব, যথার্থ সওয়াবের নিয়্যত থাকলে আখিরাতের কল্যাণও হবে নিশ্চিত।

ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবন গাফফার

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

7 COMMENTS

  1. “রসূলুল্লাহর (সল্লাল্লাহু আলায়হি
    ওয়া-সাল্লাম) থেকে এ রকম শিক্ষা থাকার পরেও আমাদের উলামাদের একদল অতীতে
    ইংরেজী শিক্ষা করাকে হারাম ঘোষণা করেছিলেন আবেগের বশবর্তী হয়ে।” – this was because there was shirk in the syllabus of English subject as the school were ran by the British govt. that’s why the muslims did not send their children to those schools. (Allah knows best)

  2. আলহামদুিলল্লাহ।আপনি যে টপিক টা দিয়েছেন তা হীন মনে প্রভাব ফেলবে।আপনার দীরঘায়ু কামনা করি।
    আপনি যে বই টি ওয়েবে দিয়েছেন তা কিভাবে সংগ্রহ করা যাবে,দয়া করে আরবি বইয়ের সন্ধান দিলে খুবই উপকৃত হতাম।

  3. ASSalamualaikum Wa Rahmatullahi WA Barakatuhu.

    ekhane ekta ARBI shekhar class chalu korle kemon hoy !

    A-Z ! Grammatical vabe.

    Shudhu j shobder orrtho shikhlei j arbi shekha jabe tato na.

    Purapuri Vasha shekhar ekta Course Chalu korar dorkar.

    Asha kori onnorao amar shathe ekmot hoben.

আপনার মন্তব্য লিখুন