স্বপ্নভঙ্গ

10
3178

লেখক: আবদুল্লাহ সাঈদ খান

১. ধুম শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল সজীবের। কিন্তু শব্দটা কোথা থেকে এল সজীবের সে দিকে কৌতুহল নেই। তার মনে হচ্ছিল সে একটা দীর্ঘ স্বপ্ন দেখেছে। সজীব চোখ খোলার চেষ্টা করল কিন্তু আশেপাশে এতটাই অন্ধকার যে সে চোখ খুলেছে কি খুলেনি বুঝতে পারল না। তবে বিষয়টা তাকে অতটা বিচলিত করল না। কারণ, অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় তার আজকের স্বপ্নটা বেশ বাস্তব মনে হচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল যে স্বপ্নের অনেক ঘটনাই তার স্মরণে আছে। হঠাৎ সে খেয়াল করল যে, সে কখন ঘুমিয়েছে, সর্বশেষ সে কি করছিল তা-র কিছুই মনে আসছে না। ‘যাই হোক, এখন ওটা স্মরণ করার দরকার নেই। কি যেন দেখছিলাম স্বপ্নটা?” চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকল সজীব।স্বপ্নটা স্মরণ করতেই সজীবের কেমন যেন আনন্দ অনুভূত হচ্ছিল। ভাবতে ভাবতে সে কল্পনার জগতে ডুবে গেল।প্রথমেই যে দৃশ্যটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল- একজন সুন্দর নারী হেসে হেসে তার সাথে কথা বলছে। “এই যে সজীব। আমি এখানে। দেখত ওটা কে?” নারীটার পাশে একজন সুদর্শন পুরুষকে দেখা যাচ্ছে। সে-ও খুব সুন্দর করে হাসছে। কিন্তু এরপর কি হল মনে নেই। দৃশ্যপট পালটে গেল। ছোট্ট একটা মেয়ে মিষ্টি হেসে বলছে, “আমার নাম কথা।

তোমার নাম কি?” “আমার নাম…” সজীব নামটা বলতে পারল না। অবাক বিষয় হল স্বপ্নটার মাঝে কেমন একটা ধারাবাহিকতা আছে। কিন্তু কোনা ঘটনাই পুরো মনে আসছে না। এর পরের দৃশ্যে সজীব নিজেকে আবিস্কার করল একটা ক্লাস রুমে। বড় দাড়ি বিশিষ্ট হুজুর গোছের একটা লোক বেশ শব্দ করে পড়াচ্ছে, “তোমার রব কে?” সজীব ক্লাসরুমের জানালা দিয়ে বাইরে রাস্তার দিকে তাকাল। পরক্ষনেই তার মনে হল সে রাস্তা দিয়ে হাটছে।তার পাশে হালকা পাতলা ও লম্বা একটা ছেলে হাটছে। ছেলেটা মোটা গলায় বলল, “সজীব চল, রফিক স্যারের ব্যাচে ভর্তি হই উনি ভাল ম্যাথ পড়ায়”। ছেলেটার কথায় সাড়া না দিয়ে সজীব একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল। হঠাৎ তার মনে হল সুমধুর সুরে কোন ঘোষনা হচ্ছে। দৃশ্যপট পাল্টে গেল। সজীব নিজেকে আবিস্কার করল কম্পিউটারের সামনে। সে কারও সাথে চ্যাট্ করছিল। চারিদিকে অন্ধকার, মনে হয় গভীর রাত। আযানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। “এটা কি ফজরের আযান…?” সজীব ঘুমের ঘোরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু পরক্ষনেই সে বিছানা থেকে উঠে বসল। উঠে সে দেখতে পেল একজন সুশ্রী নারী বাচ্চা কোলে তার পাশে বসে আছে। মনে হল যেন শিশুটির প্রতি তার অনেক বছরের মায়া জমে আছে।

সজীব পাশ থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে পাশে তাকাল – একজন বয়স্ক মহিলা একজন বৃদ্ধ লোকের লাশের পাশে বসে কাদছে। সজীবের মনে হল তার চোখেও পানি চলে এসেছে। সজীব হাত বাড়িয়ে তার টলমল চোখ মুছে তাকাতেই লক্ষ্য করল, সে একটা আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে যেখানে একটা বৃদ্ধ লোক, মুখের চামড়া থুবড়ে পড়েছে। পাশ থেকে কে যেন ডেকে উঠল, “বাবা, খেতে এস”। আচমকা সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। দূর হতে সাদা আলখেল্লা পড়া দুটো লোক এদিকেই আসছে। কাছে এসে তারা প্রশ্ন করল “তোমার রব কে?” সজীবের মনে হল প্রশ্নটা আগেও কোথায় যেন শুনেছে।

২. ধুম! আরেকটা বিকট শব্দে ভাবনার ঘোর ভেঙ্গে গেল সজীবের। তার মনে হল, “আমি এ কেমন স্বপ্ন দেখলাম?” সজীবের সাড়া শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, প্রতিটি মাংসপেশীতে ব্যথা হচ্ছে। সে চোখ খুলতে চেষ্টা করল। কিন্তু একটা তীব্র আলো তার চোখে এসে পড়ায় চোখ বুজেই রইল। সে চারিদিকে হাতড়ে কিছু একটা ধরার চেষ্টা করল । কিন্তু আশে পাশে কিছুই পেল না।

“আমি কি এতক্ষন শুয়ে ছিলাম না বসে ছিলাম?” সে তার অবস্থান বুঝতে পারল না । তারা মনে হল সে দাড়িয়ে আছে। সে আবার চোখ দুটো খোলার চেষ্টা করল। এবার সে চোখ ঠিকই খুলতে পারল তবে যা দেখল তাতে সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে নিজেকে সীমাহীন এক ধুধু প্রান্তরে আবিস্কার করল । হঠাৎ সেই বিকট আওয়াজটি আবার হল। নিজের অজান্তেই সামনের দিকে হাটতে লাগল সে।

৩. “এই সেই দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হয়েছিল”। আকাশে বাতাসে ঘোষনা হচ্ছে। সজীবের সমস্ত শরীর শিহরণে কেপে উঠল। সমস্ত মন ও মগজকে আচ্ছন্ন করে তার উপলব্ধি হল এতক্ষন যাকে সে স্বপ্ন ভাবছিল, যে স্বপ্নিল জীবনটা সে অতিবাহিত করেছে, সেটা ছিল তার ইহলৌকিক জীবন। আজ প্রকৃতই তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তার মনে হচ্ছিল সে পৃথিবীতে অনধিক একটি দিন অতিবাহিত করেছে। কিন্তু এ অল্প সময়ে বর্তমানের প্রস্তুতি সে কি নিতে পেরেছে? একরাশ ভয় আর আতঙ্ক সজীবের মনকে ঘিরে ফেলল।

শত সহস্র বিবস্ত্র মানুষ বিস্তীর্ণ ময়দানে জমায়েত হচ্ছে। কিন্তু কেউ কারও দিকে তাকানোর সময় নেই। কারণ আজ তাদের জীবনে কৃত সব পাপাচারের স্মৃতি একে একে মনে পড়ে যাচ্ছে। ভয়ে স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে সবাই, অপেক্ষা করছে এক অনাগত পরিণতির শংকায় !!

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

10 COMMENTS

  1. অসম্বব ভালো হয়েছে। বর্তমানে ইসলাম থেকে দূরে থাকা ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে এই ছোট্ট গল্পটি যথেষ্ট। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

  2. আমার মনে হচ্ছে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, হয়তো এখন ঘুম ভাংবে///

আপনার মন্তব্য লিখুন