শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:১)

1
2845

লিখেছেনঃ নুমান বিন আবুল বাশার । ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

পর্ব ১     পর্ব ২     পর্ব ৩     পর্ব ৪

আল্লাহ তাআলা যখন তার নবী আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন, তিনি আদমকে সেজদা করতে ফেরেশতাদের হুকুম করেন। অত:পর সব ফেরেশতা সেজদায় অবনমিত হল একমাত্র ইবলিস ছাড়া, সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার প্রভুর নির্দেশ অমান্য করল, এবং অস্বীকার ও অহংকার প্রদর্শন করল। এবং সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:‘আল্লাহ তাআলা বললেন, হে ইবলিস, তোমাকে কোন্ জিনিস তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে বানিয়েছি, তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি কোনো উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কেউ? ‘সে বলল (হ্যাঁ), আমি তো তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে আগুন থেকে বানিয়েছ আর তাকে বানিয়েছ মাটি থেকে। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি এখান থেকে এখনই বের হয়ে যাও, কেননা তুমি হচ্ছ অভিশপ্ত। ‘তোমার ওপর আমার অভিশাপ থাকবে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত।’ সে বলল, (হ্যাঁ) আমি বেরিয়ে যাচ্ছি, তবে হে আমার মালিক ! তুমি আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যে দিন সব মানুষকে (দ্বিতীয়বার) জীবিত করে তোলা হবে। ‘আল্লাহ তাআলা বললেন, (হ্যাঁ, যাও) যাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত। ‘অবধারিত সময়টি আসার সে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত (তুমি থাকবে) সে বলল (হ্যাঁ) তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপদগামী করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়া। আল্লাহ তাআলা বললেন, (এ হচ্ছে) চূড়ান্ত সত্য, আর আমি এ সত্য কথাটাই বলছি—‘তোমার ও তোমার অনুসারীদের সবাইকে দিয়ে আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই।

প্রকৃতপক্ষে শয়তান শত্র“তা পোষণেরই উপযুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন:‘শয়তান হচ্ছে তোমাদের শত্র“, অতএব তোমরা তাকে শত্র“ হিসেবেই গ্রহণ করো, সে তার দলবলদের এ জন্যেই আহ্বান করে যেন তারা তার আনুগত্য করে জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে।’ 

মানুষের কাছে এ বিষয়টি অস্পষ্ট নয় যে, শয়তান মানুষের প্রত্যক্ষ দুশমন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই অল্প যারা শয়তানকে শত্র“ জ্ঞান করে। মানুষ শয়তানকে শত্র“ হিসেবে ততক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে না যাবৎ না সে শয়তানের মানুষকে সত্য থেকে বিভ্রান্ত করার সমূহ পথ ও পদ্ধতি থেকে মানুষকে ভ্রান্ত পথে নিক্ষিপ্ত করার কলাকৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হবে। এবং পাশাপাশি সে শয়তানের কূট-চাল থেকে মুক্তির উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত না হবে। আলোচ্য অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হবে।

মানুষকে বিভ্রান্ত করার শয়তানের পদক্ষেপ সমূহ

সর্বক্ষেত্রে শয়তানের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা হচ্ছে মানুষকে স্বধর্ম থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া। যদি কোন কোন ক্ষেত্রে শয়তান এ বিষয়ে অকৃতকার্য হয়, তবে তাকে অপরাধ ও শাস্তিতে নিক্ষেপ করা বা তার প্রতিদান কমিয়ে দেওয়া বা তাকে উত্তম কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা—ইত্যাদিতে জড়িয়ে ফেলা হয়। এরকম সাতটি স্তর রয়েছে—

(১) আল্লাহকে অস্বীকার করার ধাপ বা সিঁড়ি। এমনটি হলে তাকে সঙ্গে নিয়ে জাহান্নামে একত্রিত হবে।

(২) বেদআতের স্তর বা ধাপ: এই স্তরটি ইবলিসের নিকট গুনাহের চেয়েও অধিক প্রিয়। কারণ, বেদআতকারী এ কথা মনে করে না যে, সে ভ্রান্তির মাঝে রয়েছে, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে তা থেকে তাওবা করবে না। উপরন্তু দ্বীনের বিষয়ে এটি একটি জঘন্যতম উপসর্গ, বরং, বরং বলা যায়, দ্বীনের বিকৃতি।

(৩) কবিরা গুনাহের স্তর: আল্লাহর তাআলা বলেন: ‘যদি তোমরা সে সমস্ত বড়ো বড়ো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো, যা থেকে বেঁচে থাকার জন্যে তোমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাহলে তোমাদের ছোট-খাটো গুনাহ আমি (এমনিতেই তোমাদের হিসাব) থেকে মুছে দেবো এবং অত্যন্ত সম্মানজনক স্থানে আমি তোমাদের পৌঁছে দেবো।

(৪) সগীরা গুনাহের স্তর : মানুষ সাধারণত: একে তুচ্ছজ্ঞান করে। ফলে তা পুঞ্জীভূত হয়ে তাকে ধ্বংসে নিপতিত করে।

(৫) মুবাহের স্তর : মুবাহের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর অধিক আনুগত্য ও আখেরাতের জন্য পাথেয় অর্জন বাধা সৃষ্টি করে। মুবাহ কাজের সাথে সম্পৃক্ততা দুনিয়ার মুহব্বত ও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।

(৬) অনুত্তম ও অপ্রধান কাজের স্তর : অনুত্তম কাজের মাধ্যমে উত্তম কাজে এবং অপ্রধান কাজের মাধ্যমে প্রধান কাজ থেকে বিরত রাখে। ফলে তার প্রতিদান কমে যায় এবং পুণ্য ত্র“টিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

(৭) শয়তান তার কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে মানুষের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভের স্তর : এই সত্য সমূহের কোন একটিতে নিক্ষেপ করার মাধ্যমেই শয়তানের ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না বরং সে কখনো মানুষকে বেদআতে নিক্ষেপ করে, যেমন জন্ম দিবস ও নির্দিষ্ট আনন্দ উপভোগের বেদআত। তাছাড়া অন্যান্য বেদআত বা ভিন্ন প্রকৃতির কবিরা গুনাহে নিক্ষিপ্ত করে। যেমন নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে নামাজ দেরি করা অথবা পরিপূর্ণ পবিত্রতা অর্জন না করা।

এমনিভাবে শয়তান মানুষের হৃদয়ে স্থান করে তাকে হিংসা, রিয়া অথবা আল্লাহর প্রতি মুহব্বত, আশা ও নির্ভরতার দুর্বলতায় নিক্ষেপ করে। এবং মানুষের বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে তাকে মিথ্যায় প্ররোচিত করে। যদি তাতে অক্ষম হয়ে পড়ে তবে অর্থহীন অঠিক কথাবার্তায় নিক্ষেপ করে, যাতে সে গিবত-পরনিন্দায় লিপ্ত হয়। অত:পর তার চেয়েও কঠিন বিষয়ের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং এভাবেই চলতে থাকে।

মানুষের কাছে শয়তানের প্রবেশ পথসমূহ

মানুষের কাছে বিভ্রান্ত ও সম্মানোচ্যুত করার ক্ষেত্রে শয়তান সব ধরনের পথ ও পন্থা অবলম্বন করে। তাদের নিকট সে এমন সব পথে প্রবেশ করে যে, অধিকাংশ মানুষ সে সম্পর্কে বেখবর হয় অথচ সে তা অনুভব করতে পারে না। এভাবেই শয়তান আমাদের আদি পিতা ও মাতা আদম হাওয়া আ.-কে পথ-চ্যুত করেছে। ‘অত:পর শয়তান তাদের উভয়কে পথ-চ্যুত করেছে।’  শয়তান মানুষকে তাদের একাংশের কৃতকর্মের জন্য পদস্খলন ঘটিয়ে ছিল অত:পর তারা ভয়ে পলায়ন করে। দু’টি বাহিনী সেদিন (সম্মুখ সমরে) একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল, সে দিন যারা (ময়দান থেকে) পালিয়ে গিয়েছিল তাদের একাংশের অর্জিত কাজের জন্য শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়ে দিয়েছিল।  শয়তানের প্রবেশের পথসমূহ বন্ধের জন্য সবচে’ ফলপ্রসূ পদ্ধতি হচ্ছে সে প্রবেশপথ সমূহের পরিচয় লাভ করা। এই পথ সমূহ বন্ধের উপকরণ সমূহ ব্যবহার করা।

শয়তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথসমূহের অন্যতম হচ্ছে

(১) সৌন্দর্য সৃষ্টির মাধ্যমে আকর্ষণ ও প্রতারণা : আদম আ.-এর ঘটনায় শয়তান তার জন্য গুনাহকে সুশোভিত, সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করেছে।

‘সে (তাকে বলল হে আদম, আমি কি তোমাকে অনন্ত জীবনদায়িনী একটি বৃক্ষের কথা বলব (যার ফল খেলে তুমি এখানে চিরকাল জীবিত থাকতে পারবে) এবং বলব এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না ?

‘সে তাদের আরো বলল, তোমাদের মালিক তোমাদের এ বৃক্ষের (কাছে যাওয়া) থেকে তোমাদের যে বারণ করেছেন, তার উদ্দেশ্যে এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, (সেখানে গেলে) তোমরা উভয়েই ফেরেশতা হয়ে যাবে, অথবা (এর ফলে) তোমরা জান্নাতে চিরস্থায়ী হয়ে যাবে।

বদর যুদ্ধে শয়তান মুশরিকদের জন্য তাদের কাজকে সুশোভিত করে দেখিয়েছে— ‘তোমরা (কখনো) তাদের মতো হয়ও না, যারা অহংকার ও লোকদের (নিজেদের শান-শওকত) দেখানোর জন্যে সাধারণ মানুষদেরকে যারা আল্লাহ তাআলার পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে, (মূলত) তাদের সমুদয় কার্যকলাপেই আল্লাহ তাআলা পরিবেষ্টন করে আছেন। যখন শয়তান তাদের কাজগুলোকে তাদের সামনে খুব চাকচিক্যময় করে পেশ করেছিল এবং সে তাদের বলেছিল, আজ মানুষের মাঝে কেউই তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে পারবে না। এবং আমি তো তোমাদের পাশেই আছি, অত:পর যখন উভয় দল সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন সে কেটে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাও না। আমি অবশ্যই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করি এবং (আমি জানি) আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন কঠোর শাস্তিদাতা।

শয়তানের এই সুন্দর সুশোভন প্রক্রিয়া ছলচাতুরতায় পরিপূর্ণ। কেননা, তার প্রতারণা কিছু উপদেশ, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার আড়ালে লুক্কায়িত থাকে। তাই সে আদম আ.-কে ও তার বিবি হাওয়াকে শপথ করে জানিয়েছিল যে সে বিশ্বস্ত শুভাকাক্সক্ষী।

‘সে তাদের কাছে কসম করে বলল, আমি অবশ্যই তোমাদের উভয়ের জন্যে হিতাকাক্সক্ষীদের একজন।

এবং সে আদ ও সামুদ সম্প্রদায়ের জন্য তাদের কাজকে সুশোভিত করে প্রদর্শন করেছে।

‘আদ এবং সামুদকেও (আমি ধ্বংস করেছিলাম), তাদের (ধ্বংসপ্রাপ্ত) বসতি থেকেই তো তোমাদের কাছে (আজাবের সত্যতা) প্রমাণিত হয়ে গেছে। শয়তান তাদের কাজ (তাদের সামনে শোভন করে রেখেছিল এবং (এ কৌশল) সে তাদের (সঠিক) রাস্তা থেকে ফিরিয়ে রেখেছিল, অথচ তারা (তাদের অন্য সব ব্যাপারে) ছিল দারুণ বিচক্ষণ।’  এমনিভাবে সাবা সম্প্রদায়ের জন্যও সুশোভন করেছিল।

‘আমি তাকে এবং তার জাতিকে দেখলাম, তারা আল্লাহ তাআলাকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সেজদা করছে, (মূলে) শয়তান তাদের (এ সব পার্থিব) কর্মকাণ্ড তাদের জন্যে শোভন করে রেখেছে এবং সে তাদের (সৎ) পথ থেকেও নিবৃত্ত করেছে, ফলে ওরা হেদায়াত লাভ করতে পারছে না। 

আল্লাহ তাআলা বলেন: (হে নবী,) আল্লাহর শপথ, তোমার আগেও আমি জাতি সমূহের কাছে নবী পাঠিয়ে ছিলাম, অত:পর শয়তান তাদের (খারাপ) কাজ সমূহ তাদের জন্যে শোভনীয় করে দিয়েছিল, সে (শয়তান) আজও তাদের বন্ধু হিসেবেই (হাজির) আছে, তাদের (সবার) জন্যেই রয়েছে কঠোর আজাব।

মহান আল্লাহ বলেন: সে বলল, হে আমার মালিক, তুমি যেভাবে (আজ) আমাকে পথভ্রষ্ট করে দিলে (আমিও তোমার শপথ করে বলছি) আমি মানুষদের জন্যে পৃথিবীতে তাদের (গুনাহের কাজ সমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাটি বান্দা তাদের কথা আলাদা।’ 

এবং আল্লাহ তাআলা বলেছেন: ‘তোমাদের আগের জাতি সমূহের কাছে আমি আমার রাসূল পাঠিয়েছিলাম, তাদের আমি দু:খ-কষ্ট ও বিপর্যয়ে (জালে) আটক রেখেছিলাম, যাতে করে তার বিনয়ের সাথে নতি স্বীকার করে। কিন্তু সত্যিই যখন তাদের (কাফের দলের) উপর আমার বিপর্যয় এসে আপতিত হলো, তখনও তারা বিনীত হলো না, অধিকন্তু তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেলো এবং তারা যা করে যাচ্ছিল, শয়তান তাদের কাছে তা আকর্ষণীয় করে তুলে ধরলো। অত:পর তারা সে সব কিছুই ভুলো গেলো, যা তাদের (বারবার) স্মরণ করানো হয়েছিল, তারপরও আমি তাদের ওপর (স্বচ্ছলতার সবকটি দুয়ারই খুলে দিলাম, শেষ পর্যন্ত যখন তারা তাতে মত্ত হয়ে গেলো যা তাদের দেয়া হয়ে ছিল, তখন আমি তাদের হঠাৎ পাকড়াও করে নিলাম, ফলে তারা নিরাশ হয়ে পড়ল। (এভাবেই) যারা (আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে) জুলুম করেছে, তাদের মূলোচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে, আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে, যিনি সৃষ্টিকুলের মালিক।’ 

শয়তান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: সে (অভিশপ্ত শয়তান) তাদের (নানা) প্রতিশ্র“তি দেয়, তাদের (সামনে) যা প্রতিশ্র“তি দেয় তা হচ্ছে প্রতারণা মাত্র। 

ইবনুল কায়্যিম বর্ণনা করেন, শয়তানের প্রতিশ্র“তি যা মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌছে—যথা : তুমি দীর্ঘজীবী হবে, তুমি পার্থিব ভোগ-বিলাস অর্জন করবে, তুমি তোমার সতীর্থদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে, এবং তোমার শত্র“দের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করবে এবং দুনিয়ার কর্তৃত্ব তোমার অর্জিত হবে যেরূপ অন্যের ছিল—এমনিভাবে সে তার আশাকে প্রলম্বিত করে এবং তাকে গুনাহ ও শিরক করার ভিত্তিতে কল্যাণের প্রতিশ্র“তি দেয়। উপরন্তু তাকে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, অলীক স্বপ্ন ও আশা দিয়ে রাখে। তার প্রতিশ্র“তি ও প্রত্যাশার মাঝে পার্থক্য হল সে অবাস্তব, ভিত্তিহীন প্রতিশ্র“তি দেয়, এবং অসম্ভব বিষয়ের প্রত্যাশা দিয়ে থাকে, আর অক্ষম, দুর্বল আত্মা তার প্রতিশ্র“তি ও স্বপ্নের প্রলোভনে নিজেদের খুইয়ে ফেলে।

যেমন জনৈক বক্তা বলেছেন:আশা ও স্বপ্ন যদি বাস্তবানুগ হয় তবে তা হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট স্বপ্ন, অন্যথায় এর অর্থ হবে কিছু কাল সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকা। তাই বিনষ্ট রুগ্ণ প্রকৃতির প্রবৃত্তি অসার আশা ও মিথ্যা প্রতিশ্র“তিতে স্বাদ পায় ও আনন্দ লাভ করে।

ইবনুল কায়্যিম রহ. আরো উল্লেখ করেছেন, অসার কথাবার্তার উৎস হচ্ছে শয়তানের প্রতিশ্র“তি ও অলীক স্বপ্ন দেখানো। কেননা শয়তান তার সহচরদেরকে সত্য অর্জন ও তার মাধ্যম বিজয় লাভের আকাক্সক্ষা সৃষ্টি করে। এবং তাদেরকে অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সত্যে পৌঁছার প্রতিশ্র“তি দেয়।

(অতএব, প্রত্যেক অসার কাজে আল্লাহর এই বাণী প্রতিফলিত যে তাদের সামনে) সে প্রতিশ্র“তি দেয় আর মিথ্যা-বাসনার (মায়াজাল) সৃষ্টি করে, আর শয়তান যা প্রতিশ্র“তি দেয় তা হচ্ছে প্রতারণা মাত্র।  উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় শাইখ আস-সাদি উল্লেখ করেছেন, এই প্রতিশ্র“তিতে ভীতি প্রদর্শনও অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘শয়তান সব সময়ই তোমাদের অভাব অনটনের ভয় দেখাবে এবং সে (নানাবিধ) অশ্লীল কর্মকাণ্ডের আদেশ দেবে, আর আল্লাহ তাআলা তোমাদের তার কাছে থেকে অসীম বরকত ও ক্ষমার প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন (এবং সে দিকেই তিনি তোমাদের ডাকছেন) আল্লাহ তাআলা প্রাচুর্যময় সম্যক অবগত।  কেননা, সে মানুষকে প্রতিশ্র“তি দেয় যখন তারা আল্লাহর পথে খরচ করবে তারা গরিব-দরিদ্র হয়ে যাবে। তারা যখন জেহাদ করে তাদের ভয় দেখায়।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন: এই হচ্ছে তোমাদের (প্ররোচনাদানকারী) শয়তান তারা (শত্র“ পক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তাদের আপনজনদের ভয় দেখাচ্ছিল, তোমরা কোনো অবস্থায়ই তাদের (এ হুমকিকে) ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও।  সে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়ার সময়। সম্ভব ও অসম্ভব সকল উপায়ে সে তাদের বুদ্ধিতে এটা প্রবেশ করায় যেন তারা কল্যাণময় কাজ থেকে বিরত থাকে। 

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

1 COMMENT

  1. মুবাহের স্তর বলতে কি বুঝানো হয়েছে ? দয়া করে জানালে উপকৃত হবো। জাযযাকাল্লাহখাইরান।

আপনার মন্তব্য লিখুন